1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রানা প্লাজার শ্রমিকরা উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পাননি

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৩ এপ্রিল ২০১৮

রানা প্লাজা ধসের শিকার শ্রমিকদের পরিবার এখনো ন্যায্য ক্ষতিপূরণ পায়নি৷ আহতদের পুনর্বাসনেরও কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হয়নি৷ শ্রমিকদের অর্ধেক এখনো কোনো কাজ করতে পারেন না৷ এমনকি তাঁদের চিকিৎসাও থেমে গেছে৷ 

ছবি: Reuters

মো. মনির হোসেন৷ রানা প্লাজার চার তলায় ফ্যান্টম টেক গার্মেন্টসে চেকিং অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন৷ রানা প্লাজা ধসের তিন দিন পরে তাঁকে উদ্ধার করা হয়৷ তিনি ভিতরে চাপা পড়ে ছিলেন৷ মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়েছিলেন, হাত-পা ও গুরুতর জখম হয়৷ এখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি৷ চিকিৎসা প্রয়োজন, তা-ও পাচ্ছেন না৷ দুই সন্তান এবং স্ত্রী-কে নিয়ে তাঁর সংসার৷ কোনো কাজ পাননি এখনো৷ সাভারের রাজাসন এলাকায় মোবাইল ফোনের ফ্লেক্সিলোড করে টিকে আছেন৷ সন্তানদের পড়াশুনার খরচ জোগাতে পারেন না৷ ঘরভাড়া মাসের পর মাস বাকি৷ ঠিকমতো খাবারও জোটে না৷ 

তাদের (বিজিএমইএ) কাছে তো কোনো কথা বলার সুযোগই পাই না: মনির হোসেন

This browser does not support the audio element.

কোনো সহায়তা পাননি? জবাবে মনির হোসেন বললেন, ‘‘একবার বায়রা দিয়েছে ৪৫ হাজার টাকা৷ আর পরে পেয়েছি ৫০ হাজার টাকা৷ আর কোনো সহায়তা পাইনি৷’’ কোনো কাজ পাননি? বললেন, ‘‘কাজতো করতে পারি না, ভয় পাই৷ মনে হয় ভেঙে পড়বে৷’’

বিজিএমইএ কোনো ধরণের প্রশিক্ষণ বা বিকল্প কাজের ব্যবস্থা করেছে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘তাদের কাছে আমরা তো কোনো কথা বলার সুযোগই পাই না৷ আমাদের পক্ষে তাদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব নয়৷ তারা আমাদের চাকরির কী ব্যবস্থা করবে? আমরা তাদের দেখাই পাই নাই৷ রানা প্লাজার কথা শুনলেই তাদের কেউ আর আমাদের কথা শুনতে চায় না৷ বিদায় করে দেয়৷ শুধু আমি একা নই, আরো অনেকের অবস্থাই আমার মতো৷’’

রানা প্লাজার পাঁচ তলায় ফ্যান্টম অ্যাপারেলস-এ নিলুফার বেগম সুইং অপারেটরের কাজ করতেন৷ রানা প্লাজা ধসে তাঁর ডান পা হারিয়েছেন৷ স্বামী আছে৷ আছে এক সন্তান৷ সাভারে থাকেন৷ সর্বমোট তিন লাখ ২০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন৷ সাভারে চা বিক্রি করেন৷ কোথাও কোনো কাজ পাননি৷ কাজের চেষ্টা করেছেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, ‘‘আমি তো পঙ্গু, সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে পারি না৷ কাজ করব কিভাবে, কে কাজ দেবে? এখন আবার কিডনির সমস্যা ধরা পড়েছে৷ স্বামীর ওপর ভর করে আছি৷’’ তিনি বলেন, ‘‘বিজিএমইএ যদি আমাকে একটু সহায়তা করত, তাহলে আমার এই অবস্থা হতো না৷ ভালো কোনো কাজ করতে পারতাম৷’’

বিজিএমইএ যদি আমাকে একটু সহয়তা করত, তাহলে আমার এই অবস্থা হতো না: নিলুফার বেগম

This browser does not support the audio element.

