ভারতে চালু ১২১টি ভাষার মানুষের কাছে অনুবাদের মাধ্যমে পৌঁছে যাবে যে কোনো তথ্য৷ ইংরেজির উপর নির্ভরশীলতা কমবে৷
এআই, চ্যাটজিপিটি-র সাহায্যে এই ডেটাবেস তৈরি করা হচ্ছে। ছবি: Jonathan Raa/NurPhoto/picture alliance
বিজ্ঞাপন
দক্ষিণ ভারতের রাজ্য কর্ণাটকের একটি গ্রামের মানুষ কয়েক সপ্তাহ ধরে একটার পর একটা বাক্য কন্নড় ভাষায় বলে যাচ্ছিলেন৷ আর তা একটি অ্যাপে তুলে নেয়া হচ্ছিল৷ এই অ্যাপটি হলো টিবি-র জন্য দেশের প্রথম কৃত্রিম মেধা বা এআই-ভিত্তিক চ্যাটবট৷
ভারতে চার কোটি মানুষ কন্নড় বলেন৷ দেশের ২২টি স্বীকৃত সরকারি ভাষার মধ্যে কন্নড় একটি৷ ভারতে এমন ১২১টি ভাষা আছে, যা ১০ হাজার বা তার বেশি মানুষ ব্যবহার করেন৷ কিন্তু খুব কম ভাষাই ন্যাচরাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং (এনএলপি)-তে আছে৷
এনএলপি হলো এআই-এর একটি শাখা, যার মাধ্যমে কম্পিউটার কথ্য ও লিখিত ভাষা বুঝতে পারে৷ তাই এনএলপি-তে তথ্য না থাকলে সেই ভাষাকে কম্পিউটার বা নেটবাহিত বিভিন্ন মাধ্যম মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারে না৷ ফলে কোটি কোটি ভারতীয় নিজের ভাষায় প্রয়োজনীয় তথ্য জানা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং আর্থিক সুবিধাও পাচ্ছেন না৷
এবার এই খামতিটুকু দূর করতে উদ্যোগী হয়েছে, মাইক্রোসফট, গুগলের মতো সংস্থাগুলি৷ তারা ১২১টি ভারতীয় ভাষায় লিখিত ও কথ্য ডেটা সংগ্রহ করছে, যার মাধ্যমে নিজের ভাষায় সব তথ্য ভারতীয়দের কাছে পৌঁছে যায়৷
কৃত্রিম বু্দ্ধিমত্তা: আদি থেকে বর্তমান
বর্তমানে প্রযুক্তি জগতের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় চ্যাটজিপিটি৷ আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বু্দ্ধিমত্তা দিয়ে এটি তৈরি৷ এআই প্রযুক্তির শুরু থেকে এই পর্যায়ে আসার পেছনে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ঘটনার কথা থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: Torsten Sukrow/SULUPRESS.DE/picture alliance
দৈনন্দিন জীবনে এআই
স্মার্টফোন খুলতে ফেস আইডির ব্যবহার, ফেসবুকে পছন্দের বিজ্ঞাপন প্রদর্শন, জীবনযাপনে সিরি-আলেক্সার ব্যবহার - এসবের পেছনে আছে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ৷ কিন্তু একদিনে এই প্রযুক্তি এত দূর আসেনি৷
ছবি: Reuters/T. Peter
এএনএন কম্পিউটিং সিস্টেম
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন যন্ত্রকে কিছু ‘শেখানোর’ মাধ্যম হচ্ছে ‘আর্টিফিসিয়াল নিউরাল নেটওয়ার্কস’ বা এএনএন কম্পিউটিং সিস্টেম৷ ১৯৪৩ সালে মার্কিন নিউরোফিজিওলজিস্ট ও সাইবারনেটিশিয়ান ওয়ারেন ম্যাককালেক এবং কম্পিউটেশনাল নিউরোসায়েন্টিস্ট ওয়াল্টার পিটসের গবেষণাপত্রে প্রথম এএনএন ধারণার উল্লেখ পাওয়া যায়৷
ছবি: Axel Bueckert/Zoonar/picture-alliance
প্রথম স্বয়ংক্রিয় রোবট
