হামাস যু্দ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় গাজায় আবারো শুরু হয়েছে ইসরায়েলি হামলা৷ এই হামলায় এখন পর্যন্ত দুই শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দার পাশাপাশি উঠে এসেছে মানবিক আবেদন৷
বিজ্ঞাপন
আমারব্লগে মাহবুবুল আলম লিখেছেন, ‘গাজায় মানবিক বিপর্যয়, গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল৷' লিখেছেন, ‘‘গাজায় ইসরায়েলের হামলা সকল বর্বরতাকে হার মানিয়েছে৷ ইসরায়েল সেখানে নির্বিচারে গণহত্যা চালিয়ে মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি করেছে৷ ইসরায়েলের এই বর্বরোচিত হামলার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় ওঠলেও গাজায় ইসরায়েলের বর্বরতা বন্ধতো হয়নি বরং বিশ্বের সকল শান্তিকামী মানুষের প্রতিবাদকে উপেক্ষা করে পবিত্র রমজান মাসে অবরুদ্ধ গাজায় বেসামরিক লোকজনসহ নিরপরাধ নারী-শিশুদের ওপর নির্বিচারে বোমা হামলা ও নির্মম নিধনযজ্ঞ চালিয়ে ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমিকে রক্তাক্ত করেছে৷'
মাহবুবুল আলম লিখেছেন, ‘‘আন্তর্জাতিক কনভেনশন অনুযায়ী ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মরক্ষার অধিকার আছে৷ গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচারে বোমা হামলা ও গণহত্যার প্রতিবাদে বাংলাদেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক ও মানবতাবাদী বিভিন্ন সংগঠন রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে৷''
তিনি আরো লিখেছেন, ‘‘ইসরায়েলের অমানবিকতা ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে সারা বিশ্বে প্রতিবাদের ঝড় ওঠলেও সুপার পাওয়ার আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, তার মিত্র শক্তিবর্গ তথা বর্তমান বিশ্বের পাশ্চাত্য বৃহৎ শক্তিবর্গের পরোক্ষ-প্রত্যক্ষ মদদে ইসরায়েল তার নৃশংসতা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হচ্ছে৷ সবচেয়ে বড় কথা মুসলিমবিশ্ব আরব লিগ, ওআইসিসহ মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন সংগঠনের মধ্যে রেষারেষি ও বৈরিতার সুযোগ নিচ্ছে আমেরিকাসহ পাশ্চাত্যশক্তির ধারক-বাহকরা৷''
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলমান সংঘাত নিয়ে গবেষণা করছে হাইডেলবার্গ ইন্সটিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল কনফ্লিক্ট রিসার্চ (এইচআইআইকে)৷ তাদের হিসেবে, গত বছর গোটা বিশ্বে চারশোর মতো সংঘাত ঘটেছে, যার বিশটি সরাসরি যুদ্ধ৷ এই নিয়ে ছবিঘর৷
ছবি: Reuters
শান্তির কোনো লক্ষণ নেই
ধর্মান্ধতা, দুষ্প্রাপ্য খনিজ পদার্থের লোভ কিংবা ক্ষমতা দখলের বাসনা – হাজার হাজার বছর ধরে যুদ্ধ, সংঘাতের কারণ ঘুরে ফিরে এগুলোই৷ ২০১৩ সালেও পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি৷ হাইডেলবার্গ ইন্সটিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল কনফ্লিক্ট রিসার্চ (এইচআইআইকে) গত বছরের উল্লেখযোগ্য কিছু সংঘাত, যুদ্ধের কথা প্রকাশ করেছে ‘কনফ্লিক্ট ব্যারোমিটার ২০১৩’ শিরোনামে৷
ছবি: Reuters
ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো
গত বছর কিভু-তে সেনাবাহিনী নিয়মিত এম২৩ বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে যুদ্ধ করেছে৷ ২০১৩ সালের শেষের দিকে অবশ্য সরকার ঘোষণা দেয়, বিদ্রোহীদের দমনে সক্ষম হয়েছে তারা৷ অন্যদিকে এম২৩ গোষ্ঠীর ঘোষণা, এখন থেকে রাজনৈতিক পথে দাবি আদায়ের চেষ্টা করবে তারা৷
ছবি: Melanie Gouby/AFP/GettyImages
মালি
মালিতে উগ্র ইসলামপন্থিরা ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করছে৷ ২০১২ সালে সে দেশের উত্তরাঞ্চলের একটা বড় অংশ তাদের দখলে চলে যায়৷ ফলশ্রুতিতে মালি সরকারকে যুদ্ধে সহায়তায় এগিয়ে আসে ফ্রান্স৷ এরপর পিছু হটতে বাধ্য হয় উগ্র ইসলামপন্থিরা৷ বর্তমানে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী মালিতে শান্তি রক্ষার দায়িত্বে রয়েছে৷ তবে সে দেশে বিভিন্ন জঙ্গি এবং আত্মঘাতী হামলার খবর মাঝে মাঝেই শোনা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নাইজেরিয়া
