ইউরোপের মধ্যে ইটালি, গ্রিস, স্পেনের অবস্থা ছিল সব চেয়ে খারাপ। প্রচণ্ড গরমের সঙ্গী ছিল কম আর্দ্রতা ও জোরে হাওয়া। এই তিনটি দেশ তো বটেই, সেই সঙ্গে তুরস্ক সহ একাধিক দেশ ভয়াবহ দাবানলের শিকার। সেই দাবানল দিনের পর দিন জ্বলেছে। অতি কষ্টে সেই দাবানলের মোকাবিলা করা গেছে।
মঙ্গলবার ইইউ কোপারনিকাস ক্লাইমেট সার্ভিস ঘোষণা করেছে, উষ্ণতম গরমকাল কাটিয়েছে ইউরোপ। এরপর পরিবেশ বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সময় দ্রুত চলে যাচ্ছে। এখনই পরিবেশ বাঁচানোর জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। না হলে অনেক দেরি হয়ে যাবে।
কী বলছে কোপারনিকাস ক্লাইমেট সার্ভিস
কোপারনিকাস জানিয়েছে, ইউরোপে ১৯৯১ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত গড় তাপমাত্রার থেকে এবারের তাপমাত্রা এক ডিগ্রি বেশি ছিল। ১৯৫০ সাল থেকে আবহাওয়ার তথ্য বিশ্লেষণ করে সংস্থা জানিয়েছে, এবারের গরমকাল ছিল ইউরোপে সব চেয়ে তীব্র ও ভয়ংকর।
পৃথিবী জ্বলছে...
তাপদাহ তীব্র হচ্ছে, বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ হেক্টর বন পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে৷ এই মুহূর্তে বিশ্বের নানা দেশে জ্বলতে থাকা আগুনের কয়েকটি চিত্র দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: ROMAN KUTUKOV/REUTERS
রাশিয়া: স্বস্তির অবকাশ নেই
রাশিয়ার বেশ কিছু এলাকায় কয়েক সপ্তাহ ধরে আগুন জ্বলছে৷ উত্তর-পূর্বের ইয়াকুতিয়া ও এর আশেপাশের এলাকা সবচেয়ে ক্ষতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে৷ কর্তৃপক্ষের হিসাবমতে, রাশিয়া জুড়ে ২৫০-এরও বেশি স্থানে দাবানল ছড়িয়েছে, জ্বলছে ৮৬ লাখ একর বনভূমি৷
ছবি: ROMAN KUTUKOV/REUTERS
কুয়াশা? না, ছাই!
কেবল আগুনই যে স্থানীয়দের সংকটে পরিণত হয়েছে, এমন নয়৷ ঘন ধোঁয়া এবং ছাই ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকাতে ছড়িয়ে পড়ছে৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে সাইবেরিয়ান শহর ক্রাসনোয়ার্স্ক৷ শিশু ও বয়স্কদের জন্য বাড়ির বাইরে শ্বাস নেয়াও কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে৷
ছবি: REUTERS
গ্রিস: নিজভূমে উদ্বাস্তু
গ্রিসের দ্বীপ ইউবোয়ার পেফকি বন্দরে ফেরি দাঁড়িয়ে আছে৷ কিছুক্ষণের মধ্যেই অপর পাশের মূল ভূখণ্ডে অজানার উদ্দেশে পাড়ি জমাবেন বাসিন্দারা৷ যখন ফিরে আসবেন, মোটামুটি নিশ্চিত, তাদের বাড়িঘর কিছুই থাকবে না৷ দমকলের অগ্নিনির্বাপক বিমান আগুনের বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছে৷ তবে তাতে কাজ হচ্ছে না৷
ছবি: ALEXANDROS AVRAMIDIS/REUTERS
বেপরোয়া প্রচেষ্টা
সবাই কিন্তু পালিয়ে যাচ্ছেন না৷ অনেকেই নিজেদের বাড়িঘর রক্ষায় দমকলের পাশে দাঁড়িয়ে লড়াইয়ের চেষ্টা করছেন৷ কিন্তু কখনো কখনো এই চেষ্টা সহায়তার বদলে আরো বিপত্তি তৈরি করছে৷ যেমন, ছবির এই ব্যক্তি গাছের ডাল নিয়ে আগুন থামানোর চেষ্টা করছেন৷ নিজেদের বিপদের মুখে ঠেলে কর্তৃপক্ষের জন্য আরো বিপদ তৈরি করছেন অনেকে৷
