রোবটিক্স ও আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে কর্মরত বড় বড় সংস্থার প্রধানেরা জাতিসংঘের প্রতি লিখিত একটি খোলাচিঠিতে তথাকথিত ‘কিলার রোবটস'-দের বিপদ সম্পর্কে সাবধান করে দিয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
সোমবার একশ'র বেশি ‘টেক' নেতা তাদের খোলাচিঠিতে যুদ্ধের প্রণালী ও অস্ত্রসজ্জায় একটি ‘‘তৃতীয় বিপ্লবের'' ঝুঁকির কথা বলেছেন৷ তাদের এই সতর্কতা বিশেষ করে জাতিসংঘের ‘প্রথাগত সমরাস্ত্র বিষয়ক সম্মেলনের' প্রতি উদ্দিষ্ট৷ সোমবারেই ঐ সম্মেলনের একটি নতুন অধিবেশন শুরু হবার কথা ছিল৷
চিঠিতে টেক নেতারা বলেছেন যে, তাদের কোম্পানিসমূহ আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (স্বয়ং চিন্তা করতে ও সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম যে যন্ত্র) ওরোবটিক্স (রোবট নির্মাণ)প্রযুক্তি উৎপাদন করে থাকে, স্বশাসিত বা স্বচালিত সমরাস্ত্রের বিকাশের জন্য যে প্রযুক্তি বদলে নেওয়া সম্ভব৷ সেই কারণেই তারা এ ব্যাপারে সাবধান করে দেওয়াকে তাদের বিশেষ দায়িত্ব বলে মনে করেছেন, বলে টেক নেতারা তাদের চিঠিতে ব্যাখ্যা দিয়েছেন৷
চিঠির স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে সংশ্লিষ্ট টেক শিল্পের প্রায় সব মাথারাই আছেন, যেমন স্পেস-এক্স কোম্পানির সিইও ইলন মাস্ক বা গুগল কোম্পানির ডিপমাইন্ড-এর প্রতিষ্ঠাতা ও গুগল-এর এআই বিভাগের প্রধান মুস্তাফা সুলেইমান৷
যে জিনিসগুলো শুধু সায়েন্স ফিকশনে ছিল, অথচ এখন বাস্তব
দেখা যাচ্ছে বৈজ্ঞানিক কল্প-কাহিনিভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং লেখকরা আধুনিক প্রযুক্তির সত্যিকারের আবিষ্কারক৷ মাত্র কয়েক দশক আগে এসব চলচ্চিত্র বা বইয়ে যেসব জিনিসপত্রের কথা বলা হয়েছিল আজ তা নিত্যদিনের ব্যবহার্য বস্তু৷
ছবি: picture-alliance/United Archives
কথা বলা কম্পিউটার
১৯৬৮ সালের চলচ্চিত্র ‘২০০১-আ স্পেস ওডিসি’ তে নির্মাতা স্ট্যানলে কুবরিক দেখিয়েছিলেন মানুষ ও কম্পিউটার কীভাবে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে৷ কম্পিউটার হাল ৯০০০-কে (ছবিতে দেখা যাচ্ছে) যখন বন্ধ করার কথা ভাবছিলেন এর মালিক, ঠিক তখনই গুপ্তঘাতকে পরিণত হয় এটি৷ তবে আধুনিক কম্পিউটার সহযোগী সিরি বা কর্টানা এখনও পর্যন্ত মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করছে৷
ছবি: picture-alliance/United Archives
ডিজিটাল নোটপ্যাড
২০১০ সালে অ্যাপল যখন তাদের প্রথম আইপ্যাড বাজারে আনে, স্টারট্রেক ভক্তরা এতে মোটেও অবাক হননি, কেননা, ৩০ বছর আগে থেকেই স্টারট্রেকের সৌজন্যে তারা এ ধরনের যন্ত্রের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন৷ ক্যাপ্টেন পিকার্ড এবং তার ক্রুরা এ ধরনের প্যাড ব্যবহার করতেন একে অপরের সঙ্গে তথ্য বিনিময় ও রিপোর্ট লেখার জন্য৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/H. Pennink
তারহীন ফোন
স্টার ট্রেকের আরেকটি আবিষ্কার হলো কমিউনিকেটর, যার সাহায্যে ক্যাপ্টেন কার্কের ক্রুরা দূরের অন্য গ্রহ থেকে মহাকাশযানের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করত৷ আর বাস্তবে মোটোরোলা বিশ্বের প্রথম ফ্লিপ ফোনের নাম রেখেছিল ‘স্টারট্যাক’৷ এটাকে কাকতালীয় ছাড়া আর কি বলবেন!
