জার্মানি সহ তুরস্ক ও সুইজারল্যান্ডে একই দিনে তিনটি হামলার ঘটনায় আতঙ্ক ও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অনেকে৷ এদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘সন্ত্রাসী’দের নিশ্চিহ্ন করার অঙ্গীকার করেছেন৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির রাজধানী বার্লিনে সোমবার রাতে ব্যস্ত ক্রিসমাস মার্কেটে লরি নিয়ে ঢুকে ১২ জনকে হত্যার ঘটনায় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে৷ ঐ ঘটনায় আহত হয়েছেন প্রায় অর্ধশত৷ লরির চালক সন্দেহে একজনকে আটক করেছে বার্লিনের পুলিশ৷ গাড়ির ভেতরে আরেকজনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে৷ সন্দেহভাজন ট্রাক চালক পাকিস্তান বা আফগানিস্তান বংশোদ্ভূত আশ্রয়প্রার্থী বলে জানিয়েছে জার্মান সংবাদ সংস্থা ডিপিএ ও দৈনিক ডি ভেল্ট৷ সে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে জার্মানিতে এসেছে বলে জানা গেছে৷ তবে কর্তৃপক্ষ এখনও এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু জানায়নি৷
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, পোল্যান্ড থেকে ইস্পাত নিয়ে ট্রাকটি ইটালিতে যাচ্ছিল, তবে সোমবার বিকেল ৫টায় ট্রাক চালকের সঙ্গে শিপিং কোম্পানির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়৷
এদিকে, তিন স্থানে হামলার ঘটনার সমালোচনা করে ভবিষ্যৎ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘সন্ত্রাসী’দের নিশ্চিহ্ন করার অঙ্গীকার করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আইসিস সহ অন্যান্য ইসলামি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো জিহাদের অংশ হিসেবে তাদের সমাজে বসবাসরত খ্রিষ্টানদের নিয়মিতভাবে হত্যা করছে৷’’
বার্লিন হামলা: বিশেষ কয়েকটি তথ্য
বার্লিনে ক্রিসমাস মার্কেটে ট্রাক হামলার ঘটনার তদন্ত করছে কর্তৃপক্ষ৷ এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ১২ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে তারা৷ ছবিঘরে থাকছে ঘটনা সংক্রান্ত কিছু তথ্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kappeler
ঘটনা যেখানে
ব্রাইটশাইড প্লাৎস, কাইজার ভিলহেল্ম মেমোরিয়াল গির্জার সামনের চত্বর, যা পর্যটকদের কাছে একটি জনপ্রিয় ও সুপরিচিত স্থান৷ এর উত্তর পূর্ব দিকে বার্লিনের চিড়িয়াখানা ও তার সংলগ্ন রেল স্টেশন৷ আর দক্ষিণে কেনাকাটার জন্য বিখ্যাত কুয়রফ্যুয়র্স্টেনডাম বা কুডাম স্ট্রিট৷
ছবি: Google Earth
নিস-এ যা হয়েছিল
এই ছবিটি জুলাইয়ে নিস হামলার কথা মনে করিয়ে দেয়, যেখানে ৮৬ জন মানুষ নিহত হয়েছিল৷ ফ্রান্সের সেই শহরেও ভিড়ের মধ্যে দিয়ে ট্রাক চালিয়ে দেয়া হয়েছিল৷ বার্লিনের এই ঘটনায় ফ্রান্সের ক্রিসমাস মার্কেটে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
যাঁরা হামলার শিকার
পুলিশ এ পর্যন্ত ১২ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে৷ আহত অন্তত ৫০ জনের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে৷ বার্লিনের মেয়র মিশেল ম্যুলার নির্দেশ দেন আহতদের যাতে তৎক্ষণাত ইউনিভার্সিটি হসপিটাল চ্যারিটিতে নিয়ে যাওয়া হয়৷
ছবি: Reuters/P. Kopczynski
বার্লিন পুলিশ
