চীন থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া সিনোফার্মের টিকায় বাংলাদেশে বসবাসকারী চীনা নাগরিকরা প্রাধান্য পাচ্ছেন৷ সেই সঙ্গে চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া বাংলাদেশের শিক্ষার্থী ও চীনের সঙ্গে যুক্ত ব্যবাসায়ীরাও এই টিকা পেতে চান৷
বিজ্ঞাপন
চীনের রাষ্ট্রদূত এরইমধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে ৩০ হাজার ডোজ টিকা চেয়েছেন বাংলাদেশে বসবাসরত চীনা নাগরিকদের জন্য৷ দেশটির নাগরিকদের টিকা দেয়ার জন্য ঢাকার আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালকে তারা বেছে নিয়েছে৷ ৩০ হাজার ডোজ টিকা ওই হসাপাতালের কাছে হস্তান্তরের অনুরোধ করেছে দূতাবাস৷ তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে তারা এখনো টিকা হাতে পাননি৷
চীনা ভ্যাকসিন কবে থেকে দেয়া শুরু হবে তা এখনো ঠিক করেনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর৷ নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ জানান, ‘‘চীনা ভাকসিন জেলা পর্যায়ে পাঠানো হবে কী-না তা আমাদের এখনও জানানো হয়নি৷ আমাদের কাছে অল্প কিছু অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন আছে দ্বিতীয় ডোজের জন্য৷’’
চীনের উপহারের পাঁচ লাখ টিকা ঢাকায় এসেছে ১২মে৷ এই টিকা এখন কেন্দ্রীয় ঔষধাগারে আছে৷ আর এই টিকা কারা পাচ্ছেন তাও অনেকটা স্পষ্ট হচ্ছে৷
হাবিবুর রহমান হাবিব
বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে চীনের প্রায় ১৫ হাজার নাগরিক কাজ করেন৷ তাদের একেক জনের জন্য দুই ডোজ করে ৩০ হাজার ডোজ এরই মধ্যে নিশ্চিত হয়ে গেছে৷ এর আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিদেশি নাগরিকদের অক্সফোর্ডের টিকা দিতে চাইলেও চীনারা আগ্রহ দেখায়নি৷
এদিকে চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা যারা করোনার কারণে দেশে আটকা পড়েছেন তারাও চীনা ভ্যাকসিনে অগ্রাধিকার চান৷ তারা মনে করছেন এর ফলে দেশটিতে যাওয়া সহজ হবে৷ বাংলাদেশি স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েন ইন চায়না এজন্য স্বাস্থ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আদেন করেছে৷
গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে চীনের উহান থেকে দেশে আসেন হুবেই ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির ছাত্র হাবিবুর রহমান হাবিব৷ তিনি এখনও দেশেই অবস্থান করছেন৷ হাবিব বলেন, ‘‘আমরা তিন হাজারের মতো ছাত্র দেশে আটকা পড়েছি৷ এখন আমাদের অনলাইনে ক্লাস হচ্ছে৷ কিন্তু ওখানে গত সেপ্টেম্বর থেকে চীনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরাসরি ক্লাস শুরু হয়েছে৷ আমরা এখন সেখানে গিয়ে সরাসরি ক্লাস ও পরীক্ষা দিতে চাই৷ চীনের টিকা আমাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেয়া হলে আমরা চীন যেতে পারব৷’’
ডা. নাজমুল ইসলাম
এদিকে বাংলাদেশের যেসব ব্যবসায়ীদের নিয়মিত ব্যবসার কাজে চীন যেতে হয় তারাও আগ্রাধিকার ভিত্তিতে চীনা টিকা দাবি করেছেন৷ তারা মনে করেন এই টিকা নিলে তাদের চীনে যাতায়াত সহজ হবে৷
পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ব্যবসায়ী ও ছাত্রদের আবেদন বিবেচনা করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে৷ বাংলাদেশ চীন থেকে পাঁচ কোটি ডোজ টিকা আনতে চায়৷ সেটা যাতে জুনের মধ্যেই পাওয়া যায় তার চেষ্টা চলছে৷ বাংলাদেশের তিনটি প্রতিষ্ঠান চীন ও রাশিয়ার টিকা উৎপাদনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে৷
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ডা. নাজমুল ইসলাম জানান, চীনের উপহারের টিকায় তারা কিছু অগ্রাধিকার বিবেচনা করছেন৷ তবে সাধারণ নীতিমালা আগের মতোই আছে৷ বাংলাদেশে চীনা নাগরিক ছাড়া চীনে যে সব বাংলাদেশি ছাত্র বিশেষ করে টেকনোলজি নিয়ে পড়াশোনা করেন, এখন দেশে আছেন তাদের প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসে অংশ নেয়ার সুযোগ দিতে তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে৷’’
তিনি জানান, এই টিকা কবে থেকে দেয়া শুরু হবে তার পরিকল্পনা চলছে তবে এখনো চূড়ান্ত হয়নি৷ যদিও সেটি ২৮ দিনের মধ্যে দেয়ার একটি সময়সীমা রয়েছে৷ তিনি বলেন, চীন থেকে পাঁচ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন যত দ্রুত সম্ভব আনার চেষ্টা হচ্ছে৷
এদিকে ভারত থেকে আনা অক্সফোর্ড-আস্ট্রাজেনেকার টিকার দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে চীনা ভ্যাকসিন ব্যবহার করা যাবে না৷ বর্তমানে টিকাটির আট লাখ ডোজ মজুদ আছে৷
তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ি এলাকায় টিকা দিতে গেলে স্বাস্থ্যকর্মীদের জানতে হয় পাহাড় চড়ার নানা কৌশলও, জানান ডা. জেইনেপ এরাল্প। তিনি বলেন, “মানুষ এসব অঞ্চলে অনেক কাছাকাছি বাস করে, ফলে সংক্রমণ সেখানে তাড়াতাড়ি ছড়ায়। আর মানুষ হাসপাতালে যেতে কিছুটা অনিচ্ছুক বলেই আমরা তাদের কাছে যাই।”
ছবি: Bulent Kilic/AFP
ঘন তুষার পেরিয়ে
আল্পস পর্বতমালার একটি অঞ্চল ইটালির পশ্চিমাঞ্চলের মাইরা উপত্যকায় রয়েছে এখন ঘন তুষারের আস্তরণ। এই অঞ্চলের বেশির ভাগ বয়স্ক বাসিন্দারা নিকটবর্তী টিকাদান কেন্দ্রে যেতে পারেন না। ফ্রান্স-ইটালি সীমান্তের কাছের এই অঞ্চলে আশি বছরের বেশি বয়সিদের করোনা টিকা দিতে তাদের বাড়ি যাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।
ছবি: Marco Bertorello/AFP
অ্যামেরিকার সবচেয়ে উত্তরের অঞ্চলে
ছবিতে একজন নার্সকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কার ছোট শহর ইগলের দিকে যেতে দেখা যাচ্ছে। সাথে রয়েছে একটি মাত্র টিকার বোতল, যা দিয়ে সম্পন্ন হবে স্থানীয় একশজন বাসিন্দাকে টিকা দেবার কাজ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ম বলছে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকার কারণে যদি বাসিন্দারা নিকটতম টিকাদান কেন্দ্রে যেতে না পারেন, সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে আকাশপথেও পৌঁছে যাবেন স্বাস্থ্যকর্মীরা, তা সেখানের জনসংখ্যা যত কমই হোক না কেন।
ছবি: Nathan Howard/REUTERS
কিন্তু সবাই টিকা নিতে ইচ্ছুক নন
বিশ্বের বেশ কিছু অংশ থেকেই শোনা যাচ্ছে টিকা-ভীতির কথা। টিকার বদলে সংক্রমণ ঠেকাতে জড়িবুটি, তুকতাক বা ধর্মীয় গুরুদের ওপর ভরসা করছেন বেশ কিছু মানুষ। কলম্বিয়ার মিসাক গোষ্ঠীর অনেকের মধ্যে টিকা-ভীতি কমাতে স্বাস্থ্যকর্মী আনসেলমো তুনুবালা ঘুরে ঘুরে স্থানীয় ভাষায় টিকার সুফলের কথা বলেন ও টিকাও দেন।
ছবি: Luis Robayo/AFP
দীর্ঘ যাত্রার পর
মধ্য মেক্সিকোর নুয়েভা কোলোনিয়া অঞ্চলের একটি প্রত্যন্ত গ্রামের টিকাদান কেন্দ্রে পৌঁছাতেও ভিহারিকা গোষ্ঠীর সদস্যদের অন্তত চারঘন্টার পথ হেঁটে আসতে হয়। এই গোষ্ঠীকে অনেকে চেনেন হুইছল নামে।
ছবি: Ulises Ruiz/AFP/Getty Images
নৌকায় টিকা যেখানে
ব্রাজিলের রিও নেগ্রো নদীর পাশ ধরেই বাস নোসা সেনহরা দো লিভ্রামেন্তো গোষ্ঠীর। তাদের কাছে টিকা পৌঁছানোর একমাত্র ভরসা নৌকা। স্থানীয় বাসিন্দা ওলগা পিমেন্তেল তার নৌকায় চেপে টিকাদান কর্মীদের নৌকার পাশে যান। এক নৌকা থেকে আরেক নৌকায় টিকাদানের দৃশ্যই দেখা যাচ্ছে ছবিতে। ৭২ বছর বয়েসি ওলগার বক্তব্য, “আমার কোনো ব্যাথাই লাগেনি! জয় ব্রাজিলের গণ স্বাস্থ্য পরিষেবার জয়!”
