ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তানের মতো দেশে পরীক্ষাই হচ্ছে না করোনার। সতর্ক করল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। অ্যামেরিকায় প্রথম ভ্যাক্সিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ।
বিজ্ঞাপন
পরীক্ষা করতেই হবে। সর্দি-কাশির সামান্য লক্ষ্যণ দেখলেই যেতে হবে চিকিৎসকের কাছে। করোনা ভাইরাস নিয়ে নতুন সতর্ক বার্তা জারি করল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তাদের বার্তার সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লাইন-- 'টেস্ট, টেস্ট টেস্ট'। এরই মধ্যে ভারতে করোনায় মৃত্যু হল আরও একজনের।
ইউরোপ, অ্যামেরিকার মতো পশ্চিম বিশ্বে কার্যত মহামারির চেহারা নিয়েছে করোনা ভাইরাস। তার আগে চীনে মৃত্যু হয়েছে হাজার হাজার মানুষের। গোটা বিশ্ব কার্যত অবরুদ্ধ। ইটালি, জার্মানি, ফ্রান্স, অ্যামেরিকায় প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। কিন্তু সেই তুলনায় ভারতীয় উপমহাদেশ কিংবা আফ্রিকায় আক্রান্তের সংখ্যা অনেকটাই কম। এর কারণ কি এ সমস্ত জায়গায় করোনার প্রকোপ কম, না কি সাধারণ মানুষ করোনার লক্ষণ থাকা সত্ত্বেও হাসপাতালে যাচ্ছেন না? এটাই এখন সব চেয়ে বড় প্রশ্ন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কবার্তাতেও সে প্রশ্নেরই ইঙ্গিত রয়েছে। তথ্য বলছে, অপেক্ষাকৃত গরিব দেশগুলিতে সাধারণ মানুষ শরীর খারাপ হলেও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাচ্ছেন না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী, দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রতি ১০ লক্ষে চার হাজার ৮০০ জন মানুষ করোনার পরীক্ষা করাচ্ছেন। সেখানে ভারতে প্রতি ১০ লক্ষে করোনা পরীক্ষা করাতে যাচ্ছেন মাত্র তিন জন। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, অপেক্ষাকৃত গরিব দেশগুলিতে করোনার সংক্রমণ কতটা ঘটছে, এখনও তা স্পষ্ট করে বোঝাই যাচ্ছে না। প্রথম পর্বে চিকিৎসা হলে করোনার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। কিন্তু তা চেপে রাখলে মৃত্যুর আশঙ্কা বাড়ে। ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে মৃত্যুর হার হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। পাশাপাশি আরও একটি প্রশ্ন উঠছে। এ সমস্ত দেশে করোনা পরীক্ষা করার যথেষ্ট বন্দোবস্ত আছে তো?
করোনা আতঙ্ক: কীভাবে কোয়ারান্টিন উপভোগ করবেন
করোনা ভাইরাস বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে৷ ছোঁয়াচে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধে আক্রান্তদের ‘আইসোলেশনে’, রাখা হচ্ছে৷ সন্দেহভাজনদেরও ১৪ দিন হোম কোয়ারান্টিনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে৷ বুদ্ধি খাটালে কোয়ারান্টিনও হতে পারে উপভোগ্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa/SvenSimon
বই পড়ে
চরম ব্যস্ত এ পৃথিবীতে সারা বিশ্বেই বই পড়ুয়াদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে৷ কোয়ারান্টিনের সময়ে বই হয়ে উঠতে পারে আপনার প্রিয় সঙ্গী৷ এত দিন ‘পড়ব, পড়ব’ করেও সময়ের কারণে যে বইগুলো পড়ে উঠতে পারছিলেন না, সেগুলো নিয়ে বসে যেতে পারেন৷
কোয়ারান্টিনে থাকার সময় আপনি নতুন নতুন রেসিপিতে রান্নার চেষ্টা করতে পারেন৷ এমন সব খাবার রান্না করতে পারেন যা খেলে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়বে৷
ছবি: Miguel Medina/AFP/Getty Images
শরীরচর্চা
দৈনন্দিন কাজের চাপে অনেকেই শরীরচর্চার সময় পান না৷ কোয়ারান্টিনে থাকার সময় আপনি অনায়াসেই শরীরচর্চা করতে পারেন৷ তবে বাইরের কোনো জিমে যেতে পারবেন না৷ ঘরে ব্যায়ামের যন্ত্র না থাকলেও চিন্তা নেই৷ করতে পারেন ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ বা যোগব্যায়াম৷ এটা একইসঙ্গে আপনার শরীরকে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য সক্ষম করে তুলবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K.-D. Gabbert
ঘরদোর পরিষ্কার করা
