চীনের উহান থেকে ঢাকায় ফিরলেন ৩১৪ বাংলাদেশি৷ শনিবার বেলা ১২ টা নাগাদ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে তারা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌছান৷
বিজ্ঞাপন
উহানের তিয়ানহি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকায় ফিরেছে বিমানের বিশেষ ফ্লাইট৷ শনিবার বেলা ১১টা ৫৩ মিনিটে ৩১৪ বাংলাদেশিকে নিয়ে বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌছায়৷ ফেরত আসারা সবাই চীনের উহানে ছিলেন৷ এই শহরেই করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে৷
ফেরত আসা বাংলাদেশিদের আশকোনো হজ ক্যাম্পে ১৪ দিন পর্যবেক্ষণে রাখা হবে৷ এ সময় তাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য স্বজনরা যেন ব্যাকুল না হয়ে পড়েন সেজন্য তাদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী৷ আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুশতাক হোসেন আশকোনা হজ্জ ক্যাম্পে দায়িত্ব পালন করছেন৷ বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ‘‘ফ্লাইটে ৩১৪ জন এসেছেন৷ তাদের কোয়ারেন্টাইন স্টেশন আশকোনার হাজী ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে৷ আরও দুজনের আসার কথা থাকলেও শরীরে জ্বর থাকায় তারা চীনে রয়ে গেছেন৷''
করোনা ভাইরাস থেকে নিজেকে রক্ষার উপায়
বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷ এ থেকে নিজেকে রক্ষার কিছু উপায়ের কথা থাকছে ছবিঘরে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইনের ভিত্তিতে পরামর্শগুলো দেয়া হলো৷
ছবি: Getty Images/X. Chu
কিছু না থাকার চেয়ে ভালো
ভাইরাসের আক্রমণ থেকে বাঁচতে এমন মাস্ক কার্যকর বলে প্রমাণিত না হলেও এগুলো অন্তত কিছু জীবাণু মুখ কিংবা নাকে যাওয়া ঠেকাতে পারে৷ এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, মাস্ক পরা থাকলে মানুষের হাত যখন-তখন মুখ বা নাকে যায় না৷ আপনি যদি অসুস্থ হয়ে থাকেন তাহলে এমন মাস্ক অন্যদের আক্রমণ থেকে বাঁচাবে৷
ছবি: Getty Images/Stringer
হাত ধোয়া
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শে কিন্তু মাস্ক পরার কথা নেই৷ তাদের এক নম্বর পরামর্শটি হচ্ছে নিয়মিত ভালোভাবে হাত ধোয়া৷ সবচেয়ে ভালো হয় অ্যালকোহলসমৃদ্ধ তরল ব্যবহার করা, যেমনটা ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Pilick
সাবান, পানি হলেও চলবে
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, পানি ও সাবান দিয়ে হাত ধুলেও চলবে৷ তবে নিশ্চিত করতে হবে যেন পুরো হাত ভালোভাবে ধোয়া হয়৷
ছবি: picture alliance/dpa/C. Klose
সঠিকভাবে হাঁচি-কাশি দেয়া
ছবিটি ভালোভাবে খেয়াল করুন৷ হাঁচি-কাশি দেয়ার সময় ঠিক এভাবে মুখ আর নাক ঢাকতে হবে৷ তবে টিস্যুও ব্যবহার করতে পারেন৷ সেক্ষেত্রে ব্যবহারের পর টিস্যুটি দূরে ফেলে দিয়ে হাত ভালোভাবে ধুতে হবে৷ তেমনিভাবে শার্ট আর সোয়েটারটিও ধুয়ে ফেলতে হবে৷
ছবি: Fotolia/Brenda Carson
দূরে থাকুন!
এই পরামর্শটি সবার জন্য কার্যকর নাও হতে পারে৷ সেটি হচ্ছে, যার জ্বর ও কাশি আছে তার কাছ থেকে দূরে থাকুন৷ আপনার যদি অসুস্থ মানুষের সেবা করতে হয় তাহলে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিন৷
ছবি: picture alliance/empics
জ্বর হলে ডাক্তারের কাছে যান, ঘুরতে নয়!
জ্বর, কাশি কিংবা শ্বাসকষ্ট হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের কাছে যেতে হবে৷ যেখানে জনসমাগম বেশি সেসব জায়গায় যাওয়া থেকে বিরত থাকুন৷
ছবি: Reuters/P. Mikheyev
অর্ধসিদ্ধ নয়!
