সোমবারের পর মঙ্গলবারেও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন অব্যাহত। শনিবার যাদবপুর অঞ্চলে মিছিল করেছেন আন্দোলনকারীরা। বাম ছাত্র সংগঠন এসএফআই-এর ডাকা ছাত্র ধর্মঘটের জেরে উত্তরবঙ্গ এবং মেদিনীপুরে বেশ কয়েকটি কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়েছে। মঙ্গলবারও আন্দোলন চলছে।
মঙ্গলবার কাজ বন্ধ রাখার ডাক দিয়েছে একাধিক অতিবাম ছাত্র সংগঠন। যার মধ্যে অন্যতম ডিএসএফ। এছাড়াও কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে ডিএসও। তবে এসএফআই এদিন এই কর্মসূচিতে অংশ নেয়নি। রাজ্যজুড়ে আরো বেশ কয়েকটি কর্মসূচি পালন করছে তারা। এসএফআই নেতা সৃজন ভট্টাচার্য মঙ্গলবার সকালে মেদিনীপুরে পৌঁছেছেন। সেখানে তিনি দেখা করবেন সোমবারের সংঘর্ষে আহত ছাত্রদের সঙ্গে। পুলিশ যে ছাত্রদের থানায় তুলে নিয়ে গেছিল, তাদের সঙ্গেও দেখা করেছেন তিনি।
ডিডাব্লিউ-কে সৃজন জানিয়েছেন, ''শুধু যাদবপুর বা কলকাতায় নয়, রাজ্যজুড়ে আন্দোলন জারি থাকবে। ক্যাম্পাসে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন চলবে।'' এসএফআই নেতা দেবাঞ্জন দে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার দুপুর থেকে সংঘর্ষ চলছে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি জানিয়েছেন, ''কল্যাণী বিশ্ববিদ্য়ালয়ের ক্য়াম্পাস তৃণমূলের গুন্ডারা দখল করার চেষ্টা করছে। শিক্ষাকর্মী, সাংবাদিক, পুলিশের উপরেও তারা আক্রমণ চালাচ্ছে। আবারও বলছি, এসএফআই এক ইঞ্চিও জায়গা ছাড়বে না।''
যাদবপুর-কাণ্ড নিয়ে ছাত্র ধর্মঘট, অনড় শিক্ষামন্ত্রী
যাদবপুর-কাণ্ড নিয়ে সোমবার ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলি। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু তার মতে অনড়।
ছবি: Subrata Goswami/DW
উত্তাল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়
ছাত্র সংসদের নির্বাচনের দাবিকে সামনে রেখে শনিবার উত্তাল হয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। শিক্ষামন্ত্রীকে নিগ্রহের অভিযোগ যেমন উঠেছে,তেমনই আবার শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ির ধাক্কায় এক ছাত্র আহত হয়েছেন। মানববন্ধনে থাকা পড়ুয়া গাড়ির তলায় চলে গিয়েছিলেন। তাকে ফেলে রেখেই শিক্ষামন্ত্রী গাড়ি নিয়ে চলে যান।
ছবি: Subrata Goswami/DW
শিক্ষামন্ত্রীকে নিয়ে বিতর্ক
শনিবার যাদবপুরে তৃণমূল সমর্থিত অধ্যাপক সংগঠন ওয়েবকুপার সম্মেলন ছিল। সেখানেই যোগ দিতে গিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। অভিযোগ, বাম, অতি বাম ছাত্র সংগঠনগুলির তরফে ছাত্র সংসদের নির্বাচন কবে হবে, তা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীকে ডেপুটেশন দিতে চাওয়া হয়। কিন্তু এই ডেপুটেশন দেয়াকে কেন্দ্র করে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয়।
ছবি: Subrata Goswami/DW
শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেছেন, তিনিই আক্রান্ত হয়েছেন। মার খেলে বাঁচার চেষ্টা করতে হবে। গাড়ির চালক অল্পবয়সি। তিনি ঘাবড়ে গেছিলেন। গাড়ির সামনের কাচ ভেঙে চালক ও তার গায়ে লাগে বলে ব্রাত্যের দাবি। তিনি বলেছেন, পড়ুয়ার আহত হওয়ার ঘটনা কাম্য ছিল না। তার খারাপ লেগেছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