কোয়ারান্টিনে থাকার সময় আপনি বাড়িঘর ঝকঝকে তকতকে করে মনের মতো সাজিয়ে নিতে পারেন৷
করোনা ভাইরাসের কারণে সারা বিশ্বেই মেলা, কনসার্ট, সম্মেলনসহ নানা অনুষ্ঠান আয়োজন বন্ধ হয়ে গেছে৷ খেলা হচ্ছে দর্শকহীন মাঠে৷ এ নিয়ে মন খারাপ না করে আপনি সহজেই অনলাইনে নানা সরাসরি অনুষ্ঠানের দর্শক হতে পারেন৷
ছবি: DW/R. Akbar Putra
দেখতে পারেন টেলিভিশন
এখন কত নাটক, সিনেমা, টিভি সিরিজ বা ওয়েব সিরিজ হচ্ছে৷ টেলিভিশনে সেগুলো দেখে নিতে পারেন৷
১৪ দিনের কোয়ারান্টিনে থাকলে আপনার হাতে তখন অফুরন্ত সময়৷ এই সময়ে নানা ধরনের বোর্ড গেম খেলে মস্তিষ্ক ঝালিয়ে নিতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Stache
আয়করের হিসাব-নিকাশ
হাস্যকর শোনালেও এই সময়ে ঠান্ডা মাথায় বসে আপনি নিজের আয়করের হিসাবনিকাশ করে ফেলতে পারেন৷ তবে খুব বেশি চাপের হয়ে গেলে হাল ছেড়ে দেওয়াই ভালো৷
ছবি: Colourbox
দক্ষতা বাড়াতে নতুন কিছু শেখা
কোয়ারান্টিনে থাকার দিনগুলোতে অনলাইন থেকে আপনি নতুন কিছু শিখতে পারেন৷ শিখতে পারেন নতুন কোনো ভাষা৷ অনলাইনে সহজেই এটা করা যায়, কোথাও কোথাও বিনামূল্যেই পাবেন৷ তাই কোয়ারেন্টাইনে সময় কিভাবে কাটাবেন তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই৷
ছবি: Colourbox
স্মৃতি রোমন্থন
কোথাও বেড়াতে গিয়েছিলেন, দারুণ সময় কাটিয়েছেন৷ তুলেছেন অসংখ্য ছবি৷ কোয়ারান্টিনের সময় খুলে বসতে পারেন সেসব ছবির অ্যালবাম৷ মনে মনে চলে যেতে পারেন সেই সময়ে৷ কিংবা বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে কাটানো আনন্দের স্মৃতি রোমন্থন করেও কাটিয়ে দিতে পারেন বন্দি থাকার সময়টা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Schickert
10 ছবি1 | 10
ভারতে এখনও পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১২৮। মঙ্গলবার মুম্বইয়ে মৃত্যু হয়েছে আরও একজনের। সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল তিন।যদিও সোমবার থেকেই আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। পাকিস্তানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা একদিনে অনেকটা বেড়ে আপাতত ১৮৪। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী দুই সপ্তাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ইতিমধ্যে করোনার সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য একাধিক ব্যবস্থা নিয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে স্কুল, কলেজ। জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। কোথাও কোথাও বন্ধ সিনেমা হলও। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে একটাই, অসুখধরা পড়ছে তো?
ইউরোপের অবস্থা গত এক দিনে আরও আশঙ্কাজনক হয়েছে। ইটালিতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। মোট আক্রান্ত প্রায় ২৮ হাজার। মাত্র চার দিন আগেই সংখ্যাটা ছিল ১৫ হাজার। ফ্রান্সের অবস্থাও ভয়াবহ। সে দেশে এখনও পর্যন্ত ১৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত ছয় হাজার ৬০০ জন। দেশ জুড়ে সতর্কবার্তা আগেই ঘোষণা করেছিল ফরাসি সরকার। মঙ্গলবার থেকে রাস্তায় নামানো হচ্ছে এক লক্ষ পুলিশ। যাদের দায়িত্ব হবে মানুষের গতিবিধির উপর নজর রাখা। অপ্রয়োজনে কেউ রাস্তায় বেরলেই ১৩৫ ইউরো জরিমানা করা হবে বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এরই মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প দেশে একসঙ্গে ১০ জনের বেশি ব্যক্তির জমায়েতের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। রেস্তোরাঁ, ফুড কোর্ট, বার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। হোয়াইট হাউস করোনা ভাইরাস নিয়ে নতুন অ্যাডভাইসারি জারি করেছে।
জার্মানিতেও ভাইরাসের সংক্রমণ ক্রমশ বাড়ছে। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছয় হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। পোল্যান্ডেও ছড়াচ্ছে ভাইরাস। সোমবার সে দেশের পরিবেশমন্ত্রীর শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণ মিলেছে। পোল্যান্ডে এখনও পর্যন্ত ১৫৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এরই মধ্যে রাশিয়া মে মাস পর্যন্ত সমস্ত ভিসা বাতিল করেছে। অর্থাৎ, মে পর্যন্ত সে দেশে বিদেশ থেকে কোনও নাগরিক যেতে পারবেন না।
