1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
ব্যবসা-বাণিজ্যবাংলাদেশ

উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ, তবুও কোরবানির হাটে চড়া দাম

সমীর কুমার দে ঢাকা
১৪ জুন ২০২৪

পাঁচ বছর ধরে গবাদি পশু উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে বলে জানিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর৷ গবাদি পশুর সঙ্গে দুগ্ধ ও মাংস উৎপাদনেও স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে দেশ৷ কিন্তু কোরবানির হাটে তবুও চড়া পশুর দাম৷

ঢাকার একটি হাটে বড় আকারের একটি গরু দেখতে মানুষের ভিড়
গরুর দাম বৃদ্ধির জন্য গোখাদ্যের বাড়তি দামকে দুষছেন খামারিরাছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS

২০১৪ সালে ভারতে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর গরু রপ্তানি নিষিদ্ধ করে৷ এরপরই মূলত বাংলাদেশে গরুর খামারের সংখ্যা বাড়তে থাকে৷ এখন ছোট-বড় মিলয়ে ২০ লাখের মতো খামার আছে দেশে৷

২০১৯ সালে গবাদি পশুতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে বাংলাদেশ৷ সেই থেকে আর কখনই কোরবানির সময় গরুর সংকট হয়নি৷ ভারত বা মিয়ানমার থেকে গরু আনতে হয়নি৷ তবে গত কয়েক বছর ধরে দেখা গেছে, ঈদের আগের দিনগুলোতে গরুর দাম বেড়ে যায়৷

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এবার কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা এক কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৭টি৷ চাহিদার চেয়ে প্রায় ২৩ লাখ বেশি৷ এ সংখ্যা গত বছরের চেয়েও চার লাখ ৪৪ হাজার ৩৪টি বেশি৷ ফলে এবার কোরবানির পশুর কোনো সংকট হবে না৷’’

সরকারি হিসাবে এবার বাংলাদেশে কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা প্রায় এক কোটি ৩০ লাখছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS

গরুর দাম কেন বেশি?

হাটে পশুর দাম বেশি হওয়ার কারণ প্রসঙ্গে ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও স্বপ্নসাজ এগ্রোর স্বত্বাধিকারী শাহ ইমরান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘গত তিন থেকে চার বছরে গো খাদ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে৷ বছরজুড়ে একটা গরু পালতে যে খরচ হয়, সেই তুলনায় এখন বাংলাদেশে গরুর দাম কম৷ গরু বিক্রি করে খামারিদের খুব বেশি লাভ করার সুযোগ নেই৷’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘সাধারণ সময়ে আপনি যে দামে মাংস কেনেন, কোরবানির সময়ও গরুর দাম একই থাকে৷ বরং কখনও কখনও আমাদের লোকসান গুণতে হয়৷ শেষ মুহূর্তে দাম না পেলেও গরু বিক্রি করে দিতে হয়৷ কারণ গরুটা কোরবানিতে বিক্রি করতে না পারলে আবারও তার পেছনে খরচ করতে হবে৷’’

গরু বিক্রি করে যদি লোকসান হয় তাহলে এত খামার কেন গড়ে উঠেছে-এমন প্রশ্নের জবাবে শাহ ইমরান বলেন, ‘‘একটা খামারে তো শুধু কোরবানির জন্য গরু পালা হয় না৷ সেখানে দুধ উৎপাদন হয়৷ এর সঙ্গে দুধের নানা জিনিস তৈরি হয়৷ এগুলো থেকেই মূলত খরচ ওঠে আসে৷ শুধু গরু পালন করে খামার বাঁচানো সম্ভব না৷ এবার আমরা আশা করছি, গরুর দাম সহনশীল থাকবে৷''

প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ডা. এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা গরুর কিছু জাত নিজেদের মতো তৈরি করেছি৷ যে গরুগুলো পালতে খরচ অনেক কম হয়৷ এই গরুগুলো কম খায়৷ তাদের গ্রোথ ভালো৷ এগুলো আমরা সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার চিন্তা করছি৷ এই জাতের গরু পালন বাড়লে খরচ অনেক কমে আসবে৷'' 