ছবি: NICOLAS ECONOMOU/REUTERS
তুরস্ক: হুমকিতে আবাসিক এলাকা
গ্রিস এবং ইটালির পাশাপাশি তুরস্কও আগুনের সঙ্গে লড়াই করছে৷ আগুনের লেলিহান শিখা বন থেকে আবাসিক এলাকাতেও থাবা বসাচ্ছে৷ ছবিতে দেথা যাচ্ছে একটি ভবনকে আগুন থেকে বাঁচাতে লড়াই করছেন দমকলকর্মীরা৷ তুরস্কে দাবানলে দেড় লাখ হেক্টরেরও বেশি এলাকা জুড়ে আগুন ছড়িয়েছে৷ দাবানল গ্রাস করেছে আস্ত গ্রামকেও৷
ছবি: KENAN GURBUZ/REUTERS
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র: ডিক্সি ফায়ার
অ্যামেরিকার পশ্চিম উপকূলে ক্যালিফোর্নিয়ায় ৫,৭০০টি আগুন জ্বলছে৷ দাবানলের মৌসুম এখনও শুরুই হয়নি৷ রাজ্যটির ইতিহাসে এই ডিক্সি ফায়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম৷ গ্রিনভিল নামের একটি শহর এই আগুনে পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে৷ ছবিতে এক দমকলকর্মীকে আগুনের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: FRED GREAVES/REUTERS
মরার ওপর খাঁড়ার ঘা
দাবানল তো আছেই, পাশাপাশি সান্তা বারবারা পাহাড়ে তোলা এই ছবির মতো হঠাৎ করেই ছাই ও জ্বলন্ত কয়লার ঘূর্ণি পরিস্থিতি আরো সংকটময় করে তুলছে৷ দাবানলের ফলে আবহাওয়া নিজের মতো করে কিছুক্ষণ পরপরই পালটে যাচ্ছে৷ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে না পেরে স্থানীয় গভর্নররা এখন ওয়াশিংটনের সহায়তার আশা করছেন৷ আরো অনেক কর্মী ও অগ্নিনির্বাপক বিমান প্রয়োজন৷
ছবি: David McNew/REUTERS
7 ছবি1 | 7
ইটালি, গ্রিস ও স্পেনে তাপমাত্রা ছিল সব চেয়ে বেশি। ইটালির সিসিলিতে তাপমাত্রা উঠেছিল ৪৮ দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াস।
চরম আবহাওয়া
ইউরোপে এবার চরম আবহাওয়া ছিল। দাবানল যেমন হয়েছে। তেমনই হয়েছে ভয়ংকর বন্যা। জার্মানি, তুরস্ক সহ একাধিক দেশে বন্যা হয়েছে। বন্যায় ২৪২ জন মারা গেছেন। বাড়িঘর ভেঙেছে। রাস্তাঘাট ভেসে গেছে।
জার্মানিতে ভারী বর্ষণ, বন্যা: ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
জার্মানিতে বুধবার ভারী বর্ষণ হয়েছে৷ এতে রাইনল্যান্ড প্যালেটিনেট ও নর্থরাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে৷
ছবি: Roberto Pfeil/dpa/picture alliance
দিনভর বৃষ্টি
জার্মানির রাইনল্যান্ড প্যালেটিনেট ও নর্থরাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যে বুধবার ভারী বর্ষণ হয়েছে৷ শুল্ড শহরে (ছবি) পানির তোড়ে কয়েকটি বাড়ি ভেঙে গেছে৷
ছবি: Christoph Reichwein/TNN/dpa/picture alliance
প্রাণহানি
রয়টার্স বলছে নিহতের সংখ্যা ৩৩৷ এসোসিয়েটেড প্রেস, এপি ২০ জনের বেশি মৃত্যুর খবর দিয়েছে৷ আর জার্মানির বার্তা সংস্থা ডিপিএ বলছে, নিহতের সংখ্যা অন্তত ২০৷ ছবিতে পানিতে নিমজ্জিত আল্টেনবুর্গ শহর দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Polizei/picture alliance/dpa
