এই দেশ তরুণদের: ড. ইউনূস
৮ আগস্ট ২০২৪ড. ইউনূস বলেন, ‘‘আজকে আমাদের গৌরবের দিন৷ যে বিপ্লবের মাধ্যমে বাংলাদেশ আজ নতুন বিজয় দিবস সৃষ্টি করল সেটাকে সামনে রেখে এবং আরও মজবুত করে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে৷''
তিনি বলেন, ‘‘যারা এটাকে সম্ভব করেছে—তরুণ সমাজ—তাদের প্রতি আমি আমার সমস্ত প্রশংসা এবং কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি৷ তারা আমার পাশে আছে৷ তারা এ দেশকে রক্ষা করেছে, এ দেশকে পুনর্জন্ম দিয়েছে এবং এ পুনর্জন্মে যে বাংলাদেশকে পেলাম সে বাংলাদেশ যেন দ্রুতগতিতে এগিয়ে যেতে পারে, সেটাই আমাদের শপথ৷ সেটা আমরা রক্ষা করতে চাই৷''
ড. ইউনূস বলেন, ‘‘আজকে আবু সাঈদের কথা মনে পড়ছে আমাদের৷ যে আবু সাঈদের ছবি বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মনে গেঁথে আছে৷ কী অবিশ্বাস্য এক সাহসী যুবক! বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে আছে৷ তারপর থেকে আর কোনো যুবক-যুবতী হার মানেনি, সামনে এগিয়ে গেছে৷ তারা বলেছে, যত গুলি মারো মারতে পারো, আমরা আছি৷ যার কারণে এই আন্দোলন সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে গেছে এবং বাংলাদেশে দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা অর্জন করেছে৷''
‘‘এই স্বাধীনতা আমাদের রক্ষা করতেই হবে,'' বলেন ড. ইউনূস৷ তিনি বলেন, ‘‘শুধু স্বাধীনতা রক্ষা করা নয়৷ এই স্বাধীনতার সুফল প্রতিটি মানুষের ঘরে পৌঁছাতে হবে৷ তা না হলে এই স্বাধীনতার কোনো দাম নেই৷ এই স্বাধীনতা প্রতিটি ঘরে পৌঁছানোই আমাদের প্রতিজ্ঞা৷''
ড. ইউনূস বলেন, ‘‘মানুষ যেন জানে, যে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার অর্থ হলো তার নিজের পরিবর্তন, ব্যক্তির পরিবর্তন নয়, সুযোগের পরিবর্তন, তার ছেলে-মেয়ের ভবিষ্যতের পরিবর্তন৷''
তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আজকের তরুণ সমাজকে এটা বোঝানো যে এই দেশ তোমাদের৷ এটাকে তোমরা তোমাদের মনের মতো করে গড়ে তুলবে৷ তোমরা যেহেতু স্বাধীন করতে পেরেছ, তোমরা এটাকে তোমাদের মনের মতো করে গড়ে তুলতেও পারবে৷ তোমাদের দেখে সারা দুনিয়া শিখবে যে কীভাবে একটা দেশকে তরুণ সমাজ গ্রহণ করতে পারে এবং পাল্টে ফেলতে পারে৷''
তিনি বলেন, ‘‘আমি বারেবারে উপদেশ দিই, পুরোনোদের বাদ দাও৷ পুরোনোদের চিন্তা দিয়ে কিছু হবে না৷ শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো দুনিয়ার কথা বলছি৷ তোমাদের মধ্যে যে শক্তি আছে, সৃজনশীলতা আছে, সেটাকে কাজে লাগাতে হবে৷ শুধু বইখাতাতে লেখার জিনিস না, সেটা প্রকাশ করার জিনিস৷''
ড. ইউনূস বলেন, ‘‘আজকে আমাদের দায়িত্ব হলো, যেটা তারা অর্জন করে নিয়ে এসেছে সেটা এখন তাদেরকে দিয়ে করিয়ে দেওয়া৷ সরকার বলতে একটা জিনিস আছে, কিন্তু মানুষের কোনো আস্থা নেই৷ মানুষ মনে করে, সরকার হচ্ছে একটা দমনপীড়নের যন্ত্র৷ এটা একটা ভয়ের জিনিস, যাকে সামাল দিয়ে চলতে হবে৷ এটা সরকার হতে পারে না৷ সরকারকে দেখে মানুষের বুক ফুলে উঠবে৷ মনে করতে হবে সরকার আমাকে রক্ষা করবে, সহযোগিতা করবে, আমার সরকার আমার পাশে দাঁড়াবে৷ কিন্তু সরকার কারো জন্য পাশে দাঁড়ায় না কোনো সময়৷''
তিনি বলেন, ‘‘এখন যে সরকার হবে, সে সরকার মানুষকে রক্ষা করবে, আস্থাভাজন হবে৷ তোড়জোর করে তাকে ভালো বলাতে হবে না৷ সে নিজে নিজে বিশ্বাস করবে যে সরকার ভালো, সরকারি লোক দেখলে বলবে যে এ আমার লোক, আমাকে রক্ষা করার লোক৷ সেই আস্থাটা আমাদেরকে ফিরিয়ে আনতে হবে মানুষের মধ্যে৷ তাহলে মানুষও যোগ দেবে এর মধ্যে৷''
তিনি বলেন, ‘‘সারা বাংলাদেশ একটা পরিবার৷ এই পরিবার আমরা একসঙ্গে চলতে চাই৷ আমাদের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব যা কিছু আছে, সরিয়ে ফেলতে চাই৷ যারা বিপথে গেছে, তাদেরকে পথে আনতে চাই৷ যাতে করে একসঙ্গে আমরা কাজ করতে পারি৷''
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এর মধ্যে আসার পথে শুনলাম, এখানে আইনশৃঙ্খলার ব্যাঘাত হচ্ছে৷ মানুষ মানুষকে আক্রমণ করছে, ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে, সম্পদ জ্বালিয়ে নষ্ট করছে, পুড়িয়ে দিচ্ছে, অফিস-আদালতে আক্রমণ করছে, সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ করছে, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, আহমাদিয়া সবার ওপর আক্রমণ করছে৷ এগুলো ষড়যন্ত্রের অংশ, এগুলো আমাদের বিষয় না৷''
ড. ইউনূস বলেন, ‘‘আমাদের কাজ হলো সবাইকে রক্ষা করা৷ প্রতিটি মানুষকে রক্ষা করা৷ প্রতিটি মানুষ আমাদের ভাই, আমাদের বোন, তাদের রক্ষা করা এবং আমাদের একটা শৃঙ্খলায় ফিরে আসা উচিত৷ এগুলো হলো অগ্রগতির সবচেয়ে বড় শত্রু৷ আমাদের যে যাত্রা শুরু হলো, সে যাত্রার শত্রু৷ কাজেই এই শত্রুকে যাতে রোধ করা যায়, তাদের বুঝিয়ে-শুনিয়ে হোক, তাদের আইনশৃঙ্খলার হাতে দিয়ে হোক, এটা মনে রাখতে হবে৷ তাদের মেরে ফেলা ঠিক না৷ আইনশৃঙ্খলা নিজের হাতে নেওয়া ঠিক না৷ আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এমন হতে হবে, তাদের হাতে সোপর্দ করতে হবে, এতে আমরা নিশ্চিত থাকব যে, এর একটা বিহিত হবে৷ এমন হলো আমরা দিয়ে দিলাম, তারা টাকা নিয়ে ছেড়ে দিলো, এটা যেন না হয়৷''
এসএইচ/জেডএইচ (ডেইলি স্টার)