1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

উপাচার্যের ঘুম ভেঙে যায়, মসজিদের মাইকের শব্দ কমল

১৯ মার্চ ২০২১

আজানের শব্দে ঘুম ভেঙে যাচ্ছে। মাথাব্যথা হচ্ছে। এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের এই নালিশের পর মাইকের শব্দ কমিয়ে অর্ধেক করা হয়েছে।

মসজিদের মাইকে আজানের শব্দে তার ঘুম ভেঙে যায় বলে অভিযোগ করেছিলেন উপাচার্য।ছবি: DW/Syamantak Ghosh

রীতিমতো আলোড়ন ফেলে দিয়েছেন এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সঙ্গীতা শ্রীবাস্তব। ডিএম বা জেলাশাসকের কাছে নিজের সরকারি প্যাডে চিঠি লিখে নালিশ করেছেন, তার বাড়ির কাছের মসজিদ থেকে মাইকে ভোরের আজানের শব্দে তার ঘুম ভেঙে যাচ্ছে। তারপর অনেক চেষ্টা করেও ঘুম আসছে না। মাথাব্যথা করছে। এর প্রভাব তার কাজে গিয়ে পড়ছে। তিনি আদালতের রায় উদ্ধৃত করে বলেছেন, কোনো ধর্মই মাইক ব্যবহার করার কথা বলে না। তার দাবি ছিল, মাইক বন্ধ করতে হবে।

শুধু আজান নয়, রমজানের সময় সেহরি নিয়েও তিনি আপত্তি জানিয়েছিলেন। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ঈদের আগে রাত চারটের সময় যে সেহরি হয়, তার আওয়াজেও অন্য মানুষদের অসুবিধা হয়। তিনি এই চিঠি লিখেছিলেন মার্চে। কিন্তু সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে চিঠির প্রতিলিপি প্রকাশিত হওয়ার পরই প্রবল বিতর্ক শুরু হয়। ঘটনা হলো, প্রশাসনের তরফ থেকে মসজিদ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি মিটিয়ে নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছিল। দ্য প্রিন্ট জানাচ্ছে, মসজিদের তরফ থেকে খালিলুর রহমান জানিয়েছেন, তারা দুইটি লাউডস্পিকার অন্যদিকে বসিয়েছেন। মাইকের ভলিউম পঞ্চাশ শতাংশ কম করে দিয়েছেন। ফলে এখন আর কোনো সমস্যা নেই। তাঁর মতে, প্রশাসনিক কর্তাদের না বলে, উপাচার্য যদি আগে তাদের জানাতেন, তা হলে অনেক আগেই তারা এই ব্যবস্থা নিতে পারতেন।

ধরেই নেয়া যায়, উপাচার্য অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের কবিতা পড়েননি। পড়লে তিনি জানতেন, ''আমরা এক বৃন্তে দুই ফুল, এক মাঠে দুই ফসল/ আমাদের খাঁচার ভিতরে একই অচিন পাখির আনাগোনা | আমার দেবতার থানে তুমি বটের ঝুরিতে সুতো বাঁধো/আমি তোমার পীরের দরগায় চেরাগ জ্বালি | আমার স্তোত্রপাঠ তোমাকে ডাকে/ তোমার আজান আমাকে খুঁজে বেড়ায় |'' এখানে আজান তাকে খুঁজে বেড়ায়নি, বরং তার কানে জোরে বেজেছে। হতেই পারে, ওই শব্দে তার ঘুম ভেঙে যেত। তিনি মসজিদ কর্তৃপক্ষকে বলতে পারতেন, আওয়াজ একটু কম করে দিতে। তারা তা করে দিলে আর কোনো সমস্যা থাকত না। কিন্তু সোজা জেলার সরকরি কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি লিখে, সামাজিক মাধ্যমে সেই চিঠি এসে গিয়ে যে বিতর্কটা সৃষ্টি হয়েছে, তা খুব একটা সুখের নয়। এই অসহিষ্ণুতার সময়ে এই মন্থনে বিষই বেশি বের হয় যে।

