উপজেলা নির্বাচনের চতুর্থ ধাপে সহিংসতা আরো বেড়েছে৷ ওদিকে ৯১টি উপজেলা পরিষদের মধ্যে ৮৮টির ফলাফলে এগিয়ে আছে আওয়ামী লীগ৷ তাই বিশ্লেষকদের ধারণা, উপজেলা নির্বাচনের ওপর নির্বাচন কমিশনের আর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই৷
বিজ্ঞাপন
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম এবং দ্বিতীয় দফায় বিএনপি এগিয়ে থাকলেও, তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপে এগিয়ে গেছে আওয়ামী লীগ৷ রবিবার ৯১টি উপজেলার নির্বাচনে ৮৮টির ফলাফলে আওয়ামী লীগ ৫২, বিএনপি ২২, জামায়ত ৫ এবং স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দলের ১০ জন চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন৷
এই ধাপের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যেমন বিপূলভাবে এগিয়ে গেছে, তেমনই সহিংসতা এবং অনিয়মও হয়েছে সবচেয়ে বেশি৷ রবিবার চারজন নিহত হওয়া ছাড়াও মোট ৩২টি কেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে৷ এছাড়া চার ধাপের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মোট ১৭১, বিএনপি ১৪০ জামায়াত ৩৩ এবং স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দলের ৩৫ জন চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন৷
আরো ২ ধাপে ১০১টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন হলে মোট ৪৮৭টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন শেষ হবে৷ নির্বাচনে এই ক্রমবর্ধমান সহিংসতা এবং অনিয়ম নিয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম. সাখাওয়াত হোসেন (অব.) বলেন, ‘‘সুষ্ঠু নির্বাচন করার দায়িত্ব কেবলমাত্র নির্বাচন কমিশনের উপর বর্তায় না৷ এ দায়িত্ব ক্ষমতাসীন দলেরও৷ প্রধানমন্ত্রী তো বলেছিলেন যে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে৷ অথচ নজিরবিহীন অনিয়ম ও সহিংসতা হলো৷''
ভোটকেন্দ্রে হামলা, ভাঙচুরের ছবি
দশম জাতীয় নির্বাচনের ভোট গ্রহণের সময় ব্যাপক সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে৷ পাঁচ জানুয়ারি বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে হামলা, ভাঙচুর এবং জনপ্রতিক্রিয়ার কিছু ছবি পেয়েছে ডয়চে ভেলে৷ পাঠকের জন্য গ্যালারি আকারে সেসব ছবি প্রকাশ করা হলো৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
আওয়ামী লীগ সমর্থকদের মারধর
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের দিন রাজশাহীর বাগমারায় নির্বাচনকেন্দ্রিক সংঘর্ষ চলাকালে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের পেটায় বিএনপি সমর্থকরা৷ পাঁচ জানুয়ারি ভোট গ্রহণের সময় বিরোধী দলের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দল এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন বেশ কয়েকজন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সংঘর্ষে আহতকে সহায়তা
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় নির্বাচন চলাকালে সংঘর্ষে আহত এক ব্যক্তিকে সহায়তা করছেন অন্যরা৷ নির্বাচন চলাকালে একশো’র বেশি ভোটকেন্দ্রে হামলা চালায় নির্বাচন বিরোধীরা৷ সহিংসতা এবং ভোটকেন্দ্র পুড়িয়ে দেয়ার কারণে ১৩৯টি ভোটকেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
আগুনে পোড়া ভোট কেন্দ্র
নির্বাচনের দিন চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার আজিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্র পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা৷
ছবি: DW
পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ
গাইবান্ধায় ভোট গ্রহণ চলাকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় স্লোগান দিচ্ছে নির্বাচন বর্জন করা বিরোধী দলের সমর্থকরা৷ বিরোধী দলবিহীন রবিবারের নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি কম ছিল৷ তাছাড়া এই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে ইতোমধ্যে দেশি-বিদেশি মহলে প্রশ্ন উঠেছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কমনওয়েলথ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন পর্যবেক্ষণ থেকে বিরত থেকেছে৷
ছবি: Reuters
আহতকে সেবা
