উৎসবের মঞ্চে রাজনীতির অনুপ্রবেশ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
বহু বছর ধরেই কলকাতার পুজো থিম নির্ভর। সেই থিমে এমন বিষয় তুলে ধরা হয়েছে, যা রাজনৈতিক দলগুলির প্রচারের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে ইদানিং কালে।
বাংলা ও বাঙালি
গত কয়েক মাসে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে অন্যতম টানাপোড়নের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলা ভাষা ও বাঙালি। রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস এই ইস্যুকে হাতিয়ার করে বিজেপিকে আক্রমণ করছে।
সাম্প্রতিক অতীতে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিভিন্ন রাজ্যে যে শ্রমিকরা কাজের সূত্রে গিয়েছেন, তাদের উপরে নিগ্রহের একের পর এক ঘটনা সামনে এসেছে। অভিযোগ, বাংলা বলায় তাদের বাংলাদেশি তকমা দেয়া হচ্ছে। অনেককে পুলিশ পাকড়াও করে চালান করে দিচ্ছে জেলে। কাউকে কাজ থেকে বিদায় করে দেয়া হচ্ছে। অনেকের কপালে আবার জুটছে মারধর। কাউকে পুশব্যাক করা হয়েছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশে ।
এমন অনেক শ্রমিক গত দু-তিন মাসে তাদের কর্মক্ষেত্র থেকে ফিরে এসেছেন পশ্চিমবঙ্গে। এদের উপরে নির্যাতনের অভিযোগ তুলে বিজেপিকে আক্রমণ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার বক্তব্য, বাংলা ভাষায় কথা বললে কেন বাংলাদেশি তকমা দেয়া হবে। সেই কারণে তিনি বাংলা ভাষা ও বাঙালি জাতিসত্তা নিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন।
কলকাতার টালিগঞ্জে ৯৭ নম্বর ওয়ার্ডে অশোকনগর সর্বজনীন-সহ একাধিক পুজো কমিটিতে থিম হিসেবে উঠে এসেছে বাংলা ভাষা।
দেবী দুর্গার দশ হাতে ট্যাটু করে লেখা হয়েছে দশজন প্রাতস্মরণীয় বাঙালির নাম। শ্রীরামকৃষ্ণ, স্বামী বিবেকানন্দ, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, ঋষি অরবিন্দ ও রাজা রামমোহন রায়ের নাম বাহুতে লেখা রয়েছে।
শিল্পী নব পালের তৈরি করা প্রতিমায় দুর্গার কোলে লক্ষ্মী ও সরস্বতী। লক্ষ্মীর হাতে রবীন্দ্রনাথের সহজ পাঠ। সরস্বতীর হাতে বিদ্যাসাগরের বর্ণপরিচয়। কার্তিক ও গণেশের হাতে স্লেট। মণ্ডপ সাজানো হয়েছে কৃতী বাঙালিদের ছবি ও লেখা দিয়ে।
রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের পুজো বলে পরিচিত নিউ আলিপুর সুরুচি সংঘের থিম ভাবনার কেন্দ্রে অনুশীলন সমিতি। অখণ্ড ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিপ্লবী এই সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
এই পুজোর থিম সং তৈরি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সুরুচির পুজো উদ্বোধনে এসে তিনি দাবি করেন, নেতাজি আইএনএ, প্ল্যানিং কমিশন, আজাদ হিন্দ ফৌজ তৈরি করেছিলেন। এর কোনো বিকল্প নেই। দিল্লির সরকার তুলে দিয়েছে। বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামকে ভুলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে কেন্দ্র।
বাগুইআটির অশ্বিনীনগর বন্ধুমহল ক্লাবের থিমে শুধু বাঙালিত্বের গর্ব প্রকাশই নেই, নিজেদের ভারতবাসী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার তাগিদও রয়েছে।
বিহারে বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গেও এই প্রক্রিয়া চলবে বলে নির্বাচন কমিশন সূত্রের খবর। তৃণমূল কংগ্রেস-সহ বিজেপি বিরোধী সব দলই এই প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করছে। ভোটার হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করার জন্য কতগুলি নথি দেখাতে হচ্ছে ভারতীয়দের। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দেখা যাচ্ছে বাগুইহাটির বন্ধুমহল ক্লাবে ।
