কয়েক বছর আগের কথা: এইডস রোগের ভাইরাস নিয়ে জন্ম নেওয়া একটি নবজাত শিশুর ভাইরাসকে জয় করার ঘটনা এইডস গবেষণায় এক মাইলফলক বলে ধারণা করা হয়েছিল৷
বিজ্ঞাপন
যদিও সংশয়ও ছিল অনেকের মনে৷ আজ সেটাই সত্যে পরিণত হয়েছে৷
ভাইরাস প্রায় ছিলই না
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি রাজ্যে এইচআইভি নিয়ে জন্ম নিয়েছিল এক মেয়ে শিশু৷ তিনটি ওষুধের সমন্বয়ে চিকিৎসা দেওয়ার এক মাস পর দেখা যায় তার শরীরে ভাইরাস প্রায় ছিলই না৷ বলেন বাল্টিমোরের জন-হপকিন্স-ইউনিভার্সিটির ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ডেবোরা পারসড৷
আজ মেয়েটির বয়স চার৷ কিন্তু এক রুটিন পরীক্ষায় অপ্রত্যাশিতভাবে এইডস ভাইরাসের অ্যান্টিবডি খুঁজে পান চিকিত্সকরা৷ এতে বোঝা যায় এই ভাইরাস আবার বিস্তৃত হচ্ছে৷ ইমিউন সিস্টেমের টি-সেল অর্থাৎ রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়েছে৷
রোগের নাম ‘চিকুনগুনিয়া জ্বর’
ডেঙ্গু জ্বরের কথা আমরা কমবেশি সবাই জানি৷ চিকুনগুনিয়া জ্বর অনেকটা তার মতোই৷ নতুন এই রোগ সম্পর্কে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন, কারণ আফ্রিকার এই জ্বর ইতিমধ্যে ঢাকায় ঢুকে পড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মশাবাহিত রোগ
এডিস অ্যালবোপিকটাস ও এডিস এজিপটি নামক মশার কামড়ে চিকুনগুনিয়া জ্বর হয়ে থাকে৷ তবে কেবল নারী এডিস মশাই এই জ্বরের জন্য দায়ী৷
ছবি: picture-alliance/AP
লক্ষণ
মশার কামড় খাওয়ার পাঁচ দিন পর থেকে শরীরে এই রোগের লক্ষণ ফুটে ওঠে৷ এক্ষেত্রে মাথাব্যথা, সর্দি, বমি বমি ভাব, হাত ও পায়ের গিঁটে এবং আঙুলের গিঁটে ব্যথা, ফোসকা পড়া ও শরীর বেঁকে যেতে পারে৷ জ্বর উঠতে পারে ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত৷ থাকতে পারে ২ থেকে ১২ দিন৷ তবে সাধারণত ৩ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত জ্বর থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ডেঙ্গু নয়
অনেকে চিকুনগুনিয়া জ্বরকে ডেঙ্গু জ্বর মনে করতে পারেন৷ কারণ এদের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে৷ তবে ডেঙ্গুর সঙ্গে চিকুনগুনিয়ার মূল পার্থক্য হলো, এই জ্বরে হাড়ের জোড়াগুলো ফুলে যায়, ডেঙ্গু জ্বরে যেটা হয় না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চিকিৎসা
রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে রোগটি শনাক্ত করা যায়৷ এখন পর্যন্ত চিকুনগুনিয়ার কোনো ভ্যাকসিন তৈরি হয়নি৷ তাই চিকুনগুনিয়া সারাতে সাধারণ জ্বরের চিকিত্সা নিলেই চলবে৷ বিশ্রাম, প্রচুর তরল খাবার ও প্যারাসিটামল সেবন করা যেতে পারে৷ তবে চিকুনগুনিয়া জ্বর প্রতিরোধে এডিস মশার প্রজনন বন্ধ করতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/DW
ঢাকায় চিকুনগুনিয়া
জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট বা আইইডিসিআর গত বছর এই রোগের উপর একটি সমীক্ষা চালায়৷ এ সময় ঢাকার মোট ৬০১ জনের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়৷ এদের মধ্যে ২০৭ জনই চিকুনগুনিয়া জ্বরে আক্রান্ত বলে পরীক্ষায় জানা যায়৷ সে হিসেবে ঢাকার প্রায় ৩৩ শতাংশ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ইতিহাস
১৯৫২-৫৩ সালে আফ্রিকার তাঞ্জানিয়ায় প্রথম এই রোগের আবির্ভাব ঘটে৷ বাংলাদেশে প্রথম এ রোগে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায় ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং ঢাকার দোহার ও কেরানীগঞ্জে৷ পরে ২০১১ সালের নভেম্বরে নতুন করে পাবনার সাঁথিয়ায় আবারও চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়৷ আর ঢাকায় প্রথম দেখা দেয় ২০১৩ সালের আগস্টে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
6 ছবি1 | 6
এর কারণ হিসাবে গবেষকরা মনে করেন, ওষুধগুলি সব ভাইরাসকে ধ্বংস করেনি৷ কেন এইরকম হলো, কেন আবার জীবাণুর অস্তিত্ব প্রমাণিত হলো, তা অনুসন্ধান করতে চান গবেষকরা৷
নতুন চ্যালেঞ্জ
বিশেষজ্ঞরা হতাশ৷ চিকিৎসকরা নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হলেন এখন৷ ছোট মেয়েটি তো বটেই৷ কয়েক বছর আগের কথা৷ মিসিসিপির নবজাত বাচ্চাটির এইডস ভাইরাস মুক্ত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর গবেষকরা বিস্মিত হয়েছিলেন৷ কেউ কেউ সংশয়ও প্রকাশ করেছিলেন৷ এর মধ্যে ছিলেন নরবার্ট বকমায়ার৷ সেই সময় ডয়চে ভেলের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বকমায়ার বলেন, তিনি ‘আরোগ্যলাভের' কথা বলতে চান না৷ কেননা জিনগত সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়নি তখনও৷ তবে গবেষণা যে ঠিক পথেই এগুচ্ছে, সে ব্যাপারে সন্দেহ ছিল না তাঁর৷
বিস্তৃতি রোধ করা যায়
এক্ষেত্রে যে শব্দটা বার বার শোনা যায় তা হলো: ‘কার্যকরী আরোগ্য'৷ বকমায়ার-এর মতে, ভাইরাসের অস্তিত্ব প্রমাণিত হলেও বিভক্ত হওয়ার মতো ক্ষমতা তাদের নেই৷ থেরাপির সাহায্যে ভাইরাসের বিস্তৃতি রোধ করা যায়৷ ওষুধ ছেড়ে দিলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভাইরাসের সংখ্যা আবার বেড়ে যায়৷
মিসিসিপির বাচ্চাটির ক্ষেত্রে বিষয়টি কিছুটা ভিন্নরকম: মেয়েটি দীর্ঘদিন কোনো ওষুধ নেয়নি৷ তা সত্ত্বেও কোনো ভাইরাস প্রমাণিত হয়নি তাদের দেহে৷ কিন্তু এক পরীক্ষায় ভাইরাসের অস্তিত্ব আবার ধরা পড়ায় হতাশ হন গবেষকরা৷ এখন মেয়েটিকে আবার চিকিত্সা দেওয়া হবে৷ গবেষকদের মতে, যত দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যায়, ভাইরাসকে বাগে আনার সম্ভাবনা ততই বেশি৷