শেখ হাসিনা বলেছেন, ২৭শে অক্টোবর থেকে ২৪শে জানুয়ারির মধ্যে যে কোনো সময় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে অর্থাৎ সরকারের মেয়াদ পূর্তির শেষ ৩ মাসে৷ প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি জানায়, তারা এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না৷
বিজ্ঞাপন
সোমবার মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকের পর সিনিয়র সচিবদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ সেই বৈঠকেই তিনি বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন৷ মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হেসাইন ভুইঞা জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন নির্বাচন বর্তমান সরকারে মেয়াদের শেষ তিন মাসের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হবে৷ এছাড়া, সময়ও বেধে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী৷ আওয়ামী লীগ নেত্রী জানিয়েছেন নির্বাচন হবে ২৭শে অক্টোবর থেকে ২৪শে জানুয়ারির মধ্যে যে কোনো দিন৷ এই সময় সংসদ সদস্যরা থাকলেও তাঁদের কার্যকারিতা থাকবে না৷ সংসদের অধিবেশন বসবে না৷ আর মন্ত্রিসভা থাকবে, তবে তারা দৈনন্দিন কাজ করবেন৷ নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কশিমন৷ তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী প্রশাসন কাজ করবে৷
বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকট থামছে না
আগামী বছরের সূচনায় জাতীয় নির্বাচন, কিন্তু দুই মুখ্য রাজনৈতিক জোটের টানাপোড়েন অব্যাহত৷ অথচ দেশে-বিদেশে অনেকেই চান সংকট নিরসনে দুই বৈরী জোটের মধ্যে আলোচনা৷ কিন্তু সেটা কি আদৌ সম্ভব হবে?
ছবি: AP
দু’দলের দ্বন্দ্ব
বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নির্দিষ্ট হয়েছে ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে৷ তবে মুখ্য বিরোধী দল বিএনপি এখনো নির্বাচনে অংশ নিতে রাজি নয়৷ তারা চায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, শাসক আওয়ামী লীগের কাছে যা সংবিধান লঙ্ঘনের সমান৷
ছবি: Getty Images/AFP/FARJANA K. GODHULY
জাতিসংঘ চায় সংলাপ
জাতিসংঘ ইতিমধ্যেই দুই বিবাদী জোটের মধ্যে সংলাপের উদ্যোগ নিয়েছে৷ মহাসচিব বান কি-মুন গত ২৩ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে টেলিফোনে কথাবার্তা বলেছেন৷ জাতিসংঘের মহাসচিব উভয় নেতার প্রতি চলতি রাজনৈতিক সংকটের শান্তিপূর্ণ অবসানের জন্য আলাপ-আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন৷
ছবি: Reuters
হাসিনা চান সংসদে আলোচনা
জাতিসংঘ বাংলাদেশি রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে মহাসচিবের ফোনালাপের কোনো খুঁটিনাটি প্রকাশ করেনি৷ তবে বাংলাদেশের একাধিক দৈনিকে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী হাসিনা ‘‘জাতিসংঘের প্রধানকে জানিয়েছেন যে, তিনি সংবিধান অনুযায়ী সরকারের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা করছেন৷’’ বিরোধীপক্ষ যদি গোটা প্রসঙ্গটি সংসদে আলোচনা করার কোনো প্রস্তাব দেয়, তবে তিনি তাকে স্বাগত জানাবেন, এমন আভাসও দিয়েছেন হাসিনা৷
ছবি: dapd
সরকারের তত্ত্বাবধানে নির্বাচনে বিএনপির ‘না’
বান কি-মুনের সঙ্গে ফোনালাপে বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়াও সংকট সমাধানে সংলাপের সপক্ষে মতপ্রকাশ করেছেন, কিন্তু এ-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, ‘‘বিরোধীপক্ষ আওয়ামী লীগ সরকারের তত্ত্বাবধানে আয়োজিত সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না৷’’
ছবি: Reuters
তত্ত্বাবধায়ক সরকার কি ও কেন?