মার্কিন বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নিউরোফিজিওলজিল্ট ও সাইবারনেটিসিয়ান উইলিয়াম গ্রে ওয়াল্টার ১৯৮৪ সালে এলমার ও এলসি নামে দুটি রোবট তৈরি করেছিলেন৷ স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করতে পারা প্রথম রোবট এগুলো৷ আলো ও স্পর্শ ব্যবহার করে তারা বাধা পেরিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে পারতো৷
ছবি: United Archives/IMAGO
পড়াশোনার বিষয় হিসেবে স্বীকৃতি
মার্কিন কম্পিউটার বিজ্ঞানী জন ম্যাকার্থি (ছবি) ১৯৫৫ সালে প্রথম ‘আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ টার্মটি ব্যবহার করেন৷ এরপর ১৯৫৬ সালে তিনি ডার্টমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন যেখানে পড়াশোনার বিষয় হিসেবে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স স্বীকৃতি পায়৷
ছবি: AP/picture alliance
প্রথম চ্যাটবট
সিরি, আলেক্সার কথা আমরা সবাই জানি৷ তবে ১৯৬৬ সালে ‘এলিজা’ নামে একটি প্রোগ্রাম তৈরি করা হয়েছিল, যাকে প্রথম এআই চ্যাটবট বলা হয়৷ এলিজা মানুষের কথা বুঝতে পারত, কথাও বলতে পারত৷ যদিও তার নির্মাতা জার্মান-অ্যামেরিকান কম্পিউটার বিজ্ঞানী ইওসেফ ভাইৎসেনবাউম (ছবি) প্রায়ই বলতেন, এলিজা বুদ্ধিমান নয়৷
স্ট্যানফোর্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট বা এসআরআই-এর ‘আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স সেন্টার’ ১৯৬৬ থেকে ১৯৭২ সালের মধ্যে ‘শেকি’ নামে একটি রোবট তৈরি করেছিল, যেটি নিজে থেকে সিদ্ধান্ত নিতে পারতো৷ শেকির আগে তৈরি সব রোবটকে প্রতিটি ধাপে নির্দেশ দিতে হত৷ কিন্তু শেকির তা প্রয়োজন ছিল না৷ এসআরআই-এর ওয়েবসাইট বলছে শেকি ছিল প্রথম মোবাইল রোবট যার পারিপার্শ্বিক অবস্থা বোঝার ক্ষমতা ছিল৷
ছবি: SRI International
দাবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নকে হারানো
এআই গবেষণার একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে খেলা৷ একটি এআই চেস প্রোগ্রাম ১৯৮০র দশকে চেস মাস্টার ডেভিড লেভিকে খেলায় হারিয়ে দিয়েছিল৷ আর ১৯৯৬ সালে আইবিএম এর ‘ডিপ ব্লু’ কম্পিউটার তখনকার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দাবাড়ু গ্যারি কাসপারভকে হারিয়ে বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল৷
ছবি: Stan Honda/AFP/Getty Images
প্রথম রোবটিক খেলনা
একটি মার্কিন কোম্পানি ১৯৯৮ সালে রোবোটিক খেলনা ‘ফার্বি’ বাজারে এনেছিল৷ প্রথমে এটি ‘ফার্বিশ’ বলতো৷ কিন্তু তাকে এমনভাবে প্রোগ্রাম করা ছিল যে, তাকে ইংরেজি ভাষা ও শব্দ শেখানো শুরু করলে সে একসময় তা বলতে পারতো৷ ফার্বির মাধ্যমেই সাধারণ মানুষ প্রথম বুঝতে পারে যে, চাইলে যন্ত্রকে কিছু শেখানো যায়৷
ছবি: PA Fearn/dpa/picture alliance
জিওপার্ডি! কুইজ শো জয়
