উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে আলোচনা করার আগ্রহ দেখিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইন৷ তবে শুধু বৈঠকের খাতিরে আলোচনা করতে রাজি নন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
‘‘কিন্তু এটা শুধু কথা বলার জন্য আলোচনা হতে পারে না,'' বুধবার সাংবাদিকদের বলেন তিনি৷ মুন জানান, ‘যে কোনো সময়' এই আলোচনা হতে পারে, যদি তা হয়, ‘সঠিক পরিবেশে'৷
দুই বছরেরও বেশি সময় পর মঙ্গলবার দুই কোরিয়ার উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়৷ ‘‘এটা কেবল শুরু,'' ঐ আলোচনা সম্পর্কে বলেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট৷ ‘‘গতকালেরটি ছিল প্রথম ধাপ এবং আমার মনে হয় শুরুটা ভালো হয়েছে,'' মঙ্গলবারের আলোচনা সম্পর্কে বলেন মুন জে-ইন৷
তবে আলোচনার পরের ধাপ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু কর্মসূচি থেকে সরে আসার প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসাটা পরবর্তী ধাপ হিসেবে নিতে হবে৷''
দুই কোরিয়ার মধ্যে আলোচনা শুরু হওয়ার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট৷ ‘‘আমি মনে করি, আন্তঃকোরীয় আলোচনা শুরু হওয়ার পেছনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বড় ভূমিকা আছে,'' বলেন তিনি৷
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও এই আলোচনা শুরুর পেছনে নিজের কৃতিত্ব দাবি করেছেন৷ ‘‘আমি যদি জড়িত না থাকতাম, তারা অলিম্পিক নিয়ে এখন কথা বলত না, তারা কোনো আলোচনায় বসত না,'' বলেন তিনি৷
দুই কোরিয়ার মধ্যে মঙ্গলবারের আলোচনায় উত্তর কোরিয়া আগামী মাসে দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া শীতকালীন অলিম্পিকে প্রতিনিধি দল পাঠানোর কথা জানিয়েছে৷ উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন তাঁর নতুন বছরের বক্তব্যে প্রথম এই আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন৷
তবে আলোচনার সময় উত্তর কোরিয়া তাদের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে কোনো অঙ্গীকার করেনি৷ এ ব্যাপারে উত্তর কোরিয়ার প্রধান আলোচক রি সন-গিওন দক্ষিণ কোরিয়ার সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আমাদের সব নিউক্লিয়ার ও হাইড্রোজেন বোমা এবং আইসিবিএম-সহ অন্যান্য অস্ত্রের লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্র, ‘ভাতৃপ্রতিম' দেশ দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়া কিংবা চীন নয়৷'' এজন্য বিষয়টি নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে কোনো আলোচনা হবে না বলেও জানিয়েছে উত্তর কোরিয়া৷
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও ক্যানাডার উদ্যোগে আগামী ১৬ তারিখ ভ্যানকুভারে উত্তর কোরিয়া নিয়ে প্রায় ২০ দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে৷ তবে চীন তাতে অংশ নেবেনা বলে জানিয়েছে৷
ইনস্টাগ্রামের ছবিতে উত্তর কোরিয়া
প্রায়ই সংবাদপত্রের শিরোনামে থাকলেও উত্তর কোরিয়া দেশটি বিচ্ছিন্ন ও প্রায় অজানা৷ ব্রিটিশ ইনস্টাগ্রামার পিয়ের ডেপন্ট নিয়মিতভাবে উত্তর কোরিয়ায় গিয়ে সেখানকার দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ছবি তোলার চেষ্টা করেন৷
ছবি: DW/P.Depont
অজানার আকর্ষণ
উত্তর কোরিয়া গোপনে থাকতেই পছন্দ করে, বলা হয়ে থাকে৷ দেশটি কিন্তু বিদেশি পর্যটকদের আমন্ত্রণ জানিয়ে থাকে৷ উত্তর কোরিয়ায় পর্যটক হওয়ার অর্থ, বিশেষ ‘গাইড’-রা প্রতিপদে সঙ্গে থাকবে ও নজর রাখবে৷ এ সব সত্ত্বেও পিয়ের ডেপন্ট সাত বার উত্তর কোরিয়া যাত্রা করেছেন ও সেখানকার সাধারণ মানুষদের ছবি তুলেছেন৷
ছবি: DW/P. Depont
পুঁজিবাদের ভূত?
