মঙ্গলবার গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হবে৷ এর জন্য বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করেছে চীন৷ এদিকে বিক্ষোভের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থি বিক্ষোভকারীরা৷
বিজ্ঞাপন
১৯৪৯ সালের ১ অক্টোবর বেইজিংয়ের তিয়েনআনমেন চত্বরে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান মাও সেতুং৷ মঙ্গলবার সেই একই স্থানে ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন উপলক্ষ্যে ১৫ হাজার সেনা এক কুচকাওয়াজে অংশ নেবেন৷ এরপর সামরিক বাহিনীর আধুনিকতম সমরাস্ত্র প্রদর্শন করা হবে৷ সেনাদের কুচকাওয়াজের পর প্রায় এক লাখ সাধারণ নাগরিক আরেকটি কুচকাওয়াজে অংশ নেবেন৷ অনুষ্ঠানে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং বক্তব্য রাখবেন৷
তারামাছের আদলে বিমানবন্দর বানালো চীন
চীনে কমিউনিস্ট পার্টির সত্তরতম বার্ষিকীর কয়েকদিন আগেই চালু হলো নতুন এক বিমানবন্দর৷ তারামাছের আদলে তৈরি বিশাল বিমানবন্দরটিতে চারটি রানওয়ে আছে৷ প্রয়োজনে আরো তিনটি রানওয়ে যোগ করা যাবে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/CCTV
দেখতে তারামাছের মতো
তারামাছ সাধারণত সমুদ্রের নীচে দেখা গেলেও চীন সেটা তুলে এনেছে মাটির উপরে৷ রাজধানী বেইজিং থেকে ৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণে সাতলাখ বর্গমিটার এলাকায় তারামাছের আদলে এক বিমানবন্দর তৈরি করা হয়েছে৷ বেইজিং ডেক্সিং বিমানবন্দরটি ভবিষ্যতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমানবন্দরে পরিনত হবে বলে আশা করা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/CCTV
অনেক বাড়তি জায়গা
বিমানবন্দরটির স্থপতি জাহারা হাদিদ ২০১৬ সালে মৃত্যবরণ করেন৷ তিনি এটি এমনভাবে ডিজাইন করেছিলেন যাতে ২০৪০ সাল নাগাদ বছরে সাত কোটি ২০ লাখ যাত্রী বিমানবন্দরটি ব্যবহার করতে পারে৷ এটি তৈরি করতে পাঁচ বছর সময় লেগেছে এবং এক হাজার ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার খরচ হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Jianjun
আলোকোজ্জ্বল সাদা এক বিমানবন্দর
একছাদের নীচে সব টার্মিনাল থাকা বিশ্বের অন্যতম বড় বিমানবন্দরটিতে যতটা সম্ভব প্রাকৃতিক আলো ব্যবহারের সুযোগ রাখা হয়েছে৷ ছাদের ফাঁকা স্থান থেকে আলো একেবারে নীচ অবধি পৌঁছাতে পারে৷ বিমানবন্দরটির ডিজাইনে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে সাদাকে৷
ছবি: picture-alliance/Imaginechina/W. Yao
গেটে পৌঁছাতে লম্বা পথ হাঁটতে হয়না
বিমানবন্দরটির আকার বড় বলে অনেকে মনে করতে পারেন চেক-ইনের পর বুঝি লম্বা পথ হাঁটতে হবে৷ তবে চীনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নিরাপত্তা বলয় পার হওয়ার পর বিমানে পৌঁছানোর দূরত্ব কোনক্ষেত্রেই ছয়শো মিটারের বেশি হবে না৷ অর্থাৎ দেখতে বড় মনে হলেও ডিজাইনের কারণে হাঁটতে হবে কম৷
ছবি: picture-alliance/Imaginechina/L. Chang
বড় লক্ষ্য
