নদীর পাড়ের ভাঙন হোক, অথবা সমুদ্র উপকূলের ক্ষয় – এর পেছনে মানুষের কার্যকলাপ অনেকাংশেই দায়ী৷ প্রকৃতির কাজে হস্তক্ষেপ করার বদলে প্রকৃতির সঙ্গে মানিয়ে চললেই উপকার হয়, যেমনটা জার্মানির উত্তর সাগর উপকূলে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/Traverse City Convention & Visitors Bureau
বিজ্ঞাপন
শীতকালে জোয়ার এলে সবার আগে উত্তর সাগরের দ্বীপগুলি পানির নীচে চলে যায়৷ তখন প্রায় ৬ মিটার পর্যন্ত উঁচু ঢেউ উপকূলে আছড়ে পড়ে৷ হালিগেন নামের ক্ষুদ্র দ্বীপপুঞ্জ পানির স্তরের বেড়ে চলা উচ্চতার কারণে হুমকির মুখে পড়ছে৷ হালিশ হোগে শহরের মেয়র মাটিয়াস পিপগ্রাস বেশ কয়েক বছর ধরে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘হালিগেন দ্বীপপুঞ্জ চরম হুমকির মুখে রয়েছে৷ কারণ, আমাদের বার বার দেখতে হচ্ছে, যে উত্তর সাগর ফুলে ফেঁপে উঠলেই আমাদেরও টিলার উপর চলে যেতে হচ্ছে৷''
প্রত্যেকবার বন্যার ফলে বালুতট ও জমির অংশ উধাও হয়ে যায়৷ উপকূলবর্তী এলাকার মানুষ অতীতে কৃত্রিম বাঁধ তৈরি করে বন্যা প্রতিরোধের চেষ্টা করেছেন৷ তবে তাতে কাজ হয়নি৷ প্রাচীর কয়েক মিটার উঁচু শক্তিশালী ঢেউ আটকাতে পারেনি৷ হয় তা ভেঙে গেছে, কিংবা বালির নীচে ডুবে গেছে৷
এর আরও বড় কুফল হলো, প্রাচীরের অন্য দিকে শক্তিশালী স্রোত জমি ডুবিয়ে দিয়েছে৷ অর্থাৎ উপকূলের সুরক্ষার বদলে প্রাচীর তার ভাঙন তরান্বিত করেছে৷ সর্বশক্তি প্রয়োগ করে সমুদ্রকে ঠেকিয়ে রাখার প্রচেষ্টা আজকের দিনে কতটা প্রাসঙ্গিক – বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব যখন হিসাব করা সম্ভব?
সৈকত শহর কক্সবাজার
দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, দিগন্ত বিস্তৃত নীল সমুদ্র, আকাশ ছোঁয়া পাহাড়সহ বেশ কিছু আকর্ষণীয় স্থান রয়েছে বাংলাদেশের পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারে৷ ঢাকা থেকে সড়ক ও আকাশ পথে সরাসরি যাওয়া যায় এ সৈকত শহরে৷
ছবি: DW/M. Mamun
দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত
বিস্তীর্ণ বেলাভূমি, সারি সারি ঝাউবন, সৈকতে আছড়ে পড়া বিশাল ঢেউ৷ এসব সৌন্দর্য্যের পসরা নিয়ে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে প্রকৃতি রচনা করেছে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত৷ ১২০ কিলোমিটার বিস্তৃত এ অবিচ্ছিন্ন সৈকত কক্সবাজার শহর থেকে শুরু করে টেকনাফের বদরমোকাম পর্যন্ত একটানা প্রায় ১২০ কিমি. পর্যন্ত দীর্ঘ৷
ছবি: DW/M. Mamun
পরিচ্ছন্ন সৈকত
পর্যটকদের কাছে কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকতটি জনপ্রিয় হওয়ার অন্যতম কারণ এর পরিচ্ছন্ন পরিবেশ৷
ছবি: DW/M. Mamun
ছুটিতে ভিড় বেশি
এই সময় কক্সবাজারে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় থাকে৷ প্রচুর হোটেল আর রিসোর্ট থাকা সত্ত্বেও সেই সময় রাত যাপনের জায়গা পাওয়া কঠিন হয়ে যায়৷
ছবি: DW/M. Mamun
হোটেল, রিসোর্ট
কক্সবাজার শহরের কলাতলী সৈকত এলাকায় পাঁচ তারকা মানের একটি হোটেল৷ এই সৈকত শহরে পাঁচ তারকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন মানের অনেক হোটেল আর রিসোর্ট আছে৷ এ সব হোটেলে ধরনভেদে ৫০০ থেকে ৩০,০০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়ায় রাত যাপনের ব্যবস্থা আছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
লাইফ গার্ড
লাবনী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টে সমুদ্র স্নানে নামা পর্যটকদের উপর সর্বক্ষণ নজর রাখেন লাইফ গার্ডের সদস্যরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
সূর্যাস্ত
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে মনোরম সূর্যাস্তের দৃশ্য৷
ছবি: DW/M. Mamun
ফিশারি ঘাট
বাঁকখালী নদীর তীরে অবস্থিত এই ঘাট৷ নানা ধরণের সামুদ্রিক মাছ দেখতে হলে যেতে হবে সেখানে৷ জেলেরা সমুদ্র থেকে মাছ ধরে এনে এখানেই জড়ো করেন বিক্রির জন্য৷
ছবি: DW/M. Mamun
নাজিরারটেক শুঁটকি কেন্দ্র
