জার্মানির কট্টর ডানপন্থি দল ‘জার্মানির জন্য বিকল্প' বা এএফডিকে চরমপন্থি দল হিসেবে চিহ্নিত করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা বিএফভি৷ এতে সরকার তাদের ওপর নজরদারি আরো বাড়াতে পারবে৷
সম্প্রতি জার্মানির জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উগ্র ডানপন্থি দল এএফডি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২০.৮% ভোট পেয়েছেছবি: Liesa Johannssen/REUTERS
বিজ্ঞাপন
জার্মানির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা বিএফভির দায়িত্ব হলো দেশটির সংবিধান সমুন্নত রাখা৷ অনেক পর্যালোচনা করে তারা এএফডিকে বিদেশি, সংখ্যালঘু ও ইসলামবিদ্বেষী হিসেবে চিহ্নিত করেছে৷
এই তদন্তের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে কেন্দ্রীয় সংস্থাটি এখন আন্ডারকাভার এজেন্ট ব্যবহার বা ফোনে আড়ি পেতে দলটির ওপর নজরদারি বাড়াতে পারবে৷
বিএফভির মতে, এএফডি জাতি ও বংশের ভিত্তিতে বিভেদ তৈরি করে।
তারা সুস্পষ্টভাবে বলেছে, দলটির লক্ষ্য হলো সমাজের কিছু নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে সমান অংশগ্রহণের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা, তাদের প্রতি এমন আচরণ করা যা সংবিধান পরিপন্থি। সংস্থাটি ১১০০ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে৷
এ বিষয়ে বিদায়ী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেজার বলেছেন, এই তদন্তের ফলাফলের ওপর কোনো ‘রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ' ছিল না৷
তিনি বলেন, এএফডি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাবিরোধী প্রচার চালাচ্ছিল।
তিনি আরো যোগ করেন, ‘‘এএফডি একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর পূর্ণ বিরোধিতামূলক মনোভাব পোষণ করে এবং অভিবাসী বংশোদ্ভূত জনগোষ্ঠীকে দ্বিতীয় সারির জার্মান বলে মনে করে৷''
সম্প্রতি জার্মানির জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২০.৮% ভোট পেয়েছে৷
বিএফভির এই প্রতিবেদনের বিরোধিতা করেছে এএফডি৷ তারা একে গণতন্ত্রের ওপর বড় আঘাত হিসেবে বর্ণনা করেছে৷
ডার্কো ইয়ানইয়েভিচ/এএনএস
জার্মান সংসদে এএফডি: হিটলার, ঘৃণা ও গুণ্ডামি ‘পছন্দ করা’ কয়েকজন
আগের বারের তুলনায় জার্মান সংসদ বুন্ডেসটাগে চরম ডানপন্থি দল এএফডির সদস্য সংখ্যা দ্বিগুণ৷ ১৫২জন সংসদ সদস্যের মধ্যে কয়েকজন নানা কারণে বিতর্কিত৷ তাদের নিয়েই এই ছবিঘর...