রাস্তায় পানি, ভূমিধস
সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা গেছে রাস্তায় গাড়ি ভাসছে, কিছু এলাকায় বাড়িঘরের একটা অংশ ভেঙে গেছে৷ কিছু এলাকায় রাস্তায় পানি উঠে যাওয়ায় এবং ভূমিধসের কারণে ক্ষয়ক্ষতির পুরো চিত্র পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না৷
ছবি: David Young/dpa/picture alliance
বিদ্যুৎ নেই
জার্মানির সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী গ্রিড কোম্পানি ভেস্টনেৎসের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন. পশ্চিম জার্মানিতে বন্যার কারণে প্রায় দুই লাখ বাড়ি বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে৷
ছবি: Wolfgang Rattay/REUTERS
রেল চলাচলে বিঘ্ন
ভারী বর্ষণের কারণে নর্থরাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যের অনেক এলাকায় রেল চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল৷ হাইওয়েতেও গাড়ি চলাচলে বিঘ্ন ঘটেছে৷ রাইন নদীর কিছু অংশে জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল৷
ছবি: Harald Tittel/dpa/picture alliance
উদ্ধারকাজে সেনাবাহিনী
নর্থরাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যে প্রায় ২০০ ও রাইনল্যান্ড প্যালেটিনেট প্রায় ৭০ জন সেনা সদস্য ভারী যন্ত্রপাতি নিয়ে উদ্ধারকাজে যোগ দিয়েছে৷
ছবি: Roberto Pfeil/dpa/picture alliance
আরো বৃষ্টির আশঙ্কা
আবহাওয়া অফিস বলছে, বৃহস্পতি ও শুক্রবার জার্মানির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আরো ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে৷ তবে তা বুধবারের মতো বিধ্বংসী হবেনা বলেও আশস্ত করা হয়েছে৷
ছবি: Christoph Hardt/Geisler-Fotopres/picture alliance
‘নজিরবিহীন দুর্যোগ’
রাইনল্যান্ড প্যালেটিনেট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মালু ড্রেয়ার বৃহস্পতিবার রাজ্য সংসদে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে রাজ্যে বেশ কয়েকবার বন্যা হয়েছে৷ ‘‘তবে এমন দুর্যোগ দেখিনি, এটা আসলেই বিধ্বংসী৷’’ এর আগে বন্যাকবলিতদের কথা স্মরণ করে সংসদে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়৷
ছবি: Roberto Pfeil/dpa/picture alliance
8 ছবি1 | 8
পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, উষ্ণায়নের জন্য এরকম হচ্ছে। গ্লেসিয়ার নিয়ে সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, আগামী কয়েক দশকে গ্লেশিয়ার গলে যাওয়ার হার বাড়বে। তাতে ইউরোপ ভয়ংকরভাবে প্রভাবিত হবে।
আগামী ৩১ অক্টোবর থেকে ১২ নভেম্বর স্কটল্যান্ডে জাতিসংঘের উদ্যোগে ক্লাইমেট চেঞ্জ কনফারেন্স হবে। সেখানে বিশ্বনেতারা পরিবেশ বাঁচানোর পথ নিয়ে আলোচনা করবেন।