জাতিসংঘের লড়াই
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৩স্বভাবতই এবার জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল সিরিয়া যুদ্ধ এবং ইরানের বিতর্কিত পরমাণু কর্মসূচি৷ কিন্তু এর পাশাপাশি ১৯৩টি দেশের প্রতিনিধিরা শতাব্দীর উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বিভিন্ন বৈঠকে আলোচনা করছেন৷ উন্নয়শীল দেশগুলোর জন্য শতাব্দীর উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার লক্ষ্য হচ্ছে, ২০১৫ সালের মধ্যে দরিদ্রতার হার ৫০ ভাগে নামিয়ে আনা, প্রত্যেকটি শিশুর জন্য প্রাথমিক শিক্ষা, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর হার দুই তৃতীয়াংশ কমানো এবং বিশুদ্ধ পানি থেকে বঞ্চিত মানুষের সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনা৷
লক্ষ্যপূরণে বাধা
জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ডেভিড ম্যালোন লক্ষ্যপূরণের যে চিত্র তুলে ধরলেন, তাতে আশা এবং হতাশা দুটি দিকই রয়েছে৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ২০১৫ সালের মধ্যে লক্ষ্য পূরণের ক্ষেত্রে কিছু বাধা রয়েছে, বিশেষ করে চরম দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে লক্ষ্যপূরণ সম্ভব নাও হতে পারে৷
এ ক্ষেত্রে দাতা সংস্থাগুলোরও উন্নতি সাধনের প্রয়াস খুবই কম বলে জানালেন তিনি৷ জার্মান এনজিও ‘ভেল্টহুঙারহিল্ফে'-র প্রধান ভল্ফগাং ইয়ামান জানিয়েছেন, এশিয়ার দেশগুলোতে অর্থনৈতিক উন্নতি হওয়ায় সেখানে দারিদ্র্যের হার কমেছে৷ কিন্তু আফ্রিকায় সাহারার দক্ষিণাঞ্চলের পরিস্থিতি খুবই নাটকীয়৷ সেখানে ধনী ও গরিবের মধ্যে ব্যবধানটা বিশাল৷ এখনো ৯০ কোটি মানুষ খাবারের জন্য হাহাকার করে, এ সংখ্যাটা বিশ্বের সাত ভাগের এক ভাগ৷
তবে, এইচআইভি-র বিরুদ্ধে জাতিসংঘের লড়াইকে বেশ ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন ম্যালোন৷ অতীতের চেয়ে খুব কম সংখ্যক মানুষ এখন এইচআইভি-তে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানালেন তিনি, তবে কবে নাগাদ জাতিসংঘ তার লক্ষ্যে পৌঁছাবে সেটা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে তাঁর৷
শিক্ষার পথে জাতিসংঘ সঠিক পথেই এগুচ্ছে উল্লেখ করে বললেন, এক্ষেত্রে জাতিসংঘের এখনও অনেক কিছু করার আছে৷ বেশিরভাগ শিশুই স্কুলে যাচ্ছে, কিন্তু এখনো ৬ কোটি শিশু স্কুলে যাওয়া থেকে বঞ্চিত৷ আর কেবল স্কুলে পাঠালেই হবে না শিক্ষার মানেও পরিবর্তন আনা জরুরি বলে মনে করেন ম্যালোন৷
বিশুদ্ধ খাবার পানি পানে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন
শতাব্দীর উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অন্যতম ইস্যু ছিল ৬০ কোটি মানুষকে বিশুদ্ধ পানির আওতায় আনা৷ বিশ্বের ৯০ ভাগেরও বেশি মানুষ এখন বিশুদ্ধ খাবার পানি পাচ্ছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ৷ ত্রাণ ও অর্থ সহায়তা ছাড়া এশিয়ায় এই লক্ষ্যপূরণ সম্ভব হয়েছে৷
লক্ষ্যপূরণে পরিবর্তন দরকার
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে এই ইস্যুতে আবারো আলোচনা করতে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বুধবার একমত হয়েছে সদস্য দেশগুলো৷
সাবেক জার্মান প্রেসিডেন্ট হর্স্ট ক্যোলার বলেছেন, উন্নয়নের ক্ষেত্রে পুরোনো ধ্যানধারণার পরিবর্তন আনা উচিত, তাহলেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে৷ সেইসাথে ক্যোলার যোগ করলেন, বিশ্বজুড়ে সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টিতে জোর দিতে৷ কেননা ২০৩০ সালের মধ্যে তরুণদের সংখ্যা দাঁড়াবে ৪০ কোটিতে এবং তাদের চাকুরি ও আয়ের চাহিদা পূরণের বিষয়টি অনেক বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়াবে৷