আগামী দশকের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এভিয়েশন মার্কেটে পরিণত হতে চায় চীন৷ সেই লক্ষ্য পূরণে এই বিমানবন্দর বিশেষ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Jianjun
চেহারাই পরিচয়
চীনা নেতারা জানিয়েছেন যে ডেক্সিং হবে প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক বিমানবন্দর৷ হুয়াওয়ে বিমানবন্দরটিতে ফাইভ জি সেবা প্রদান করবে যা পুরো বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপনাকে গতিময় করার পাশাপাশি যাত্রীদের জন্যও সর্বাধুনিক ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করবে৷ পাশাপাশি চেক-ইন এবং নিরাপত্তা চেকপোস্টে চেহারা সনাক্তকরণ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে৷
ছবি: picture-alliance/Imaginechina/L. Chang
6 ছবি1 | 6
এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় তিয়েনআনমেন চত্বরে আতশবাজি পোড়ানো এবং ৭০ হাজার কবুতর ও ৭০ হাজার বেলুন ওড়ানো হয়েছে৷
রাজধানী বেইজিং চীনের জাতীয় পতাকা, লণ্ঠন, ফুল ও রাজনৈতিক স্লোগান দিয়ে ছেয়ে ফেলা হয়েছে৷
বিক্ষোভের জন্য তৈরি হংকং
প্রায় চার মাস ধরে প্রতি সপ্তাহান্তে হংকংয়ে বিক্ষোভ করছেন গণতন্ত্রপন্থিরা৷ তবে এবার চীনের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে ঘিরে মঙ্গলবার বিক্ষোভের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরা৷
শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ আয়োজনের জন্য পরিচিত ‘সিভিল হিউম্যান রাইটস ফ্রন্ট’ বা সিএইচআরএফ মঙ্গলবার বিক্ষোভের জন্য অনুমতি চাইলে তা প্রত্যাখ্যান করেছে হংকং কর্তৃপক্ষ৷
তবে তারপরও বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন একদল বিক্ষোভকারী৷ তাঁরা সাধারণ মানুষকে রাস্তায় নেমে আসারও আহ্বান জানিয়েছেন৷
পুলিশ কর্মকর্তা জন সে মনে করছেন, হংকংয়ে মঙ্গলবারের বিক্ষোভ ‘খুব খুব বিপজ্জনক’ হবে৷ গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তিনি বলছেন, কট্টরপন্থি বিক্ষোভকারীরা পুলিশ ‘হত্যা'র প্রতি সমর্থন জানাচ্ছেন৷
এদিকে, বিক্ষোভের কথা মাথায় রেখে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান এবার ঘরের ভেতর করছে হংকং সরকার৷
জেডএইচ/এআই (এএফপি)
মুসলমানরা বন্দিশিবিরে, পর্যটকরা শিনচিয়াংয়ে
চীনের শিনচিয়াং প্রদেশে মুসলমানদের নতুন করে শিক্ষিত করে তোলার নামে বন্দি করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ৷ রাজ্যের এমন ভাবমূর্তি দূর করতে সেখানে পর্যটক আকর্ষণের চেষ্টা চলছে৷
ছবি: AFP/G. Baker
মুসলিমদের বাস
চীনের শিনচিয়াং রাজ্যে মূলত উইগুরসহ তার্কিক ভাষা বলা অন্য মুসলিমদের বসবাস ছিল৷ গত শতকের ৫০ থেকে ৭০ দশকের মধ্যে সেখানে সরকারিভাবে হান চীনাদের সংখ্যা বাড়ানো হয়৷ তখন থেকে মুসলমান ও হানদের মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষ লেগে থাকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eisele
মুসলমানেরা বন্দিশিবিরে