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসে অন্তত ১,১৩৪ জন শ্রমিক নিহত হন৷ আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ২,৪৩৮ জনকে৷ মোট পাঁচটি পোশাক কারখানায় পাঁচ হাজারের মতো শ্রমিক কর্মরত ছিলেন৷ নিহতদের মধ্যে ২৯১টি লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়৷

দাতব্য সংস্থা অ্যাকশন এইউ এবং সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে,  আহত শ্রমিকদের ৪৮ দশমিক সাত শতাংশ এখনও কোনো কাজ করতে পারছেন না৷ ২৬ শতাংশ জীবিকার জন্য কোনো পরিকল্পনা করতে পারছেন না৷

রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর ২০১৪ সালে বিদেশি ক্রেতা ও কয়েকটি আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠন হতাহতদের পরিবারকে সহায়তা দিতে ৪ কোটি ডলারের একটি তহবিল গঠনের ঘোষণা দিয়েছিল৷ বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘রানা প্লাজা ধসের পর ক্ষতিপূরণ হিসেবে বিজিএমইএ ১৫ কোটি, প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে ২৫ কোটি এবং দাতাদের কাছ থেকে ৪০ কোটি টাকা পাওয়া যায়৷’’ তিনি দাবি করেন ,‘‘সবাইকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে, চিকিৎসা দেয়া হয়েছে৷ রানা প্লাজার বেকার কোনো পোশাক শ্রমিক নেই৷ সবাইকে পুনর্বাসন করা হয়েছে৷ কেউ তো চাকরি চাইতে আমাদের কাছে আসে না৷ আমাদের কাছে এখনো ফান্ড আছে৷ আমরা তো দেয়ার লোক পাই না৷ আর যদি ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়ে কেউ ইলিশ মাছ খেয়ে টাকা খরচ করে ফেলে, তাহলে আমাদের কী করার আছে?’’

কেউ তো চাকরি চাইতে আমাদের কাছে আসে না: বিজিএমইএ সভাপতি

This browser does not support the audio element.

হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১৪ সালে রানা প্লাজায় নিহত, নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজন এবং আহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণ করে সরকারি উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি৷

সেই কমিটির সুপারিশ অনুয়ায়ী প্রত্যেক নিহত, নিখোঁজ শ্রমিকের পরিবার এবং স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে যাওয়া শ্রমিক ১৪ লাখ ৫১ হাজার ৩০০ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবেন৷ আর আহত হওয়ার ধরন অনুযায়ী, শ্রমিকদের পাওয়ার কথা দেড় লাখ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ সাড়ে সাত লাখ টাকা৷ কিন্তু ওই টাকা দিতে রাজি হননি পোশাক শিল্পের মালিকরা৷
 
কমিটি নিহত শ্রমিকদের জন্য ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের সুপারিশ করেছিল৷ এর মধ্যে দুঃখ-যন্ত্রণা বাবদ পাঁচ লাখ টাকা ধরা হয়৷ কিন্তু আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-র বিধানে দুঃখ-যন্ত্রণা বাবদ ক্ষতিপূরণের কোনো উল্লেখ না থাকায় পরে তা বাদ দেওয়া হয়৷
 
কমিটির সুপারিশে আহত শ্রমিকদের আঘাতের ধরন ও ক্ষতির প্রকৃতি অনুযায়ী চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে৷ প্রথম ভাগে স্থায়ীভাবে পঙ্গু শ্রমিকদের জন্য ১৪ লাখ ৫১ হাজার ৩০০ টাকা ক্ষতিপূরণের সুপারিশ করা হয়েছে৷ স্পাইনাল কর্ডে আঘাত পাওয়া, দুই বা ততোধিক অঙ্গহানি হওয়া শ্রমিকেরাও এই ভাগে পড়বেন এবং একই হারে ক্ষতিপূরণ পাবেন৷ দ্বিতীয় ভাগে এক হাত বা এক পা হারানো শ্রমিকদের সাড়ে সাত লাখ টাকা এবং তৃতীয় ভাগে দীর্ঘ মেয়াদে চিকিৎসা প্রয়োজন এমন শ্রমিকদের সাড়ে চার লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের সুপারিশ করা হয়৷ চতুর্থ ভাগে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের দেড় লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়৷

সরকারি কমিটির সুপারিশও মানেনি বিজিএমইএ: জলি তালুকদার

This browser does not support the audio element.

