বৈশ্বিক উষ্ণতার জন্য মূলত কার্বন নির্গমনকে দায়ী করা হয়৷ তবে মিথেনের দায়ও কম নয়, কারণ এক-চতুর্থাংশ বৈশ্বিক উষ্ণতার জন্য এই গ্যাস দায়ী৷
বিজ্ঞাপন
মূলত তিনটি উৎস থেকে মিথেন নির্গমন হয়৷ ৪০ শতাংশ হয় গবাদিপশুর খামার থেকে৷ ২০ শতাংশ আবর্জনার স্তূপ থেকে৷ বাকিটা কয়লা, তেল ও গ্যাস উত্তোলন ক্ষেত্র থেকে৷
বিজ্ঞানীরা বলছেন কয়লা উত্তোলনের সময় যে মিথেন নির্গমন হয় সেটা দূর করা কঠিন৷ তবে তেল ও গ্যাস উত্তোলনের সময় নির্গত হওয়া মিথেনের পরিমাণ কম খরচে ও সহজে কমানো কিংবা বন্ধ করা সম্ভব৷
তেল ও গ্যাস ক্ষেত্র থেকে তিনভাবে মিথেন নির্গমন হয়৷ এক, স্ক্রু ঢিলা কিংবা পাইপ পুরনো হওয়ার কারণে ছিদ্র তৈরি হলে সেখান দিয়ে মিথেন বের হতে পারে৷ দুই, পাইপে গ্যাসের চাপ কমানোর জন্য অনেকসময় বায়ুমণ্ডলে মিথেন ছেড়ে দেয়া হয়, যা ‘ভেন্টিং' নামে পরিচিত৷ সাধারণত রক্ষণাবেক্ষণের সময় এটা করা হয়৷ এবং তিন, ভেন্টিংয়ের সময় বের হওয়া মিথেন পোড়ানো, যা ‘ফ্লেয়ারিং' নামে পরিচিত৷
মাংস উৎপাদন খারাপ, নাকি ভালো?
শিল্পোন্নত দেশগুলোতে বর্তমানে ‘ভেগানিজম’ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে৷ ভেগানরা পরিবেশের কথা মাথায় রেখেই মাংস বা পশু থেকে উৎপাদিত কোনো খাবার খান না৷ কিন্তু আসলে মাংস উৎপাদন এবং ভক্ষণ পৃথিবীর জন্য কতটা খারাপ?
ছবি: picture-alliance/dpa/I. Wagner
শিল্পোন্নত দেশের মানুষ বেশি মাংস খায়
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা জানিয়েছে, ২০১৫ সালে বিশ্বের প্রতিটি মানুষ (মাথাপিছু) গড়ে মাংস খেয়েছে ৪১.৩ কেজি৷ অথচ ৫০ বছর আগে এর অর্ধেক মাংস খাওয়া হতো৷ গত বছর উন্নয়নশীল দেশে যেখানে মাথাপিছু ৩১.৬ কেজি মাংস খাওয়া হয়েছে, শিল্পোন্নত দেশে খাওয়া হয়েছে ৯৫.৭ কিলোগ্রাম৷
ছবি: China Photos/Getty Images
উৎপাদনে পানি খরচ
মাংস উৎপাদন একটি ব্যয়বহুল ব্যবসা৷ এতে অর্থ, সময় ও সম্পদ খরচ হয়৷ এক কেজি গরুর মাংস উৎপাদনে ১৫,৪১৫ লিটার পানি লাগে৷ এক কেজি শুকরের মাংস উৎপাদনে লাগে ৬ হাজার লিটার পানি৷ অন্যদিকে সবজি, যেমন আলু উৎপাদনে ১ কেজিতে খরচ হয় ৩০০ লিটার পানি৷ অন্যদিকে ধান উৎপাদনে প্রতি কেজিতে খরচ হয় ২,৫০০ লিটার পানি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P.Pleul
গরু ও মুরগির খাদ্য
ওয়ার্ল্ড ওয়াচ ইনস্টিটিউটের মতে, বিশ্বের উৎপাদিত প্রতি ৫ টন শস্যের মধ্যে ২ টন পোলট্রি বা মাছের খামারে যায়৷ অন্যদিকে, গুরুর মাংস উৎপাদনের জন্য এত খাদ্য ব্যয় হয় না৷ ঘাস খেয়েই এদের অনেকটা চাহিদা পূরণ হয়৷
ছবি: Norberto Duarte/AFP/Getty Images
উজাড় হচ্ছে বন
প্রাণী খাদ্যের জন্য বন উজাড় হচ্ছে সবচেয়ে বেশি৷ গাছ কেটে গরু চারণ ক্ষেত্র বা কৃষিক্ষেত্র বাড়ানো হচ্ছে৷ ফলে জীববৈচিত্র হারিয়ে যাচ্ছে৷ সেই সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণতা৷
ছবি: Kate Evans / Center for International Forestry Research (CIFOR)
বিষাক্ত মিথেন
কার্বন নিঃসরণে কৃষির ভূমিকা রয়েছে ১১ থেকে ১৫ ভাগ৷ অন্যদিকে, গরুর ঢেঁকুর বা ‘গ্যাস’ থেকে যে মিথেন উৎপন্ন হয়, তা কার্বন ডাই অক্সাইডের চেয়ে ২০ গুণ বিষাক্ত ও ক্ষতিকর৷
ছবি: DW/C.Lomas
5 ছবি1 | 5
আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা আইইএ বলছে, বিদ্যমান প্রযুক্তি ব্যবহার করে তেল ও গ্যাস কোম্পানিগুলো মিথেন নির্গমন ৭৫ শতাংশ কমাতে পারে৷ যেমন, নিয়মিত দেখাশোনার মাধ্যমে পাইপের ছিদ্র বন্ধের ব্যবস্থা করা যেতে পারে৷ এছাড়া ভেন্টিং ও ফ্লেয়ারিং না করে কম্প্রেসার ডিভাইসের মাধ্যমে গ্যাস ধরে রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা৷ শুধু জরুরি সংস্কার কাজের সময় যতটুকু গ্যাস পোড়ানো প্রয়োজন ততটুকু পোড়ানোর কথা বলছেন তারা৷ বাকি গ্যাস বিক্রি করে কোম্পানিগুলো কিছু আয়ও করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷
মিথেন নির্গমন কমাতে বিভিন্ন দেশের সরকার আইন করার উদ্যোগ নিচ্ছে৷ যেমন মিথেন নির্গমনের পরিমাণ সম্পর্কে জানাতে কোম্পানিগুলো বাধ্য করতে আইন করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ এছাড়া নিয়ম করে ছিদ্র বন্ধ করা এবং ভেন্টিং ও ফ্লেয়ারিং নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব করেছে সংস্থাটি৷