1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
ব্যবসা-বাণিজ্য

উন্নত দেশের স্বপ্নপূরণ করতে হলে রাজস্ব বাড়াতে হবে

সমীর কুমার দে ঢাকা
৪ জুন ২০১৮

প্রতি বছরই বাজেট আসে, চলে যায়৷ কিন্তু এতে জনগণ কতটা সুফল পায়? বাজেট নিয়ে কেন এত উত্তেজনা? কী থাকে বাজেটে? কীভাবে হয় বাজেট বাস্তবায়ন? এ সব নিয়েই কথা বলেছেন পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর৷

ছবি: DW

ডয়চে ভেলে: বাংলাদেশে প্রতি বছরই বাজেটের আকার বাড়ছে৷ এর কারণ কী?

ড. আহসান এইচ মনসুর: অর্থনীতির আকার বাড়ছে বেশ বড়ভাবেই৷ জিডিপির প্রবৃদ্ধি যদি ৭ শতাংশও হয়, যদিও সরকারি তরফ থেকে একটু বেশি বলা হচ্ছে, সেই সাথে যদি মুদ্রাস্ফীতি যোগ করি, তাহলে ১৩ থেকে ১৪ শতাংশ নমিনাল প্রবৃদ্ধি হচ্ছে আমাদের৷ বাজেট সেই তুলনায় যদি ১৭ বা ১৮ শতাংশ বাড়ে, জাতীয় আয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে, হতে পারে৷ বাংলাদেশে বাজেটের আকার কিন্তু বেশ ছোট৷ এখনো এটা জিডিপির ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ৷ আমাদের সামাজিক এবং অবকাঠামোগত ব্যয় করতে হবে৷ কাজেই এটা বাড়ানোর প্রয়োজন আছে৷ সামনে বাজেট আরো বাড়বে৷ সরকারকে এই ধরনের সেবায় আরো বিনিয়োগ করতে হবে৷

বাজেট বাস্তবায়নের হার কি সন্তোষজনক?

এখানে সমস্যা বহুবিধ৷ বাস্তবায়নের একটা দিক হলো ‘এক্সপেনডিচার কন্ট্রোলটা' ভালো৷ অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় এখানে বাজেটে যে ব্যয় ধরা হয়, তার চেয়ে বেশি হয় না৷ কিন্তু ম্যানেজমেন্টটা ভালো না৷ আমরা যেটা বলি, টাকা যেটা বিনিয়োগ হলো সেটা কি যথাযথভাবে বিনিয়োগ হয়েছে? এখানে প্রশ্ন চলে আসে৷ দেখা যায়, সেখানে গুণগতভাবে ভালো হয় না৷ জনগণের যে ধরনের সেবা পাওয়া উচিত, সেটা পাচ্ছে না৷ অবকাঠামো খাতে যে ধরনের ব্যয় ধরা হয়, সেটা অতিরিক্ত বলেই মনে হয়৷ যে পরিমাণ ব্যয় করা উচিত অনেক ক্ষেত্রে তার চেয়ে বেশি ব্যয় করা হচ্ছে৷ সেই ব্যয়ের প্রকৃত রিটার্নটা আমরা পাচ্ছি না৷ গুণগতভাবে যে রাস্তা তৈরি হচ্ছে তার মান ভালো নয়৷ আমরা যেটাকে বলি ভেল্যু ফর মানি৷ এটা খুব প্রকটভাবে আমাদের দেশে বিরাজমান৷

‘অল্প ব্যয় করে একটা দেশকে উপরে নেয়া সম্ভব নয়’

This browser does not support the audio element.

বাজেটে এডিপি গুরুত্বপূর্ণ৷ এর বাস্তবায়নের হার কেমন?

এডিপি বাস্তবায়নের হার কিছুটা এ সরকারের সময় উন্নতি হয়েছে এটা বলতে হবে৷ সরকারের যেটা আশা ৯০ শতাংশের উপরে, সেটা হয় না৷ ‘রিভাইজ বাজেটে' সেটা হয়৷ মূল বাজেটে ৮৪ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে৷ এটা সত্যি যে প্রতিবছর এডিপির আকার বাড়ছে৷ প্রতিবছর ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বাড়ছে৷ বাজেটের চেয়ে বেশি হারে বাড়ে এটা৷ বাস্তবায়ন কিন্তু দ্রুত বাড়ছে৷ এটা একটা সন্তোষজনক দিক বলতে হবে৷

এডিপি তো পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব, সেটা হয় না কেন? 

সম্ভব অবশ্যই৷ কিন্তু আরেকটা জিনিস হলো, বাস্তবতা৷ বাংলাদেশে প্রকিউরমেন্ট সিস্টেমে অনেক জটিলতা আছে৷ এটা কাটিয়ে উঠে ব্যয় করাটা কঠিন৷ এটাকে আমি বলি বজ্র আঁটুনি ফস্কা গিরো৷ অর্থাৎ মনে হচ্ছে খুব শক্ত ভাবে ধরা আছে৷ কিন্তু টাকাটা ভালোভাবে ব্যয় হয় না৷ এখানে ‘প্রসিডিউর' খুব কঠিন৷ কিন্তু কাজ ভালো হয় না৷ ‘প্রসিডিউর স্ট্রিক্ট' হওয়ার কারণে ব্যয় করতে দেরি হয়ে যায়৷ ফলে শেষ দু'মাসে অর্ধেকের বেশি ব্যয় করতে হয়৷ এটা কাঙ্খিত না৷ অথচ বাকি ১০ মাসে অর্ধেক ব্যয় হয়৷ এই কারণে গুণগত মান ধরে রাখতে পারে না৷

বাজটে মূল উদ্দেশ্য তো জনগণ৷ বাজেটে জনগণ কতটা সুফল পায়?