এ দিকে সোমবার অ্যামেরিকার একটি সংস্থা দাবি করেছে, করোনার ভ্যাকসিনের প্রথম পরীক্ষা তারা করেছে সিয়াটেলে। ৪৩ বছরের এক মহিলার শরীরে পরীক্ষামূলক ভাবে ভ্যাক্সিন দেওয়া হয়েছে। যদিও তার ফলাফল বোঝার জন্য এখনও বহুমাস অপেক্ষা করতে হবে।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এপি, এএফপি)
করোনা রুখতে দিল্লিতে গোমূত্রের আজব পার্টি
একুশ শতকে এসেও প্রচার করা হচ্ছে, গোমূত্র খেলে শরীর শুদ্ধ হয়ে যাবে, হবে না করোনা। এমনই দাবি নিয়ে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে আয়োজিত হল 'গোমূত্র পার্টি'। আয়োজনে অখিল ভারত হিন্দু মহাসভা।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Qadri
গোমূত্র পার্টি
চীনে যখন করোনার প্রকোপ শুরু হয়ে ছিল, তখনই বিজেপি এবং তার শাখা সংগঠনগুলির কোনও কোনও নেতা বলেছিলেন, গোমূত্র পান করলে করোনা হবে না। ভারতে করোনা ভাইরাস প্রবেশ করার পরে সেই আশ্চর্য কাজটিই প্রকাশ্যে করে দেখাল গেরুয়া শিবির। আয়োজন হল গোমূত্র পার্টির।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Qadri
বাবা চক্রপানি মহারাজ
স্বঘোষিত এই বাবাজির ধর্মীয় গোষ্ঠীর নাম অখিল ভারত হিন্দু মহাসভা। কেন্দ্রীয় শাসক দল বিজেপির সঙ্গে তাঁর ভালই ঘনিষ্ঠতা। এর আগেও বিতর্কিত মন্তব্য করে খবরের শিরোনামে এসেছেন তিনি। কেরালায় বন্যায় সময় বলেছিলেন, যাঁরা গোমাংস খান, তাঁদের ত্রাণ দেওয়া উচিত নয়।
ছবি: AFP/J. Andrabi
গোমূত্র ভক্ত
সেই চক্রপানি বাবাই এ বার দিল্লিতে গোমূত্র পার্টির আয়োজন করেছিলেন। যেখানে প্রায় ২০০ জন যোগ দিয়েছিলেন। গোমূত্র, গোবর, দুধ, ঘি দিয়ে তৈরি হয়েছিল পানীয়। ভক্তরা খেলেনও তা ঢকঢক করে। এতেই না কি প্রতিহত হবে করোনা।
ছবি: Reuters/D. Siddiqui
বিজেপির লাইনেই বাবাজি
চক্রপানি মহারাজ প্রথম নন, এর আগে গোমূত্র খেয়ে করোনা প্রতিহত করার কথা বলেছিলেন আসামের বিজেপি নেত্রী সুমন হরিপ্রিয়। উত্তরপ্রদেশ থেকে জেতা বিজেপির বিতর্কিত সাংসদ প্রজ্ঞা ঠাকুর বলেছিলেন গোমূত্র খেলে ক্যান্সারও আটকানো যায়।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Qadri
কারা গেলেন পার্টিতে
শনিবার চক্রপানি মহারাজের গোমূত্র পার্টিতে অংশ নিয়েছিলেন প্রায় ২০০ জন। তাঁদের অধিকাংশই মহারাজের ভক্ত। বহু গরিব মানুষ নিছক অন্ধবিশ্বাস থেকে হাজির হয়েছিলেন সেখানে।
ছবি: Reuters/D. Siddiqui
মাথায় হাত চিকিৎসকদের
গোমূত্র পার্টির কথা শুনে মাথায় হাত চিকিৎসকদের। তাঁদের বক্তব্য, স্বঘোষিত বাবাজিরা বলছেন গোমূত্র খেলে শরীরের ইমিউনিটি বৃদ্ধি পাবে। অর্থাৎ, রোগের সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা বাড়বে শরীরে। কিন্তু বাস্তব ঠিক তার বিপরীত। গোমূত্র এবং গরুর গোবর খেলে শরীর আরও খারাপ হতে পারে।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Qadri
হতে পারে যক্ষ্মা
দিল্লির এক চিকিৎসকের বক্তব্য, কিছুদিন আগে উত্তরাখণ্ডে গোমূত্র খেয়েছিলেন এক ব্যক্তি। প্রবল শরীর খারাপ নিয়ে কিছুদিন আগে তিনি এসেছিলেন চিকিৎসকের কাছে। তাঁর গোটা শরীরে যক্ষ্মা ছড়িয়ে গিয়েছে।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Qadri
কে বোঝে কার কথা
এক দিকে চিকিৎসকরা যখন বিজ্ঞানের কথা বলছেন, তখন হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দলের মদতে স্বঘোষিত বাবাজিরা দিকে দিকে গোমূত্র পার্টির আয়োজন করে বেড়াচ্ছেন। প্রশাসনও তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
ছবি: AFP/J. Andrabi
গ্রেফতার করা হোক
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রাক্তন আমলার বক্তব্য, চাইলে এই বাবাজিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যায়। কিন্তু সরকারের সদিচ্ছার অভাবে সে কাজ হচ্ছে না।