গোটা বিশ্বে ধর্ম নিয়ে লড়াই, বিভেদের শেষ নেই৷ কিন্তু সব ধর্মই কি এক শিক্ষা দেয় না? এক শিল্পী তাঁর ছবির মাধ্যমে বিভিন্ন ধর্মের উপাসনালয়ের মধ্যে মিল তুলে ধরছেন৷ নিজস্ব শৈলিতে তিনি সেই বৈশিষ্ট্য তুলে ধরছেন৷
বিজ্ঞাপন
রোম শহরে প্যান্থিয়ন, ইস্তানবুলে হাগিয়া সোফিয়া অথবা ভিয়েনা শহরের সিনাগগ – গির্জা, মসজিদ বা সিনাগগ – ভালো করে তাকালে তবেই বোঝা যায় ঠিক কী দেখা যাচ্ছে৷
ওলা কোলেমাইনেন প্রাচীন সব উপাসনালয়কেই মোটিফ হিসেবে বেছে নেন৷ উপযুক্ত পরিবেশ পেলে তবেই তিনি সে সবের ছবি তোলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রবেশ করার সময় উপযুক্ত আলোকসম্পাত চাই৷ আমি এক শক্তির খোঁজ করি৷ কিছু জায়গায় তা সহজেই পাওয়া যায়, অন্যান্য জায়গায় সেটা পাওয়া কঠিন৷ আবার সহজে পেলেও তা ক্যামেরাবন্দি করা কঠিন৷''
তাঁর ছবি বিভেদ ভুলিয়ে দেয়
02:28
ওলা কোলেমাইনেন বার্লিনের ক্যাথিড্রালের ছবি তুলছেন৷ সেই লক্ষ্যে তিনি সঠিক মোটিফ, আদর্শ দাঁড়ানোর জায়গা ও আদর্শ আলো খুঁজছেন৷ ভিতরের অনবদ্য পরিবেশ ও মাত্রা ছবিতে ফুটিয়ে তোলাই আসল চ্যালেঞ্জ৷ ওলা বলেন, ‘‘আমি ছবিকে কয়েকটা ভাগে বিভক্ত করি৷ অর্থাৎ ভেঙে ফেলে আবার জোড়া দেই৷ কিন্তু সেটা নিখুঁত হয় না৷ নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে দেখলে দর্শকের ত্রিমাত্রিক উপলব্ধি হয়৷''
কোলেমাইনেন-এর শিল্পসৃষ্টি শুটিং-এর পর সৃষ্টি হয়৷ বার্লিনে নিজের স্টুডিওয় তিনি বিভিন্ন টুকরো জুড়ে বড় প্যানোরামা সৃষ্টি করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এ সবই ডিজিটাল পদ্ধতিতে করা সম্ভব৷ কিন্তু আমার অ্যানালগই পছন্দ৷ সঙ্গে হাইব্রিড সিস্টেম থাকে৷ স্থাপত্যের ছবি তোলা নয়, তাকে বিমূর্ত করাই আমার সৃষ্টির লক্ষ্য৷''
একটু দূরত্ব থেকে পর্যবেক্ষণ করলে ওলা কোলেমাইনেন-এর ছবিতে খ্রিষ্টান, ইহুদি ও মুসলিমদের উপাসনালয়গুলির মধ্যে মিল খুঁজে পাওয়া যায়৷
গ্যোনা কেটেলস
এক ছাদের নীচে মসজিদ, গির্জা আর সিনাগগ!
জার্মানির বার্লিনে এমনই এক উপাসনালয় তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷ নাম – ‘হাউজ অফ ওয়ান’৷ আর এ জন্য ‘ক্রাউডফান্ডিং’-এর মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের কাজ চলছে৷
ছবি: Lia Darjes
এক ছাদের নীচে
জার্মানির বার্লিনে এমন একটি ভবন প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করা হয়েছে যেখানে এক ছাদের নীচে ইসলাম, খ্রিষ্টান ও ইহুদিদের প্রার্থনার জন্য আলাদা অংশ বরাদ্দ থাকবে৷ ‘হাউজ অফ ওয়ান’ নামের এই ভবনে থাকবে অন্য আরেকটি অংশ, যেখানে তিন ধর্মের অনুসারীরা একসঙ্গে মিলিত হয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে পারবেন৷
ছবি: KuehnMalvezzi
তিন উদ্যোক্তা
প্রোটেস্ট্যান্ট যাজক গ্রেগর হোব্যার্গ, রাব্বি টোফিয়া বেন-চোরিন ও ইমাম কাদির সানচির যৌথ উদ্যোগে পরিকল্পনাটি গ্রহণ করা হয়েছে৷ এ প্রসঙ্গে সানচি বলেন, ‘‘তিন ধর্মের চলার পথ আলাদা হলেও লক্ষ্য একই৷’’ মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে তিন ধর্মের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তোলা এর অন্যতম একটি উদ্দেশ্য৷
ছবি: Lia Darjes
গির্জার স্থানে
বার্লিনের যে স্থানে ভবনটি নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে সেখানে আগে ছিল একটি গির্জা৷ শীতল যুদ্ধের সময় সেটি ধ্বংস হয়ে যায়৷ তারপর থেকে জায়গাটি খালি পড়ে আছে৷
ছবি: Michel Koczy
শুরুতে মুসলিমদের আগ্রহ ছিল না
প্রকল্পের শুরুতে কোনো মুসলিম সম্প্রদায় এর সঙ্গে জড়িত হতে আগ্রহী ছিল না৷ পরে ‘ফোরাম ফর ইনটেলেকচুয়াল ডায়ালগ’ নামের তুর্কিভাষী সুন্নি মুসলিমদের একটি সংগঠন এর সঙ্গে যুক্ত হয়৷
ছবি: KuehnMalvezzi
খ্রিষ্টান ও ইহুদিদের সমালোচনা
জার্মানির ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের নেতা মার্টিন মোসেবাখ বলেন, ভবনটির নকশায় ‘পবিত্র’ বিষয়টি নেই৷ নকশাটি দেখে ‘ফারাউনের কবর’-এর মতো আকারহীন মনে হয়৷ ইহুদিদের একটি অংশও এই পরিকল্পনার সমালোচনা করেছে বলে জানা যায়৷
ছবি: Lia Darjes
তহবিল সংগ্রহ
ভবনটি তৈরি করতে ৪৩ মিলিয়ন ইউরো প্রয়োজন৷ ক্রাউডফান্ডিং-এর মাধ্যমে সেই টাকা তোলার প্রক্রিয়া চলছে৷