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Hollemann
আপনার টেলিভিশনের গুপ্তচর
জর্জ অরওয়েলের বিখ্যাত উপন্যাস ‘১৯৮৪’ এ ‘বিগ ব্রাদার’ বা নেতা টেলিস্ক্রিনের সাহায্যে পুরো সমাজের বিভিন্ন ব্যক্তির ওপর নজর রাখতেন৷ এই টেলিস্ক্রিনগুলো হলো মূলত টেলিভিশন, যেগুলো বিভিন্ন ক্যামেরার সঙ্গে যুক্ত৷ সম্প্রতি উইকিলিকস জানিয়েছে, সিআইএ ক্যামেরা ও মাইক্রোফোন ব্যবহার করে এ ধরনের স্মার্ট টিভি নজরদারির উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
ভ্যাকুয়াম রোবট
মার্কিন টেলিভিশন অ্যানিমেশন সিরিজ ‘দ্য জেটসনস’ শুরু হয়েছিল ১৯৬২ সালে, যেখানে একশ বছরের পরের পৃথিবী কেমন হবে সেটা দেখানো হয়েছিল৷ সেখানে প্রথমবারের মতো স্বয়ংক্রিয় ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দেখানো হয়েছিল, যা ছিল একটি ছোট্ট রোবট৷ সে সবসময় মেঝে পরিষ্কার করায় তৎপর থাকতো৷ ৯০-এর দশকে পুরো বাড়ি পরিষ্কার করার মতো ভ্যাকুয়াম ক্লিনার বিশেষ কিছু দোকানে পাওয়া যেতে শুরু করে৷
ছবি: picture-alliance/United Archives/IFTN
চালকবিহীন গাড়ি
আশির দশকের জনপ্রিয় মার্কিন টিভি সিরিজ ‘নাইট রাইডার’-এ কে.আই.টি.টি. ছিল ঐ ধারাবাহিকটির আসল তারকা৷ স্মার্ট ঐ গাড়িটি মাইকেল নাইটকে অন্যান্য দুষ্ট লোকদের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করতো৷ এটি কেবল চালক ছাড়াই চলতে পারতো তা নয়, কথাও বলত৷ অনেক কোম্পানি বর্তমানে এমন স্বয়ংক্রিয় গাড়ি তৈরি করছে৷
ছবি: picture-alliance/United Archives/IFTN
6 ছবি1 | 6
স্বাক্ষরকারীরা তাদের সৃষ্ট এআই ও রোবটিক্স প্রযুক্তি থেকে যে ‘খুনি রোবট' যুদ্ধযাত্রার বিকাশ ঘটতে পারে, তার ‘‘স্থিতি হানিকর প্রভাব'' এড়ানোর জন্য নিরাপত্তা জনিত ব্যবস্থার ডাক দিয়েছেন৷ একবার স্বচালিত সমরাস্ত্রের পথে গেলে, সেখান থেকে আবার ফেরা কঠিন হতে পারে, বলে তাদের ধারণা৷ এছাড়া এক নতুন অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হতে পারে; এই প্রযুক্তির অপব্যবহারের ফলে বেসামরিক নাগরিকরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, তারও ব্যবস্থা করা দরকার, বলে টেক নেতাদের অভিমত৷
বিপদ সংকেত এই প্রথম নয়
টেক শিল্পের নেতৃবর্গ এর আগেও ‘লিথাল অটোনমাস উইপন সিস্টেমস' বা ‘প্রাণঘাতী স্বশাসিত অস্ত্র প্রণালী', এক কথায় ‘বুদ্ধিযুক্ত সমরাস্ত্র' সম্পর্কে সাবধান করে দিয়েছেন৷ ২০১৫ সালে এক হাজারের বেশি নেতৃস্থানীয় বিজ্ঞানী তথাকথিত ‘খুনি রোবটদের' বিপদ সম্পর্কে বিশ্বকে সাবধান করে দেন৷
বিশ্বখ্যাত পদার্থবিদ স্টিফেন হকিং এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিকে ‘‘চিরকালের সবচেয়ে বড় ভ্রম'' বলে অভিহিত করেছেন৷ ইলন মাস্ক আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে মানব অস্তিত্বের পক্ষে সবচেয়ে বড় হুমকি বলে বর্ণনা করেছেন৷