ছবি: Elisa Schu/dpa/picture alliance
মাটিয়াস হেলফেরিশ
২০২১ সালে ফেসবুকে ফাঁস হওয়া একটি চ্যাটে হেলফেরিশ নিজেকে ‘এনএসের বন্ধুত্বপূর্ণ মুখ’ হিসাবে তুলে ধরেন৷ এনএস, অর্থাৎ ন্যাশনাল সোশালিজম বা নাৎসিবাদী আদর্শ, যে আদর্শের কারণে জার্মানিতে আডলফ হিটলারের হাত ধরে চরম ডানপন্থা ভয়াবহ নৃশংসতাকে বাস্তবায়িত করে৷ খুন হন লাখ লাখ মানুষ৷ ৩৬ বছর বয়সি এই এএফডি রাজনীতিক দলটির অন্যতম চরমপন্থি সদস্য৷
ছবি: Fabian Strauch/dpa/picture alliance
মাক্সিমিলিয়ান ক্রাহ
ইটালির এক সংবাদপত্রকে ক্রাহ বলেন, নাৎসি আমলের আধাসমরিক সংস্থা এসএস বিশ্বযুদ্ধের সময় ‘তেমন খারাপ’ ছিল না৷ এমন মন্তব্যের পর ইউরোপের অন্যান্য ডানপন্থি দলও ক্রাহকে একটু দূরে রাখতে শুরু করে৷ এএফডিও ২০২৪ সালের প্রচারণার পোস্টার থেকে তার ছবি সরিয়ে নেয়৷ কিন্তু বুন্ডেসটাগে তাকে আলিঙ্গন করে অভ্যর্থনা জানান আলিস ভাইডেল৷
ছবি: Ronny Hartmann/AFP/Getty Images
ইয়ান ভেনজেল শ্মিডট
তার দল এএফডির স্যাক্সনি রাজ্যের সদস্যরাই তার বিরুদ্ধে ব্ল্যাকমেইলিং ও মিথ্যাচারের অভিযোগ তুলেছে৷ তা সত্ত্বেও
বুন্ডেসটাগ সদস্য হয়েছেন এবং একজন নব্যনাৎসি ও ঘোষিত ফ্যাসিবাদপ্রেমীকে তার কার্যালয়ে নিয়োগ দিয়েছেন এএফডির এই তরুণ নেতা৷
ছবি: Klaus-Dietmar Gabbert/dpa/picture alliance
স্টেফান প্রচকা
এএফডির শাখা সংগঠন এবং চরম ডানপন্থি হবার কারণে নিষিদ্ধ ঘোষিত ‘ডেয়ার ফ্ল্যুগেল’-এর সদস্য ছিলেন প্রচকা৷ হলোকস্টে নিহতদের ছবির অবমাননাকর মন্তব্য করা একটি ফেসবুক গ্রুপ ‘দ্য পেট্রিয়টস’-এরও সদস্য ছিলেন তিনি৷ আনে ফ্রাঙ্ক, যার বিখ্যাত ডায়েরি গোটা বিশ্বের কাছে পরিচিত, তার মুখের একটি ছবি একটি পিৎজা বক্সে বসিয়ে ঠাট্টা করে পোস্ট করে এই গ্রুপটি৷ সাথে ছিল ক্যাপশন ‘ডি ওফেনফ্রিশে’, অর্থাৎ সদ্য চুল্লি থেকে বেরোনো৷
ছবি: Christoph Hardt/Panama Pictures/picture alliance
ডারিও জাইফার্ট
৩১ বছর বয়সি এই এএফডি রাজনীতিক এৱ আগে নব্য নাৎসি সংগঠন ‘ইয়ং ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটস’-এর সদস্য ছিলেন৷ এই সংগঠনের ডানপন্থার ধরন এতটাই চরম যে, খোদ এএফডিও বাধ্য হয়ে তাকে কালো তালিকাভুক্ত করে৷ জার্মানির সাবেক চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল যে আসন থেকে জিতে এসেছিলেন সংসদে, সেই আসনেই এবার জয়যুক্ত হয়েছেন ডারিও জাইফার্ট৷
ছবি: Bernd Wüstneck/dpa/picture alliance
স্টেফান ম্যুনৎসেনমায়ার
বুন্ডেসটাগে এএফডির ‘মাস্টারমাইন্ড’ বলা হয় স্টেফান ম্যুনৎসেনমায়ারকে, কারণ, তিনিই আলিস ভাইডেলকে তৈরি করার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা ব্যক্তি৷ ফুটবল ম্যাচে বিশৃঙ্খলার একটি ঘটনায় তাকে দশ হাজার ইউরো জরিমানা দিতে হয় ২০১৮ সালে৷ ওই ঘটনায় একজনকে গুরুতর শারীরিক আঘাত করার অপরাধে তখন ছয় মাসের জন্য দল থেকে বহিস্কার করা হয় তাকে৷