২০১০ ও ২০১১ সালে আইবিএম-এর ওয়াটসন কম্পিউটার সিস্টেম মার্কিন টেলিভিশন কুইজ শো ‘জিওপার্ডি!’তে অংশ নিয়ে দুজন চ্যাম্পিয়নকে হারাতে সক্ষম হয়৷
ছবি: IBM/dpa/picture alliance
ভার্চুয়াল অ্যাসিস্টেন্ট সিরির আগমন
২০১১ সালে অ্যাপল ভার্চুয়াল অ্যাসিস্টেন্ট ‘সিরি’ নিয়ে আসে৷ এটি মানুষের কথা বুঝতে পেরে সেই অনুযায়ী কাজ করতে পারে৷ এআই জগতে সেই সময় এটি একটি অন্যতম সাফল্যের ঘটনা ছিল৷ সিরির পর এসেছে আলেক্সা, গুগল- যা এখন প্রায় সবাই ব্যবহার করে থাকে৷
ছবি: Jakub Porzycki/NurPhoto/picture alliance
গার্ডিয়ানের প্রবন্ধ লিখেছিল রোবট
২০২০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ব্রিটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকায় একটি প্রবন্ধ লিখেছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবট জিপিটি-৩৷ এটি মার্কিন এআই গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই-এর ল্যাঙ্গুয়েজ-জেনারেটর৷ প্রবন্ধটি পড়তে এই লিংকে (shorturl.at/cjnzT) ক্লিক করুন৷
ছবি: Getty Images
রোবোকাপ
রোবোটিকস ও এআই গবেষণা এগিয়ে নিতে ১৯৯৬ সালে কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক রোবোকাপ টুর্নামেন্ট শুরু করেছিলেন৷ এটি প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে৷ ‘রোবট সকার ওয়ার্ল্ড কাপের’ সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে রোবোকাপ৷
ছবি: JACK TAYLOR/AFP/Getty Images
বিশ্বকাপের বলে এআই প্রযুক্তি
কাতার বিশ্বকাপে অফসাইড ধরতে এআই প্রযুক্তির সহায়তা নিয়েছিল ফিফা৷ এর সাহায্যে বলের মধ্যে থাকা সেন্সর ও ছাদে থাকা ১২টি ক্যামেরার মাধ্যমে ফুটবলার ও বলের অবস্থান আরও ভালোভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব হয়েছিল৷
ছবি: DW
চ্যাটজিপিটি
মার্কিন ওপেনএআই কোম্পানির তৈরি চ্যাটজিপিটি একটি শক্তিশালী মেশিন লার্নিং মডেল৷ এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো মানুষের মতো লেখা বা টেক্সট তৈরি করার ক্ষমতা৷ এর মানে হলো, কোনো একটি বিষয়ে একজন মানুষ যেমন প্রত্যুত্তর দিতে পারে, চ্যাটজিপিটিও সেরকমই জবাব লিখে জানাতে পারে৷ এটি চ্যাটবটের মতো অ্যাপগুলোর জন্য বিশেষভাবে উপযোগী৷
ছবি: Jakub Porzycki/NurPhoto/picture alliance
14 ছবি1 | 14
মাইক্রোসফট রিসার্চ ইন্ডিয়ার প্রধান গবেষক কালিকা বালি বলেছেন, ‘‘কৃত্রিম মেধাভিত্তিক টুলগুলিকে যদি সকলের কাছে পৌঁছাতে হয়, তাহলে ইংরেজি, ফরাসি, স্প্যানিশ ভাষার বাইরের মানুষদের কাছে যেতে হবে৷'' কালিকা জানিয়েছেন, ‘‘ভারতীয় ভাষাগুলির যদি বিশাল ডেটাবেস তৈরি করতে হয়, তাহলে ১০ বছর সময় লেগে যাবে৷ তাই আমরা পর্যায়ক্রমে কাজটা করতে পারি৷ চ্যাটজিপিটি ও লামার মতো এআই মডেলের সাহায্যে তা করা সম্ভব৷''
