জাপানে জি৭ বৈঠকের পরেই অ্যামেরিকা ফিরবেন বাইডেন। কোয়াড বৈঠক এবং অস্ট্রেলিয়া সফর বাতিল করতে হয়েছে তাকে।
বিজ্ঞাপন
ঋণ-সংকটের জন্যই বাইডেনকে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে বলে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে। বলা হয়েছে, রোববার জি৭ সম্মেলন শেষ হওয়ার পরেই বাইডেন দেশে ফিরবেন। তারপর তিনি আবার মার্কিন কংগ্রেসের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বাজেট নিয়ে যাতে মতৈক্য হয়, অ্যামেরিকা যাতে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ঋণখেলাপি না হয়, তা নিশ্চিত করবেন বাইডেন।
বাইডেন ইতিমধ্যে হোয়াইট হাউসে কংগ্রেসের রিপাবলিকান নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। রিপাবলবিকান কংগ্রেস সদস্যরা মনে করছেন, একটা সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব হবে। কিন্তু হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থি জানিয়েছেন, দুই পক্ষের মধ্যে এখনো বিপুল মতবিরোধ আছে।
ঘটনা হলো, মার্কিন কংগ্রেসকে অ্যামেরিকার ঋণের সীমা বাড়াতে হবে। তা না করলেও ১ জুন থেকে অ্যামেরিকা ৩১ দশমিক চার ট্রিলিয়ন ডলারের ঋণখেলাপি হয়ে যাবে। মার্কিন সরকার যদি তাদের দায়বদ্ধতা পুরো না করতে পারে, তাহলে আন্তর্জাতিক আর্থিক ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে।
বাইডেন জানিয়েছেন, মঙ্গলবার ওভাল অফিসে তিনি যে বৈঠকে বসেছিলেন তা ভালো হয়েছে। বাইডেনের কথা শুনে মনে হয়েছে, সমঝোতার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।
কেন মাঝপথে সাংবাদিক সম্মেলন ছেড়ে চলে গেলেন বাইডেন?
সোমবার ক্যালিফোর্নিয়া যাওয়ার আগে সাংবাদিক সম্মেলনে কোনো প্রশ্নের জবাব না দিয়ে চলে গেলেন জো বাইডেন। কেন?
ছবি: Leah Millis/REUTERS
ব্যাংক বন্ধ নিয়ে প্রশ্ন এড়াতে
অ্যামেরিকায় সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক(এসভিবি) ও সিগনেচার ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আলোড়ন পড়ে গেছে। সোমবার বাইডেন এই ব্যাংক বন্ধ নিয়ে বিবৃতি মিনিট পাঁচেক ধরে পড়ে শোনান। তারপরই তিনি কোনো প্রশ্নের জবাব না দিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন ছেড়ে চলে যান। তারপরই বাইডেনের এই আচরণ নিয়ে সমাজ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
ছবি: Mandel Ngan/AFP
ব্যাংক বন্ধ
গত শুক্রবার ক্যালিফোর্নিয়ায় এসভিবি ও রোববার নিউ ইয়র্কে সিগনেচার ব্যাংক বন্ধ হয়ে গেছে। কর্তৃপক্ষ মনে করছে, এসভিবির যে সম্পদ আছে তা দিয়ে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেয়া সম্ভব হবে৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও অ্যামেরিকায় এই ব্যাংকের গ্রাহকেরা আতঙ্কে ভুগছেন। হঠাৎ পরপর দুইটি ব্যাংক বন্ধ হওয়ায় তারা অশনি সংকেত দেখছেন।
ছবি: Noah Berger/AFP/Getty Images
বাইডেনকে প্রশ্ন
বাইডেন যখন প্রশ্ন না নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন ছেড়ে চলে যাচ্ছেন তখন এক সাংবাদিক চিৎকার করে বলেন, আপনি এখন ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাওয়া নিয়ে কী জানেন, কেন এই ঘটনা ঘটলো? আপনি কি অ্যামেরিকাকে আস্বস্ত করতে পারেন যে, এর প্রতিক্রিয়া খুব বেশি হবে না? আরেক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, আপনি কি প্রত্যাশা করেন যে, আর কোনো ব্যাংক বন্ধ হবে না?