গাইবান্ধায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত এক ব্যক্তিকে ঘিরে রেখেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা৷ রবিবারের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পর বিরোধী দল বিএনপি ‘‘নির্বাচনের ফলাফল বাতিল ও ভোটের দিন সারা দেশে নেতা-কর্মীদের হত্যার প্রতিবাদে’’ সোমবার সকাল ছ’টা থেকে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল আহ্বান করেছে৷
ছবি: Reuters
ভোটকেন্দ্রে হামলা
বগুড়ার একটি ভোটকেন্দ্রে হামলা চালায় নির্বাচন বিরোধীরা৷ এসময় তারা ভোটকেন্দ্রে রাখা ব্যালট বাক্স ভাঙচুর করে এবং তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়৷ প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান বগুড়া৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
ভোটকেন্দ্রের সামনে আগুন
বগুড়ার একটি ভোটকেন্দ্রের সামনে নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন দ্রব্যে আগুন ধরিয়ে দেয় নির্বাচন বিরোধীরা৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
লাঠিসোঁটা নিয়ে উচ্ছ্বাস
বগুড়ার একটি ভোটকেন্দ্রে নির্বাচন বিরোধীরা হামলা চালানোর পর লাঠিসোঁটা নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা৷ ঐতিহাসিকভাবে বগুড়া বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
সন্দেহভাজনকে আটক
বগুড়ায় একটি ভোটকেন্দ্রে হামলায় সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে আটক করছে পুলিশ৷ নির্বাচন চলাকালে অনেক ভোটকেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে নির্বাচন বিরোধীরা৷ এসময় হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
বাদ যায়নি বাড়িও
বগুড়ার এক আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে হামলা চালায় নির্বাচন বিরোধীরা৷ হামলার পর আগুনে পোড়া অবশিষ্টের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পাওয়া যায় কিনা, তা খুঁজে দেখছেন সেই নেতার এক আত্মীয়া৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
টায়ার জ্বেলে অবরোধ সৃষ্টি
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন নারায়ণগঞ্জে সড়কে টায়ার জ্বেলে অবরোধ সৃষ্টি করে জামায়াত-শিবির কর্মীরা৷
ছবি: DW
আহত ভোটার
ঢাকায় বিরোধী দলের সমর্থকদের ছোড়া হাতে তৈরি বোমার আঘাতে আহত এক ভোটার৷ ভোট গ্রহণ চলাকালে নির্বাচন বিরোধীরা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ভোটকেন্দ্রে বোমা ফাটিয়েছে৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
12 ছবি1 | 12
তিনি বলেন, ‘‘প্রথম থেকেই পরিস্থিতি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিয়ন্ত্রণে থাকেনি৷ তারা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে৷ আর চাইলেও এখন কঠোর হতে পারছে না৷ ক্ষমতাসীন দলের উপর ইসি-র আরো নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত ছিল৷'' তাঁর কথায়, ‘‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ব্যক্তিগত কাজে বিদেশে অবস্থান করছেন, তাই এ নিয়ে কিছু না বলাই ভালো৷ তবে সাধারণত নির্বাচন চলাকালে অতীতে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি৷ সেজন্যই তাঁর অনুপস্থিতি নিয়ে নানা কথা উঠেছে৷ আশা করি, দেশে ফিরে এসে তিনি বিষয়টি পরিষ্কার করবেন৷''
সুশাসনের জন্য নাগরিক বা সুজন-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মুজমদার বলেন, ‘‘সুষ্ঠু নির্বাচন করতে কমিশন আবারো ব্যর্থ হলো৷ তারা এ ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিলেও তা রক্ষা করতে পারেনি৷ পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে৷''
ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক এই সহিংসতার কথা স্বীকার করেছেন৷ তিনি বলেছেন, ‘‘চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে কিছু সহিংসতা ও কিছু গোলযোগ হয়েছে৷'' যদিও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলছেন, ‘‘আগের চেয়ে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে৷''
বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে শেষ মুহূর্তে নির্বাচন কমিশনের নেয়া উদ্যোগ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগ কেবল মিডিয়ায় সীমাবদ্ধ থেকেছে৷ বাস্তবে কোনো কাজে আসেনি৷ তারা সেনাবাহিনীকেও চিঠি দিয়েছিল৷ এই চিঠির কোনো অর্থ নেই৷ কারণ, স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনীকে আসলেই কোনো ক্ষমতা দেয়া হয়েছে কিনা, তা পরিষ্কার নয়৷''