বুদ্ধিযুক্ত সমরাস্ত্র ‘‘সন্ত্রাসের অস্ত্র'' হয়ে উঠতে পারে, ‘‘স্বৈরাচারী শাসক ও সন্ত্রাসবাদীরা যে অস্ত্র নিরপরাধ জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারে'', বলে টেক নেতাদের চিঠিতে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে৷ আবার হ্যাকাররা এই সব বুদ্ধিযুক্ত সমরাস্ত্র হ্যাক করে সেগুলি দিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে পারে৷
প্রতিষেধমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বেশি সময় আর বাকি নেই, বলে টেক নেতাদের খোলাচিঠিতে মন্তব্য করা হয়েছে৷
চতুর্থ লিউয়িস স্যান্ডার্স/এসি
সেবিট মেলায় জাপানের চমক
‘উদীয়মান সূর্যের দেশ’ বলে পরিচিত জাপান হানোফার শহরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় তথ্য-প্রযুক্তি মেলা সেবিট-এ সহযোগী দেশ৷ ‘সোসাইটি ৫.০’ বিষয়কে কেন্দ্র করে প্রায় ১২০টি কোম্পানি জীবনযাত্রার উপর ডিজিটাল প্রভাবের কিছু নমুনা তুলে ধরেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Gentsch
রোবট ও কঙ্কাল
‘এক্সোস্কেলিটন’ বা কঙ্কালসার রোবট কারখানার কর্মীদের ভারি জিনিসপত্র বহন করতে সাহায্য করে৷ পক্ষাঘাতগ্রস্ত মানুষকে চলাফেরায়ও সহায়তা করতে পারে তারা৷ এর প্রস্তুতকারক নেডো নামের জাপানি কোম্পানির কর্মীরা মেলায় জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে-র জন্য অপেক্ষা করছেন৷
ছবি: DW/A. Becker
আগন্তুক, পরিচিত না বন্ধু?
এ বছরের সেবিট মেলায় অনেক রোবট তাদের কেরামতি দেখাচ্ছে৷ জাপানের ইঞ্জিনিয়াররা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সফটওয়্যার ব্যবহার করে রোবটদের আচরণ যতটা সম্ভব মানুষের মতো করে তোলার চেষ্টা করছেন৷ সেই রোবট মুখ দেখে মানুষ চিনতে পারে, ‘বন্ধু’-দের আলাদা করে খাতির-যত্ন করে৷ বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ জাপানে রোবটরা আরও বেশি করে বয়স্ক মানুষদের দেখাশোনা ও হোটেলে পরিষেবার কাজ করছে৷
ছবি: DW/A. Becker
রূপে-গুণে লক্ষ্মী
এই রোবট ‘চিয়ারলিডার’-রা শুধু দেখতেই মিষ্টি নয় – কাজেকর্মে তারা কম যায় না৷ নানা রকম সেন্সর ও মোটর ভরা এই যন্ত্রদের যা শেখানো হয়, তা নির্ভুলভাবে করে দেখায় তারা৷ শিল্পক্ষেত্রে রোবটের প্রয়োগের ক্ষেত্রে জাপান দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে৷ প্রতি ১০,০০০ কর্মীর অনুপাতে ২১১ টি করে রোবট সেখানে কাজ করে৷ শীর্ষ স্থানে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, তৃতীয় স্থানে জার্মানি৷
ছবি: DW/A. Becker
অ্যাপ-সর্বস্ব জীবনযাত্রা
জাপানে সন্তানসম্ভবা মায়েদের এক তৃতীয়াংশই ‘নিম্পু টেকু’ নামের একটি অ্যাপ ব্যবহার করেন৷ অন্তত তার নির্মাতা হাকুহোডো কোম্পানি এমনটাই দাবি করে৷ স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য, ডাক্তারদের কাছে প্রশ্ন, চেকআপ-এর সময় স্থির করা – এই সব কাজ একটি অ্যাপের মাধ্যমেই করা যায়৷ ১৯৪২ সাল থেকে জাপানে যে ‘মাদার্স পাসপোর্ট’ চালু আছে, এই অ্যাপ তারই উত্তরসূরি৷ সন্তান মানুষ করার কাজে সাহায্য করতেও আলাদা অ্যাপ রয়েছে৷
ছবি: DW/A. Becker
উড়ন্ত সঙ্গী বেশি দূরে নেই!
