1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘এই বৃদ্ধনিবাসে সবাই কষ্ট নিয়েই আসে’

সমীর কুমার দে ঢাকা
৯ অক্টোবর ২০১৭

ডা. শেখ লুৎফর রহমান ৪২ বছর ধরে প্রবীণদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছেন ‘বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও জরা বিজ্ঞান’ প্রতিষ্ঠানে৷ দেশের সবচেয়ে প্রাচীন এই প্রবীণ নিবাসের চিকিৎসকের কাছ থেকেই জানা যাক প্রবীণদের অবস্থা৷

Bangladesch alte Menschen
ছবি: DW/M. M. Rahman

ডয়চে ভেলে : আপনি কেমন আছেন? এখানে কতদিন সেবা দিচ্ছেন?

ডা. শেখ লুৎফর রহমান : আল্লাহর রহমতে ভালো আছি৷ আমি ৪২ বছর ধরে প্রবীণদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছি৷

এখানে যোগ দেয়ার আগে কোথায় ছিলেন?

এখানে যোগ দেয়ার আগে সরকারী চাকরি করতাম৷ সেই চাকরি ছেড়ে ১৯৭৫ সাল থেকে এখানে কাছ করছি৷ 

এখানে তো আপনি ফ্রি সার্ভিস দিচ্ছেন, তাই না?

ফ্রি আসলে বলা যাবে না৷ ওরা একটা সম্মানী দেয়৷ এটা দিয়েই চলছে৷

আপনার পরিবারের সদস্য কতজন? তাঁরা কোথায় থাকেন?

আমার স্ত্রী, দুই ছেলে, দুই মেয়ে৷ মেয়ে দু'টোই প্রফেসর৷ বড় ছেলেও মেডিক্যাল কলেজের প্রফেসর৷ আর ছোট ছেলে স্কয়ার হাসপাতালের কনসালট্যান্ট৷ তাঁর স্ত্রীও মেডিক্যাল কলেজের প্রফেসর৷ বড় বৌমা শিক্ষক৷ 

DrSheikhLutforRahmanForAlaap - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

আপনি এখানে এত লম্বা সময় ধরে আছেন, সেবা দিচ্ছেন, আপনার অভিজ্ঞতা কেমন?

শেষ জীবনে এসে অবস্থা এমন হয়েছে যে, একদিনও যদি এখানে না আসি, তাহলে আমার খারাপ লাগে৷ ছুটি হলেও খারাপ লাগে৷ এখানে এলে সবার সঙ্গে কথা বলি, এতে অনেক ভালো লাগে৷ আমার কাছে যাঁরা আসেন, তাঁরা তো কষ্ট নিয়েই আসেন৷ আমি তাঁদের কিছুটা স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারি, কিছুটা মানসিক উপদেশ দিতে পারি, তখন তাঁরা আমাকে দোয়া করে৷ শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশ থেকে রোগীরা আমার কাছে আসে৷ এমনকি বিদেশ ফেরত রোগীও আসে৷

এখানে তো সবাই বয়স্ক রোগী৷ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হন তাঁরা৷ তাঁদের চিকিৎসা কিভাবে হয়?

বয়স্ক মানে একটা রোগ না, তার ৪টা, ৫টা কোনো ক্ষেত্রে ৬টা রোগও হয়৷ আবার অনেকের মানসিক সমস্যা থাকে৷ বিষন্নতায় ভোগে৷ তাঁর সঙ্গে আলোচনা করলে আমরা অনেক কিছু জানতে পারি৷

আপনার কাউন্সেলিংয়ে ভালো হয়েছে এমন কোনো গল্প কি বলা যায়?

যেমন ধরেন একজন রোগী এলো, সে নানান রোগের কথা বললো৷ এক পর্যায়ে আমি বুঝলাম তাঁর মানসিক রোগ আছে৷ মানসিক রোগ মানে, সে পাগল না৷ টেনশন, ডিপ্রেশন এসব আর কি! আমি তাঁকে বললাম, সব তো শুনলাম, তো আপনার চিন্তা কিসের? সে বললো, কোনো চিন্তা নেই৷ আমি বললাম, না, আপনার চিন্তা আছে৷ জোর করার পর এক পর্যায়ে সে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলল৷ তখন সে বলল, তাঁর পারিবারিক সমস্যা আছে, কিন্তু সেটা সে কাউকে বলতে পারছে না৷ আমি না শুনলে হয়ত সে আমাকেও বলত না৷ রোগী দেখতে দেখতে আমার অভিজ্ঞতা হয়েছে৷ সে কারণে আমি রোগ ছাড়াও মানসিক সমস্যাগুলো বুঝতে পারি৷

আমি একটু আগে একজনের সঙ্গে কথা বলছিলাম৷ তিনি সংবাদ মাধ্যমে ছবি দিতে রাজি নন৷ তাঁর ছেলেরা বড় চাকরি করে, ফলে তাঁর ছবি পত্রিকায় এলে তাঁর সন্তানদের সম্মানহানি ঘটবে৷ এই মানুষগুলোর মানসিক অবস্থা কেমন?

