কারফিউ তুলে নেয়ার পর সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে৷ ইরানে একদিনে মৃত্যুর সংখ্যায় নতুন রেকর্ড হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে সৌদি আরবেই আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি৷ শনাক্তের সংখ্যা দুই লাখ ছাড়িয়েছে৷ গত মাসে কারফিউ তুলে নেয়ার পর থেকেই সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে৷ শনিবার পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় নতুন শনাক্তের সংখ্যা ছিল চার হাজার ১০০ জন, মোট শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে দুই লাখ পাঁচ হাজার ৯২৯ জন৷ মারা গেছে এক হাজার ৮৫৮ জন৷
সৌদির প্রতিবেশি আরব আমিরাতে শনিবার রোগীর সংখ্যা অর্ধ লাখ ছাড়িয়েছে৷ তবে সেই তুলনায় মৃত্যু হার কম, ৩২১ জন৷ সম্প্রতি এই দেশটিও কারফিউ তুলে নিয়েছে, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসহ জনসমাগমস্থলগুলো খুলে দেয়া হয়েছে৷
ইরানে ২৪ ঘণ্টায় ১৬৩ জনের মৃত্যু ঘটেছে, যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ৷ দেশটিতে মোট শনাক্ত হয়েছেন দুই লাখ ৪০ হাজার ৪৩৮ জন, মারা গেছেন ১১ হাজার ৫৭১ জন৷
উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে জনসংখ্যার দিক থেকে সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি কাতারে৷ সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখের কাছাকাছি, মারা গেছেন ১২১ জন৷
ভারতে একদিন সর্বোচ্চ শনাক্ত
এদিকে ভারতে ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্তে নতুন রেকর্ড হয়েছে৷ ২৪ হাজার ৮৫০ জন আক্রান্ত পাওয়া গেছে৷ মোট বেড়ে হয়েছে ছয় লাখ ৭৩ হাজার ১৬৫ জন৷ যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, রাশিয়ার পর আক্রান্তের সংখ্যায় ভারত রয়েছে চতুর্থ অবস্থানে৷
করোনার বিরুদ্ধে কারা জেতে, কারা জেতে না
ফুটবলে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা সমানে সমানে লড়ে, কিন্তু এই লড়াইয়ে ব্রাজিল পাত্তাই পায় না৷ ৪৫ বছর আগের এক যুদ্ধের মতো পুঁচকে ভিয়েতনামের কাছে আবার লজ্জা পায় যুক্তরাষ্ট্র৷ করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধের আরো কিছু বিষয় থাকছে ছবিঘরে..
ছবি: Getty Images/AFP/S. Lima
দেশ অপ্রস্তুত আর প্রেসিডেন্ট একগুঁয়ে হলে যা হয়
চীনে করোনা সংকট দেখা দেয়ার দু’মাস পরও যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাসামগ্রীর ঘাটতি, করোনা টেস্ট শুরু করায় বিলম্ব, ইটালিতে মৃত্যুর মিছিল দেখেও করোনাকে ট্রাম্পের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, মধ্য এপ্রিলেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে চাওয়া- ইত্যাদির উল্লেখ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি৷ বিশেষজ্ঞরা যা চান ট্রাম্প তার ঠিক বিপরীত দিকে হাঁটতে চেয়েছেন৷ ফলাফল পরাশক্তি হয়েও করোনার কাছে নাস্তানাবুদ হওয়া৷
শীতল যুদ্ধের যুগ আর নেই৷ তবে এ যুগেও কমিউনিস্ট শাসিত কিউবা আর যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক মধুর হয়নি ৷ যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃত্যু এক লাখ ১৫ হাজার ছাড়িয়েছে, অথচ কিউবায় মারা গেছে মাত্র ৮৩ জন৷ হোক না মাত্র এক কোটি ১৪ লাখ মানুষের দেশ, করোনাকে এভাবে বোতলবন্দি করলো কিভাবে তা-ই এখন কৌতুহলের কেন্দ্রে৷ গার্ডিয়ান বলছে, শুরু থেকে সপ্তাহের সাতদিন ঘরে ঘরে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করে তা সম্ভব করেছে কিউবা৷
ছবি: pictrure-alliance/AP Photo/I. Francisco
বিশেষজ্ঞরা স্বেচ্ছাচারিতার কবলে পড়লে যা হয়