মাংস খুব ভালোভাবে রান্না করতে হবে৷ অর্ধসিদ্ধ হলে চলবে না৷ কাচা মাংস, দুধ কিংবা প্রাণীর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এমনভাবে নড়াচড়া করতে হবে যেন সেগুলো রান্না হয়নি এমন খাবারের সংস্পর্শে আসতে না পারে৷
ছবি: picture-alliance/Ch. Mohr
7 ছবি1 | 7
এদিকে নাগরিকদের আনতে বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটটি শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে ঢাকা ছেড়ে যায়৷ বিমানটিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সেনাবাহিনীর ৪ থেকে ৫ জন ডাক্তার ছিলেন৷
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) করোনা ভাইরাসের পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করছে৷ আইইডিসিআর জানায়, চারটি হটলাইনের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে৷ বিমানবন্দরে চীন থেকে আসা যাত্রীদের একটি কার্ড দেয়া হচ্ছে৷ সেই কার্ডে তাদের করণীয় এবং যোগাযোগের নাম্বার আছে৷ প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘চীন থেকে তাদের ফেরত আনাতে নতুন করে কোন ঝুঁকি তৈরী হবে না৷ তাদের জন্য যে ধরনের ব্যবস্থা করা দরকার আমরা সবই করেছি৷ সেখানে সার্বক্ষণিক চিকিৎসক দল পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করবেন৷''
হুবেই প্রদেশের মোট ২২টি শহরে বাংলাদেশের নাগরিকরা থাকেন৷ এরমধ্যে যারা উহানে রয়েছেন আপাতত তাদেরই ফিরিয়ে আনা হচ্ছে৷ বাকি শহরগুলোতে থাকা কোনো নাগরিককে এখন দেশে আনা হবে না৷
শুক্রবার সকালে বিমানবন্দরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে মোমেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ড. এনামুর রহমান সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, উহান শহরে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর চীন সরকার কাউকেই দেশের বাইরের যাওয়ার অনুমতি দেয়নি৷ পরে বাংলাদেশের ৩৬১ জনকে ফেরত পাঠাতে চায় চীন সরকার৷ এরপরই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জরুরিভাবে তাদেরকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে৷
এফএস (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
জার্মানি কিভাবে সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করে?
সম্প্রতি জার্মানিতেও করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর দেখা মিলেছে৷ করোনায় আক্রান্ত রোগের মতো সহজেই ছড়িয়ে পড়ে এমন রোগের বিরুদ্ধে জার্মানির প্রতিরোধ ব্যবস্থা খুবই সুদৃঢ়৷ ছবিঘরে রয়েছে বিস্তারিত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Dedert
বিশেষজ্ঞদের আস্থা
সব পর্যায়ের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জার্মানির জনগণকে বড় কোনো বিপদের মুখোমুখি হতে হবে না৷ ইবোলার মত ভাইরাস আক্রান্তদেরও বাঁচাতে সব রকমের ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছে তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Center of Disease Control
আইনি সুরক্ষা
সংক্রামক রোগের চিকিৎসায় জনগণ আইনি সুরক্ষা পান জার্মানিতে৷ এখানে আছে ‘প্রোটেকশন অ্যাগেইনস্ট ইনফেকশন অ্যাক্ট’৷ এই আইনের আওতায় সব নাগরিককে সংক্রামক রোগের স্বাস্থ্যগত সুরক্ষা দেয়া সরকারের দায়িত্ব৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Gebert
সংক্রামক রোগ নিরাময় নেটওয়ার্ক