মাইক্রোসফট বা গুগলের জন্য ডেটা বা তথ্য সংগ্রহ করছে টেক ফার্ম কারিয়া৷ কর্ণাটকের ওই গ্রামের মানুষের মতো বিভিন্ন জায়গায় মানুষরা তাদের ভাষায় সমানে কথা বলছেন৷ তা রেকর্ড করা হচ্ছে৷ পরে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অন্য পরিষেবার ক্ষেত্রে এই তথ্য ব্যবহার করবে কৃত্রিম মেধা ভিত্তিক টুলগুলি৷
ভারত সরকারও চাইছে, ডিজিটালি আরো বেশি পরিষেবা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে৷ তারাও একটা ভাষার তথ্যভাণ্ডার গড়ে তুলতে চাইছে৷ এআইয়ের মাধ্যমে ভাষা অনুবাদ ব্যবস্থা ভাষিনী টুলের মাধ্যমে তারা করতে চাইছে৷ এর ফলে এআই টুল তৈরির জন্য স্থানীয় ভাষায় ওপেন ডেটা সোর্স তৈরি থাকছে৷
এই প্ল্যাটফর্মে অংশ নেয়ার জন্য মানুষকে এগিয়ে আসতে বলা হচ্ছে৷ তারা নিজের ভাষায় বাক্য বলছেন৷ টেক্সট অনুবাদ করছেন৷ ভাষিনীতে কয়েক লাখ ভারতীয় অংশ নিয়েছেন৷
মুম্বইয়ের কম্পিউটেশন ফর ইন্ডিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজ টেকনলজি ল্যাবের প্রধান পুষ্পক ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘সরকার বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় ডেটা সেট তৈরির কাজে খুবই গুরুত্ব দিচ্ছে৷ শিক্ষা, পর্যটন ও আদালতে এই অনুবাদ টুলগুলির ব্যবহার শুরু হয়ে গেছে৷''
তিনি জানিয়েছেন, ‘‘এর মধ্যে চ্যালেঞ্জও আছে৷ অনেক ভারতীয় ভাষায় কথা বলার একটা ঐতিহ্য আছে, কিন্তু ইলেকট্রনিক রেকর্ড বেশি নেই৷ তাছাড়া প্রচুর কোড মিক্সিং আছে৷ তাছাড়া যে সব ভাষা খুব প্রচলিত নয় বা খুব বেশি মানুষ কথা বলেন না, তার তথ্য সংগ্রহ করার জন্য বিশেষ তাগিদ দরকার৷''
এআই প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় বিভিন্ন দেশ
চ্যাটজিপিটিসহ জেনারেটিভ এআই বা সৃজনভিত্তিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অনলাইন টুলগুলো রীতিমত পুরো বিশ্বকে উলটে পালটে দিচ্ছে৷ এ অবস্থায় দেশে দেশে চলছে একে নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণের নানা কৌশল আবিষ্কারের চেষ্টা৷
ছবি: Lionel Bonaventure/AFP
অস্ট্রেলিয়া
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার টুলগুলো নিয়ন্ত্রণে অস্ট্রেলিয়ার সরকার সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ চেয়েছে৷ তারা তাদের প্রধান সায়েন্স অ্যাডভাইজরি বডির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলাপ চালিয়ে যাচ্ছে৷ একইভাবে আয়ারল্যান্ডও তাদের দেশীয় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ চেয়েছে৷
ছবি: Manuel Ruiz/Addictive Stock/IMAGO
ব্রিটেন
ব্রিটেনের বাজার প্রতিযোগিতার নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানিয়েছে, তারা শিগগিরই গ্রাহক, ব্যবসা ও অর্থনীতির ওপর এআইয়ের প্রভাব খতিয়ে দেখবে, এবং সিদ্ধান্ত নেবে কোনো নতুন আইনের প্রয়োজন আছে কি না৷
ছবি: Stefani Reynold/AFP/Getty Images
চীন
