কেরালায় আরও একজন আক্রান্ত নিয়ে ভারতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল তিন৷ সকলেই কেরালার৷ তিনজনই ছাত্র এবং কিছুদিন আগে উহান থেকে ফিরেছেন৷ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং কেরালার স্বাস্থ্যমন্ত্রী শৈলজা জানিয়েছেন, আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই৷ তিনজনের শারীরিক অবস্থা ঠিক আছে৷ এখনও পর্ষন্ত কেরলের বাইরে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কাউকে পাওয়া না গেলেও, লোকের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে৷ দিল্লিতে মেট্রো রেলে ও রাস্তায় মাস্ক পরিহিতদের সংখ্যা বেড়েছে৷ কেরালার দুই জন করোনা ভাইরাস আক্রান্তের সঙ্গে একই বিমানে ভারতে ফিরেছিলেন কলকাতার এক ছাত্র৷ তিনিও সর্দি, কাশি নিয়ে বেলেঘাটার আইডি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন৷ মধ্য প্রদেশে একজন সর্দি, কাশি, জ্বর নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন। তাঁকে আলাদা করে রাখা হয়েছিল৷ সেখান থেকে তিনি বেপাত্তা হয়ে গিয়েছেন৷ ৷ ফলে সেখানে আতঙ্ক ছড়িয়েছে৷
উহান থেকে এয়ার ইন্ডিয়ায় বিমানে করে দু দফায় মোট ৬৫৪ জনকে দিল্লিতে নিয়ে আসা হয়েছে৷ তারপর তাঁদের মানেসরে সেনা ছাউনিতে ও দিল্লির ছাওলাতে ইন্দো টিবেটান বর্ডার পুলিশ বা আইটিবিপি-র শিবিরে রাখা হয়েছে৷
দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্যবিভাগের খবর করেন প্রবীণ সংবাদিক অবন্তিকা ঘোষ৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, ''উহান থেকে যাঁদের নিয়ে আসা হয়েছে, তাঁদেরকে ৫০ জনের দল করে আলাদা রাখা হয়েছে৷ এক দলের সঙ্গে অন্য দলকে মিশতে দেওয়া হচ্ছে না৷ মানেসর ও ছাওলাতে রাখার কারণ, এক জায়গায় এতজনকে রাখা সম্ভব ছিল না৷ তাঁদের ১৪ দিন রেখে দেখা হবে, কেউ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন কি না৷ না হলে, তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হবে৷''
অবশ্য উহান এবং চীন থেকে বেরিয়ে আসতে পেরে ভারতীয় ছাত্ররা এতটাই আনন্দিত যে, তাঁরা মানেসরে নাচ-গান করে থাকছেন৷ তাঁদের শেয়ার করা নাচগানের ভিডিও খুব কম সময়ের মধ্য়ে ভাইরাল হয়ে গিয়েছে৷ উহান থেকে বেরিয়ে এসে দেশে পৌঁছনোর পর তাঁরা এখন ভারমুক্ত৷ সাংবাদিক সুরেশ উপাধ্য়ায় ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''করোনা নিয়ে অবশ্যই সাবধানে থাকতে হবে, তবে আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই৷ কেবলমাত্র কেরলেই তিনজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন৷ চীন থেকে আসা অনেককেই বিভিন্ন হাসপাতালে আলাদা করা রাখা হয়েছিল৷ কিন্তু তাঁদের রক্ত পরীক্ষা করে করোনা ভাইরাস পাওয়া যায়নি৷ কেরলে আক্রান্ত তিনজনের থেকেও আর নতুন করে কেউ আক্রান্ত হননি৷''
চীনের উহান থেকে ফিরেছেন ৩১২ জন বাংলাদেশি৷ তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে আশকোনো হজ ক্যাম্পে৷ এর মধ্যে আটজনকে দুইটি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে৷
ছবি: A. Goniশনিবার বেলা ১১টা ৫৩ মিনিটে ৩১২ জন বাংলাদেশিকে নিয়ে বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌছায়৷ তাদের নিরাপত্তায় নেয়া হয় বিশেষ ব্যবস্থা৷