বঙ্গোপসাগর আর বাঁকখালী নদীর মোহনায় কক্সবাজারের নাজিরারটেকে দেশের সবচেয়ে বড় এই শুঁটকি কেন্দ্রটি অবস্থিত৷ সেখানে শুঁটকি তৈরির মূল মৌসুম অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত৷ সেখানকার মাছের শুঁটকি বিদেশে রপ্তানিও হয়৷
ছবি: DW/M. Mamun
সৈকতে ঘুড়ি উৎসব
কক্সবাজার সৈকতে বর্ণিল ঘুড়ি উৎসবে মেতেছেন পর্যটকরা৷ প্রতিবছর জানুয়ারির শেষ কিংবা ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশ ঘুড়ি ফেডারেশন আকর্ষণীয় এই ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন করে৷
ছবি: DW/M. Mamun
মেরিন ড্রাইভ রোড
কক্সবাজার শহর থেকে সমুদ্র লাগোয়া মেরিন ড্রাইভ রোড চলে গেছে টেকনাফ পর্যন্ত৷ সড়কটি ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ৷
ছবি: DW/M. Mamun
হিমছড়ি
কক্সবাজার থেকে প্রায় বারো কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হিমছড়ি সমুদ্রসৈকত৷ পাহাড় আর সমুদ্রের মিতালি পর্যটকদের খুব প্রিয়৷
ছবি: DW/M. Mamun
লাল কাঁকড়া
হিমছড়ির সৈকতে লাল কাঁকড়া৷ ভাটার সময় শুকিয়ে যাওয়া সৈকতে দলে দলে বেড়াতে আসা লাল কাঁকড়াদের দেখা যায় হিমছড়িতে৷
ছবি: DW/M. Mamun
ইনানী সমুদ্রসৈকত
কক্সবাজার থেকে প্রায় বিশ কিলোমিটার পূর্ব দিকে অবস্থিত আরেকটি আকর্ষণীয় সমুদ্রসৈকত ইনানী৷ এখানে রয়েছে বিস্তীর্ণ পাথুরে সৈকত৷ সমুদ্র থেকে ভেসে এসে এখানকার বেলাভূমিতে জমা হয়েছে প্রচুর প্রবাল পাথর৷ ইনানীর সৈকতের সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যায় সেন্টমার্টিন সৈকতের৷
ছবি: DW/M. Mamun
আরেকটি পাথুরে সৈকত
ইনানী সৈকতের মতো আরেকটি পাথুরে সৈকত হাজামপাড়া৷ কক্সবাজার শহর থেকে মেরিন ড্রাইভ রোড ধরে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরের এ সমুদ্রসৈকতে পর্যটকের আনাগোনা খুবই কম থাকে৷
ছবি: DW/M. Mamun
বর্ণিল সৈকত
বাংলাদেশের বর্ণিল সমুদ্রসৈকত টেকনাফ৷ কক্সবাজার থেকে মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে এ সৈকতের অবস্থান৷ এখানকার সৈকতে জেলে নৌকাগুলো বর্ণিল পতাকা আর রঙে সাজিয়ে রাখেন জেলেরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
15 ছবি1 | 15
গবেষকরা উপকূল সুরক্ষার নতুন পথ খুঁজছেন৷ সমুদ্রতটে জীবনযাত্রা নিরাপদ রাখতে কী করা উচিত? বিজ্ঞানীদের আইডিয়া হলো, উপকূল এলাকার মানুষকেই জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে ঘর করতে শিখতে হবে, সমুদ্রের পানিকে ভিতরে আসতে দিতে হবে৷ এমন আইডিয়ার কথা শুনলে প্রথমে অবাক লাগতে পারে, কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে গবেষকদের সঙ্গে একমত হতেই হয়৷ মেরিন বায়োলজিস্ট কার্স্টেন রাইসে বলেন, ‘‘অনেক কাল ধরে সৈকতের একেবারে কাছে হোটেল তৈরি করা হয়েছে৷ কাঠের থামের সারি বসানো হয়েছে, সিমেন্টের তৈরি বোল্ডারের স্তূপ সৃষ্টি করা হয়েছে৷ কিন্তু উত্তর সাগর তার ফাঁক দিয়ে বালি শুষে নিয়েছে৷ তখন অন্য জায়গা থেকে বালি এনে ঘাটতি পূরণ করা হয়েছে৷''
কয়েক বছর ধরে উপকূল সুরক্ষার এই নতুন পদ্ধতি জার্মানির স্যুল্ট দ্বীপে প্রয়োগ করা হচ্ছে৷ প্রতি শীতে কয়েক মিটার উচ্চতার বালু সমুদ্রে ধুয়ে যায়৷ ফলে উপকূলবর্তী এলাকার সুরক্ষা দুর্বল হয়ে পড়ে৷ তখন লম্বা পাইপের সাহায্যে বালু সরবরাহ করে উপকূলকে আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়৷
উপকূল থেকে সামান্য দূরত্বে একটি জাহাজ সমুদ্রের তলদেশ থেকে বালু শুষে নিয়ে পাইপের মাধ্যমে সমুদ্রতটে তা ছড়িয়ে দেয়৷ এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রায় ১০ লক্ষ বর্গ মিটার বালু উদ্ধার করা হয়৷ প্রতি বছর এর জন্য প্রায় ৬০ লক্ষ ইউরো ব্যয় হয়৷ শীতে যা হারিয়ে যায়, গ্রীষ্মে তা আবার উদ্ধার করা হয়৷
হালিগেন থেকেও গবেষকরা শিক্ষা নিচ্ছেন৷ ছোট ও উর্বর এই দ্বীপগুলি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র কয়েক মিটার উপরে অবস্থিত৷ পানির ঢেউ থেকে বাঁচতে দ্বীপবাসীরা টিলার উপর বাড়ি তৈরি করেন৷