এপ্রিল মাসে চীনের সাইবারস্পেস নিয়ন্ত্রক জেনারেটিভ এআই নিয়ে তাদের খসড়া ব্যবস্থাপনা উদ্যোগগুলো তুলে ধরেছে৷ তারা বিভিন্ন কোম্পানিকে তাদের এআই সেবা জনগণের জন্য উন্মুক্ত করার আগে এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন, তা কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরতে নির্দেশ দিয়েছে৷
ছবি: Lintao Zhang/Getty Images
ইউরোপীয় ইউনিয়ন
ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সম্প্রতি ব্লকের প্রথম আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্স অ্যাক্টের খসড়া তৈরি করেছে৷ এই আইনের মূলে রয়েছে, কপিরাইট নিয়ন্ত্রণ৷ ইউরোপীয়ান ড্যাটা প্রটেকশন বোর্ড এপ্রিলে চ্যাটজিপিটির জন্য একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করেছে৷ ইটালি মার্চে চ্যাটজিপিটি নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল৷ কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে৷ স্পেনও চ্যাটজিপিটি সীমা লঙ্ঘন করেছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে৷
ছবি: Patrick Seeger/AP Images/picture alliance
জি সেভেন
জাপানে সম্প্রতি গ্রুপ অফ সেভেন বা জি সেভেন দেশগুলোর বৈঠকে দেশগুলোর প্রযুক্তি মন্ত্রীরা একমত হয়েছেন যে, এআইয়ের ঝুঁকি সংক্রান্ত সাধারণ আইন তৈরি করা উচিত৷
ছবি: Torsten Sukrow/SULUPRESS.DE/picture alliance
যু্ক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কমিশন বলছে, তারা বিদ্যমান আইনেই নিয়ন্ত্রণ জোরদার করবে৷ ২৭ এপ্রিল সেনেটর মাইকেল বেনেট এআই নিয়ন্ত্রণে টাস্ক ফোর্স গঠনে নতুন বিল উত্থাপন করেছেন৷ বাইডেন প্রশাসন এ ব্যাপারে জনমত যাচাই করছে৷
ছবি: MidJourney
6 ছবি1 | 6
এনএলপি-তে কয়টা ভাষা?
গোটা বিশ্বে সাত হাজারের বেশি ভাষা প্রচলিত আছে৷ তার মধ্যে এনএলপি-তে আছে একশটিরও কম ভাষা৷ এখানে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে ইংরেজি ভাষা৷
চ্যাটজিপিটি ও গুগল বার্ডে শুধু ইংরেজি ব্যবহার হয়৷ অ্যামাজন অ্যালেক্সা নয়টি ভাষা ব্যবহার করে৷ তার মধ্যে ইউরোপের বাইরে তিনটি ভাষাই আছে, আরবি, হিন্দি ও জাপানি৷
সরকার ও স্টার্ট আপ কোম্পানিগুলি অন্য ভাষাগুলি যাতে এখানে আসে, তার জন্য কাজ করছে৷
কালিকা বালি মনে করেন, ‘‘ভারতে ক্রাউডসোর্সিং একটা উপযুক্ত ও ভালো পদ্ধতি৷'' কালিকার নাম টাইম ম্যাগাজিনে এআই-র ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রভাবশালী একশ জনের তালিকায় আছে৷ তিনি জানিয়েছেন, ‘‘ভারতীয় ভাষার তথ্য সংগ্রহের সময় তার ভাষাগত, সাংস্কৃতিক, আর্থ-সামাজিক বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে৷''
অলাভজনক সংস্থা কারিয়া গরিবি রেখার নিচে থাকা মানুষদের দিয়ে কাজটা করায়৷ এক ঘণ্টার তথ্যের জন্য তাদের পাঁচ ডলার দেয়া হয়৷ এই সব তথ্যের একটা অংশের মালিকানা ওই মানুষদের কাছে থাকে, যাতে তারা ভবিষ্যতে রয়্যালটি পেতে পারে৷
