1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

উড়োজাহাজ সিন্ডিকেট: মালয়েশিয়া যেতে পারেননি ১৮ হাজার তরুণ

২২ জানুয়ারি ২০২৫

৩০ হাজার টাকার কাজে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত দিয়েছেন তারা৷ তারপরও মালয়েশিয়া যেতে পারেননি৷ টাকাও ফেরত পাননি৷

মালয়েশিয়ায় চাকরিপ্রার্থীদের বিক্ষোভ
রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে বাড়তি টাকা দিয়েও মালয়েশিয়া যেতে ব্যর্থ হওয়া একদল চাকরিপ্রার্থী ঢাকায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেনছবি: DW

বলা হচ্ছে, ১৮ হাজার তরুণের জীবন সংকটময় করার জন্য দায়ী ১০-১২ জনের এক ‘উড়োজাহাজ সিন্ডিকেট'৷

প্রায় সারাদিন কারওয়ান বাজার ও প্রবাসী বল্যাণ ভবনের সামনে বিক্ষোভের পর মালয়েশিয়ায় যেতে না পারা চাকরিপ্রার্থীরা আন্দোলন আপাতত স্থগিত করেছেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের আশ্বাসে আস্থা রেখে বুধবার বিকেলে কর্মসূচি স্থগিত করেন তারা।

আন্দোলনের সমন্বয়কারী মঈনুদ্দিন বাবু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যাদের ম্যানপাওয়ার (বাংলাদেশ সরকারের অনুমতি) এবং ই-ভিসা আছে, তাদের আগামী মার্চের শেষ নাগাদ ধাপে ধাপে মালয়েশিয়ায় পাঠানো হবে।”

তিনি বলেন, ‘‘আমরা মোট ১৮ হাজার গত মে মাসে টিকিট জটিলতার কারণে যেতে পারিনি। আমাদের সব কাগপত্র এবং টাকা-পয়সা পরিাশোধ থাকার পরও অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের জন্য সিন্ডিকেট করে উড়োজাহাজ সংকট তৈরি করা হয়। আমাদের কাছ থেকে আরো অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়। তারপরও আমরা যেতে পারিনি।”

বার বার প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরও টাকা ফেরত দেয়া হচ্ছে না: পারভেজ আলম

This browser does not support the audio element.

গত ৩১ মে মালয়েশিয়া বিদেশি কর্মীদের জন্য তাদের শ্রমবাজার বন্ধ করে দিলে সেখানে যাওয়ার সব প্রস্তুতি থাকার পরও প্রায় ১৮ হাজার বাংলাদেশি চাকরি প্রার্থী দেশটিতে যেতে পারেননি। অভিযোগ- ওই সময়ে সিন্ডিকেট করে উড়োজাহাজের ভাড়া বাড়িয়ে দেয়া হয় এবং সে কারণে তৈরি হয় ফ্লাইট সংকট৷ সংকটগ্রস্তরা তখন ৩০ হাজার টাকার স্থানে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত দিয়েছেন। তারপরও তারা যেতে পারেননি।

সেই থেকে বার বার তাদের আশ্বাস দেয়া হয়েছে। শেখ হাসিনার সরকার তাদের সমস্যার সমাধান করেনি, গত পাঁচ মাসে ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারও করেনি। এমনকি তাদের টাকা ফেরতের প্রতিশ্রুতি দিয়েও কোনো টাকা দেয়নি রিক্রুটিং এজেন্টরা।

এই পরিস্থিতিতে মালয়েশিয়া পাঠানোর দাবিতে বুধবার সকালে কারওয়ান বাজারের সার্ক ফোয়ারা এলাকায় অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেন চাকরিপ্রার্থীরা। ফলে ওই এলাকার সড়কগুলোতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দিলে তারা ইস্কাটন এলাকায় পুরাতন এলিফেন্ট রোডে প্রবাসী কল্যাণ ভবন ঘেরাও করে। দুপুরের পর তাদের দুই সদস্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন ড. আসিফ নজরুল। পরে আন্দোলনের  সমন্বয়কারী মঈনুদ্দিন বাবু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে। এরপর আমাদের যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তা পুরণ করা না হলে আরো কঠোর কর্মসূচি দেবো।”

আমরা দুয়ারে দুয়ারে ঘুরতে ঘুরতে শেষ হয়ে গেছি'