মুসলমানদের নতুন করে শিক্ষা দেয়ার নামে চীন সরকার কয়েক বছর আগে মুসলিমদের বিভিন্ন ক্যাম্পে (ছবি) নিয়ে যাওয়া শুরু করে৷ সেখানে তাঁদের মান্দারিন ভাষা শেখানো ও কারিগরি শিক্ষা দেয়া হয় বলে চীনের দাবি৷ তবে জাতিসংঘের অভিযোগ, ‘ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ’ ও কমিউনিস্ট পার্টির প্রতি আনুগত্য আনতে উইগুরদের ‘রাজনৈতিক শিবিরে’ জোর করে আটকে রাখা হয়েছে৷
ছবি: AFP/G. Baker
নজরে রাখতে অ্যাপ
তথাকথিত এসব বন্দিশিবিরের বাইরে যে উইগুররা আছেন তাঁদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের উপর নজর রাখতে সম্প্রতি একটি অ্যাপ চালু করেছে চীন৷ এই অ্যাপের সাহায্যে উইগুরদের ৩৬ ধরনের আচরণের তথ্য সংগ্রহ করা হয়৷ যেমন, প্রতিবেশীর সঙ্গে বেশি না মেশা, স্মার্টফোন ব্যবহার না করা, ‘উৎসাহী হয়ে’ মসজিদে দান করা ইত্যাদি৷
এছাড়া ফেসিয়াল-রিকগনিশন ক্যামেরা, ওয়াইফাই স্নিফার্স (এর মাধ্যমে চেকপয়েন্ট দিয়ে পার হওয়ার সময় মানুষের কাছে থাকা মোবাইলের সব তথ্য সংগ্রহ করা হয়), পুলিশি চেকপয়েন্ট ইত্যাদির মাধ্যমেও উইগুরদের তথ্য সংগ্রহ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Azubel
পর্যটক বাড়ছে
তাকলামাকান মরুভূমি, বরফে ঢাকা তিয়ানশান, দেখার এমন অনেক কিছুই আছে শিনচিয়াংয়ে৷ মুসলমানদের বিরুদ্ধে সরকারের আচরণ নিয়ে বিশ্ব গণমাধ্যমে শিনচিয়াং সম্পর্কে নেতিবাচক খবর এলেও সেখানে পর্যটক যাওয়া কমেনি, বরং বেড়েছে৷ ২০১৮ সালে আগের বছরের তুলনায় পর্যটকের সংখ্যা ৪০ শতাংশ বেড়েছে বলে সরকারি তথ্য বলছে৷ অবশ্য বেশিরভাগই দেশি পর্যটক৷
ছবি: AFP/G. Baker
পর্যটকদের ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে
২০১৪ সালে শিনচিয়াং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ছুরি হামলায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটার পর সেখানে পর্যটকের সংখ্যা কমে গিয়েছিল৷ এই অবস্থায় প্রাদেশিক সরকার পর্যটক প্রতি ৭৩ ডলার বা ছয় হাজার টাকা ভর্তুকি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়৷ এখনও সেটা আছে৷
ছবি: AFP/G. Baker
সব জায়গায় যাওয়ার অনুমতি নেই
শিনচিয়াংয়ের সব জায়গায় যাওয়ার অনুমতি নেই পর্যটকদের৷ মুসলমানদের যে শিবিরগুলোতে বন্দি করে রাখা হয়েছে তার আশেপাশে যাওয়া যায় না বলে জানিয়েছেন এএফপির দুই সাংবাদিক৷ এছাড়া শিনচিয়াংয়ে চেকপয়েন্ট ও সশস্ত্র নিরাপত্তা বাহিনীর সংখ্যা অনেক বাড়ানো হয়েছে বলে জানান তাঁরা৷ অবশ্য এতসব নিরাপত্তা তল্লাশিকে সমস্যা মনে করছেন না চীনা পর্যটকরা৷
ছবি: Reuters/T. Peter
কোথায় ভয়!
শিনচিয়াংয়ের কাশগর শহরে উইলিয়াম লি নামের এক পর্যটকের সঙ্গে এএফপির প্রতিবেদকদের দেখা হয়েছিল৷ তিনি জানান, ঘুরতে গিয়ে তাঁর মনে হয়নি যে উইগুররা কোনো ভয়ের মধ্যে (যদি না আপনাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়) আছেন৷ ‘‘এটা আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি,’’ বলেন লি৷