জনগণ সুফল তখনই পাবে যখন স্বাস্থ্য, শিক্ষা বা অন্যান্য যেসব সেবা আছে সেগুলো যদি আরো ভালো হতো, তাহলে জনগণ অবশ্যই সন্তুষ্ট হতো৷ এটা স্বীকার করতে হবে যে, সেবার মান বাড়েনি৷ চিকিৎসকরা সেভাবে সেবা দেয় না৷ শিক্ষকরা সেভাবে পারদর্শী না, আবার শিক্ষার মানও ভালো না৷ এ সব দিকে কঠোর নজর দিতে হবে৷ সরকারি বেতন কিন্তু স্বল্প না, এখন তারা সম্মানজনক বেতন পান৷ জনগণ যেভাবে কর দিচ্ছে, সেভাবে সেবা পাচ্ছে না৷

সরকারের রাজস্বের বড় অংশই আসে ভ্যাট থেকে৷ সেই তুলনায় আয়কর থেকে আয় বাড়ছে না, কারণ কী?

আয়কর থেকে আয় কম হওয়ার অনেকগুলো কারণ আছে৷ বিশ্বে অনেক দেশে বেতন থেকে উৎসে কর কাটা হয়৷ সেখান থেকে বড় অঙ্কের টাকা আসে৷ যুক্তরাজ্যে ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ আসে এখান থেকে৷ যুক্তরাষ্ট্রেও অনেক বড় অংক আসে এখান থেকেই৷ আমাদের দেশে বেতন থেকে উৎসে কর কাটা হয় না৷ এখানে মাত্র ৩ শতাংশ আসে এই খাত থেকে৷ এটা তো গ্রহণযোগ্য না, এখানে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে৷ আমাদের ন্যূনতম যে আয়ে ট্যাক্স দিতে হয় না, সেটাও বেশি৷ যুক্তরাষ্ট্রে মাথাপিছু আয় বছরে গড়ে ৬ হাজার ডলার৷ সেখানে সাড়ে ৪ হাজার ডলার আয় করলে ট্যাক্স দিতে হয়৷ আমাদের এখানে আড়াই লাখ আয় করলে ট্যাক্স দিতে হয় না৷ এবারও দাবি উঠেছে এটা তিন লাখ করার জন্য৷ এটা করলে এখন অনেক লোক আছেন যারা কর দিচ্ছেন, তাদের কর দিতে হবে না৷ এ থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে৷

বিদেশি বাজেটের সঙ্গে যদি আমাদের বাজেটের তুলনা করতে বলি?

আমাদের বাজেট স্বল্প আকারের৷ আমাদের বাজেটের আকার হচ্ছে জাতীয় আয়ের মাত্র ১৭ শতাংশ৷ বিদেশে এটা অনেক বেশি৷ ভারতেও এটা ২৪-২৫ শতাংশ৷ উন্নত দেশগুলোতে এটা ৩০-৩৫ শতাংশ৷ ৪০ শতাংশ পর্যন্তও হয়৷

উন্নতির শিখরে যাওয়ার যে স্বপ্ন আমরা দেখছি, তার জন্য বাজেটে কী পদক্ষেপ থাকা দরকার?

উন্নতির শিখরে যাওয়ার যে স্বপ্ন সরকার দেখে সেটাকে আমি সাধুবাদ জানাই৷ আমাদের সামনের দিকে তাকাতে হবে৷ শুধু তাকিয়ে থাকলে হবে না৷ কাজ করতে হবে৷ এখানে দু'টো কাজ করতে হবে৷ প্রথমটা হলো, আমরা যদি রাজস্ব বাড়াতে না পারি, তাহলে উন্নত দেশের যে স্বপ্ন সরকার দেখাচ্ছে, সেটা কোনোভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না৷ জাতীয় আয়ের ১০ শতাংশ কর নিয়ে আমরা কোনোমতেই ঐ লেভেলে যেতে পারব না৷ শিক্ষা ক্ষেত্রে আমরা ব্যয় করছি মাত্র ২ শতাংশ৷ স্বাস্থ্য খাতে আমরা ব্যয় করছি মাত্র ০ দশমিক ৭ শতাংশ৷ দারিদ্র বিমোচনে আমাদের ব্যয় হচ্ছে ১ দশমিক ৬ শতাংশ৷ কারণ আমাদের রাজস্ব কম৷ এই অল্প ব্যয় করে একটা দেশকে কিন্তু খুব উপরে নেয়া সম্ভব নয়৷ আমাদের কর আহরণটা ২০ শতাংশে নিতে হবে৷ দ্বিতীয়ত, সরকারের রাজস্ব বাড়লে, ব্যয় বাড়বে৷ সেটার প্রয়োজন আছে৷ এই ব্যয়টা যেন ভালোভাবে হয়, সেদিকে আগামী দিনের বাজেটে নজর রাখতে হবে৷

আপনার কোনো মতামত থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