এই মণ্ডপে বাঙালির বিবর্তনের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। রয়েছেন খ্যাতকীর্তি বাঙালি মনীষীরা। রবীন্দ্রনাথ, বিদ্যাসাগর, বিবেকানন্দ-সহ অনেক যশস্বী মানুষকে স্মরণ করা হয়েছে। প্রতিমার হাতে রয়েছে একটি নথি, তিনি যেন দর্শনার্থীদের উদ্দেশে দেখাতে চাইছেন যে, তিনি এই মাটির কন্যা, চিরাচরিত ভারতীয়ত্বের প্রতীক। এর পাশেই রয়েছে শ্রমজীবীদের একটি ম্যুরাল যার মাধ্যমে খেটে খাওয়া মানুষের প্রতিবাদ তুলে ধরতে চেয়েছে পুজো কমিটি।
বন্ধুমহল ক্লাবের পুজো উদ্যোক্তা স্বরূপ নাগ ডিডাব্লিউকে বলেন, "সাম্প্রতিককালে বাঙালির যে ভিন রাজ্যে অপমান হচ্ছে, সেই ইস্যুর সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু পরোক্ষভাবে রয়েছে। আজ যদি চারপাশের মানুষ বিষয়টা নিয়ে সচেতন হতেন, তাহলে তারা এর বিরোধিতা করতে পারতেন। আমরা দেবী প্রতিমার মধ্যে দিয়ে দেখিয়েছি এক হাতে তার সার্টিফিকেট ও অন্য হাতে কলমের নিব।"
তিনি বলেন, "অসুর এখানে অশিক্ষা। অশিক্ষা দমন করাই লক্ষ্য। আমরা পরোক্ষভাবে বোঝাতে চেষ্টা করেছি যে মানুষ যদি শিক্ষিত হয়ে যায়, তাহলে বুঝতে পারবে বাঙালির ইতিহাস ঠুনকো নয়। আমাদের এই সংস্কৃতি অনেক পুরনো। মানুষকে এটাই বোঝাতে চাইছি যে, চারিদিকে যে কথাবার্তা চলছে, সেটা ঠিক নয়। আপনারাই এর প্রতিবাদ করুন।"
পুজোর থিমে অপারেশন সিঁদুর
কাশ্মীরের পহেলগামে জঙ্গি হামলায় পর্যটকদের মৃত্যুর পরে ভারতীয় সেনা প্রত্যাঘাত করেছিল। এই অভিযানের নাম দেয়া হয় অপারেশন সিঁদুর। এরপর থেকে সেনার এই পরাক্রমকে দেশের শাসক দল বিজেপি তাদের রাজনৈতিক প্রচারে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছে। শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, গোটা দেশেই এই ছবি।
শারদীয় দুর্গোৎসবের থিমে উঠে এসেছে অপারেশন সিঁদুর। বিজেপি নেতা সজল ঘোষ পরিচালিত কলকাতার অন্যতম বিখ্যাত পুজো সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারে এটাই থিম। এই পুজোর উদ্বোধন করে গিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
লাইট অ্যান্ড সাউন্ড-এর মাধ্যমে পহেলগামের ঘটনা ও তারপরে ভারতীয় সেনার অপারেশন তুলে ধরা হয়েছে এই মণ্ডপে। এই থিম দেখতে প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষের ভিড় হচ্ছে।
সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার পুজো কমিটির সভাপতি গৌতম রায় ডিডাব্লিউকে বলেন, "অপারেশন সিঁদুর নামে যে অপারেশন হয়েছিল, সেটা ভারতের মানুষ দেখেছিল। পহেলগাম অঞ্চলে কীভাবে এই ঘটনা ঘটেছিল, অনেকেই তা টিভিতে দেখতে পারেননি। তাই তাদের এই ঘটনার একটা রূপরেখা করে দেখাতে চেয়েছি। এত বড় আঘাত দেশ কীভাবে প্রতিহত করেছে, সেটা আমরা মানুষের সামনে তুলে ধরেছি।"
দুর্গাপুজোর থিমের সঙ্গে রাজনীতির যোগ নিয়ে তিনি বলেন, "যেভাবে মায়ের সিঁদুরকে অপমানিত করা হয়েছিল, সেটা তুলে ধরা আমাদের কাজ। এর সঙ্গে রাজনীতির কোন সম্পর্ক নেই। অপারেশন সিঁদুর যখন হয়েছিল, তখন কি কোনো রাজনীতি হয়েছিল? দেশকে রক্ষা করার জন্য এটা করা হয়েছিল। দেশের এই অপমানকে আমরা তুলে ধরেছি, তার বিরোধিতা আমাদের উদ্দেশ্য। এর বাইরে কিছু নয়।"
বাংলা ভাষা বনাম অপারেশন সিঁদুরের এই টানাপোড়েন কেবল থিমের লড়াইয়ে সীমাবদ্ধ নেই। মহাপঞ্চমীর সন্ধেয় সজল ঘোষ পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানান। সাংবাদিক বৈঠকে তার অভিযোগ, "দর্শনার্থীদের পুজো দেখতে বাধা দিচ্ছে কলকাতা পুলিশ। তাদের সঙ্গে লড়াই করে পুজো করা সম্ভব নয়।"