শক্তিশালী হাত ও মোটরের কল্যাণে ‘প্রোড্রোন’ নামের উড়ন্ত যন্ত্র বেশ ভারি জিনিসপত্র বহন করতে পারে৷ এমনকি আপনাকেও তুলে নিয়ে উড়ে যেতে পারে৷ এর আরেকটি সংস্করণের আবার চাকাও আছে৷ ফলে সেটি দেওয়াল বা সিলিং-এর উপর চলে বেড়াতে পারে, ফাটল শনাক্ত করতে পারে৷ মূল্য প্রায় ৫০,০০০ ইউরো৷ তবে ধীরে ধীরে এমন ড্রোনের দাম কমবে বলে আশা করা হচ্ছে৷
ছবি: DW/A. Becker
কাগজপত্র নিয়ে মাথাব্যথা
ব্যবসা বা অফিসের কাজে বাইরে গেলে খরচের দিকে নজর রাখতে হয়৷ সেই কাজে সাহায্য করতে এসে গেছে অ্যাপ৷ এক্ষেত্রে জাপানের অন্যতম প্রধান কোম্পানি এআইওয়ার্কস এমন এক অ্যাপ তৈরি করেছে, যা দিয়ে বিলের ছবি তুললেই চলবে৷ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সফটওয়্যার বাকি কাজ করে দেবে৷ কোম্পানির মতে, জাপানের অফিস কর্মীরা গড়ে প্রায় ৪০ শতাংশ সময় ডেটা এন্ট্রি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন৷ এবার সেটা বদলাতে চলেছে৷
ছবি: DW/A. Becker
নিজের বাস্তব পছন্দ নয়? অন্য একটি বেছে নিন!
অদূর ভবিষ্যতে কোটি কোটি মানুষ নিজেদের ব্যস্ততা ও সমস্যা ভরা জীবনযাত্রা থেকে রেহাই পেতে ‘ভার্চুয়াল রিয়ালিটি’ পরিবেশে ডুব দেবেন বলে পূর্বাভাষ শোনা যাচ্ছে৷ সেরেভো-র মতো কোম্পানি শরীরের বিভিন্ন অংশে পরার জন্য ভি-আর টুল তৈরি করছে৷ যেমন এই বিশেষ জুতো ব্যবহারকারীর পায়ের নীচে সিমেন্ট, ঘাস বা বরফের উপর চলার অনুভূতি সৃষ্টি করে৷ এর পরের ধাপে সারা শরীরের জন্য ভি-আর স্যুট তৈরির পরিকল্পনা চলছে৷
ছবি: DW/A. Becker
চারিদিকে সারাদিন কারাওকি!
‘লিরিক স্পিকার’ আসলে এক সাধারণ লাউডস্পিকার – শুধু একটি পর্দা ও বিশেষ সফটওয়্যারের সঙ্গে যুক্ত, যা কোনো গান চালালেই শনাক্ত করতে পারে৷ তারপর তালে তালে গানের কথা পর্দায় ফুটে ওঠে৷ অতএব আলাদা করে কারাওকি বার-এ যাবার দরকার নেই৷ যখন খুশি, যেখানে খুশি পছন্দের গান সঠিকভাবে গাইতে পারেন৷