লকডাউন প্রশ্নে ট্রাম্পের বিরোধিতা করে কোণঠাসা হয়েছেন জাতীয় অ্যালার্জি ও সংক্রামক রোগ ইনস্টিটিউটের প্রধান ডা, অ্যান্থনি ফাউচি, একই বিষয়ে প্রেসিডেন্ট বলসোনারোর বিরোধিতা করে দায়িত্ব হারিয়েছেন ব্রাজিলের দুই স্বাস্থ্যমন্ত্রী৷ সামাজিক দূরত্ব মানার সরাসরি বিরোধিতা করা বলসোনারোর দেশও এখন ধুঁকছে৷ গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে কিউবার চেয়ে সত্তর গুন পিছিয়ে আছে ব্রাজিল৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Lima
ভিয়েতনাম হলে যা হয়
ভিয়েতনামও করোনার বিরুদ্ধে দারুণ সফল৷ দেশ ছোট আর অর্থনীতি দুর্বল হলেও বড় যুদ্ধে ভিয়েতনাম কখনো হারেনি৷ ৩৫ বছর আগে সামরিক যুদ্ধে ব্যর্থ হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র, এখন ব্যর্থ হচ্ছে করোনা ভাইরাস৷ দ্রুত সীমান্ত বন্ধ করা, অল্প সময়ে বেশি পরীক্ষা করানো, সামাজিক দূরত্ব, লকডাউন- সব নিয়ম কঠোরভাবে মেনে সফল হয়েছে ভিয়েতনাম৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Hau Dinh
সরকার এবং সরকারপ্রধান অপরিনামদর্শী না হলে যা হয়
জনমনে অসন্তোষ দেখে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট বন্ধ করেছিল ব্রাজিল সরকার৷ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তা আবার চালু হয়েছে৷ ফুটবলে তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে আর্জেন্টিনা ২৬ হাজারের মতো সংক্রমণ আর মাত্র ৭৮৭ জন করোনায় মৃত্যু নিয়ে এখনো অনেক ভালো অবস্থায়৷ আর্জেন্টিনার জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে চার কোটি, বিপরীতে ব্রাজিলের জনসংখ্যা ২১ কোটির কাছাকাছি হলেও ব্যবধানটা কিন্তু সেই তুলনায় অনেক বড়!
ছবি: Getty Images
করোনাকে বেশি সময় দিলে যা হয়
করোনা যখন হানা দিলো, তখন পরীক্ষার প্রস্তুতি, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের জোগান- সব কিছুরই ঘাটতি ছিল ইউরোপের দেশটিতে৷ লকডাউন, সামাজিক দূরত্ব মানতে চাননি অনেকে৷ ফলে বিপদ বেড়েছে দ্রুত৷ এখন পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক৷ এ পর্যন্ত ইটালিতে ৩৪ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে৷ ডাক্তার মারা গেছেন একশ’রও বেশি৷ বেশির ভাগ ডাক্তারই মারা গেছেন পিপিই ছাড়া চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/E. Mattia Del Punta
ছোট দেশও ‘গাইডলাইন’ মানলে যা হয়
প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আর্ডার্ন জানিয়েছেন, নিউজিল্যান্ডে আর করোনায় সংক্রমিত রোগী নেই৷ বিশ্লেষকরা বলছেন মূলত গাইডলাইন মেনে চলার কারণেই এমন সাফল্য এসেছে৷ ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের স্কুল অব ফার্মাসির শিক্ষক ওকসানা পাইসিক বলেন, ‘‘ প্রথমে খুঁজে বের করা, তারপর টেস্ট করা, আইসোলেট করা, প্রত্যেক রোগীকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা, সংক্রমণ ধরা পড়লে কোয়ারান্টিনে পাঠানো- এসব মেনেই নিউজিল্যান্ড সফল হয়েছে৷’’
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Baker
7 ছবি1 | 7
বিনা খরচে সবার পরীক্ষার পক্ষে জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্স্ট জেহোফার দেশটির সব নাগরিককে বিনামূল্যে করোনা পরীক্ষার পক্ষে মত দিয়েছেন৷ বর্তমানে দেশটির শুধু বাভেরিয়া রাজ্য এমন উদ্যোগ নিয়েছে৷ এক্ষেত্রে কেউ স্বাস্থ্য বিমার আওতায় না থাকলে তাকে পরীক্ষার খরচ দিতে হচ্ছে৷ তবে হর্স্ট জেহোফার সংবাদপত্র ভেল্ট আম সনটাগকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সবার জন্য বিনা খরচে এই সেবা চালুর পক্ষে মত দেন৷ ফেডারেল সরকারেরই এই ব্যয় বহন করা উচিত বলে তিনি মনে করেন৷
এর আগে জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী নির্দিষ্ট মানুষকে পরীক্ষার করানোর পক্ষে যুক্তি দিয়েছিলেন৷ তার মতে গণহারের পরীক্ষায় ভুল করে অনেকের করোনা পজেটিভ ফলাফল আসার শঙ্কা রয়েছে৷