রাজধানীতে ২০টি গরুর হাটের অনুমোদন দিয়েছে দুই সিটি কর্পোরেশন৷ ইতিমধ্যে এসব হাটে বিক্রি শুরু হয়েছে৷ পল্লবীর ইস্টার্ন হাউজিংয়ে গরুর হাটের ইজারা পেয়েছেন তাজু উদ্দিন৷

ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘এবার দাম খুব বেশি না৷ এখন পর্যন্ত সেভাবে বিক্রি শুরু হয়নি৷ তবে বিক্রেতারা যে দাম চাচ্ছেন সেটা খুব বেশি বলে মনে হচ্ছে না৷ আমাদের হাটে ইতিমধ্যে এক হাজারেরও বেশি গরু এসেছে৷ তবে ছোট গরুতেই মানুষের আগ্রহ বেশি বলে মনে হচ্ছে৷’’

মনে হয় না খুব বেশি গরু সীমান্ত দিয়ে আসছে: মোহাম্মদ রেয়াজুল

This browser does not support the audio element.

চোরাই পথে গরু আসছে কেন?

গত কয়েক বছর ধরে কোরবানি ঈদের আগে সীমান্তে কড়াকড়ি থাকায় চোরাই পথে কোনো পশু আসেনি৷ তবে এবার সীমান্ত অনেকটাই ঢিলেঢালা৷ কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া, রামু, চকরিয়া; বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি; সিলেট, কুমিল্লা, লালমনিরহাটসহ ছয় জেলার ৩৮ সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে ভারত ও মিয়ানমার থেকে সবচেয়ে বেশি পশু ঢুকেছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা৷ একদিকে পশুখাদ্যের উচ্চমূল্য, তীব্র তাপদাহে বাড়তি যত্নের জন্য বেশি উৎপাদন খরচ এবং ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে খামারিরা অনেকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন৷ তারওপর চোরাই পথে গরু আসতে থাকলে খামারিরা আরো ক্ষতির মুখে পড়বেন বলে শঙ্কা রয়েছে৷

ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ইমরান হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘২০১৪ সালে যখন ভারত গরু রপ্তানি বন্ধ করে দিল, তখন তো আমাদের ভয়াবহ সংকট হয়েছিল৷ এরপর সরকারের সহযোগিতায় ডেইরি ফার্মগুলো গড়ে উঠেছে৷ ২০১৪ সালে আমাদের চাহিদার তুলনায় উৎপাদন ছিল ৩৫ শতাংশ৷ আর ৬৫ শতাংশই ভারত ও মিয়ানমার থেকে আসত৷''

২০১৯ সালে থেকে দেশে গরু আমদানির প্রয়োজন হয় না বলেও জানালেন তিনি৷ বলেন, ‘‘আমাদের এখন সাড়ে ৩ লাখের মতো ডেইরি ফার্ম আছে৷ তারা দুধ উৎপাদন করেন৷ আর আড়াই লাখের মতো ফার্ম আছে যারা মাংস নিয়ে কাজ করেন৷ দেশে ফার্মগুলো গড়ে উঠায় যে উপকারটা হয়েছে, সেটা হলো আমাদের বছরে এক কোটি ৫৫ লাখ মেট্রিকটন দুধের প্রয়োজন হয়৷ এর মধ্যে ১ কোটি ৪০ লাখ মেট্রিকটন দুধ আমরা উৎপাদন করতে সক্ষম৷ আমাদের ঘাটতি আছে মাত্র ১৬ শতাংশ৷’’

