সবার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমেই বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় থাকতে পারে৷ এজন্য চিন্তার বিকাশ ও সাংস্কৃতিক বোধোদয়ও জরুরি৷ ডয়চে ভেলে বাংলার সাপ্তাহিক টকশোতে এমনই মত তুলে ধরেছেন দুই আলোচক৷
বিজ্ঞাপন
‘খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’ সাপ্তাহিক ইউটিউব টকশোতে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ এবং অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট আরিফ জেবতিক৷
অনুষ্ঠানের দুই আলোচকই গোটা পর্বজুড়ে জোর দেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও শান্তির ওপর৷ এ বিষয়ে মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন যে, শান্তির পথ আসলে ইসলামেই রয়েছে৷ তাঁর মতে, ইসলাম উদার ও মধ্যপন্থি একটি ধর্ম হওয়ায় সব ধর্মাবলম্বীদের সমান অধিকার রয়েছে নিজ নিজ ধর্ম পালন করার৷ তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের একজন মুসলমান এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নাগরিক অন্য কারো বিশ্বাসে আঘাত করতে পারেন না৷ একজন মুসলমান আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি৷
অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট আরিফ জেবতিকের মতামত, সাম্প্রদায়িক আচরণ শুধু বাংলাদেশে ঘটা কোনো বিচ্ছিন্ন বাস্তবতা নয়, এর বৈশ্বিক প্রকাশ ভারত থেকে প্যারিস সর্বত্র দেখা যাচ্ছে৷ বলেন, বর্তমান বাংলাদেশে যে ধরনের অসহিষ্ণুতা দেখা যাচ্ছে, তার অনেকটাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত৷ অনেকেই অন্য বিশ্বাসে বিশ্বাসীদের অপ্রয়োজনীয় আঘাত করে চলেন বলে উল্লেখ করেন তিনি৷ এই সমস্যাকে মোকাবিলা ও বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বাড়াতে আরিফ জেবতিক সুস্থ ‘সামাজিক স্পেস’ তৈরির ওপর জোর দেন৷ একই প্রসঙ্গে সাংস্কৃতিক সচেতনতা বৃদ্ধির কথাও বলেন তিনি৷
মুফতি ফয়জুল্লাহর মতে, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা সংখ্যালঘুদের যথেষ্ট আদরযত্নে রেখেছে৷ অন্যদিকে আরিফ জেবতিক মনে করান, দেশ আসলে সবার এবং সব ধর্ম নির্বিশেষে সবার সমান অধিকার রয়েছে নিজের বিশ্বাস চর্চা করার৷
অনুষ্ঠানে দুই আলোচকই বারবার অন্যধর্মের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, সহিষ্ণুতা ও শান্তির ওপর জোর দেন৷ ইসলামী ঐক্যজোট নেতা বলেন ইসলামপ্রদর্শিত শান্তির পথের কথা, অন্যদিকে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টের মুখে উঠে আসে চিন্তার বিকাশ ও সাংস্কৃতিক বোধোদয়ের কথা৷ গালিগালাজ ও ইচ্ছাকৃতভাবে অপরপক্ষের অনুভূতিতে আঘাত করা থেকে একটি শ্রেণীকে বিরত থাকার আহ্বানও জানান দুই আলোচক৷
এসএস/এসিবি
শান্তির খোঁজে পৃথিবীর পথে
সারাবিশ্বের নানা সংকটের মাঝেও কিছু মানুষ শান্তির কথা ছড়িয়ে যাচ্ছেন৷ জার্মানির লিন্ডাওয়ে বিশ্ব শান্তি সম্মেলনে এসেছিলেন তারা৷ হয়েছিলেন ডয়চে ভেলের মুখোমুখি৷
ছবি: DW/A. Purwaningsih
আলহাজ ইসহাক কুনলে, ইসলাম, নাইজেরিয়া
‘‘আমি পৃথিবীর সব ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে আহ্বান জানাই যে আপনারা বিদ্বেষমূলক কথা পরিহার করুন৷ কারণ এগুলোই সংকট তৈরি করে এবং যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়৷ বরং তারা শান্তির কথা বলতে পারেন এবং সব ধর্মের সহাবস্থানের কথা বলতে পারেন৷’’
ছবি: DW/A. Purwaningsih
পাস্কারাকুরুক্কাল, হিন্দু, জার্মানি
‘‘পুরো বিশ্বের জন্য শান্তি খুব দরকার৷ শান্তি মানে বাইরের জায়গা কেনা নয়৷ শান্তি মানুষের অন্তরের ভেতরের বিষয়৷ যদি সবাই শুধু শান্তির চিন্তা করতে পারে, তাহলে পর্যায়ক্রমে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে৷’’
ছবি: DW/A. Purwaningsih
কিরন কৌর, শিখ, ইংল্যান্ড
‘‘ক্ষমা অর্থ পূনর্মিলন৷ আর পূনর্নিলনই শান্তির পথ৷’’
‘‘বন্ধুত্বের মাধ্যমেই কেবল সংঘাত দূর করা সম্ভব৷ মানুষ মানুষের শত্রু হতে পারে না৷ ঈশ্বর পর্বত বানিয়েছেন সবার জন্য৷ তিনি তার সব সন্তানের ভালো করেছেন৷ আমাদেরও পরস্পরের জন্য ভালো কিছু করতে হবে৷’’
ছবি: DW/A. Purwaningsih
হাইলে ফুডু, বাহা’ই, দক্ষিণ আফ্রিকা
‘‘শান্তি শুধু সম্ভবপর নয়, ভবিতব্য৷ পৃথিবীর ভবিষ্যত এখানেই৷ বিশ্ব একটি দেশ এবং মানুষ তার নাগরিক৷ আমাদেরই ঠিক করতে হবে কবে আমরা শান্তি চাই৷ সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এবং আধ্যাত্মিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাই পারে এই জটিল প্রক্রিয়াকে তরান্বিত করতে৷’’
‘‘শান্তি এমন এক ব্যাপার যার জন্য আপনাকে নিজের ভেতরে প্রথমে কাজ করতে হবে৷ নিজেকে চিনুন, নিজের সঙ্গে প্রথমে কথা বলুন, এবং এরপরই কেবল আপনি অপরের শান্তির জন্য কাজ করতে পারবেন৷ আমরা বলি, একটা ভালোবাসা খুঁজুন৷’’