1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌ঋতুস্রাবের রক্তে বিতর্ক

৫ অক্টোবর ২০১৮

মেয়েরা ঋতুমতী হলে পুজোয় তাঁরা অংশ নিতে পারে না৷ বহু যুগের পুরনো এই প্রথার বিরোধিতা করে বিপাকে পড়েছেন এক শিল্পী৷

Damenbinde
ছবি: Imago/Steinach

দুর্গা প্রতিমার পেছনে যে চালচিত্র থাকে, সেরকমই এক একচালা চালচিত্রের মাঝে একটি স্যানিটারি ন্যাপকিন৷ তার গায়ে রক্তচিহ্নে ফুটে উঠেছে পদ্মফুলের মোটিফ৷ তলায় লেখা— নারীশক্তি৷ মুম্বইপ্রবাসী বাঙালি শিল্পী অনিকেত মিত্র'র সাম্প্রতিক একটি পোস্টারের এটিই ছিল ছবি৷ ঋতুমতী হলে মেয়েরা যে পুজোর কোনো আচার-অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারে না, যেহেতু সেসময় তাঁরা অশুদ্ধ থাকে— সেই পুরনো ধারণাকেই কার্যত চ্যালেঞ্জ করেছিলেন অনিকেত৷ বলতে চেয়েছিলেন, যে মাতৃত্ব নারীত্বের সবথেকে বড় শক্তি, সবচেয়ে গর্বের বিষয়, তার যে সূচনাপর্ব, তাকেই কী করে অশুদ্ধ, অশুচি বলে ব্রাত্য রাখা হয়!‌ কিন্তু অনিকেতের এই পোস্টারের ফল হয়েছে উলটো৷ একদিকে যেমন বহু মহিলা এই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত হয়ে ছবিটি শেয়ার করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়, তেমনি অনেক মহিলা ক্ষিপ্ত, কী করে এমন ভুল ধারণা প্রচার করা হচ্ছে!‌ সরব হয়েছে কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা যে, অনিকেত হিন্দু ধর্মের অসম্মান করেছেন৷ এই বিরুদ্ধ প্রতিক্রিয়া এবং তার সঙ্গে অনিকেত ও তাঁর পরিবারের উদ্দেশে যেরকম লাগাতার হুমকি আসছে, বিতর্কিত ওই ছবি নিজের ফেসবুক থেকে সরিয়ে নিয়েছেন অনিকেত এবং চাইছেন না যে, ছবিটা আর প্রচারে থাকুক৷

লড়াইটা এখনো অনেকটা বাকি: অনিকেত

This browser does not support the audio element.

একটা সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে একটা প্রচার তৈরি করার পর, এই যে তীব্র বিরূপ, প্রায় মারমুখী প্রতিক্রিয়া, তার জবাবে অনিকেত নিজে কী বলছেন?‌ ডয়চে ভেলেকে তিনি জানালেন, ‘‘‌প্রথম আমার যেটা মনে হচ্ছে যে, লড়াইটা এখনো অনেকটা বাকি৷ আর এটা খুব লজ্জার ব্যাপার যে, ২০১৮য় দাঁড়িয়েও আমাদের সিনেমা বানিয়ে, ভিশুয়াল তৈরি করে মানুষকে বলতে হচ্ছে যে, সোশ্যাল ট্যাবুগুলো থেকে বেরিয়ে আসার সময় হয়েছে!‌’’

অনিকেত প্রশ্ন তুলছেন যে, ‘‘‌কতদিন আপনি এভাবে মেয়েদের বাধা-নিষেধের মধ্যে আটকে রাখবেন? আজকে যেখানে মেয়েরা কোনো স্তরে, কোনোভাবেই পিছিয়ে পড়তে রাজি নয়, তাঁদের বলে দেওয়া হচ্ছে, উৎসবের চারটে দিন আপনার অধিকার নেই অঞ্জলি দেওয়ার, অধিকার নেই সিঁদুর খেলার৷’’