ছবি: A. Goniবিমান বন্দরে সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা৷
ছবি: A. Goniসরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট- আইইডিসিআর- করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করছে৷
ছবি: A. Goniশুধু যাত্রী নয় কোয়ারেন্টাইন প্রক্রিয়ায় যারা জড়িত ছিলেন তাদের প্রত্যেকেরই স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা৷
ছবি: A. Goniদেশে ফেরার পর বিমানবন্দরের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাত্রীদের সবাইকে পরীক্ষা করা হয়৷ সিভিল এভিয়েশনের বিশেষ ব্যবস্থায় বিমানবন্দরের কার্গো টার্মিনালের গেট দিয়ে তাদেরকে নিয়ে আসা হয়৷
ছবি: A. Goniউহান ফেরতদের পরিবহনে বিআরটিসির আটটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস এবং কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স এনে রাখা হয়৷ যাত্রীদের মালামাল নেওয়ার জন্য আনা হয় চারটি ট্রাক৷
ছবি: A. Goniবিআরটিসির বাসে করেই আশকোনায় ‘কোয়ারেন্টাইনে’ নিয়ে যাওয়া হয় তাদের৷
ছবি: A. Goniউহান থেকে ফেরত ৩১২ জনের মধ্যে মধ্যে ২৯৭ জন পূর্ণবয়স্ক, ১২ জনের বয়স এক বছরের ওপরে ৷ তিনজনের বয়স এক বছরের নীচে৷
ছবি: A. Goniস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা.আবুল কালাম আজাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, প্রথমে ৩৬১ জনের আসার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ৩১৬ আসবে বলে ঠিক হয়৷ এরা বিমানবন্দরে আসার পর চারজন আসে নাই৷ সেখানে থার্মাল স্ক্যানারের ভেতর দিয়ে যখন এসেছে তখন তাদের গায়ে জ্বর আছে বলে জানা গেছে৷ অবজারভেশনের জন্য তাদের বলা হয়েছে এই ফ্লাইটে অন্য যাত্রীদের সঙ্গে যাওয়া ঠিক হবে না৷’’
ছবি: A. Goniবিমানবন্দর থেকে আটজনকে দুটি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে৷ ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান, ‘‘তাদের মধ্যে তিনজনের ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের মতো জ্বর আছে৷ বাকিদের শরীরেও জ্বর থাকায় তাদের এখানে না এনে সরাসরি হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ তবে তারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে এখনই সন্দেহ করা হচ্ছে না৷’’ অসুস্থদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে সামরিক হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল৷
ছবি: A. Goniআশকোনা হাজী ক্যাম্পের পরিচালক সাইফুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তিন তলার ৪টি ডরমেটরিতে ৩৬১ জনকে রাখা হবে৷ প্রতিটি ডরমেটরিতে ১০০ জনের থাকার ব্যবস্থা করা হবে৷ সেখানে বিছানা, চাদর, বালিশ, মশারি, মেডিসিন, পানি, লাইট, টয়লেট থাকবে৷ সকাল ও বিকেলের নাস্তাসহ ৫ বেলা খাবারের ব্যবস্থা থাকবে৷ শিশু ও নারীদের জন্যও থাকবে আলাদা খাবার ও থাকার ব্যবস্থা৷’’
ছবি: A. Goni তবে ভারত সরকার সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে চীনের নাগরিকদের ই ভিসা বাতিল করেছে৷ এর আগে যে সব চীনা নাগরিককে ই ভিসা দেওয়া হয়েছে, সেগুলিও সাময়িকভাবে বাতিল করা হল বলে সরকারিভাবে জানানো হয়েছে৷
জিএউচ/কেএম (এনডিটিভি, বিজনেস টুডে)