ক্ষমতায় এসেই অবাক করা ঘোষণা দিয়ে চলেছে গ্রিসের সিপ্রাস সরকার৷ প্রথমে ইউক্রেন প্রশ্নে রাশিয়ার ওপর আরো কঠোর অবরোধ আরোপে সমর্থন দেয়নি তারা৷ এবার দেশের অর্থনীতিকে চাঙা করতে ঋণ-নির্ভরতা থেকে মুক্তির কথা বলেন অর্থমন্ত্রী৷
ছবি: picture-alliance/AP
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি ডানপন্থি ইন্ডিপেন্ডেন্ট গ্রিকস দলের সঙ্গে মিলে জোট সরকার গঠন করেছে গ্রিসের বামপন্থি দল সিরজা৷ সিরজার নেতা আলেক্সিস সিপ্রাস হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী৷ ক্ষমতায় আরোহণের এক সপ্তাহের মধ্যেই সিপ্রাস সরকার বুঝিয়ে দিয়েছে, পূর্ববর্তী সরকারের অনুসৃত সব পথ তাদের পছন্দ নয়৷ বিশেষ করে দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতিকে ঠিক করতে তাঁরা আর ঋণ-মুখাপেক্ষী থাকতে চান না৷
গ্রিসের অর্থমন্ত্রী ইয়ানিস ভারোফাকিস ফ্রান্স সফরে গিয়ে বলেছেন, দেশের অর্থনীতিকে চাঙা করতে সরকার শিগগিরই নতুন পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে৷ আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে পরিকল্পনা চূড়ান্ত হবে বলে জানালেও সে পরিকল্পনা সম্পর্কে বেশি কিছু বলেননি৷ তবে একটা কথা খুব স্পষ্ট করে বলেছেন ইয়ানিস ভারোফাকিস, তাঁর মতে, ‘‘গত পাঁচ বছর ধরে গ্রিস কেবল পরবর্তী ঋণের কিস্তি কখন আসবে সেদিকেই তাকিয়ে থেকেছে৷ আমরা এতে নেশাগ্রস্থদের সঙ্গে মিল দেখেছি, নেশাগ্রস্থরা যেমন এক ‘ডোজ' শেষ হতে না হতেই পরের ডোজের কথা ভাবতে শুরু করে, সেরকম ছিল পরিস্থিতি৷'' সিপ্রাস সরকার সেই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসবে – এমন অঙ্গীকারের কথা জানাতে গিয়ে গ্রিসের অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘‘নতুন সরকার এই নেশাগ্রস্থতার অবসান ঘটাবে৷'' কীভাবে? তিনি জানান, ফ্রেব্রুয়ারির মধ্যেই এর একটি রূপরেখা দাঁড় করানো হবে৷
সাইপ্রাসের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে গ্রিক প্রধানমন্ত্রী সিপ্রাস (ডানে)ছবি: Reuters/Yiannis Kourtoglou
গ্রিসের জন্য আগামী কয়েকটা দিন খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ এ সপ্তাহেই নতুন প্রধানমন্ত্রী সিপ্রাস এবং অর্থমন্ত্রী ভারোফাকিস ইইউ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন৷
গ্রিসে অভিবাসীদের চরম দুর্দশা
আর্থিক মন্দার কারণে সামগ্রিকভাবে গ্রিসের অবস্থা অত্যন্ত কাহিল৷ এই কাহিল দশার ভুক্তভোগী হচ্ছেন সেদেশে অবস্থানরত বৈধ, অবৈধ অভিবাসীরা৷ অনেকে বাধ্য হয়ে বেছে নিচ্ছেন ভিক্ষাবৃত্তি, জীবন কাটাচ্ছেন রাস্তায়৷
ছবি: DW/ A. Stahl
ভয় এবং ঘৃণা
‘ভয়ের সভ্যতায় স্বাগতম’ - অভিবাসীদের জন্য গ্রিস ক্রমশ ভয়ের রাজ্যে রূপ নিচ্ছে৷ তাদের নিত্যদিনের জীবন এখন সহিংসতা, বৈষম্য আর দারিদ্র্যের বিস্বাদে ভরা৷
ছবি: DW/ A. Stahl
কিছুই বাকি নেই