ছবি: Saul Loeb/AFP
আগেও করেছেন
বাইডেন এভাবে আগেও মাঝপথে সাংবাদিক সম্মেলন ছেড়ে চলে গেছেন। কোনো গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক ইভেন্ট বা যেখানে অস্বস্তিকর প্রশ্ন আসতে পারে, সেখানে তিনি কোনো প্রশ্নের জবাব না দিয়ে অতীতেও চলে গেছেন।
ছবি: Mandel Ngan/AFP
সমালোচনার ঝড়
বাইডেন যেভাবে প্রশ্নের জবাব না দিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন ছেড়েছেন, তা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে, বিশেষ করে টুইটারে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। প্রশ্ন ওঠে, এতবড় ব্যাংক ফেল করা নিয়ে বাইডেন পাঁচ মিনিট ভাষণ দেবেন, তারপর প্রশ্নের জবাব না দিয়ে চলে যাবেন? এজন্য কি তিনি ভোট পেয়েছিলেন? একজন বলেছেন, মার্কিন ইতিহাসে দ্বিতীয় সবচেয়ে বড় ব্যাংক ফেলের ঘটনা ঘটেছে, অথচ বাইডেন প্রশ্নের জবাব দেবেন না?
ছবি: Diptendu Dutta/AFP
সাফল্যের দাবি
সাংবাদিক সম্মেলন ছেড়ে যাওয়ার আগে বাইডেন আর্থিক ক্ষেত্রে সাফল্যের কথা বলেন। তিনি জানান, গত দুই বছরে আর্থিক বৃদ্ধির হার বেড়েছে। এক কোটি ২০ লাখ কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। গত ১৪ মাস ধরে বেকারত্বের হার চার শতাংশের কম আছে। এভাবেই ব্যাংক ফেল হওয়ার ঘটনাকে অতটা গুরুত্ব না দিয়ে বাইডেন বোঝাবার চেষ্টা করেছেন, এখনও মার্কিন অর্থব্যবস্থা যথেষ্ট শক্তিশালী।
ছবি: Justin Sullivan/Getty Images
6 ছবি1 | 6
ম্যাকার্থিও সাংবাদিকদের বলেছেন, এই সপ্তাহের শেষে সমঝোতা সম্ভব। সম্ভাব্য আর্থিক বিপর্যয় নিয়ে তার মন্তব্য, ‘'কীভাবে আমরা আলোচনা করব, সেই কাঠামোর বিষয়টি এখন আগের থেকে অনেক স্পষ্ট হয়েছে।''
ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস-সহ অনেক ডেমোক্র্যাট নেতা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে রিপাবলিকানরা দাবি করেছেন, ঋণের সীমা বাড়াতে গেলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাজেট বরাদ্দ কমাতে হবে। আর সরকারি অর্থ যারা পাচ্ছে, তাদের কাজ করার বিষয়টি আরো কঠোর করতে হবে।
কিন্তু বাইডেন ঋণের সীমা বাড়ানো এবং বাজেট বরাদ্দের বিষয়টিকে জুড়তে চাইছেন না।
কোয়াড বৈঠক বাতিল
ঠিক ছিল, জি৭ বৈঠকের পর বাইডেন কোয়াড বৈঠকেও যোগ দেবেন। কোয়াড মানে অ্যামেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও ভারতের মঞ্চ। মূলত চীনের বাড়বাড়ন্ত ঠেকানোর জন্যই এই মঞ্চ তৈরি হয়েছে।
বাইডেন ইতিমধ্যেই অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করে বলেছেন, তিনি যেতে পারবেন না। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ভারত ও জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। পরে তিনি একটি বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, বাইডেন এরপর প্রথম সুযোগেই অস্ট্রেলিয়া আসবেন বলে জানিয়েছেন।
পাপুয়া ও নিউ গিনিতে এখনো পর্যন্ত কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট যাননি। তারাও এই সফর বাতিল হওয়ায় হতাশ।