বালি জানিয়েছেন, ‘‘আগে ওড়িয়া ভাষার ডেটা তিন থেকে চার ডলারে কেনা যেত৷ এখন তা কিনতে ৪০ ডলার লাগে৷''
গ্রামের কণ্ঠ
ভারতে ১১ শতংশের মতো মানুষ ইংরাজি ভাষায় কথা বলতে পারেন৷ একটা বড় অংশই ইংরেজি লিখতে বা পড়তে পারেন না৷ তাই বেশ কিছু এআই মডেল স্পিচ ও স্পিচ রেকগনিশনের উপর জোর দিয়েছে৷
এআই ফর গুড: পৃথিবীর মঙ্গল করবে যে যন্ত্র
আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন বলছে, বিভিন্ন দেশ এআইকে ইতিবাচক কাজে লাগানোর কৌশল নিয়ে কাজ করছে৷ এআই নিয়ে নতুন প্রযুক্তির দিশা দেখাতে দুই দিনের শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করেছিল সুইজারল্যান্ড৷ বিস্তারিত দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: GONZALO FUENTES/REUTERS
গ্লোবাল সামিট
টেকসই উন্নয়নে জোর দিতে জাতিসংঘ-চালিত ইভেন্টটি ১৭টি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) নিয়েছে৷ গ্লোবাল সামিটের অতিথি তালিকায় ৫১টি উদ্ভাবনী রোবট ছিল যার মধ্যে নয়টি হিউম্যানয়েড রোবট, যা এসডিজির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কাজে সাহায্য করে৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে নাদিনেকে৷ একাকিত্ব দূর করতে সাহায্য করে এই রোবট৷ জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি এই রোবটকে দেখলে বাস্তবের নারী বলে ভুল হতে পারে৷ এটি এতটাই নিখুঁত৷
ছবি: PIERRE ALBOUY/REUTERS
রাঁধুনি হিসাবেও
রোবোক্লেট নামের এই রোবট রান্না করতে পারে৷ শুধু তাই নয়, ইউএন টেলিকমিউনিকেশন এজেন্সি বলছে, সম্মেলনে আসা একাধিক রোবট মানুষের স্বাস্থ্যসেবা, উচ্চমানের শিক্ষাগত পরিষেবা দিতে পারে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সাহায্যের মাধ্যমে বৈষম্য কমাতে পারে, বর্জ্য কমাতে পারে, স্থিতিস্থাপক অবকাঠামো তৈরি করতে পারে৷
ছবি: PIERRE ALBOUY/REUTERS
রোবট, নাকি হাত
টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের মাসাহিকো ইনামি গবেষণাগারে ‘জিজাই আর্মস’ নামের একটি রোবটের কাজ বোঝাচ্ছেন৷ এটি একটি হাতের মতো৷ এটা গ্লাভসের মতো পরা যায়৷ সম্মেলনে এটিকেও দেখা গিয়েছে৷
ছবি: KIM KYUNG-HOON/REUTERS
ইতিবাচক কাজে
শীর্ষ সম্মেলনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ইতিবাচকতার উপর জোর দেয়া হয়েছে৷ এই জন্য একে বলা হচ্ছে, এআই ফর গুড৷
ছবি: PIERRE ALBOUY/REUTERS
কুকুরের মতো
এই রোবটকে দেখতে অনেকটা কুকুরের মতো৷ ইউনিট্রির তৈরি ছোট রোবটটি পোষ্য হিসাবে জনপ্রিয়তা পেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে৷ অর্থাৎ এই রোবটটি মানসিক চাপ কমাতে পারবে৷
ছবি: PIERRE ALBOUY/REUTERS
অভিনেতা রোবট
পুরুষ রোবট জেমিনয়েডের চেহারা, উচ্চারণ এবং আচরণ তার স্রষ্টা জাপানের ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিরোশি ইশিগুরোর আদলে তৈরি৷ ইশিগুরো সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন না, তবে তার জায়গায় বক্তব্য রাখার কথা জেমিনয়েডের৷ এর আগে একটি সিনেমাতে অভিনয়ও করেছে সে৷
ছবি: PIERRE ALBOUY/REUTERS
রক সংগীতশিল্পী হিউম্যানয়েডও ছিল সম্মেলনে
ইউএন সামিটে ছিলো ‘রক স্টার’ হিউম্যানয়েড ডেসডিমোনা৷ রক ব্যান্ড জ্যাম গ্যালাক্সির সঙ্গে তার গান শুনলে বোঝার উপায় নেই যে ইনি মানবী নন, রোবট৷
ছবি: PIERRE ALBOUY/REUTERS
মানুষের কল্যাণে
কিছু রোবট বৃহত্তর সামাজিক এবং পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে৷ ক্রমবর্ধমান জলবায়ু ঝুঁকি এবং অন্যান্য বিপর্যয়ের মোকাবেলা করতে পারবে রোবটগুলো৷
ছবি: PIERRE ALBOUY/REUTERS
8 ছবি1 | 8
গুগলের প্রজেক্ট ‘বাণী' বা ‘ভয়েস' ১০ লাখ ভারতীয়র স্পিচ ডেটা সংগ্রহ করেছে৷ তারা সেটা ওপেন সোর্সিং করেছে, যাতে স্পিচ রেকগনিশনে কাজে লাগে ও স্পিচ টু স্পিচ অনুবাদ করা যেতে পারে৷
বেঙ্গালুরুর একস্টেপ ফাউন্ডেশনের অনুবাদ টুল ভারত ও বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টে ব্যবহার করা হচ্ছে৷ এআইফরভারত ‘যুগলবন্দি' বলে একটা টুল চালু করেছে৷ তারা এবং এআই ভিত্তিক চ্যাটবট সরকারের জনকল্যাণ প্রকল্প নিয়ে বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় প্রশ্নের জবাব দিতে পারে৷
‘গ্রাম বাণী' নামে সামাজিক প্রকল্প কৃষকদের কাছে তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিচ্ছে ও কল্যাণ প্রকল্প সম্পর্কে জানাচ্ছে৷ তারা এআই ভিত্তিক চ্যাটবট ব্যবহার করেই এটা করছে৷ অটোমেটিক স্পিচ রেকগনিশন প্রযুক্তি ব্যবহার করার ফলে তৃণমূল স্তরের মানুষকে তাদের ভাষায় সব তথ্য দেয়া সম্ভব হচ্ছে৷
সময় বদলে যাবে
এই যে এআইয়ের সাহায্যে বিভিন্ন ভারতীয় ভাষার ডেটাবেস তৈরি হচ্ছে, তারপর কথ্য বা লিখিতভাবে তার ব্যবহার করা হবে, অন্য ভাষা থেকে অনুবাদ পৌঁছে যাবে সাধারণ মানুষের কাছে, তাতে কী উপকার হবে? এআই নিয়ে কাজ করেন একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী সৃজনী৷ তিনি ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ‘‘ভারতে চালু ১২১টি ভাষায় কথা বলা মানুষের কাছে দিগন্ত খুলে যাবে৷ ইংরেজি জানতেই হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতাও সাধারণ মানুষের থাকবে না৷ অনুবাদের মাধ্যমে তাদের ভাষায় সবকিছু পৌঁছে যাবে৷''
সৃজনী বলেছেন, ‘‘বিশ্বজুড়ে যে তথ্যবিস্ফোরণ চলছে, তার অংশ হতে পারা, নিজের ভাষায় তা মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়া একটা বিশাল ব্যাপার৷ এখনই এআই প্রায় নিখুঁতভাবে লিপ সিংক করে অনুবাদ করে দিতে পারে৷ এআই এখন আমাদের অন্য দুনিয়ায় নিয়ে যাচ্ছে৷ ভারতের মানুষ যদি নিজের ভাষায় সেই দুনিয়ায় পৌঁছতে পারেন, তার থেকে ভালো তো আর কিছু হতে পারে না৷''