উগ্র ইসলামপন্থি জঙ্গি গোষ্ঠী বোকো হারাম নাইজেরিয়ায় শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠা করতে চায়৷ এই লক্ষ্য পূরণে সে দেশের খ্রিষ্টান এবং মধ্যপন্থি মুসলমানদের উপর হামলা অব্যাহত রেখেছে গোষ্ঠীটি৷ ছবিতে একটি হামলায় নিহতদের জন্য সমাধি খুঁড়ছেন তাদের খ্রিষ্টান আত্মীয়রা৷ নাইজেরিয়ায় আরো একটি সংঘাত চলছে৷ তৃণভূমি ইস্যুতে খ্রিষ্টান কৃষকরা লড়াই করছেন গবাদি পশু পালক মুসলমানদের সঙ্গে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সুদান
গত দশ বছরের বেশি সময় ধরে দারফুর অঞ্চলে বসবাসকারী আফ্রিকার বিভিন্ন গোষ্ঠী সরকারি বাহিনী এবং তাদের অনুসারীদের সঙ্গে লড়াই করছে৷ যুদ্ধের কারণে কয়েক লাখ মানুষ ইতোমধ্যে প্রাণ হারিয়েছে এবং অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আফগানিস্তান
আফগানিস্তানে নিযুক্ত ন্যাটো বাহিনী স্থানীয় বাহিনীর হাতে সে দেশের নিরাপত্তার দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার পরও সংঘাত অব্যাহত রয়েছে৷ তালেবান এবং অন্যান্য চরমপন্থি গোষ্ঠী সে দেশের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আত্মঘাতী হামলা এবং ‘বুবি-ট্র্যাপ’-এর মাধ্যমে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে৷ বিশেষ করে সীমান্ত অঞ্চলে সংঘাত থামার কোন লক্ষণ নেই৷ জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, আফগানিস্তানে ২০১৩ সালে আড়াই হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মেক্সিকো
মাদক, মানবপাচার, ব্ল্যাকমেল এবং চোরাচালানের মতো কর্মকাণ্ড মেক্সিকোর মাফিয়াদের অর্থ উপার্জনের উৎস৷ আয়ের এসব উৎস নিরাপদ রাখতে মাফিয়ারা একে অপরের সঙ্গে এবং প্রয়োজনে সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়৷ সে দেশে প্রতি সপ্তাহেই দাঙ্গার ঘটনা ঘটে৷ মেক্সিকো সরকারের হিসেব অনুযায়ী, গত বছর সে দেশে ১৭ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সিরিয়া
সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে৷ সেদেশ কার্যত বিভিন্ন অংশে ভাগ হয়ে গেছে৷ কিছু অংশের দখল রয়েছে সে দেশের প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকারি বাহিনীর কাছে, বাকি বিভিন্ন অঞ্চল মধ্যপন্থি বিরোধী দল, উগ্র ইসলামপন্থি গোষ্ঠী এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর দখলে চলে গেছে৷ সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধে এখন পর্যন্ত এক লাখের বেশি মানুষ নিহত এবং নব্বই লাখের মতো মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে৷
ছবি: Mohmmed Al Khatieb/AFP/Getty Images
ফিলিপাইন্স
চল্লিশ বছরের বেশি সময় ধরে ফিলিপাইন্সে মোরো সম্প্রদায় স্বাধীনতার দাবিতে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে৷ মাঝে কিছুদিন অপেক্ষাকৃত শান্ত থাকার পর ২০১৩ সালে আবারো তারা শুরু হয়েছে সহিংস সংগ্রাম৷ বিদ্রোহী গোষ্ঠী এমএনএলএফ সে দেশের দক্ষিণের দ্বীপগুলোর স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে৷ যুদ্ধের কারণে এক লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে৷
ছবি: Reuters
সোমালিয়া
সোমালিয়ায় আল-শাবাব জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে সরকারি বাহিনীর যুদ্ধ চলছে গত আট বছর ধরে৷ জাতিসংঘ এবং আফ্রিকান ইউনিয়নের সেনাদের সহায়তায় সোমালিয়া সরকার আল-শাবাবকে ঠেকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে৷ তবে এখনো সে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটি বড় অংশ জঙ্গি গোষ্ঠীর দখলে রয়েছে৷
ছবি: Mohamed Abdiwahab/AFP/Getty Images
দক্ষিণ সুদান
তিন বছর আগে স্বাধীনতা লাভ করা দক্ষিণ সুদানে এখনো সংঘাত অব্যাহত রয়েছে৷ সে দেশের ভাইস-প্রেসিডেন্টের পক্ষের সেনারা প্রেসিডেন্সিয়াল ফোর্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে৷ এছাড়া প্রতিবেশী দেশ সুদানের দুটি রাজ্যে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে চলমান আন্দোলনের সঙ্গেও সম্পৃক্ত রয়েছে দক্ষিণ সুদানের সেনারা৷
তিনি লিখেছেন, ‘‘নিরীহ মানুষগুলোর উপর চলছে গণহত্যা৷ আমরা নিশ্চুপ কেন? নিশ্চুপ কেন আজ মানবাধিকার সংগঠনগুলো? আমরা বাংলাদেশিরা প্রতিবাদ জানাচ্ছি৷ প্রতিবাদ জানাচ্ছি সামহোয়্যার ইন ব্লগ থেকে, জানাচ্ছি তীব্র নিন্দা৷ বাংলাদেশ থেকে আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি গ্রুপের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাচ্ছি৷''