আন্দোলনে অংশ নেয়া পারভেজ আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সরকারি খরচ ৭৯ হাজার হলেও আমাদের কাছ থেকে সিন্ডিকেট করে তিন-চার লাখ টাকা নেয়া হয়েছে। মে মাসে বাড়তি বিমান ভাড়ার নামে আমাদের কাছ থেকে আরো টাকা নেয়া হয়েছে। কিন্তু বার বার প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরও সেই টাকা ফেরত  দেয়া হচ্ছে না। আমাদের মালয়েশিয়া পাঠানোরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। আমরা দুয়ারে দুয়ারে ঘুরতে ঘুরতে শেষ হয়ে গেছি। আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। তাই আমরা আন্দোলনে নেমেছি।”

‘‘২০২৪ সালের ৩১ মে ছিল আমাদের মালয়েশিয়া যাওয়ার শেষ সময়। কিন্তু সিন্ডিকেটের কারণে আমরা যেতে পারিনি,'' বলেন তিনি।

সরকার অযথা প্রতিশ্রুতি না দিয়ে টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করুক'

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ(বায়রা)-র মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘২০২৪ সালের ৩১ মে মালয়েশিয়া শুধু বাংলাদেশ নয়, আরো অনেক দেশ থেকে জনশক্তি নেয়া বন্ধ করে দেয়। ফলে বেশ কিছু লোক যেতে পারেনি। এরপর সরকার তাদের তালিকা সংগ্রহ করেছে। কেউ কেউ টাকা ফেরত নিয়েছে। যারা ফেরত নেয়নি, তাদের সংখ্যা তিন হাজারের বেশি হবে না । ওই সময় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া হয়, রিপোর্ট করতে বলা হয়। সরকার তাদের জন্য চেষ্টা করছে। অন্তর্বর্তী  সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস এটা নিয়ে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলেছেন।”

মালয়েশিয়া লোক নেয়া শুরু না করলে তো তাদের পাঠানো যাবে না: আলী হায়দার চৌধুরী

This browser does not support the audio element.

১৮ হাজার তরুণের মালয়েছিয়া যেতে না পারা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আসলে মালয়েশিয়া সরকার সেদেশের ৫২ টি কোম্পানিকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। তারা ওইসব প্রতিষ্ঠানের হতে পারেন। আবার অনেকের সরকারের অনুমোদন হয়নি। এরকম আরো অনেক ঝামেলা আছে। সেই বিষয় তো আমরা দেখতে পারবো না। আর মালয়েশিয়া লোক নেয়া শুরু না করলে তো তাদের পাঠানো যাবে না।”

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব রুহুল আমিন তার মন্ত্রণালয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আমরা এখানে দুই ধরনের কাজ করছি। একটি হচ্ছে যারা যেতে পারেনি তাদেরকে আবার মালয়েশিয়াতে পাঠানোর একটা ব্যবস্থা করা, দ্বিতীয়ত, যারা যেতে পারেনি, কিন্তু যেসব রিক্রুটিং এজেন্সি তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে, সেগুলো পরিশোধ করা।”

সচিব বলেন, ‘‘রিক্রুটিং এজেন্সির সঙ্গে আমরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছি। দুই-এক দিন আগ পর্যন্ত আমাদের কাছে আপডেট আছে ৮১ শতাংশ এজেন্সি টাকা ফেরত দিয়েছে। এরপরও যারা টাকা দিচ্ছে না, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে আমরা ব্যবস্থা নেবো।”

গত বছরের ৩১ মে মালয়েশিয়া প্রবেশের শেষ সময়ের মধ্যে প্রায় ১৮ হাজার কর্মী সেদেশে যেতে না পারার জন্য সিন্ডিকেটকে দায়ী করেন ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান। তিনি বলেন, ‘‘শুধু এখন নয়, বার বার মালয়েশিয়ার শ্রম বাজার নিয়ে এই সংকট হয়েছে। অনেক বাংলাদেশি নিঃস্ব হয়েছেন। ১০ জনের সিন্ডিকেট ওই বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। সরকারের উচিত এ ব্যাপারে মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে কথা বলে সঠিক পদক্ষেপ নেয়া।”

তার কথাম, ‘‘মার্চে তারা যে যেতে পারবে তা আমার মনে হয় না। সরকার তাদের অযথা প্রতিশ্রুতি না দিয়ে টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করে দিক।”

বিদেশে পাঠানোর নামে প্রতারণায় জড়িত কারা?

57:02

This browser does not support the video element.

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