এআই প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সমঝোতা
২৭ নভেম্বর ২০২৩
রোববার ১৮টি দেশ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির অপব্যবহার রুখতে কোম্পানিগুলির জন্য কিছু বিষয়ে সুপারিশ করেছে৷ বাধ্যতামূলক না হলেও এর ফলে ঝুঁকি কমানো সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
বিশ্বজুড়ে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির প্রয়োগ যেভাবে বেড়ে চলেছে, মানবজাতির ভবিষ্যতের উপর তার গভীর প্রভাব নিয়ে তেমন কোনো সংশয় নেই৷ কিছু বিশেষজ্ঞ এই প্রযুক্তিকে মানুষের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হিসেবেও সতর্ক করে দিচ্ছেন৷ নতুন এই প্রবণতা চিকিৎসা থেকে শুরু করে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতির সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলছে৷ বিভিন্ন দেশ এআই প্রযুক্তির উন্নতির উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে চাইছে৷ একইসঙ্গে এমন বিধিনিয়ম ও আইনকানুনের সন্ধান চলছে, যা উন্নতির পথে অন্তরায় না হয়েও বিপদের আশঙ্কা দূর করতে পারে৷
বিশ্বায়নের এই যুগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংক্রান্ত বিধিনিয়ম যে শুধু জাতীয় স্তরে আবদ্ধ রাখার তেমন কোনো অর্থ নেই, সে বিষয়ে সংশয় নেই৷ তাই আন্তর্জাতিক স্তরে ঐকমত্য অর্জনের চেষ্টা চলছে৷ সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবে রোববার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ব্রিটেনসহ মোট ১৮টি দেশ এক আন্তর্জাতিক সমঝোতা চূড়ান্ত করেছে৷ এর আওতায় কোম্পানিগুলিকে এআই প্রযুক্তির অপব্যবহার রুখতে শুরু থেকেই ‘সিকিউর বাই ডিজাইন’ বা সৃষ্টির স্তরেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হচ্ছে৷
২০ পাতার এই সমঝোতা অবশ্য বাধ্যতামূলক নয়৷ তাতে বেশ কিছু সাধারণ সুপারিশ করা হয়েছে৷ এআই প্রণালীর অপব্যবহার রুখতে নজরজারি, তথ্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে সুরক্ষা, সফ্টওয়্যার সরবরাহকারীদের সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়ার মতো পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷
এই সমঝোতা বাধ্যতামূলক না হলেও এত দেশ মিলে যে তাতে সম্মতি দিয়েছে, সেই বার্তা প্রযুক্তি কোম্পানিগুলির জন্য বাড়তি গুরুত্ব পাবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ মার্কিন সাইবার নিরাপত্তা ও অবকাঠামো নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের প্রধান জেন ইস্টারলি সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, এই প্রথম এত বড় আকারে ঐকমত্য সম্ভব হয়েছে৷ ফলে এআই প্রযুক্তিতে শুধু নতুন গুণাগুণ যোগ করা এবং যত দ্রুত সম্ভব সে সব সস্তায় বাজারে এনে প্রতিযোগিতায় টেক্কা দেওয়া ছাড়াও এই নির্দেশিকায় নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে৷ উপযুক্ত পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে তবেই এমন প্রযুক্তি বাজারে আনার সুপারিশ করা হয়েছে৷
বিশেষজ্ঞরা এআই প্রযুক্তির নানা রকম অপব্যবহারের আশঙ্কা তুলে ধরছেন৷ তাঁদের মতে, হ্যাকারদের হাতে এমন প্রযুক্তি ব্যাপক গোলোযোগ সৃষ্টি করতে পারে৷ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়ও গুরুতর বিঘ্ন ঘটানো সম্ভব৷ প্রতারণা, নাটকীয় মাত্রায় কর্মী ছাঁটাই ইত্যাদি অন্যান্য ঝুঁকিও রয়েছে৷
এআই প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ইউরোপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় কিছুটা এগিয়ে রয়েছে৷ মার্কিন কংগ্রেসে রাজনৈতিক বিবাদের কারণে অগ্রগতি হচ্ছে না৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন আইনের খসড়া প্রস্তুত করছে৷ সম্প্রতি জার্মানি, ফ্রান্স ও ইটালি এ সংক্রান্ত এক সমঝোতায় পৌঁছেছে৷ তবে এই তিন দেশও বাধ্যতামূলক আইনের বদলে আপাতত কোম্পানিগুলির উদ্দেশ্যে আত্মনিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানিয়েছে৷
এসবি/এসিবি (রয়টার্স, ডিপিএ)
ইন্টারনেটে ভুয়া তথ্য ছড়াচ্ছে এআই-ডাক্তার
এআই দিয়ে বানানো যান্ত্রিক ডাক্তার ইন্টারনেটে ভুল তথ্য ছড়িয়ে লাখ লাখ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে৷ এর সত্যতা কতটুকু, জানুন ছবিঘরে...