ঘটনার পর পরই ব্রাইটশাইড প্লাৎস-এর আশেপাশের সড়ক বন্ধ করে দেয় পুলিশ৷ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে পুলিশ বার্লিনের জনগণের ঘটনাস্থলে না আসার এবং গুজবে কান না দেয়ার অনুরোধ জানান৷ কোনো জিজ্ঞাস্য থাকলে +৪৯৩০৫৪০২৩১১১ – এই নম্বরে ফোন করার পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
সন্দেহভাজন
পুলিশ সন্দেহভাজন একজনকে আটকের খবরটি নিশ্চিত করেছে৷ ট্রাকে একজনের মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে৷ তবে হামলাকারীর সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য জানায়নি পুলিশ৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
তদন্ত চলছে
পুলিশের বিশেষ বাহিনী ব্রাইটশাইড প্লাৎস ঘিরে রেখেছে৷ এছাড়া বানহফ চিড়িয়াখানার আশপাশে পুলিশ টহল দিচ্ছে৷ বার্লিনের অপরাধ বিষয়ক পুলিশ এবং অ্যাটর্নি জেনারেল ঘটনার তদন্ত করছে৷
ছবি: Reuters/P. Kopczynski
প্রতিক্রিয়া
জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ম্যার্কেল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বার্লিনের মেয়রের সঙ্গে যোগাযোগ করে যাচ্ছেন৷ জার্মান প্রেসিডেন্ট ইওয়াখিম গাউক জানিয়েছেন তিনি শোকাহত৷ বার্লিন ও পুরো জার্মানির জন্য এটা একটা কালো সন্ধ্যা৷
ছবি: REUTERS/P. Kopczynski
7 ছবি1 | 7
ফিলিপ মরিস টুইটারে লিখেছেন, ‘‘ভবিষ্যত নিয়ে এতটা ভীত আমি কখনো হইনি৷’’ হারশিমরাত কওর বার্লিন হামলায় নিহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন৷ স্টেফানি হামিল লিখেছেন, ‘‘একই দিনে তিন তিনটি হামলার ঘটনা৷ আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি৷ হামলায় যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের প্রতি আমার সমবেদনা এবং নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করছি৷’’
আরেক টুইটার ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘‘যে তোমাকে আশ্রয় দিয়েছে, সেই মানুষদের কীভাবে তুমি হত্যা করো? এটা সবচেয়ে ভয়ংকর বিশ্বাসঘাতকতা৷’’
জার্মান পুলিশ কোনো গুজবে কান না দিয়ে তাদের টুইট অ্যাকাউন্টে দেয়া তথ্য অনুসরণ করার আহ্বান জানিয়েছে৷
ট্রাক চালক সম্ভাব্য মুসলিম শরণার্থী হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে পল যোসেফ ওয়াটসন লিখেছেন, ‘‘ম্যার্কেলের নীতি এখন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে৷'' এজন্য তিনি ম্যার্কেলকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন৷
সংকলন: অমৃতা পারভেজ
সম্পাদনা: জাহিদুল হক
‘ইসলামিক স্টেট’ আসলে কী?
আল-কায়েদার অখ্যাত এক উপদল থেকে প্রভাবশালী ‘মিলিট্যান্ট মুভমেন্টে’ পরিণত হয়েছে তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএস৷ জিহাদি এই গোষ্ঠীটির দখলে থাকা অঞ্চল থেকে আক্রমণের কৌশল – আইএস-এর এমন নানা দিক তুলে দেয়া হলো এই ছবিঘরে৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Souleiman
আইএস কোথা থেকে এসেছে?
ইসলামিক স্টেট (আইএস) সুন্নী ইসলামিস্ট আদর্শে বিশ্বাসী আল-কায়েদার একটি উপদল, যেটি আইএসআইএল, আইসিস এবং দায়েশ নামেও পরিচিত৷ ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন আক্রমণের পর এটির বহিঃপ্রকাশ ঘটে৷ এই গোষ্ঠীর নেতৃত্বে রয়েছেন আবু বকর আল-বাগদাদি৷ জঙ্গি গোষ্ঠীটির লক্ষ্য হচ্ছে ইরাক, সিরিয়া এবং অন্যান্যা অঞ্চল নিয়ে একটি ইসলামিক স্টেট বা খেলাফত প্রতিষ্ঠা করা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
আইএস কোথায় কাজ করে?