জার্মানির রবার্ট কখ ইনস্টিটিউটের রোববারের তথ্য অনুযায়ী দেশটিতে নতুন করে ২৩৯ জন শনাক্ত হয়েছেন, যা আগের দিন ছিন ৪২২ জন৷ এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ ৯৬ হাজার ৩৩৫ জন, যার মধ্যে এক লাখ ৮১ হাজার ৭০০ জনই সুস্থ হয়েছেন৷ মারা গেছেন নয় হাজার ১২ জন৷
যুক্তরাষ্ট্রে ৫০ হাজারের নিচে
গত চার দিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমবারের মতো করোনার নতুন শনাক্ত অর্ধলাখের নিচে নেমেছে৷ ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ৪৫ হাজার ৩০০ জন রোগীর খোঁজ মিলেছে৷ যদিও চার জুলাই স্বাধীনতা দিবস পালনের কারণে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাবার শঙ্কাও রয়েছে৷ বর্তমানে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি যুক্তরাষ্ট্রেই ২৮ লাখের বেশি মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত৷ মারা গেছেন এক লাখ ২৯ হাজারের বেশি৷
জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী সারা বিশ্বে বর্তমানে প্রায় এক কোটি বারো লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত৷ মারা গেছেন পাঁচ লাখ ৩১ হাজারের কিছু বেশি৷
করোনা ভাইরাসের ফলে বিশ্বের বড় বড় ফার্মাগুলোর লক্ষ্য কি বদলে যাচ্ছে? এতদিন জায়ান্টদের ব্যবসার মূল কেন্দ্রে ছিল ক্যানসার রোগের ঔষধ৷ কিন্তু ভবিষ্যতে তাদের ব্যবসার মডেল সংক্রামক ভাইরাসকে ঘিরে তৈরি হতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলছে৷
ছবি: imago images/blickwinkel
প্রতিবেদন
সোমবার নতুন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বৈশ্বিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইওয়াই৷ তারা দেখিয়েছে, ২০১৯ সালে ক্যানসার সংক্রান্ত ঔষধ তৈরি ও গবেষণার ফলে বড় ফার্মাগুলো ১৯ হাজার ৬০০কোটি ডলার আয় করেছে৷ অন্যদিকে, সংক্রামক রোগের চিকিৎসায় তাদের আয় পাঁচ হাজার কোটির কিছু বেশি৷
ছবি: picture-alliance
বদলে যেতে পারে
২০২০ সালে করোনার কারণে বড় ফার্মাগুলোর মনোযোগ এরই মধ্যে সরে এসেছে অনেকখানি৷ সামনে এই মহামারির চিকিৎসার ঔষধ তৈরিতেই মনোযোগ সবচেয়ে বেশি হবে৷ এমনটি ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ কিন্তু প্রশ্ন হল, তা ব্যবসাসফল হবে তো?
ছবি: picture-alliance/PantherMedia
বড় ফার্মাগুলো কী করবে?
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বড় ফার্মাগুলো তাদের দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্পগুলো থেকে সরে আসবে না৷ এছাড়া মহামারি সম্পর্কে আগে থেকে ধারণা করা যায় না৷ তাই ব্যবসার সব মনোযোগ এখানে সরিয়ে আনা সম্ভব নয় বলে মনে করেন অনেকে৷
ছবি: picture-alliance/Zoonar
ঘোলাটে পরিস্থিতি
ইওয়াইয়ের গবেষণা বলছে, এরই মধ্যে অনেকগুলো একত্রিত ও অধিগ্রহণ (এম অ্যান্ড এ) পরিকল্পনা বাতিল হয়ে গেছে৷ ইওয়াই-এর গবেষক আলেক্সান্ডার নুইকেন বলেন, ‘‘প্রতিষ্ঠানগুলো সময়ের সাথে খেলছে এবং দেখছে গ্রীষ্মের পর পরিস্থিতি কোনদিকে যায়৷’’
ছবি: Imago Images/Zuma/D. Husni
ভ্যাকসিন ভ্যাকসিন খেলা
এরই মধ্যে ১৬০টি সম্ভাব্য ভ্যাকসিন ও ২৪০টি থেরাপিউটিক এজেন্ট নিয়ে আলোচনা হচ্ছে৷ প্রায় ৭০০টি টেস্ট বাজারে এনেছে বড় ফার্মাগুলো৷ তবে ব্যবসার এই খেলায় সেই জিতবে যে আগে ভ্যাকসিন বাজারে আনবে, এতে কোন দ্বিমত নেই৷ তবে এই খেলায় তাড়াহুড়ো করলে বিপদ বাড়বে বলে মনে করেন নুইকেন৷ তিনি মনে করেন, ৯৭% ভ্যাকসিন অনুমোদন পাবে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Spata
বিনিয়োগ বেড়েছে বলেই
বড় ফার্মাগুলো গেল কয়েক বছরে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে৷ জার্মান ফার্মা গবেষক গ্যের্ড স্ট্যুর্ৎস বলেন, ২০১৯ সালের নতুন গবেষণার জন্য বিনিয়োগের কারণেই ফার্মাগুলো বর্তমান সংকটে এত কার্যকরী ভুমিকা রাখতে পারছে৷