ছবি: Nikos Pekiaridis/NurPhoto/picture alliance
ফ্যাক্টচেক: নকল, এআই ডাক্তার
সোশাল মিডিয়ায় ছড়াচ্ছে এমন ভিডিও যেখানে দেখানো ডাক্তার আসল নয়, এআই দিয়ে তৈরি সেটা! গলায় স্টেথোস্কোপ ঝোলানো এই ডাক্তারদের দেখতে আসল মনে হলেও অনেক ক্ষেত্রেই তাদের দেওয়া উপদেশ বিজ্ঞানসম্মত নয় এবং অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতিকারক৷ ডয়চে ভেলে এবিষয়টির সত্যতা যাচাই করেছে৷
চিয়া সিড খেলে কমবে ডায়াবেটিস?
ফেসবুকে জনপ্রিয় একটি ভিডিওতে এমন কথাই বলছে এক এআই-সৃষ্ট নকল ডাক্তার৷ বলছে, চিয়া সিড খেলে ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে আসবে, যা পুরোপুরি মিথ্যা৷ গবেষণা বলছে, চিয়া সিডের সুপ্রভাব রয়েছে, বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীর রক্তচাপ কমানোর ক্ষেত্রে৷ কিন্তু ডায়বেটিস বা রক্তে চিনির মাত্রার ওঠানামা পুরোপুরি সেরে যাবে, এমনটা নয় মোটেই৷
ছবি: Olga Sergeeva/Zoonar/picture alliance
ভারতে জনপ্রিয় নকল ডাক্তারের ভিডিও
এই ধরনের বেশ কয়েকটি ভিডিও তৈরি হয় হিন্দি ভাষায়, ভারতের জনতার উদ্দেশ্যে৷ ২০২১ সালের একটি গবেষণা জানায় যে করোনাকালীন সময় থেকেই ভারত ভুয়া খবর ও বিভ্রান্তিকর তথ্যের মুক্তাঙ্গন হয়ে উঠছে৷ অ্যামেরিকা, ব্রাজিল বা স্পেনের তুলনায় অনেক দ্রুত ভারতে ছড়াচ্ছে এমন ‘ফেক নিউজ’৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Büttner
কেন সহজেই বিশ্বাসযোগ্য হন নকল ডাক্তাররা
ড্রেসডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্টিফেন গিলবার্টের মতে, ইন্টারনেটে ডাক্তার তখনই বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠে যখন তারা আর পাঁচটা ডাক্তারের মতোই প্রেসক্রিপশন দেন, রোগ নির্ণয় করেন এবং ইন্টারনেটে এসব দেখে মানুষ ভেবে বসেন যে এরা হয়তো আসলেই ডাক্তার৷
ছবি: Taidgh Barron/ZUMAPRESS.com/picture alliance
মস্তিষ্কের রোগের চিকিৎসাও ইন্টারনেটে?
আরেকটি ভাইরাল ভিডিওতে বলা হয় যে কাঠবাদাম, চিনির মণ্ড, মৌরি গরম দুধে দিয়ে খেলে নাকি ব্রেনের সব রোগ সেরে যায়! ডয়চে ভেলেকে জার্মান ব্রেন ফাউন্ডেশনের বিজ্ঞানী ফ্রাংক এরবগুথ জানান যে এটি পুরোপুরি মিথ্যা৷ এমন কোনো তথ্য কোনো গবেষণাতে পাওয়া যায়নি৷ এই ভিডিওতেও ছিল সাদা কোট গায়ে এক নকল এআই-ডাক্তার৷
ছবি: ersin arslan/Zoonar/picture alliance
কীভাবে চিনবেন নকল ডাক্তার?
গিলবার্টের মতে, গায়ে সাদা কোট থাকলেই কোনো ব্যক্তিকে ডাক্তার বলে ভাববেন না৷ বরং নজর দিন তার মুখের বা হাতের নড়াচড়ার দিকে, জানাচ্ছেন তিনি এআই-ডাক্তারের ছবিতে ঠোঁট ছাড়া মুখের আর কোনো পেশি নড়তে দেখা যায়না৷ ভিডিওতে দেখানো এক্সরে বা সিটিস্ক্যানের ছবিকেও নির্ভরযোগ্য সূত্র ছাড়া বিশ্বাস করতে মানা করেন তিনি৷
ভরসা করবেন না চ্যাটবটকেও
কিছু চিকিৎসাবিষয়ক ওয়েবসাইটে চ্যাটবট থাকে৷ চ্যাটবট এমন প্রযুক্তি যা কয়েক মিনিটেই আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে৷ কিন্তু চিকিৎসাবিষয়ক প্রশ্নের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে৷ বিশেষ করে চ্যাটবটের বলা সমাধানকে চোখ বুজে বিশ্বাস করার আগে কোনো চিকিৎসকের থেকে তা যাচাই করে নেওয়া উচিত৷ ভবিষ্যতে চিকিৎসকেরা নিজেরাই যদি চ্যাটবট তৈরি করেন, তা হয়তো চিকিৎসাকে আরো মানুষের কাছে নিয়ে যেতে পারবে৷