উহানে পৌঁছে গিয়েছেন ডাব্লিউএইচও-র প্রতিনিধিরা। কিন্তু তাঁরা সকলের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষ দল আগেই পৌঁছে গিয়েছিল চীনের উহানে। বৃহস্পতিবার থেকে তারা করোনার উৎসের সন্ধানে কাজ শুরু করল। এর আগে উহানেই ১৪ দিন কোয়ারান্টিনে থাকতে হয়েছে তাদের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, পশু-পাখির যে বাজার থেকে প্রথম করোনা ছড়িয়েছিল বলে চীন দাবি করেছিল, তাদের কাজও সেখান থেকেই শুরু হবে।
গত বছরের ৩০ জানুয়ারি করোনাকে গ্লোবাল প্যানডেমিক বলে ঘোষণা করেছিল ডাব্লিউএইচও। তার বেশ কিছু দিন আগে থেকেই চীনে করোনার সংক্রমণ মারাত্মক ভাবে ছড়াতে শুরু করে। সব চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল উহান। প্রথমে উহানের সীমানা বন্ধ করে প্যানডেমিক মোকাবিলার চেষ্টা করে দেশের সরকার। তারপর কড়া লকডাউন ঘোষণা করা হয়। কার্যত গৃহবন্দি হয়ে পড়েন সাধারণ মানুষ। তারই মধ্যে করোনার সংক্রমণ ছড়াতে থাকে। চীনের দেওয়া প্রাথমিক হিসেব অনুযায়ী তিন হাজার ৯০০ মানুষের মৃত্যু হয়। যদিও এই সংখ্যাটি ঠিক কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক আছে। অনেকেরই বক্তব্য, চীন উহানে মৃত্যুর সংখ্যা কম করে দেখিয়েছে।
দুই দশকে নতুন যত ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব
গোটা বিশ্ব এখন করোনা ভাইরাস বিরুদ্ধে লড়ছে, যার শুরুটা হয়েছিল গত বছরের ডিসেম্বরে চীন থেকে৷ গত প্রায় দুই দশকে ছড়িয়ে পড়া নতুন কয়েকটি ভাইরাস নিয়ে এই ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Center for Disease Control
বার্ড ফ্লু (এইচ৫এন১)
১৯৯৭ সালে হংকংয়ে এইচ৫এন১ ভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল৷ তারপর ২০০৩, ২০০৬, ২০০৭ ও ২০০৮ সালে এশিয়ার আরো কয়েকটি দেশে এই ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দেয়৷ ২০০৩ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৬৩০ জন বার্ড ফ্লুতে সংক্রমিত হয়েছেন এবং ৩৭৫ জন মারা গেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নিপাহ ভাইরাস
১৯৯৮ সালে মালয়েশিয়ার পাংকর দ্বীপের ছোট্ট শহর কামপুং তেলুক নিপাহতে নতুন একটি ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হয়৷ পরের বছর ওই শহরের নামে ভাইরাসটির নামকরণ হয় নিপাহ৷ এই ভাইরাসে আক্রান্তদের মৃত্যুর আশঙ্কা ৫৪ শতাংশ৷ ২০১৮ সালে ভারতের কেরালায় এই ভাইরাস সংক্রমণে অন্তত ১৬ জনের মৃত্যু হয়৷ ২০১৩ সালে বাংলাদেশে নিপাহ ভাইরাসে অন্তত ১০ জন মারা যান৷
ছবি: Getty Images/AFP
সার্স
সিভিয়ার একিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (সার্স) ভাইরাসের প্রথম প্রাদুর্ভাব হয় চীনে৷ ২০০২ ও ২০০৪ সালে এশিয়ার কয়েকটি দেশে সার্স ভাইরাস মারাত্মক আকারে ছড়িয়ে পড়ে৷ আট হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হন, মারা যান প্রায় ৭৭৪ জন৷ ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হলে ভয়াবহ শ্বাসকষ্ট হয়৷ তবে ২০০৪ সালের পর এই ভাইরাসে প্রাদুর্ভাবের খবর আর পাওয়া যায়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Reynolds
সোয়াইন ফ্লু
২০০৯ সালে প্রথম বিশ্বজুড়ে এইচ১এন১ ভাইরাসের প্রকোপ দেখা যায়৷ শূকরের ফ্লুর সঙ্গে লক্ষণ মিল থাকায় একে সোয়াইন ফ্লু নাম দেওয়া হয়৷ এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১১ থেকে ২১ শতাংশ মানুষ এ ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছেন৷ দেড় লাখ থেকে প্রায় ছয়লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে৷ ঢাকায় নতুন বছরে সোয়াইন ফ্লু ছড়িয়ে পড়ার খবর শোনা গেলেও আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: AP