বামপন্থি পড়ুয়াদের মিছিল
শনিবারের ঘটনার প্রতিবাদে পথে নামে বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলি। রোববার বামপন্থি ছাত্র সংগঠন এসএফআই এবং অন্যান্য বামপন্থি দলের ডাকে সুকান্ত সেতু থেকে যাদবপুর থানা পর্যন্ত একটি প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করা হয়।
ছবি: Subrata Goswami/DW
মিছিলে সিপিএমের নেতারাও
অবিলম্বে ব্রাত্য বসুর পদত্যাগ চাই, এই দাবিতে বামফ্রন্ট ও বামপন্থি দলের ডাকে সুকান্ত সেতু থেকে যাদবপুর থানা পর্যন্ত এই প্রতিবাদ মিছিল হয়। উপস্থিত ছিলেন মহম্মদ সেলিম, সৃজন ভট্টাচার্য, মীনাক্ষি মুখোপাধ্যায় সহ আরো অনেকে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সেলিমের বক্তব্য
মহম্মদ সেলিম বলেন, যেখানে দক্ষিণপন্থার উত্থান হয় সেখানেই শিক্ষাব্যবস্থার এমন অবনতি হয়। দেশ-বিদেশের অনেক নেতা বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শয়তান তৈরির কারখানা। আসলে শয়তান দূর করতে হলে বাম রাজনীতিই প্রয়োজন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
বিভিন্ন জেলায় প্রতিবাদ
শুধুমাত্র শহর কলকাতাতেই নয়, এই ঘটনার প্রতিবাদে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় প্রতিবাদ মিছিল হয়। উপরের ছবিটি বহরমপুরের।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সাতটি এফআইআর
যাদবপুরের ঘটনা নিয়ে মোট সাতটি এফআইআর করেছে পুলিশ। একজন সাবেক ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ধর্মঘটের ডাক
যাদবপুরের ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেয় বাম ছাত্রদল। কলকাতার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পিকেটিং করা হয়।
ছবি: Subrata Goswami/DW
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার মধ্যে
সোমবার থেকে উচ্চমাধ্যমিক শুরু হয়েছে। বাম ছাত্র সংগঠনগুলির দাবি, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে হয় না, তাই ধর্মঘটের প্রভাব পরীক্ষায় পড়ার কথা নয়। তারা বিষয়টি নিয়ে সতর্ক আছেন। কোনো পরীক্ষার্থীর যাতে কোনো অসুবিধা না হয়, সেটা দেখা হচ্ছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
10 ছবি1 | 10
এদিকে, যাদবপুরে এদিন পেন ডাউন কর্মসূচি চলছে। বহু ছাত্র এবং কিছু শিক্ষাকর্মী এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীরা জানিয়েছেন, উপাচার্যকে ২৪ ঘণ্টা সময় দেওয়া হচ্ছে। তার মধ্যে ক্যাম্পাসে এসে তাকে আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। আহত ছাত্রদের সঙ্গে দেখা করতে হবে এবং তাদের চিকিৎসার খরচ দিতে হবে। নইলে আরো বৃহত্তর আন্দোলনের রাস্তায় তারা হাঁটবে।
ছাত্রদের দাবি, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর গাড়ি ছাত্রদের উপর দিয়ে চালানোর চেষ্টা হয়েছে। ফলে শিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করতে হবে। এবং সেই মামলা করতে হবে কর্তৃপক্ষকে। উল্লেখ্য, সোমবার রাত পর্যন্ত যাদবপুরের তিনটি বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা জেনারেল বডি বৈঠক করে। সেখানেই এই সিদ্ধান্তগুলি নেওয়া হয়েছে।
কর্তৃপক্ষের তরফে এখনো পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করা হয়নি। ডয়চে ভেলে উপাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।