সজল তৃণমূলের কট্টর সমালোচক, টিভি চ্যানেলে বিতর্কে পরিচিত মুখ। তার দাবি ইতিমধ্যে পুলিশ একাধিক নোটিস দিয়েছে। তাদের লাইট অ্যান্ড সাউন্ড যারা পরিচালনা করছেন, তাদেরও হেনস্থা করা হচ্ছে যদিও কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা এই অভিযোগ উড়িয়ে সংবাদ মাধ্যমে বলেন, "দর্শনার্থীদের সুরক্ষা সবার আগে। এর সঙ্গে আপসের প্রশ্ন ওঠে না।"
পুজোর থিম হিসেবে অপারেশন সিঁদুর তুলে ধরায় শাসক দলের কোপে পড়ার অভিযোগ উঠেছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরের চকফুলডুবি দুর্গোৎসব কমিটির অভিযোগ, থিম অনুযায়ী মণ্ডপসজ্জার কাজ অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিল। মাঝপথে তাদের বাধ্য করা হয়েছে এই থিম থেকে সরে আসতে। তৃণমূল নেতৃত্ব এই অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন।
পহেলগামে জঙ্গি হামলায় মারা গিয়েছিলেন কলকাতার বাসিন্দা বিতান অধিকারী। মুখ্যমন্ত্রী যখন বড়িশার পুজো উদ্বোধন করেন, তখন তার পাশে দেখা গিয়েছিল বিতানের মা ও বাবাকে। এই মঞ্চ থেকে বিজেপির নাম না করে মুখ্যমন্ত্রী তাদের নিশানা করেন। বলেন, "ঘটনার পরে তাদের পাশের থাকার আশ্বাস দিয়েছিল অনেকে। এখন তাদের দেখা যাচ্ছে না।"
রাজনীতির গন্ধ রয়েছে অন্যান্য কয়েকটি পুজো কমিটির থিমেও। টালা প্রত্যয়ের এবারের থিম, 'সবুজ রবে বাংলা'। এমন নাম কি তৃণমূলের ক্ষমতায় ফেরার ইঙ্গিত দিচ্ছে? এ নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে পুজোয় এই কমিটির থিম ছিল 'একুশেও বদলাচ্ছে না'।
এই কমিটির শতবর্ষের পুজোর উদ্বোধন করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখানকার থিম সং তারই তৈরি। এখানে এক টুকরো গ্রাম বাংলার ছবি তুলে ধরা হয়েছে। দেবী নিজেই একজন প্রান্তিক কৃষক রমণী। কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষি নীতির বিরুদ্ধে বিরোধীরা বারবার সরব হয়েছে। এই থিমের মাধ্যমে সেই বার্তাই যেন ধ্বনিত হয়েছে।
টালা প্রত্যয়ের সোসাইটি সেক্রেটারি শান্তনু ঘোষ ডিডাব্লিউকে বলেন, "আমরা পুরোপুরি রাজনীতির মধ্যে থিমটা রাখিনি। শুধু কৃষিবিল আমাদের বিষয় নয়, আমরা পুরো কৃষি সিস্টেম, যেটা প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে, খাদ্য সংকট মেটানোর জন্য খাদ্যের মধ্যে যে রূপান্তর তৈরি হচ্ছে, সেটাকে মূলত আমরা দেখাচ্ছি। এর সঙ্গে কৃষক এবং কৃষিনীতির সংযুক্তিকরণ করা হয়েছে। আসল জিনিসটা কিন্তু এই বীজ এবং তার রূপান্তর।"
তিনি বলেন, "আমরা তো একটা অরাজনৈতিক সংগঠন। আমরা শুধু দুর্গাপুজো কমিটি। আমরা বিষয়টা এভাবেই ভেবেছি। এর মধ্যে কোন রাজনীতি নেই।"
পুজোয় রাজনীতির চর্চা
পুজো উপলক্ষে সরকারি অনুদান দেয়া হয়। সঙ্গে থাকে ছাড়ের সুবিধা। এবারও পুজো কমিটিকে দেয়া রাজ্যের অনুদান বেড়েছে। এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক বলে আগাগোড়া সমালোচনা করেছে বিরোধীরা।
প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডিডাব্লিউকে বলেন, "পুজোর সঙ্গে রাজনীতিকে জুড়ে দেয়ার প্রবণতা আগে অল্পবিস্তর ছিল। এখন যেহেতু সরকার পুজোকে প্রোমোট করে, অনুদান দেয়, সক্রিয় রাজনীতির লোকেরা এখন আগের থেকে অনেক বেশি পুজোর সঙ্গে যুক্ত, তারই প্রতিচ্ছবি এগুলি।পুজোটা রাজনীতির লোকেদের হাতে চলে গিয়েছে। তারাই পুজো চালান।"
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য ডিডাব্লিউকে বলেন, "পুজো একটা সামাজিক ব্যাপার, সেখানে রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে নেতাদের দাপাদাপি সাধারণ মানুষ হিসেবে আমাদের ভালো লাগে না। পুজোটা পুজোর মতো থাকুক, সেখানেও রাজনৈতিক নেতারা যদি তাদের বক্তব্য বলতে শুরু করেন, তাহলে আমাদের পরিসর থাকছে কোথায়?"