ডেপন্ট প্রথম উত্তর কোরিয়ায় যান ২০১৩ সালে৷ সেযাবৎ কর্তৃত্ববাদী দেশটিতে পরিবর্তন এসেছে, বলে তিনি লক্ষ্য করেছেন৷ বিগত দু’তিন বছরের মধ্যে ‘‘পিয়ংইয়াংয়ে নিজের সম্পদ প্রদর্শন করাটা গ্রহণযোগ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে৷’’ আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা সত্ত্বেও পিয়ংইয়াংয়ে মধ্যবিত্ত শ্রেণি বাড়ছে ও প্রচুর বাড়িঘর তৈরি হচ্ছে৷
ছবি: Pierre Depont
আলাপ করা সহজ নয়
ডেপন্ট দেখেছেন, পিয়ংইয়াংয়ের রাস্তায় মানুষজনের সঙ্গে কথা বলা সহজ নয়৷ প্রথমত, গাইডদের একজন সবসময় কান খাড়া করে শোনে৷ দ্বিতীয়ত, স্থানীয় বাসিন্দারা নিজেদের ফটো তুলতে দিতে বিশেষ পছন্দ করেন না৷ রাস্তাঘাটে মহিলারা ক্রমেই আরো ফ্যাশনদুরস্ত হয়ে উঠছেন বটে, তবে সেটা প্রধানত বড় শহরগুলোয়৷
ছবি: DW/P. Depont
শহর বনাম গ্রাম
পিয়ংইয়াংয়ের মেট্রো স্টেশনটি দেখলে চোখ ধাঁধিয়ে যায়: মনে হবে যেন কারুকার্য করা শ্বেতপাথরের দেওয়ালের ওপর সুবিশাল ঝাড়বাতি ঝুলছে৷ ডেপন্টের কাছে উত্তর কোরিয়া ‘‘ফটো তোলার একটা আশ্চর্য জায়গা,’’ কেননা এখানে রাস্তাঘাটে কোনো বিজ্ঞাপন নেই৷ অপরদিকে শহরে স্বাচ্ছল্যের নানা চিহ্ন চোখে পড়লেও, গ্রামাঞ্চলে এখনও চরম দারিদ্র্য বিরাজ করছে৷
ছবি: Pierre Depont
টুরিস্টরা যা দেখতে পান না...
...তা হলো উত্তর কোরিয়ার গ্রামাঞ্চলের মানুষদের বাস্তবিক পরিস্থিতি৷ সামরিক খাতে বিপুল বিনিয়োগ করলেও, দেশটি কৃষিপ্রধানই রয়ে গিয়েছে৷ ‘‘প্রত্যেকটি ছোট ক্ষেতে চাষ করা হয়, প্রতি বর্গমিটার জমি ব্যবহার করা হয়,’’ বলেছেন ডেপন্ট৷
ছবি: Pierre Depont
মেকি প্রাচুর্য?
টুরিস্টদের শহরের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয় বৈকি, তবে বড় বড় কৃষি সমবায়ের গাইডেড টুরে৷ ডেপন্ট দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর হামহুং-এর কাছে একটি কৃষি সমবায়ে যাওয়ার সুযোগ পান; সেখানকার ছোট্ট বাজারটিতে সুন্দর করে পণ্য সাজানো ছিল ও অনটনের কোনো চিহ্নই ছিল না – খুব সম্ভবত ‘‘শুধু লোক-দেখানো,’’ বলে ডেপন্ট মন্তব্য করেছেন৷
ছবি: DW/P.Depont
হালফ্যাশনের স্কুল, তবে সবার জন্য নয়
উত্তর কোরিয়ায় টুরিস্ট হিসেবে সেখানকার একটি এলিট স্কুল বা মডার্ন স্কুল না দেখে ছাড় নেই৷ সংডোওয়ান ইন্টারন্যাশনাল সামার ক্যাম্পটি পূর্ণ সংস্কারের পর আবার খোলা হয় ২০১৪ সালে৷ সেখানে ছেলেমেয়েরা সর্বাধুনিক আর্কেড গেম্স নিয়ে খেলছে আর তাদের ব্যবহারের জন্য গোটা বিশেক কম্পিউটার রাখা আছে দেখে ডেপন্টের মনে হয়, দৃশ্যটা ‘‘কিছুটা অবাস্তব৷’’
ছবি: DW/P.Depont
সর্বত্র মিলিটারি
দেশটির সত্তা ও সমাজের প্রাণকেন্দ্র হল মিলিটারি৷ দেশের জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ মিলিটারিতে কাজ করে৷ দেশের অর্থনৈতিক ক্ষমতার তুলনায় সামরিক খাতে পিয়ংইয়াংয়ের ব্যয় বিশ্বের বৃহত্তম মিলিটারি বাজেটগুলির মধ্যে পড়ে৷ উত্তর কোরিয়ার কচিকাঁচারা মিলিটারি প্রতীকে অভ্যস্ত – এমনকি খেলার জায়গাতেও৷
ছবি: Pierre Depont
কর্তাভজা
মিলিটারি, রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ এবং কিম জং-উন ও তাঁর পূর্বপুরুষদের ঘিরে ‘ব্যক্তি উপাসনা’ – এই হলো উত্তর কোরিয়ার কাহিনি৷ মহান নেতাদের কিংবদন্তিকে বাঁচিয়ে রাখতে ও তাঁদের সুবিশাল মূর্তিগুলোর পরিচর্যায় যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয়, তা দেখে ডেপন্ট চমৎকৃত৷