কাগজপত্র ছাড়া দুই অভিবাসীকে একটু আগেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷ অবৈধ অভিবাসী হিসেবে আটক এই দুই ব্যক্তি তাকিয়ে আছেন নিয়তির দিকে৷ গ্রিসে বসবাসকারী এরকম অসংখ্য অবৈধ ব্যক্তিকে প্রতিদিন গ্রেপ্তার করছে পুলিশ৷ গ্রেপ্তারের পর এদেরকে বাসে করে আটক কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়৷ প্রতিদিন অবৈধ অভিবাসী ভর্তি ১০-১৫টি বাস আটক কেন্দ্রে পৌঁছায়৷
ছবি: DW/ A. Stahl
বাক্সের মধ্যে জীবনযাপন
অর্থনৈতিক মন্দা গ্রিসের বাসিন্দাদের অত্যন্ত শক্তভাবে আঘাত করেছে৷ এর ফলে অনেকে হয়েছেন গৃহহীন, বাস করছেন রাস্তায়৷ ২০০৯ সালের তুলনায় বর্তমানে সেদেশের রাস্তায় বসবাসকারী গৃহহীনের সংখ্যা বেড়েছে ২৫ শতাংশ৷
ছবি: DW/ A. Stahl
ভয়ের মধ্যে বসবাস
আনা টাসাভি একজন সিরীয় শরণার্থী৷ কোন কাগজপত্র ছাড়া অবৈধভাবে এথেন্সে বাস করেন তিনি৷ তিনি দিনের বেশিরভাগ সময় বন্ধুর বাড়িতে তালাবদ্ধ অবস্থায় থাকেন৷ তার মধ্যে সবসময় আতঙ্ক কাজ করে, এই বুঝি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হবেন কিংবা ডানপন্থী গুণ্ডাদের আক্রমণের শিকার হবেন৷ নিজের দেশে ফেরাটাও তার জন্য অনেক বিপজ্জনক৷
ছবি: DW/ A. Stahl
বহিরাগত
একজন অভিবাসী নারী এবং তার শিশু এথেন্সের আটক কেন্দ্রের বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন৷ অবৈধ হিসেবে আটক হওয়ায় কয়েকমাস কারাভোগ করতে হয়েছে তাদের৷
ছবি: DW/ A. Stahl
বৈশ্বিক অর্থনীতি
গ্রিসে আর্থিক মন্দার কারণে সেদেশের সরকার এবং বিশ্বায়নে তাদের ভূমিকার উপর গভীর অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে৷
ছবি: DW/ A. Stahl
ব্যাপক ভিড়
এথেন্সের পররাষ্ট্র দপ্তরের সামনে প্রতিদিন ভিড় করেন অসংখ্য অভিবাসী৷ উদ্দেশ্য গ্রিসে বসবাসের একটি বৈধ কাগজ বের করার চেষ্টা করা৷ খুব ভোর থেকে গভীর রাত অবধি অপেক্ষা করেন তারা, কিন্তু এদের মধ্য থেকে খুব কম লোকই সেদেশে ছয়মাস বৈধভাবে বসবাসের কাগজ পান৷
ছবি: DW/ A. Stahl
কোন ভবিষ্যত নেই?
‘এমনিতেই এথেন্সে বসবাস অত্যন্ত কঠিন, আর একজন অভিবাসী হিসেবে অসম্ভব৷ আমি এখানে এসেছিলাম একটু ভালো ভবিষ্যতের আশায়, কিন্তু এখানে কোন ভবিষ্যতই নেই’, ডয়চে ভেলেকে বলছিলেন এক অভিবাসী৷ নিজের নাম প্রকাশে আগ্রহী নন তিনি৷
ছবি: DW/ A. Stahl
কঠিন বাস্তবতা
ইউরোপে আগমনের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে গ্রিসে আসেন আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের মানুষ৷ কিন্তু এরপর তারা এক জটিলতা থেকে অন্য জটিলতার মুখোমুখি হন৷ গ্রিসের বাস্তবতা এখন বড় কঠিন৷
ছবি: DW/ A. Stahl
গ্রিক ট্রাজেডি
এথেন্সের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে এরকম গ্রাফিটির সংখ্যা অনেক৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব গ্রাফিটি গ্রিসের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে স্থানীয়দের মনোভাব ফুটিয়ে তোলে৷
ছবি: DW/ A. Stahl
যাওয়ার কোন জায়গা নেই
গ্রিসে বসবাসরত অভিবাসীরা ক্রমশ কঠিন থেকে কঠিনতর বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছেন৷ তাদের জন্য কোন চাকুরি নেই, ভবিষ্যত অন্ধকার৷ অনেক অভিবাসী শেষমেষ বেছে নেন ভিক্ষাবৃত্তি আর জীবন কাটান রাস্তায়৷