নিবাস মানে তো আর শান্তির জায়গা না৷ এখানে যাঁরা এসেছেন, তাঁরা সবাই কষ্ট নিয়ে এসেছেন৷ আমাদের চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলে, রোগীকে হাসপাতালে রেখে স্বর্ণের বিছানায় শুইয়ে হুরপরীদের দিয়ে চিকিৎসা করালেও সে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে না৷ তাঁর বাড়িতে রেখে চিকিৎসা করালে সে যতটা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করত৷ যাঁরা এখানে আসে, তারা অনেক কষ্ট নিয়েই আসে, তাঁরা স্বাভাবিক মানুষ না৷

এমন কারো গল্প আছে, যা শুনে আপনার খারাপ লেগেছে?

এমন প্রায়ই হয়৷ অনেকে আমার কাছে এসে মনের কথা বলে, কেঁদে ফেলে, তখন আমারও কষ্ট লাগে৷

এমন কোনো ব্যক্তির গল্প কি আমাদের বলা যায়?

নাম বলা যাবে না, কিন্তু প্রফেসর আছে, সেক্রেটারি আছে, এমন বহু মানুষ এখানে থাকেন৷

এখানে ৪২ বছর কাজ করতে গিয়ে আপনার কি কখনও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে?

সেটা না বলাই ভালো৷ সকালে উঠে এখানে এলে আমার মন ভালো হয়ে যায়৷ 

সবাই তো বয়স্ক মানুষদের এড়িয়ে চলেন, আপনি কেন বয়স্ক মানুষের সঙ্গে মিশতে চান?

আমি নিজেও বয়স্ক৷ আমার বয়স এখন ৭৬ বছর৷ তাঁদের সঙ্গে মিশতেই আমার ভালো লাগে৷ আমার মতো কেউ নেই যে শুধু প্রবীণদের ৪০ বছর চিকিৎসা করেছে

আপনি কি এটার শুরু থেকে আছেন?

এটার শুরু হয়েছে ১৯৬০ সালে৷ ৭১ সালে এটার প্রতিষ্ঠাতা ডা. ওয়াহেদ সাহেব মারা যান৷ এরপর ৩/৪ বছর এটা বন্ধ ছিল৷ ৭৪ বা ৭৫ সালের দিকে এটা নতুন করে শুরু হয়৷ তখন আমি ব্যক্তিগত কারণে সরকারী চাকরি ছেড়ে দিই৷ একমাস পরেই এরা আমাকে ডেকে আনে৷ তখন থেকে আমি এখানেই আছি৷

আপনি তো প্রবীণদের নিয়ে কাজ করেন, এটা নিয়ে পরিবারের কোনো আপত্তি আছে ?

না, তাদের কোনো আপত্তি নেই৷ আমার অর্থনৈতিক কোনো সমস্যাও নেই৷ আমার নাতনিও তো ডাক্তার৷

দেশের প্রবীণদের প্রতি আপনার পরামর্শ কী?

দেখেন, প্রবীণরা অসুস্থ্ হলে একা তো আর হাসপাতালে যেতে পারে না৷ পরিবারের কারো-না-কারো সঙ্গে যেতে হয়৷ প্রবীণরা মনে করে, তাঁরা যেখানেই যাবে, তাঁরা সম্মান পাবে৷ সরকারী হাসপাতালে গেলে সেখানে যেন আলাদা করে তাঁদের দেখা হয়৷ অ্যাডমিশনের ব্যাপারে তাঁদের জন্য সিট রিজার্ভ থাকে৷ আউটডোরে তাঁদের জন্য যেন আলাদা কাউন্টার থাকে৷ ওষুধসহ চিকিৎসা যতটা ফ্রি হয়, ততই মঙ্গল৷

প্রবীণদের জন্য রাষ্ট্রের কাছে আপনি কি চান?

এটা তো আসলে ব্যাপক ব্যাপার৷ প্রবীণদের সেবাযত্ন বৃহৎ অর্থে বলি- শুধু চিকিৎসা না, ব্যক্তিগত জীবনে বলেন, বা রাষ্ট্রীয়ভাবে বলি, অন্য দেশে প্রবীণদের বহু সুবিধা দেয়৷ আমাদের দেশে অতটা হয়নি, তবে হওয়া উচিত৷ এখন কিছু কিছু হচ্ছে৷ যেমন প্রবীণরা ভাতা পাচ্ছে, গাড়িতে তাঁদের জন্য সিট রিজার্ভ থাকছে, ভাড়া অর্ধেক নিচ্ছে৷ তাঁরা যেখানেই যাক, সম্মানটা যেন পায়৷ সুবিধা যেন পায়, সেটা অফিস আদালতে গেলেও৷

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