নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত কেউ কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে পারবেন না৷ এমনকি প্রধানমন্ত্রীও নন৷
বিজ্ঞাপন
বুধবার দুপুরে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি৷
নির্বাচনী আচরণবিধির ব্যাখ্যা দিয়ে ইসি সচিব সাংবাদিকদের বলেন, যেসব প্রকল্প আগেই নেয়া হয়েছে, সেগুলো চালিয়ে নিতে আইনে কোনো বাধা নেই৷
‘‘ভোটকে কেন্দ্র করে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড, ভিজিডি প্রদান বা টিন (ঢেউ টিন) দেয়া, ভিজিএফ কার্ড দেয়া, মানুষকে সহযোগিতা করা– এগুলো যাতে না করা হয়,'' বলেন ইসি সচিব৷
নির্বাচনের আচরণবিধি অনুযায়ী লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে এমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি৷
নতুন কোনো উন্নয়ন প্রকল্প নয়
দক্ষিণ এশিয়ার নির্বাচন কমিশনগুলো
বাংলাদেশ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা উঠে যাবার পর দক্ষিণ এশিয়াতে কেবল পাকিস্তানেই এটি চালু আছে৷ তবে এ অঞ্চলে যেমন রাজতন্ত্র আছে, তেমনি আছে এশিয়ার সবচেয়ে পুরনো গণতন্ত্রও৷
ছবি: Wakil Kohsar/AFP/Getty Images
বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন
বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৯ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি ও সংসদ নির্বাচন, ভোটার তালিকা তৈরি, নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনঃনির্ধারণ, সকল স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচন ও আনুষঙ্গিক কার্যাদির সুষ্ঠু সম্পাদন কমিশনের দায়িত্ব৷ কমিশন স্বাধীন এবং কেবল সংবিধান ও আইনের অধীন হবেন। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সকল কর্তৃপক্ষের কর্তব্য।
ছবি: DW/M. M. Rahman
ভারতের নির্বাচন কমিশন
ভারতের নির্বাচন কমিশন পাঁচটি স্বায়ত্ত্বশাসিত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের একটি৷ মূলত লোক সভা, রাজ্য সভা, রাজ্যের বিধানসভা, প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আয়োজন করার দায়িত্ব কমিশনের৷ এছাড়া কোনো বিশেষ সময়ে যখন বিদ্যমান আইনে সুরাহা হচ্ছে না, তখন নির্বাচন কমিশনের সেখানে ‘যথাযথ উপায়ে’ ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা আছে৷
ছবি: A.K Chatterjee
পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন
পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে৷ কোনো সরকারের পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ হবার পর বা কোনো কারণে সংসদ বিলুপ্তির পর এই সরকার দায়িত্ব নেয়৷ তারা একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে৷ তবে নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের৷ কমিশন জাতীয়, প্রাদেশিক ও অন্যান্য স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করে৷
ছবি: AAMIR QURESHI/AFP/Getty Images
শ্রীলঙ্কার নির্বাচন কমিশন
এশিয়ার সবচেয়ে পুরোনো গণতন্ত্র হলো শ্রীলঙ্কা৷ সেখানেও রাষ্ট্রপতি, সংসদ, প্রাদেশিক ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের৷
ছবি: AP
মালদ্বীপের নির্বাচন কমিশন
মালদ্বীপে আলাদা নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে মাত্র এক দশক আগে৷ ২০০৮ সালের আগষ্টে এই স্বাধীন কমিশন প্রতিষ্ঠিত হয়৷ এর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন নির্বাচন কমিশনারের কার্যালয় নির্বাচন আয়োজন করত৷ পরে এই অফিসটি রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের অধীনে চলে যায়৷ রাষ্ট্রপতিই কমিশনার নিয়োগ দিতেন৷
ছবি: ADAM SIREII/AFP/Getty Images
নেপালের নির্বাচন কমিশন