একই সঙ্গে রানা প্লাজার সব আহত ও অসুস্থ ব্যক্তিদের পূর্ণ সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বিনা খরচে সার্বিক চিকিৎসা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল৷ যাঁদের অঙ্গহানি হয়েছে, তাঁদের একটি স্থায়ী কার্ড দেয়ার কথা বলা হয়, যাতে তাঁরা আজীবন তাঁদের কৃত্রিম অঙ্গের রক্ষণাবেক্ষণ সরকারি হাসপাতালে বিনা পয়সায় করাতে পারেন৷ কিন্তু এসবেরই কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি৷

গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ক্ষতিপূরণের টাকা হিসাবের পদ্ধতি আছে৷ একজন মানুষ সুস্থ থাকলে তার বাকি জীবনে কত টাকা আয় করতেন সেভাবে ক্ষতিপূরণের টাকা হিসাব করতে হয়৷ সেই হিসেবে একজন যিনি পুরো পঙ্গু হয়ে যাবেন বা কাজ করার ক্ষমতা হারাবেন, আমরা হিসেব করে দেখিয়েছিলাম তা ৪৫ লাখ টাকার মতো৷ কিন্তু সরকারি কমিটির সুপারিশও মানেনি বিজিএমইএ৷ ক্ষতিপূরণ হিসেবে ইচ্ছেমতো কিছু থোক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে৷ ঠিকমতো চিকিৎসা দেয়া হয়নি৷ অনেকেই এখনো কাজ পাননি৷ অনেকে কাজ করার ক্ষমতা হারিয়েছেন৷ তাঁদের পুনর্বাসনের কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি৷’’

পোশাক শিল্পের মালিকদের মানসিকতাই হলো শ্রমিকদের কম বেতন দেয়া: ইকতেদার আহমেদ

This browser does not support the audio element.

পোশাক শিল্পে পাঁচ বছর আগে সর্বনিম্ন মজুরি ৫,৩০০ টাকা নিধারণ করা হয়৷ জলি তালুকদার বলেন, ‘‘আমরা চারজনের পরিবার হিসেবে সর্বনিম্ন মজুরি দাবি করেছি ১৬ হাজার টাকা৷ বাজারদর, জীবনযাত্রার মান, বাসস্থান এ সব দিক হিসাব করেই আমাদের এই দাবি৷ কিন্তু বিজিএমইএ এখন আমাদের এই দাবির কারণে হয়রানি করছে৷’’

গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, ‘‘নতুন মজুরি বোর্ডের আগামী ২৫ এপ্রিল পোশাক কারখানায় নতুন মজুরি ঘোষণার কথা৷ আমরা মনে করি সর্বনিম্ন মজুরি কোনোভাবেই ১৬ হাজার টাকার নিচে হতে পারে না৷’’

মজুরি বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ইকতেদার আহমেদ বলেন, ‘‘পোশাক শিল্পের মালিকদের মানসিকতাই হলো শ্রমিকদের কম বেতন দেয়া৷ কোনোবারই তাঁরা মজুরিবোর্ডের সুপারিশ মানতে চায়নি৷ সর্বশেষ যখন সর্বনিম্ন মজুরি ৫,৩০০ টাকা করা হয়, তখনো তাঁরা মানেনি৷ শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে তাঁরা মানতে বাধ্য হয়৷’’ তিনি বলেন, ‘‘আমি মনে করি, আমাদের গড় মাথাপিছু যে আয়, তা-ই হওয়া উচিত পোশাক শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