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মূল কাজ হলো মুক্ত ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করা৷ ১৯৯১ সালে এই পদ্ধতি চালু করা হয় কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার ২০০৯ সালে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সেই পদ্ধতি বাতিল করে৷ বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিরোধী পক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবি তুলেছে৷
ছবি: AP
জার্মানি সংলাপ সমর্থন করে
সংলাপকে বাংলাদেশের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক জোটের মধ্যে অচলাবস্থা নিরসনের একমাত্র পন্থা বলে মনে করে জার্মানি৷ ‘ঢাকা কুরিয়ার’ নামক সাপ্তাহিক ম্যাগাজিনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ঢাকায় জার্মান রাষ্ট্রদূত ড. আলব্রেশট কনৎসে বলেছেন, ‘‘দু’টি মুখ্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংলাপ হলো বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা সমাধানের একমাত্র পথ৷’’
ছবি: DW/R. Manzoor
ইউনূস তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ডাক দিলেন
বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস একটি ‘‘নির্দলীয় নিরপেক্ষ (নির্বাচনকালীন) সরকার’’ বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতি তাঁর প্রকাশ্য সমর্থন ব্যক্ত করেছেন৷ গত ২২ আগস্ট ইউনূস একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘‘নির্বাচন অতি অবশ্য হওয়া উচিত এবং তা একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হওয়া উচিত৷’’
ছবি: Getty Images
আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)
হাসিনা সরকারের সৃষ্ট আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল বা আইসিটি-র উদ্দেশ্য মুক্তিযুদ্ধের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার৷ কিন্তু তা শাসকদল এবং বিরোধীপক্ষের মধ্যে একটি বিতর্কিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ আইসিটি এখন পর্যন্ত ছ’জন অভিযুক্তকে শাস্তি দিয়েছে৷ বিরোধীপক্ষ এই বিচার প্রক্রিয়াকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত আখ্যা দিয়েছে৷ তাদের মতে এই প্রক্রিয়ার বাস্তবিক উদ্দেশ্য ন্যায়বিচার নয়, পুরাতন শত্রুতার প্রতিশোধ৷
ছবি: AP
আন্তর্জাতিক সমালোচনা
হিউম্যান রাইটস ওয়াচও আইসিটি-র সমালোচনা করেছে৷ এইচআরডাব্লিউ বিবৃতিতে বলেছে, জামায়াতে ইসলামীর সাবেক প্রধান গোলাম আযমের বিচার প্রক্রিয়া ‘‘গভীরভাবে ত্রুটিপূর্ণ’’ ছিল৷ প্রতিক্রিয়া হিসেব সরকারি কৌঁসুলির তরফ থেকে এইচআরডাব্লিউ-এর বিরুদ্ধে আদালতের অবমাননার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে৷ ইতিমধ্যে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মোজেনা বলেছেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এইচআরডাব্লিউ-এর ‘‘একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা’’ রয়েছে৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
ট্র্যাক রেকর্ড
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে ক্ষমতায় আসে৷ বিদ্যুৎ উৎপাদন কিংবা কৃষি খাতে সরকারের সাফল্যের খতিয়ান যাই হোক না কেন, বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পের অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ানোর পর হাসিনা সরকারের অন্য সব সাফল্য ঐ একটি কেলেঙ্কারির আড়ালে ধামাচাপা পড়ে গেছে৷ আগামী নির্বাচনেও পদ্মা সেতু প্রকল্প প্রসঙ্গটি প্রভাব ফেলতে পারে বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা৷
ছবি: AP
10 ছবি1 | 10
এর প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, নির্বাচনের সময় ঘোষণা এখন কোনো গুরুত্ব বহন করে না৷ আগে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সরকারকে সমঝোতায় আসতে হবে৷ বিএনপিসহ দেশের সাধারণ মানুষ এবং সুশীল সমাজ চায় নির্বাচন হোক নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে৷ আর বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোনো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বোচনে যাবে না৷ কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের সময় ঘোষণা করে সংবধিানের পঞ্চদশ সংশোধনীর অধীনেই নির্বাচন করতে চান৷ তার মানে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারে অধীনেই নির্বাচন হবে৷
তিনি বলেন, মেয়াদের শেষ তিন মাস না মেয়াদের পরের তিন মাসে নির্বাচন – তা এখন মোটেই গুরুত্বপূর্ণ না৷ গুরুত্বপূর্ণ হলো নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার৷ সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি না মেনে নির্বাচনের সময় ঘোষণা করে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে৷ কিন্তু তাতে কাজ হবে না৷ বরং এতে দেশে অস্থিরতা বাড়বে৷ বিএনপি এখনো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছে৷ সরকার একতরফাভাবে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের চেষ্টা করলে, বিএনপিও কঠোর আন্দোলনে যাবে৷ আন্দোলনের মাধ্যমেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে তখন বাধ্য করা হবে সরকারকে৷
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ৬ই জানুয়ারি আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব মহাজোট সরকার গঠন করে৷ আগামী বছরের জানুয়ারি মাসে তাদের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা৷