১৯৫০ সালের নেপাল বিপ্লবের মধ্য দিয়ে নেপালের নির্বাচন কমিশনের জন্ম৷ এটি একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান৷ শুধু জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচন অনুষ্ঠানই নয়, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের নিবন্ধন করার দায়িত্ব রয়েছে দেশটির নির্বাচন কমিশনের কাঁধে৷ ছয় জন কমিশনারের সমন্বয়ে গঠিত কমিশন ছয় বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে৷
ছবি: PRAKASH MATHEMA/AFP/Getty Images
ভূটানের নির্বাচন কমিশন
ভূটানে রাজতন্ত্র আছে৷ তবে সংসদও আছে৷ সংসদের নির্বাচন আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন৷ প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, সংসদের স্পিকার, জাতীয় কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলের প্রধানের দেয়া তালিকা থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও দুইজন কমিশনারকে নিয়োগ দেন রাজা৷ কমিশনের ক্ষমতাও অনেক৷ নির্বাচন ছাড়াও বিধি তৈরি, নির্বাচন পদ্ধতি রিভিউ করাসহ যে কাউকে তলব, তদন্ত ও কিছু অ্যাডজান্কটিভ ক্ষমতা রয়েছে৷
ছবি: AP
আফগানিস্তানের নির্বাচন কমিশন
যুদ্ধ-বিগ্রহ আর সহিংসতার কারণে আফগানিস্তানে ক্ষমতা বারবার পরিবর্তিত হয়েছে৷ সে অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন বা নির্বাচন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষমতাতেও তার প্রভাব পড়েছে৷ তবে সংবিধান অনুযায়ী, রেফারেন্ডাম, রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে একেবারে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত সুষ্ঠু ও প্রভাবমুক্ত নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের৷
ছবি: WAKIL KOHSAR/AFP/Getty Images
8 ছবি1 | 8
হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, কোনো উন্নয়ন প্রকল্পে নতুন করে বরাদ্দ না দেয়ার বিষয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে৷
ইসি সচিব বলেন, ‘‘পুরনো প্রকল্পে অর্থ ছাড় করায় বাধা না থাকলেও নতুন কোনো প্রকল্প গ্রহণ, অনুমোদন ও অর্থ বরাদ্দ করা যাবে না৷ কেউ কোনো ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করতে পারবেন না৷''
আগে নেয়া কোনো প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর এখন স্থাপন করা যাবে কিনা জানতে চাইলে হেলালুদ্দীন বলেন, ‘‘কোনো প্রকার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা যাবে না৷ চাঁদা দেয়া, মসজিদ, মন্দিরে চাঁদা দেয়া– কিছুই করা যাবে না৷''
তখন সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন যে, প্রধানমন্ত্রী পারবেন কিনা৷ তখন সচিব জানান যে, প্রধানমন্ত্রীও পারবেন না৷
সরকারি সুবিধাভোগী জায়গায় থেকে সরকারি সুবিধাভোগী, অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সংসদ উপনেতাসহ অন্যরা নির্বাচনকালীন সময়ে কোনো উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন, ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন কিংবা অনুদান বা সহায়তা দিলে আচরণবিধির লঙ্ঘন হবে বলে জানান তিনি৷
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ১২ দফা
ইসি সচিব হেলালুদ্দীন বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করা হবে৷সেখান থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় এবং ভোটের আগে-পরে শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বজায় রাখতে ১২ দফা নির্দেশনা দেয়া হবে৷নির্দেশনায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান জোরদার করা, সংখ্যালঘুদেরনিরাপত্তা নিশ্চিত করা, নারী ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যাওয়া নির্বিঘ্ন করা এবং ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা ও নির্বাচনি মালামালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেয়া হবে৷
সর্বোপরি নির্বাচন সুষ্ঠু করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর করণীয় কী সেসব বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দেয়াসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা হবে বলে জানান তিনি৷