ছবি: Michael Dantas/AFP
মোমের আলোয় টিকাদান
দীর্ঘদিন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট বলসোনারো করোনা টিকাদানের বিপক্ষে থাকলেও, বর্তমানে চলছে টিকাদানের কাজ। সর্ব প্রথম, টিকা দেওয়া হয় বিভিন্ন আদিবাসী ও সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠীদের। রাইমুন্দা নোনাটা এমনই এক গোষ্ঠীর সদস্য, যাদের অঞ্চলে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। ফলে তার টিকাদান হলো মোমের আলোতেই।
ছবি: Tarso Sarraf/AFP
টিকা নিয়ে ঘরে ফেরা
উগান্ডার সরকার চেষ্টা করছে দেশটির বিভিন্ন কোণে টিকা পৌঁছাতে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে টিকা নেবার পর, উগান্ডার বুনিয়োন্যি লেকের বোয়ামা দ্বীপের এক বাসিন্দা ও তার মেয়েকে নৌকায় চেপে ঘরে ফিরতে।
ছবি: Patrick Onen/AP Photo/picture alliance
জলপথে, কিন্তু নৌকায় নয়
জিম্বাবোয়ের জারি অঞ্চলে টিকা দিতে যাওয়ার সময় স্বাস্থ্যকর্মীদের গাড়ি চালিয়ে যেতে হয় বন্যাগ্রস্ত রাস্তা দিয়ে। আফ্রিকার স্বাস্থ্য সংস্থা ‘আফ্রিকা সিডিসি’ জানাচ্ছে যে, সেই দেশের এক শতাংশেরও কম মানুষের টিকাকরণ সম্পূর্ণ হয়েছে। সবার আগেটিকা পেয়েছে স্বাস্থ্যকর্মীরা।
ছবি: Tafadzwa Ufumeli/Getty Images
জাপানে যেমন
ঝাঁ চকচকে শহর শুধু নয়, জাপানের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ বাস করে দূরদুরান্তের গ্রামেও। ছবিতে দেখা যাচ্ছে মাত্র কয়েকশ বাসিন্দার গ্রাম কিটাআইকি’র দৃশ্য। সেখানে যাদের পক্ষে শহরে গিয়ে টিকা নেওয়া সম্ভব নয়, তাদের বাড়িতে খোদ ডাক্তার এসেই টিকা দিয়ে যাচ্ছেন।
ছবি: Kazuhiro Nogi/AFP
টিকা পাহারা যেখানে
ইন্দোনেশিয়ায় করোনা টিকা দেবার কাজ শুরু হয় জানুয়ারি মাসে। বান্দা আচে থেকে নৌকায় স্বাস্থ্যকর্মীরা টিকা নিয়ে পৌঁছেছেন বহু দূরের দ্বীপে। এই টিকাকে এতটাই দামী মনে করা হচ্ছে যে, প্রতি দলের সাথে থাকছে নিরাপত্তারক্ষীও।
ছবি: Chaideer Mahyuddin/AFP
টিকা নিতে গিয়ে সংক্রমণের আশঙ্কা
গত কয়েক সপ্তাহে করোনা সংক্রমণের ঢেউ নাড়িয়ে দিয়েছে ভারতকে। মার্চ মাসের মাঝামাঝি, ব্রহ্মপুত্র নদীর পাশে বাহাকাজারি গ্রামে পৌঁছায় একটি টিকাদান দল, বেশ কিছু স্থানীয় নারীকে টিকা দিতে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে সেই গ্রামে টিকাদানের নিবন্ধন প্রক্রিয়ার দৃশ্য, যেখানে কারো মুখে নেই মাস্ক, শারীরিক দূরত্বও বজায় রাখছেন না কেউ।