তিনি মনে করেন, "রাজনৈতিক নেতা নেত্রীরা তাদের দলের এজেন্ডা, বিরোধী দলকে কাবু করবার ইস্যুগুলোই তুলে ধরছেন। বরং পুজোর মৌসুমে তারা যদি এই মঞ্চে দাঁড়িয়ে মানুষের ইস্যু তুলে ধরতেন, সেটা ভালো হত। তারা যদি বলতেন, যারা বোনাস পাননি, তাদের বোনাসের জন্য মালিকপক্ষকে সচেতন হতে হবে। গরিবদের জন্য পুজোয় কী ধরনের ব্যবস্থা রাজনৈতিক দলের তরফ থেকে করা হয়েছে, সেসব বললে অনেক ভালো হত। সেই একই ইস্যু যেগুলো সারা বছর ধরে ইলেকশন এজেন্ডার প্রচার হিসেবে চলে, সেগুলোই পুজোতে শুনতে হয়। এর মধ্যে মানুষের কথা কোথায়? সাধারণ মানুষ এই জায়গাটাকে সামাজিক পরিসর হিসেবে দেখেন। এই পরিসরে আর ভোটের রাজনীতির কথা শুনতে তারা চান না।"
রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পুজো
পরাধীন ভারতবর্ষে সিমলা ব্যায়াম সমিতি, অনুশীলন সমিতি পুজোর আয়োজন করত। রাজনৈতিক কর্মসূচির সঙ্গে জড়িয়ে ছিল দেবী পুজো। সেই প্রসঙ্গে শুভাশিস বলেন, "তখন পুজোর আড়ালে সংগঠন তৈরি চলত। এখন সে সব হয় না। এখন রাজনৈতিক নেতারা পুজোকে জনসংযোগের মাধ্যমে হিসেবে গড়ে তুলছেন, পুজোর মত এত বড় জনসমাগম আর কোথাও হয় না। শক্তিশালী পুজো প্রমাণ করে নেতার কত ক্ষমতা। বলতে গেলে, পাড়ায় সমাধান, দুয়ারে সরকারের মত পুজোকেও এরকম জনসংযোগের জায়গা গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে।"
রবীন্দ্রনাথ বলেন, "সেকালে একটা দেশাত্মবোধ, আদর্শ, মূল্যবোধ ছিল। তারা অনুশীলন সমিতিতে পুজো করতেন একটা 'নেশন' গড়ার লক্ষ্যে। এখন আমাদের 'নেশন'কে এক করার কোনো প্রচেষ্টা নেই, শুধু আস্ফালন আছে। অপারেশন সিঁদুর দিয়ে বলুন বা যে কোনো জায়গায় শুধু দেখানো হচ্ছে শাসকদল কতটা আস্ফালন দেখাতে পেরেছে! বাঁকুড়ার তৃণমূল নেতা তো বলেই দিয়েছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন, সুতরাং তার ছবি সব দুর্গা মূর্তির পিছনে রাখতে হবে। এই শাসকদলের আস্খলন, রাজ্য এবং কেন্দ্র উভয় জায়গাতেই, এটাই পুজোর এখন মূল ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবটাই একটা বাহ্যিক আস্ফালন হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে দেশকে ভালোবাসা বা মতাদর্শগত মূল্যবোধ নেই।। "