দেশে এখন ৮৪ লাখ মেট্রিক টন মাংসের প্রয়োজন হয় জানান ইমরান হোসেন৷ তিনি বলেন, ‘‘কিন্তু আমরা ৮৯ লাখ মেট্রিকটন মাংস উৎপাদন করছি৷ এরপরও যদি চোরাই পথে গরু আসে তাহলে খামারিরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন৷ শুধু খামারিরা না, প্রান্তিক কৃষকও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন৷''

তবে চোরাই পথে গরু আসার কথা মানতে রাজি নন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক৷ তিনি বলেন, ‘‘যেখানে আমরাই স্বয়ংসম্পূর্ণ সেখানে এগুলো এনে কোথায় বিক্রি করবে? এটা তো আর স্বর্ণ না যে বিক্রি না হলে ঘরে রেখে দিলাম৷ গরু বিক্রি না হলে তাকে তো খাওয়াতে হবে, পালতে হবে৷ ফলে আমার মনে হয় না খুব বেশি গরু সীমান্ত দিয়ে আসছে৷ তবে টুকটাক যে আসছে না, সেটাও আমি বলব না৷’’

ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন ২০টি গরুর হাটের অনুমোদন দিয়েছেছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS

ভাটা পড়েছে অনলাইন পশুর হাটে

করোনা মহামারির পর সরকারের আইসিটি বিভাগ ও ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে ডিজিটাল গরুর হাটের কার্যক্রম শুরু হয়৷ প্রথম বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে নানা অভিযোগের পরও অনলাইনে ৪৫ হাজার কোরবানির পশু বিক্রি হয়েছিল৷ ২০২১ সালে অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রি হয় ৩ লাখ ৮৭ হাজারের মতো৷ এরপর থেকে আবার কমতে শুরু করে৷ ২০২২ সালে তা কমে হয় ৬৬ হাজার৷ পরের বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে ৪৮ হাজারেরও কম পশু অনলাইনে বিক্রি হয়েছে৷

ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নাসিমা আক্তার নিশা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘করোনার সময় তো মানুষ দূরত্ব মেনে চলেছেন, এ কারণে বেশি বিক্রি হয়েছে৷ আসলে কোরবানি তো আমাদের আবেগের সঙ্গে জড়িত৷ কোরবানির পশু কিনতে অনেকে ছেলে-মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে যান৷ ১০টা গরু দেখে একটা কেনেন৷ এ কারণে আসলে অনলাইনে গরু কেনাবেচায় আগ্রহ কমে যাচ্ছে৷ তারপরও বড় বড় ফার্মগুলো নিজেরাই অনলাইনে বিক্রি করছেন৷ এজন্য আমরা এবার আর ডিজিটাল হাট করিনি৷’’

অনলাইনে গরু কেনাবেচায় আগ্রহ কমে যাচ্ছে: নাসিমা আক্তার নিশা

This browser does not support the audio element.

সাভার ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকারী মো. খালেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখানে আস্থার একটা সংকট আছে৷ কেউ অনলাইনে একটা গরু দেখে কিনল, সেই গরু পরিবহণের সময় অনেক ক্ষেত্রে ওজন ৫-৭ কেজি কমে যায়৷ কিন্তু ক্রেতা মনে করলেন তাকে ঠকানো হয়েছে৷ এছাড়াও ঈদের আগে সড়কে চাঁদাবাজি এবং মহাসড়কে যানজট এই কাজকে আরো কঠিন করে তুলেছে৷ সবকিছু মিলিয়ে অনলাইনে মানুষের আগ্রহ কমে যাচ্ছে৷''

সাদিক এগ্রোর সহ-প্রতিষ্ঠাতা মো. ইমরান হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে অনলাইনে আমরা ১৭৪টি পশু বিক্রি করেছি৷ ২০২২ সালে বিক্রি হয়েছিল ১৫০টি৷ তবে ২০২১ সালে প্রায় এক হাজারের কাছাকাছি পশু অনলাইনে বিক্রি হয়েছিল৷ তবে অনলাইনে মানুষের আগ্রহ কমে যাচ্ছে৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