২০০৩ সাল থেকে ভয়াবহ সংক্রামক রোগের নিরাময়ে মেডিকেল সেন্টারগুলোর সমন্বয়ে একটি নেটওয়ার্ক সদা সতর্ক রয়েছে৷ এই ক্লিনিকগুলো সারাদেশে ছড়িয়ে আছে৷ কেউ আক্রান্ত হলে সর্বোচ্চ দ্রুততার সঙ্গে এর যে কোনো একটিতে নিয়ে যাওয়া যায়৷ সেখানকার চিকিৎসক ও অন্য স্টাফরা খুবই দক্ষ৷ তাদের সর্বোচ্চ দক্ষতা নিশ্চিত করার সবরকমের প্রশিক্ষণ সরবরাহ করে রাজ্য সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Stache
বিশেষায়িত বিমানবন্দর
জার্মানির হামবুর্গ, ড্যুসলডর্ফ, ফ্রাঙ্কফুর্ট ও মিউনিখ-এই চারটি বিমানবন্দর সংক্রামক রোগাক্রান্তদের ব্যবস্থাপনার জন্য বিশেষায়িত৷ কোনো ফ্লাইটে কেউ আক্রান্ত আছেন বোঝা গেলে বিমানটিকে সাথে সাথে এর যে কোনো একটি বন্দরে নিয়ে আসা হয়৷ রোগীদের জন্য আলাদা জায়গা রাখা থাকে৷ সেখানে তাদের আলাদা করে প্রাথমিক ব্যবস্খা নিয়ে দ্রুত যথাযথ হাসপাতাল বা ক্লিনিকে পাঠানোর ব্যবস্থা রাখা আছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Becker
ব্যবস্থাপনায় দ্রুততা
এখন পর্যন্ত যতগুলো মারাত্মক সংক্রামক রোগের যতগুলো ঘটনা জার্মানিতে ঘটেছে, সেগুলোকে অতি দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে সামাল দেয়া হয়েছে৷ এমনকি ইবোলার সংক্রমণের ক্ষেত্রে খুব দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে সফলতা দেখিয়েছে দেশটি৷
ছবি: imago/ZUMA Press/M. Heine
নিয়মিত প্রশিক্ষণ
জার্মানির জনগণের স্বাস্থ্যগত দিকগুলো নিয়ে গবেষণা করে রবার্ট কখ ইনস্টিটিউট৷ তারা চিকিৎসক ও সেবাদানকারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করে৷ বিশেষ করে মারাত্মক সংক্রামক রোগগুলো নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রায়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Gambarini
তথ্য সরবরাহ ও সমন্বয়
বিশেষ পরিস্থিতিতে সমন্বয় কেমন করে করতে হয়, তার উদাহরণ জার্মানি৷ কোনো সংক্রামক রোগ ভয়াবহ আকার ধারণ করলে পরিস্থিতি কী করে সামাল দিতে হবে, তার তথ্য বিরামহীনভাবে চিকিৎসক, হাসপাতাল ও ফার্মেসিগুলোতে সরবরাহ করা হয়৷ সমন্বিতভাবে কাজটি করে চিকিৎসক, হাসপাতাল ও ফার্মাসিস্টদের নিজস্ব ইউনিয়ন ও সংগঠনগুলো৷ ইবোলার ক্ষেত্রেও তাই করা হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Becker
২৪ ঘন্টা জরুরি ব্যবস্থা
বিশেষ পরিস্থিতিতে শুধু চিকিৎসা নয়, গবেষক ও বিশেষজ্ঞ পরামর্শের ২৪ ঘন্টা জরুরি সেবা চালু রাখা হয়৷ যেমন, বার্নহার্ড নখট ইনস্টিটিউট ফর ট্রপিকাল মেডিসিন ও মারবুর্গ ইউনিভার্সিটির ভাইরলজি ইনস্টিটিউট রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করতে ২৪ ঘন্টা তৈরি থাকে৷ রবার্ট কখ ইনস্টিটিউটে একটি ২৪ ঘন্টা হটলাইন নম্বর রাখা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Dedert
যাত্রীদের জন্য তথ্য সেবা
যাত্রীদের জন্যও আলাদা তথ্যসেবা দেয়া হয়৷ জার্মান পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে ‘ট্রাভেল ও সেফটি ইনফরমেশন’-এর অধীনে তো এমনিতেই থাকে এসব তথ্য৷ এছাড়া সম্ভাব্য ভাইরাসের আক্রমণ ও উপসর্গ নিয়ে আলাদা তথ্য থাকে৷ উপসর্গ দেখা গেলে কী করতে হবে তাও লেখা থাকে৷
ছবি: picture-alliance/imagebroker/S. Grassegger
কেন্দ্র ও রাজ্যের তথ্যের আদান-প্রদান
বিশেষ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিরা বৈঠকে বসেন এবং তথ্যের আদান প্রদান করেন৷ সেখানে অনেক খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ হয়৷ তারা একে অন্যের অভিজ্ঞতা থেকে উপকৃত হন এবং সিদ্ধান্ত নিতে পারেন৷