1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌উৎসবে কি ওরাও শামিল?‌

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭

পশ্চিমবঙ্গে দুর্গাপূজা বাঙালির অন্যতম প্রধান উৎসব, যাতে  অন্য ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষরাও মেতে ওঠেন৷ কিন্তু কোথাও কি ফাঁক থেকে গেছে?‌

ছবি: DW/S. Bandopadhyay

দুর্গাপুজো বাঙালিদের স্রেফ আরেকটা ধর্মীয় উদযাপন নয়, বরং এই উৎসবের সঙ্গে বাঙালির নাড়ির যোগ আছে৷ জাত, ধর্ম এবং সম্প্রদায় নির্বিশেষে সমস্ত বাঙালি এই আনন্দে শামিল হন৷ পুজোর বোধন থেকে বিসর্জন, পথেঘাটে লাখ লাখ মানু্যের ঢল, তাঁদের হাসিমুখ, নতুন জামা-কাপড়ের রঙিন উচ্ছ্বাস তেমনটাই মনে করায় আমাদের৷ কিন্তু বাঙালি বলতে কি আমরা এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু বাঙালির কথাই বলছি?‌ নাকি মুসলিম বাঙালি, ক্রিশ্চান বাঙালি, শিখ, বৌদ্ধ, পার্সি বাঙালির কথাও বলছি, যাঁরা এই বাংলায় থাকতে থাকতে, যাপনে এবং অভ্যাসে নিখাদ বাঙালিই হয়ে গেছেন?‌

সিলভিয়া গোমস৷ ক্যাথলিক খ্রিষ্টান৷ থাকেন খিদিরপুর অঞ্চলে৷ পেশায় সাংবাদিক৷ কিন্তু খ্রিষ্টানদের নিজস্ব উৎসব ক্রিসমাস সিলভিয়ার কাছে যতটা আনন্দের, ততটাই ঘরের পাশের দুর্গাপুজো৷ ডয়চে ভেলের মুখোমুখি হয়ে, পুজো নিয়ে কথা বলতে গিয়ে রীতিমতো উচ্ছ্বাস সিলভিয়ার গলায়৷ সেই ছোট্ট থেকে ওঁরা একদিকে যেমন নিজেদের পাড়ার পুজোয় মাতেন, সক্রিয় অংশ নেন, এমনকি ভিড় সামলাতে বুকে ব্যাজ লাগানো খুদে ভলান্টিয়ার পর্যন্ত হয়েছেন, তেমনই গাড়ি ভাড়া করে, সবাই মিলে সারা রাত ঘুরে ঠাকুর দেখা পর্যন্ত বাদ যায়নি৷ পুজোতে নতুন জামাও কি হয়?‌ না, সেটা সম্ভবত তোলা থাকে ক্রিসমাসের জন্য৷ যদিও তাতে পুজো দেখার আনন্দে কোনও ঘাটতি যে হয় না, সেটা সিলভিয়ার কথাতেই বোঝা গেল৷

পুজো নিয়ে কথা বলতে গিয়ে উচ্ছ্বাস দেখা গেল সিলভিয়ার গলায়

This browser does not support the audio element.

তুলনায় উচ্ছ্বাস কম বর্ষীয়ান নভাজ ঘারদা'র৷ কলকাতার পার্সি সমাজের একজন, থাকেন ধর্মতলা স্ট্রিটে৷ একসময় কাজ করতেন ডাচ বিমান সংস্থা কেএলএম-এ, এখন স্বেচ্ছা অবসর নিয়ে পার্সিদের মধ্যেই সমাজসেবার কাজে ব্যস্ত থাকেন৷ যদিও তিনিও পুজোর এই উৎসবের মেজাজ যথেষ্ট উপভোগ করেন৷ কম বয়সে সারা শহর ঘুরে ঠাকুর দেখা, খাওয়া-দাওয়া, কোনও কিছুই বাদ দেননি৷ নভাজের ছেলে-মেয়েরাও ছোট বয়সে একইভাবে মেতেছে উৎসবে৷ মেয়ে পেশাদার আলোকচিত্রী৷ কলকাতার পুজোয় ছবি তোলার মতো অজস্র মুহূর্ত তাঁর কাছে ছিল বাড়তি আকর্ষণ৷ এখন, এই প্রৌঢ়ত্বে পৌঁছেও পুজোর সময় শহরের আলোর সাজ, রাস্তায় নতুন জামা-কাপড় পরা মানুষের ঢল দেখতে নভাজের ভালো লাগে, তবে সেটা বাড়ির তিন তলার বারান্দা থেকে৷পুজো নিয়ে তাঁর আর কোনও বাড়তি উচ্ছ্বাস নেই, বরং কয়েকদিনের টানা ছুটিটাই এখন বেশি উপভোগ করেন৷

পুজো নিয়ে নভাজ ঘারদার আর কোনও বাড়তি উচ্ছ্বাস নেই

This browser does not support the audio element.

ঠিক তার বিপরীত মানসিকতা উৎসা শার্মিনের। পিএইচডি'র ছাত্রী, দিল্লির বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা, সদ্য ইংল্যান্ডের সোয়াস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঘুরে আসা উৎসা সব অর্থেই একজন বিশ্ব নাগরিক এবং উদার মতবাদের অনুসারী৷ ধর্মত মুসলিম হলেও উৎসা বা ওর ভাই, কেউই সে অর্থে ধর্মাচরণের আবহে বড় হয়ে ওঠেনি৷ ফলে ঈদ আর দুর্গাপুজো ওদের কাছেই একই উৎসবের মতো৷ খুশির ঈদেও যেমন ওদের পরিবার নতুন জামা, খাওয়া-দাওয়া আর আত্মীয়-বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় কাটায়, দুর্গাপুজোতেও ঠিক তাই৷ ধর্মীয় অনুষঙ্গের দিকটা ওদের তেমন ভাবায় না৷ কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা কথা বলল উৎসা৷ ডয়চে ভেলের তরফ থেকে ওকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, পুজোয় ও বা ওর ভাইয়ের যেমন নতুন জামা হয়, ওর হিন্দু বন্ধুদের কিন্তু ঈদে নতুন জামা হয় না৷ এই যে বাঙালির দুটো উৎসব শেষ পর্যন্ত মিলেমিশে গেল না, এটা কি ওকে কোনওভাবে আহত করে?‌ উৎসা বলল, সংখ্যালঘু হিসেবে এই দায়টা যেন ওর সব সময় থাকে সংখ্যাগুরুর উৎসবে শামিল হওয়ার৷ যেমন ঈদের সময় ওর হিন্দু বন্ধু-বান্ধবেরা বলে বাড়িতে দাওয়াত দিতে বা বাড়ি থেকে ঈদের গোস্ত বা শেমাই নিয়ে আসতে৷ কিন্তু কোনও হিন্দু বন্ধুর বাড়িতে লক্ষ্মীপুজোয় বা সরস্বতী পুজোয় প্রসাদ খাওয়ার ডাক কিন্তু পড়ে না৷ এই দূরত্বটা ওকে ভাবায়৷

উদার মতবাদের অনুসারী উৎসা শার্মিন

This browser does not support the audio element.

ভাবা উচিত সম্ভবত সবারই৷ সবার উৎসব, মুখে বলা হয়৷ কিন্তু তাকে সত্যিই সার্বজনীন করে তোলার দায়িত্ব কি আদৌ কেউ কখনও নিয়েছে?

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