মার্স (মিডলইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম)
এটি সার্স ভাইরাস গোত্রেরই একটি ভাইরাস৷ ২০১২ সালে প্রথম সৌদি আরবে এই ভাইরাসের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়৷ দেশটিতে মার্সে আক্রান্ত প্রায় ৩৫ শতাংশ মানুষ মারা যান৷ উট থেকে এই ভাইরাস মানবদেহে ছড়ায় বলে ধারণা করা হয়৷ হাঁচি, কাশি ও সংস্পর্শের মাধ্যমে মানুষ থেকে মানুষেও ছড়ায়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
করোনা ভাইরাস
চীনের উহান প্রদেশে গত ডিসেম্বর থেকে করোনা ভাইরাস প্রকোপ শুরু হয়৷ পরবর্তীতে তা ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বে৷
ছবি: Getty Images/AFP/STR
বৈশ্বিক মহামারি
২০২০ সালের শুরু থেকেই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে বিভিন্ন দেশে৷ এক পর্যায়ে বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷ এশিয়া থেকে ইউরোপ হয়ে এখন অ্যামেরিকা রয়েছে করোনা আক্রান্ত দেশগুলোর শীর্ষে৷ সারা বিশ্বে এরিমধ্যে দুই লাখের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে রহস্যময় ভাইরাসটি৷
ছবি: Getty Images/L. DeCicca
প্রতিষেধক নেই
এখনও করোনার কোন প্রতিষেধক আবিস্কার হয়নি৷ তবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ৷ কয়েকটি উদ্যোগ বেশ খানিকটা এগিয়েছে৷ মানব শরীরে কিছু সম্ভাব্য টিকার পরীক্ষা নিরীক্ষাও শুরু হয়েছে৷ তবে সেগুলো কার্যকারিতা নিশ্চিত হতে আরো বছর খানেক সময় লাগতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/Yonhap
8 ছবি1 | 8
তবে লকডাউনের জেরে উহানে সংক্রমণের হার ক্রমশ কমতে শুরু করে। প্রশ্ন হলো, উহান থেকেই কি করোনা ভাইরাসের সূত্রপাত? চীনের বক্তব্য, উহানের একটি পশু বাজার থেকে প্রথম করোনা ছড়ায়। তবে অ্যামেরিকা প্রথম থেকে দাবি করছে, উহানের একটি ল্যাবরেটরি থেকে করোনা প্রথম সংক্রমিত হয়। বিদেশে পালিয়ে যাওয়া চীনের কয়েকজন গবেষকও একই কথা বলেছেন। এখনো পর্যন্ত ওই ল্যাবরেটরিতে চীনের প্রশাসন ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মীরা কি সেখানে ঢুকতে পারবেন? তাঁরা কি সকলের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন?
কোনো প্রশ্নেরই উত্তর মেলেনি। বস্তুত, বেশ কয়েক মাস আগেই উহানে গিয়ে করোনার উৎস নিয়ে গবেষণা করতে চেয়েছিল ডাব্লিউএইচও। কিন্তু চীন আলোচনা দীর্ঘ করছিল। সেই আলোচনার মধ্যেই ডাব্লিউএইচও-র দুই কর্মকর্তা চীনে পৌঁছলে তাঁদের দেশে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। শেষ পর্যন্ত ডাব্লিউএইচও-কে উহানে যেতে দেওয়া হলেও প্রতিনিধিদের কড়া নজরদারির মধ্যে রাখা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার কোয়ারান্টিন শেষ করে যখন তাঁরা বাসে ওঠেন, তখন গোটা এলাকা হলুদ টেপ দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়।
উহানের বাসিন্দাদের অনেকেরই দাবি, প্রশাসন যত দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারতো, বাস্তবে তা নেয়নি। কোনো কোনো মহলের অভিযোগ, ডাব্লিউএইচও আরো আগে ব্যবস্থা নিতে পারতো। এই অভিযোগগুলি যাঁরা করছেন, উহানের সেই সাধারণ মানুষের সঙ্গে আদৌ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তারা কথা বলতে পারবেন কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে।