এইচআইভি সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে পিলসেবীরা আরো ঝুঁকিপূর্ণ যৌন জীবন নাও বেছে নিতে পারেন৷ বিশেষ এই পিলের ব্যবহার এবং যৌন আচরণ সংক্রান্ত এক নতুন গবেষণা থেকে জানা গেছে এই তথ্য৷
বিজ্ঞাপন
নতুন এই গবেষণাটি ‘পাবলিক লাইব্রেরি অব সায়েন্স' এর প্রকাশিত জার্নাল প্লসওয়ান-এ প্রকাশিত হয়েছে৷ ২০১০ সালে শুরু হওয়া তিন বছর মেয়াদে পরিচালিত এই বিশেষ গবেষণায় দেখা গেছে, গিলিয়াট সায়েন্সেস ইনকর্পোরেশন এর তৈরি ট্রুভাডা পিল, যা ইতোমধ্যে এইচআইভি চিকিৎসায় ব্যবহার করা হচ্ছে, এইচআইভি প্রতিরোধে নব্বই শতাংশের বেশি কার্যকর৷ ওষুধটি গ্রহণকারীদের উপর গবেষণা চালিয়ে সফলতার এই হার পাওয়া গেছে৷
এই গবেষণার সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্যতম গবেষক সান ফ্রান্সিসকোর গ্ল্যাডস্টোন ইন্সটিটিউট অব ভাইরোলোজি এন্ড ইমিউনোলোজির ড. রবার্ট গ্র্যান্ট বলেন, ‘‘অনেকেই একটা বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন৷ তাহচ্ছে এইচআইভি রোধক পিলসেবীদের মধ্যে সম্ভবত আরো ঝুঁকিপূর্ণ যৌন জীবন বেছে নেয়ার প্রবণতা দেখা দেবে৷''
জার্মানিতে পতিতাবৃত্তির বিরোধিতা
পতিতাবৃত্তি আইন পুনর্বিবেচনা করার পরিকল্পনা করছে জার্মানির ভবিষ্যত সরকার৷ নারী অধিকার কর্মীরা চান আইন করে এই পেশায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হোক৷
ছবি: AFP/Getty Images
পতিতাবৃত্তি আইন পুনর্বিবেচনা
পতিতাবৃত্তি আইন পুনর্বিবেচনা করার পরিকল্পনা করছে জার্মানির ভবিষ্যত সরকার৷ রক্ষণশীল এবং সামাজিক গণতন্ত্রকামী যে দুটো দলের সমন্বয়ে জোট সরকার গঠনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে তারাই আইনটি পুনর্বিবেচনার পক্ষে৷
ছবি: Isabel Winarsch
বৈধ পেশা
জার্মানিতে পতিতাবৃত্তি বৈধ৷ ২০০২ সালে সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি এবং গ্রিন পার্টি জার্মানিতে পতিতাবৃত্তিকে বৈধতা দিয়ে একটি আইন পাস করে৷ এরপর থেকে এটি একটি বৈধ ব্যবসায় পরিণত হয়েছে৷ যৌনকর্মীরা চাইলেই সামাজিক বিমা পেতে পারে এবং কোনো খদ্দের অর্থ না দিলে আদালতের দারস্থ হতে পারে৷
ছবি: imago/EQ Images
কোটি কোটি টাকার লেনদেন
জার্মান কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান অফিসের তথ্য অনুযায়ী, জার্মানিতে কেবল পতিতাবৃত্তিতেই লেনদেন হয় ১৫শ কোটি ইউরো৷ তবে ঠিক কত নারী এই পেশায় জড়িত তা নির্দিষ্ট করে বলা না গেলেও ধারণা করা হয় অন্তত ৪ লাখ নারী এ পেশায় জড়িত৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অর্ধেক অভিবাসী
প্রায় চার লাখ যৌনকর্মীর অর্ধেকই এসেছে বিভিন্ন দেশ থেকে৷ অর্থাৎ জার্মানিতে তারা অভিবাসী৷ অনেককে পতিতাবৃত্তি করতে বাধ্য করা হয়েছে৷ এখন তারা আর চাইলেও সেখান থেকে বের হতে পারছে না৷ আবার কেউ রয়েছেন যারা কেবল অর্থ রোজগারের আশায় এই পথ বেছে নিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance / rolf kremming
নিবন্ধিত না হওয়া
যৌনকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাদের বেশিরভাগই নিবন্ধিত নন এবং তাদের কোনো তথ্য সরকারের কাছে নেই৷ কেন্দ্রীয় পেশাজীবী সংস্থা বলছে, শতকরা মাত্র ৪৪ জন যৌনকর্মী সামাজিক বিমা করেছেন৷
ছবি: Reuters
নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি
নারী অধিকার কর্মীরা বলছেন, বেশিরভাগ নারীই নিজের ইচ্ছায় এই পেশায় আসেন না৷ ইউরোপের পূর্বাঞ্চল থেকে অনেক নারীদের জোর করে এই ব্যবসায় নামানো হয়৷ তারা এটাকে আধুনিক দাসপ্রথা হিসেবে উল্লেখ করে এই পেশায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি জানিয়েছেন৷ সেইসাথে আইনটি পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন তারা৷
ফ্রান্সের পতিতাবৃত্তি
ফ্রান্সে গত কয়েক দশক ধরেই যৌন পল্লি এবং যৌন ব্যবসা দুটোই নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ খদ্দেরদের হাতেনাতে ধরতে পারলে ১,৫০০ ইউরো জরিমানা ধার্য করে আইন করেছে সরকার৷ সমালোচকরা বলছেন, এর অর্থ নারীরা খদ্দেরদের সেবা দিতে প্রস্তুত, কিন্তু খদ্দেররা তা নিতে পারবে না৷ তাই বিলটি নিয়ে বেশ বিতর্ক চলছে৷
ছবি: picture-alliance/rolf kremming
সুইডেনের আইনে ফ্রান্স
ফ্রান্স এই আইন করেছে মূলত সুইডেনের আইন পর্যালোচনা করে৷ সেখানে ১৯৯৯ সাল থেকে যৌন ব্যবসার খদ্দেরদের শাস্তির আওতায় আনা হয়৷ সেসময় সুইডেনে পতিতাবৃত্তির বৈধতা দেয়া হয়৷ তবে এর ফলে এইসব পতিতাদের উপর নির্যাতন ও ধর্ষণের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে বলে জার্মান পত্রিকা ডের স্পিগেলকে জানিয়েছেন হাসপাতালের একজন নার্স৷
ছবি: AFP/Getty Images
8 ছবি1 | 8
গ্র্যান্ট এবং তাঁর দল তিন বছর ধরে বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করেছেন৷ ছয়টি দেশে অবস্থানরত প্রায় আড়াই হাজার এইচআইভি নেগেটিভ এমন সমকামী পুরুষ এবং পুরুষ থেকে নারীতে রূপান্তরিত নারী এই গবেষণায় সহায়তা করেছেন৷
গবেষক দল বোঝার চেষ্টা করেছেন, পিল গ্রহণকারীদের মধ্যে আরো ঝুঁকিপূর্ণ যৌন আচরণের আগ্রহ তৈরি হচ্ছে কিনা৷ তারা দেখতে পেয়েছেন, নতুন এইচআইভি সংক্রমণের মাত্রা প্রায় চারশো শতাংশ কমে গেছে এবং সিফিলিসের সংক্রমণও কমেছে৷
গ্র্যান্ট জানান, গবেষণায় যৌন আচরণ বৃদ্ধির কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি৷ উল্টো দেখা গেছে, পিলসেবীরা নিরাপদ যৌন জীবনের দিকে বরং আগের চেয়ে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন৷
প্রসঙ্গত, গত অক্টোবরে ‘দ্য লানসেট ইনফেকশাস ডিজিসেস'এ প্রকাশিত একটি গবেষণার ফলাফলের সঙ্গে সর্বশেষ গবেষণার মিল রয়েছে৷ সেই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন দম্পতির সহায়তা নিয়েছিলেন, যাদের মধ্যে একজন এইচআইভি আক্রান্ত, কিন্তু অন্যজন নন৷ এক্ষেত্রে অবশ্য পিলসেবীদের মধ্যে স্বামী বা স্ত্রী ছাড়া বাহ্যিক অন্য কোনো সঙ্গীর সঙ্গে অনিরাপদ যৌনতার মাত্রা একটু বেশি লক্ষ্য করা গেছে৷
উল্লেখ্য, বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এইচআইভি পজেটিভ মানুষের সংখ্যা প্রায় বারো লাখ৷ সেদেশে প্রতিবছর নতুন সংক্রমণের পরিমাণ পঞ্চাশ হাজারের মতো৷