বিশ্বের ১৮টি দেশে আইএস সক্রিয় রয়েছে বলে ধারণা করা হয়৷ ইরাক এবং সিরিয়ার কিছু অংশ এই গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং এটি সিরিয়ার রাকা শহরকে রাজধানী হিসেবে বিবেচনা করে৷ তবে ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে এখন অবধি নিজেদের দখলে থেকে এক চতুর্থাংশ এলাকা তাদের হাতছাড়া হয়ে গেছে৷
কারা তাদের বিরুদ্ধে লড়ছে?
আইএস-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বেশ কয়েকটি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে৷ বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশের সমন্বয়ে তৈরি মার্কিন নেতৃত্বাধীন একটি ‘কোয়ালিশন’ আইএস অধ্যুষিত এলাকায় বিমান হামলা চালাচ্ছে৷ এই কোয়ালিশনে কয়েকটি আরব দেশও রয়েছে৷ অন্যদিকে সিরিয়া সরকারের পক্ষে সেদেশে বিমান হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া৷ তবে ভূমিতে তাদের বিরুদ্ধে লড়ছে কুর্দিশ পেশমার্গার মতো আঞ্চলিক শক্তিগুলো৷
ছবি: picture-alliance/abaca/H. Huseyin
আইএস-এর অর্থের উৎস কী?
জঙ্গি গোষ্ঠীটির অর্থ আয়ের অন্যতম উৎস হচ্ছে তেল এবং গ্যাস৷ এটি এখনো সিরিয়ার তেল উৎপাদনের এক তৃতীয়াংশ দখলে রেখেছে৷ আর মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিমান হামলার অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে জঙ্গি গোষ্ঠীর এই মূল্যবান সম্পদ৷ এছাড়া কর, মুক্তিপন এবং লুট করা পুরাকীর্তি বিক্রি করেও অর্থ আয় করে এই জঙ্গি গোষ্ঠীটি৷
ছবি: Getty Images/J. Moore
আইএস কোথায় কোথায় জঙ্গি হামলা চালিয়েছে?
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অসংখ্য জঙ্গি হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএস৷ চলত বছর সবচেয়ে ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলাটি চালানো হয়েছে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে, যেখানে দু’শোর বেশি মানুষ নিহত ও অসংখ্য মানুষ আহত হয়েছে৷ আইএস-এর নেতারা জঙ্গি গোষ্ঠীটির আদর্শে বিশ্বাসীদের এককভাবে বিভিন্নস্থানে আঘাত হানতে উৎসাহ প্রদান করে৷
অন্যান্য আর কী কৌশল ব্যবহার করে আইএস?
নিজেদের ক্ষমতার পরিধি বাড়াতে অনেক কৌশল ব্যবহার করে আইএস৷ জঙ্গি গোষ্ঠীটি ‘কালচারাল ক্লিনজিংয়ের’ নামে সিরিয়া এবং ইরাকের অনেক ঐতিহাসিক শিল্পকর্ম লুট ও ধ্বংস করেছে৷ এছাড়া সংখ্যালঘু ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর কয়েকহাজার মেয়েকে ক্রীতদাসী বানিয়েছে৷ গোষ্ঠীটি নিজেদের ‘প্রোপোগান্ডা’ এবং নিয়োগের কাজে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে থাকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
শরণার্থী হয়েছেন কতজন?
সিরিয়ায় চলমান গৃহযুদ্ধের কারণে সেদেশের প্রায় ৬০ লাখ মানুষ প্রতিবেশী লেবানন, জর্ডান এবং তুরস্কে আশ্রয় নিয়েছেন৷ অনেক সিরীয় ইউরোপেও পাড়ি জমিয়েছেন৷ এছাড়া প্রায় ৩০ লাখ ইরাকে ইরাকের মধ্যেই অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন বলে খবর৷