গৌতম হোড়, ডয়চে ভেলে।ছবি: privat

ঘটনা হলো, ভারতে পরিকল্পিত শহর সামান্য কয়েকটাই আছে। নতুন দিল্লি, চণ্ডিগড়, গান্ধীনগরের মতো অল্প কয়েকটা শহর। কলকাতা, মুম্বইয়ের মতো পুরনো শহরের নতুন কিছু পরিকল্পিত অংশ আছে। যেমন, সল্ট লেক, নিউ টাউন। বাকি সব জায়গায় নগরায়ন হয়েছে বিক্ষিপ্তভাবে। তাতে পরিকল্পনার বালাই নেই। ফলে আবাসিক এলাকার মাঝখানে গড়ে উঠেছে ধর্মস্থান। সেজন্য মসজিদের লাউডস্পিকার, সারারাত জেগে হিন্দু জাগরণে মাইকের ব্যবহার অথবা দিনের বেলাতেও প্রবল জোরে মাইক বাজিয়ে ধর্মীয় শোভাযাত্রার কারণে মানুষের অসুবিধা হতে পারে। এই বাস্তবতা মেনে  নিয়ে সবদিক বিবেচনা করে, অসুবিধা যতটা কম করা যায়, সেটাই সব পক্ষের করা উচিত। এখানে মসজিদ কর্তৃপক্ষ সেই কাজ করায় নিঃসন্দেহে ধন্যবাদের পাত্র হয়েছেন। তারা এই বিতর্ক বাড়তে না দিয়েও ভাল কাজ করেছেন।

একটা যুক্তি সচরাচর দেয়া হয়, ধর্ম হলো মানুষের ব্যক্তিগত বিষয়, তার জন্য সোচ্চারে মাইক বাজাবার দরকার নেই। তা হলে তো প্রতিটি ক্ষেত্রে তা বন্ধ করতে হবে। সেখানে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, জৈন সকলের ধর্মীয় বিষয়ে মাইকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা দরকার। বিচ্ছিন্নভাবে কোনো ধর্মের ক্ষেত্রে আপত্তি জানানো উচিত নয়। এটা সহজবোধ্য, ধর্মীয় বিষয়গুলি খুবই স্পর্শকাতর। একসময় গায়ক সোনু নিগমও উপাচার্যের মতো মাইক বাজানো নিয়ে আপত্তি করে, পরে তা প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। এই স্পর্শকাতরতা সব ধর্মের মানুষদের মধ্যেই সমানভাবে থাকবে।

দিল্লির একটা উদাহরণ দেয়া যাক। চাঁদনি চকের রাস্তা চওড়া করা ও সৌন্দর্যায়নের জন্য একটি মন্দির ভেঙে ফেলা হয়। তারপর তা নিয়ে শুরু হয় দোষারোপের পালা। বিজেপি বলে, এটা আপের কাজ। আপ বলছে, তাদের হাতে এই ক্ষমতাই নেই। বিজেপি সরকারের দফতরই তা করেছে। লোকের প্রতিবাদ শুরু হয়। এর মধ্যে কে বা কারা একটি স্টিলের মন্দির পুরনো জায়গায় বসিয়ে দেয়। তারপর যে কে সেই অবস্থা।

নীতি যদি হয়, রাস্তায় বেআইনি কাঠামো ভাঙা হবে, তা হলে যে কোনো ধর্মের বা মানুষের কাঠামো হোক তা ভাঙা হবে। কিন্তু মুসকিল হলো, আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে রাজনীতি ও অসহিষ্ণুতা ঢুকে যাচ্ছে। তাই সামান্য অসুবিধাও আমরা বরদাস্ত করতে চাই না, অনেক সময় কৌশলগত কারণেও করি না। ফলে বিতর্ক তৈরি হয়। হতে থাকে। জন্ম নিতে থাকে অসহিষ্ণুতা। সে বড় সুখের সময় নয়।

 

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