উৎসবের আগে কেন টানা দুইদিন কলকাতায় গুলি চলেছে?
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
রোববার গুলি চলেছিল চারু মার্কেটে একটি জিমে৷ দুই দুষ্কৃতী জিমের বাইরে মোটরসাইকেল পার্ক করে জিমের ভিতরে ঢুকে গুলি চালায়৷ জিমের মালিককে লক্ষ্য করে গুলি চালালেও তিনি বেঁচে যান৷ দুষ্কৃতীরা পালায়৷
কিন্তু সোমবার গার্ডেনরিচে অজ্ঞাতপরিচয় একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন৷ সকাল নটা ৪০ নাগাদ গার্ডেনরিচের মানুষ একটা গুলির শব্দ পান৷ এক যুবককে পড়ে থাকতে দেখেন৷ তার কাছে একটা পিস্তলও পাওয়া যায়৷ যুবককে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়৷
ডিসি পোর্টের অফিসের কাছে এই ঘটনা ঘটে৷ ওই জায়গায় বেশ কয়েকটি কারখানা আছে৷ ঠিকা শ্রমিকরা ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করেন৷ তাছাড়া জায়গাটা ফাঁকা থাকে৷ ডিসি পোর্টসহ বাকি পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান৷
পুলিশ ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালাতে থাকে৷ পুলিশ জানিয়েছে, কীভাবে মৃত্যু হয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে৷ আগ্নেয়াস্ত্রটি নিয়েও তদন্ত হচ্ছে৷
ডিসি পোর্ট বলেছেন, ‘‘এখনই এই বিষয়ে কিছুই বলা যাচ্ছে না৷ এটা খুনের ঘটনা কিনা তাও বলতে পারছি না৷ আমরা তদন্ত করছি৷’’
চারু মার্কেটের ঘটনা
রোববার চারু মার্কেটে একটি জিমের মধ্যে দুই যুবক মুখ ঢেকে ঢুকে পড়ে৷ দুজনের হাতে পিস্তল ছিল৷ তাদের গায়ে রেনকোট ছিল৷ মাথায় হেলমেট ছিল৷ তারা মালিককে ডেকে দিতে বলে৷ দুজনেই গুলি চালায়৷ তারপর তারা মোটরসাইকেল করে পালায়৷
মালিকের গায়ে গুলি লাগেনি৷ যুবকদের চিহ্নিত করা যায়নি৷ পুলিশের তদন্ত চলছে৷
ডিসি সাউথ প্রিয়ব্রত রায় জানিয়েছেন, ‘‘বুলেটের খোল পাওয়া হয়েছে৷ এটা কেন হলো, তা দেখছি৷ কারা এসেছিল, সেটাও দেখা হচ্ছে৷’’
চারু মার্কেট খুবই ব্যস্ত এলাকা৷ সেখানে দিনেদুপুরে এই ঘটনা কী করে ঘটতে পারে? ডিসি সাউথ বলেছেন, সব তদন্ত করে দেখা হচ্ছে৷
নিউটাউনের ঘটনা
সোমবার সকালে নিউটাউনে একজন অজ্ঞাতপরিচয় যুবকের মৃতদেহ পাওয়া যায়৷ ইকো পার্কের কাছে এই মৃতদেহ উদ্ধার হয়৷ রাস্তার উপর তার মৃতদেহ পড়েছিল৷
শ্রমিকরা জানিয়েছে, লেবার রুম থেকে চারটে মোবাইল চুরি হয়েছিল৷ তারা সেই মোবাইল চোরকে খুঁজছিলেন৷
পুলিশ জানিয়েছে, ওই ব্যক্তির দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে, নাকি, কেউ হত্যা করেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
পরপর দুই দিনে দুই জায়গায় গুলি এবং একটি মৃতদেহ উদ্ধারের পর আবার প্রশ্ন উঠেছে, কলকাতা কতটা নিরাপদ শহর? কলকাতায় উৎসবের সময় শুরু হয়েছে৷ এখন লাখ লাখ মানুষ প্রতিদিন ও রাতে বিভিন্ন মণ্ডপে ঘুরছেন৷
বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘বিহার উত্তরপ্রদেশ এখন শান্ত৷ পশ্চিমবঙ্গ দুষ্কৃতীদের রাজ্য বলে তারা মনে করছে৷ পশ্চিমবঙ্গ বারুদের স্তূপের উপর রয়েছে৷’’
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার বলেছেন, ‘‘গুলি চললো৷ এখনো কেউ গ্রেপ্তার হলো না কেন?’’
তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেছেন, ‘‘এটা স্থনীয় বিচ্ছিন্ন ঘটনা৷ কংগ্রেসের জমানায় কতজনের মৃত্যু হয়েছিল, সেটা কংগ্রেস দেখুক৷ তারপর গুলি নিয়ে কথা বলবে৷’’
কেন এত গুলি চলছে?
অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্তা সলিল ভট্টাচার্য ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ‘‘চারু মার্কেটের ঘটনা ঘটেছে থানার কাছে, সেখানে কিছুটা দূরেই ট্রাফিক পুলিশের কিয়স্ক আছে৷ সেখানে নয় মিলিমিটার অত্যাধুনিক পিস্তল নিয়ে দুষ্কৃতীরা ঢুকে পড়লো৷ এই ঘটনার সঙ্গে সম্ভবত ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের সম্পর্ক আছে৷ এটা একদিকে যেমন সাধারণ মানুষকে ভয় দেখানোর উদাহরণ, তেমনই এটা ক্ষয়িষ্ণু শাসন ব্যবস্থার প্রমাণ৷’’
সলিল ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ‘‘সোমবারে গার্ডেনরিচের ঘটনাটা ঘটেছে ডিসি পোর্টের অফিসের কাছে৷ তার কাছে পিস্তল পড়ে ছিল৷ এই ঘটনাগুলো প্রমাণ করে কলকাতায়, বেআইনি অস্ত্র কতটা সহজে পাওয়া যায়৷ সেই সঙ্গে এটাও প্রমাণ করে, কলকাতা অত্যাধুনিক শহর হওয়া সত্ত্বেও সিসিটিভির না থাকার সমস্যা কতটা প্রবল৷’’
সাবেক পুলিশ কর্তা মনে করেন, ‘‘রাজ্যে আইনের শাসন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে৷ সাধারণ মানুষের কোনো সুরক্ষা নেই৷ তাই ভয় পাওয়ার কারণ আছে৷ শহরে নারীর সুরক্ষাও প্রশ্নের মুখে৷ প্রতিদিন দুর্নীতি বড় সমস্যার আকার নিচ্ছে৷ ফলে খুবই চিন্তাজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে৷’’
জিএইচ/জেডএইচ