অনিকেত জানাচ্ছেন, তাঁর প্রথম থেকেই একটা আপত্তি ছিল এই বিধিনিষেধ নিয়ে৷ নিজের জীবনে তিনি দেখেছেন, বাড়ির মেয়েরা, তাঁর বোনেরা হয়ত আগের দিন কী জামা-কাপড় পরবে, সব গুছিয়ে রেখেছে‌, কীভাবে সাজবে ঠিক করে রেখেছে, পরের দিনই হয়ত অষ্টমীর অঞ্জলি বা সিঁদুরখেলা, কিন্তু হঠাৎ পিরিয়ড শুরু হয়ে যাওয়ার কারণে সব বাতিল হয়ে গিয়ে তাঁদের ঘরবন্দি হয়ে যেতে হয়েছে৷ আরো একটা জরুরি বক্তব্য ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন অনিকেত৷ বলেছেন, আজকাল পুজোয় এত লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হয়, কিন্তু কোনো পুজোর উদ্যোক্তার এটা মনে হয় না যে, মণ্ডপের পাশে একটা স্যানিটারি প্যাড ভেন্ডিং মেশিনও বসানো হোক৷ উল্লেখ্য, মেয়েদের জন্যে এই বাড়তি সুবিধা এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা ভেবে সারা ভারত জুড়েই এক সামাজিক আন্দোলন ক্রমশ দানা বাঁধছে যে, অন্তত সুলভ শৌচালয়গুলিতে, বা সামগ্রিকভাবে নাগরিক পরিসরগুলিতে এ ধরনের স্যানিটারি প্যাড ভেন্ডিং মেশিন থাকুক৷

কিন্তু অনিকেতের পোস্টারের যেমন একদিকে বহু মহিলা এবং পুরুষ তারিফ করেছেন, শেয়ার করেছেন সোশাল মিডিয়ায়, তেমনি প্রবল বিরোধিতারও সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাঁকে৷ এমনকি বহু মহিলাও তাঁকে তিরস্কার করেছেন যে, মেয়েরা ঋতুমতী হলে অশুদ্ধ, অশুচি হয়ে যায়— এই সাধারণ জ্ঞানটাও কি তাঁর নেই!‌ তার পাশাপাশি সরব হয়েছে ধর্মীয় কট্টরবাদীরা যে, অনিকেত আদতে দুর্গাপুজো, তথা হিন্দুধর্মের অবমাননার চেষ্টা করছেন৷

এমন ভিশুয়াল রীতিমতো ধাক্কা দেয়: মধুবন্তী

This browser does not support the audio element.

কিন্তু তা হলে কি সৃজনশীল মানুষদেরও এবার থেকে সতর্ক থাকতে হবে যে, পাছে কোনো প্রচারের কারণে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লেগে যায়?‌ হ্যাঁ, সতর্কতা দরকার৷ বলছেন বিজ্ঞাপন জগতে একই ধরনের সৃজনশীল কাজের সঙ্গে যুক্ত মধুবন্তী রায়৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে স্পষ্টই জানালেন যে, বিজ্ঞাপনে বা পোস্টারে এমন ধরনের ভিশুয়াল সাধারণত চোখে পড়ে না যে, দুর্গার চালচিত্রের সামনে প্রতিমার বদলে একটি স্যানিটারি ন্যাপকিন, এবং তার ওপর রক্তের রঙে ফুটে ওঠা একটি পদ্ম৷ এমন ভিশুয়াল রীতিমতো ধাক্কা দেয়৷ এবং এর পেছনে শিল্পীর যে ভাবনাটা কাজ করছে, তিনি তার সঙ্গেও পুরোপুরি সহমত৷ এবং অত্যন্ত বাস্তবসম্মত কিছু যুক্তি দিলেন মধুবন্তী, যে আগে ঋতুমতী হলে মেয়েদের অশুদ্ধ মনে করা হতো, কারণ, সেসময় স্যানিটারি প্যাড জাতীয় কিছু ছিল না৷ কাজেই মন্দির, বা পুজোর ঘর নোংরা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকত৷ তাই ওই সময়টা মেয়েদের দূরে রাখা হতো৷ কিন্তু এখন ব্যাপারটা সেরকম নয় এবং মেয়েরা অনেক স্বাস্থ্যসম্মতভাবে পুরো ব্যাপারটা সামলায়৷ কাজেই এখন আর মেয়েদের দূরে রাখার কোনো মানে নেই৷ সে নিয়ে মধুবন্তী তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে অনেক তর্ক করেন, বিরোধিতা করেন প্রচলিত নিয়মের৷ কিন্তু বিজ্ঞাপন জগতের একজন পেশাদার এবং একজন সৃজনশীল মানুষ হিসেবে এটাও মাথায় রাখতে হবে যে, এমন কিছু না করে ফেলি, যার একটা খারাপ প্রতিক্রিয়া হয়, বললেন মধুবন্তী৷ যে, ‘‘‌এমন কিছু একটা করা হোক, যাতে, আমি যে কারণে জিনিসটা করতে চাইছি, সেটা যেন সফল হয়৷’’ সকলের কাছে যাতে গ্রহণযোগ্য হয়, সেটা মাথায় রেখেই বিজ্ঞাপনে কোনো কাজ করা হয়৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