‘একজনের লাইসেন্সে রেজিষ্ট্রেশন, চালাচ্ছেন অন্যজন’
১১ জুন ২০১৯ডয়চে ভেলে : বাংলাদেশে কবে থেকে রাইড শেয়ারিং শুরু হয়েছে?
হুসেইন মোহাম্মদ ইলিয়াস : ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে পাঠাও রাইড শেয়ারিং শুরু করে।
এ পর্যন্ত আপনাদের নেটওয়ার্কে কতটি গাড়ি যুক্ত হয়েছে?
গাড়ি ও মটরবাইক মিলে ২ লাখের মতো ভেইকেল যুক্ত হয়েছে।
আপনাদের নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়া গাড়ির কাগজপত্র এবং চালকের লাইসেন্স ও পরিচয় কিভাবে নিশ্চিত করেন?
তাদের যে আইডেনটিটি পেপার আছে, গাড়ির যেসব কাগজ আছে সেগুলো আমরা রেকর্ডে রাখি। লাইসেন্স খুবই সহজেই চেক করা যায়। বিআরটিএর সিস্টেম আছে সেখানে লাইসেন্স নম্বর দিয়ে এসএমএস দিলে ফিরতি এসএমএসে বিস্তারিত জানা যায়। জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি চেক করার জন্য আমরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। বিআরটিএর গাইডলাইন অনুযায়ি এই কাজ চলছে।
আপনি তো দেখেছেন, পুলিশের তদন্তে ধরা পড়ছে, ভুয়া পরিচয়ে রাইড শেয়ারিংয়ে নিবন্ধন হচ্ছে গাড়ি ও চালক?
হ্যাঁ এমনটা আমরাও দেখেছি। আসলে হচ্ছে কি, অনেক চালক তার লাইসেন্স নেই, কিন্তু যার লাইসেন্স আছে এমন কাউকে দিয়ে এখানে রেজিষ্ট্রেশন করাচ্ছে। আমরা যখন ভেরিফাই করছি তখন দেখছি, লাইসেন্স একজনের, চালাচ্ছেন আরেকজন। এমন কয়েকশ' চালককে আমরা নেটওয়ার্ক থেকে বের করে দিচ্ছে। আবার প্রতিদিনই অনেক বৈধ চালক নেটওয়ার্কে যুক্ত হচ্ছেন। বিষয়টি খুবই শক্তভাবে আমরা মনিটরিং করছি।
আপনাদের অ্যাপ ব্যবহার করে যারা সেবা নিচ্ছেন তাদের নিরাপত্তা কতটুকু?
আমাদের অ্যাপের মধ্যেই কিন্তু আছে, কোন কিছু হলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে। কিছু বিষয় নিয়ে আমরা বিআরটিএর সঙ্গে কাজ করছি। পাশাপাশি কোন ভেইকেল দুর্ঘটনায় পড়লে আমরা ইনস্যুরেন্স সুবিধা দিয়ে থাকি। এটা যেমন চালকের জন্য, তেমনি যারা সেবা নিচ্ছেন তাদের জন্যও।
আপনাদের নেটওয়ার্কে যুক্ত হতে হলে তো বেশ কিছু ব্যক্তিগত তথ্য দিতে হয়, এই তথ্যগুলো কি নিরাপদ থাকছে?
এই তথ্যগুলো আমরা খুবই গুরুত্বত্বের সঙ্গে জমা রাখি। এই তথ্যগুলো শুধুমাত্র সার্ভিসের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। পাশাপাশি গ্রাহক সেবার কাজেও এই তথ্যগুলো ব্যবহার হয়।
রাইড শেয়ারিং নিয়ে কি কোন নীতিমালা হয়েছে?
হ্যাঁ, হয়েছে। গত বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে এটা প্রনয়ণ করা হয়েছে।
আপনারা নীতিমালা কতটুকু মানছেন?
নীতিমালা হলেও কেউ এখনো লাইসেন্স নেয়নি। এখনো অপারেশনে এটা কাজে আসছে না। এটা হলে অনেক কাজে আসবে। যেমন আমি উদাহরণ দেই, এখানে বলা হয়েছে চালকদের ঠিকানা ভেরিফাই করতে হবে। এটা করতে হলে আমাদের নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এনআইডি ডেটাবেজ নিয়ে কাজ করতে হবে। এই কাজটা কিন্তু হচ্ছে না। আমাদের পুলিশের সঙ্গেও কাজ করতে হবে। এখনো বেশ কিছু গ্রাউন্ড ওয়ার্ক বাকি আছে। এখানে ১৬টি রাইড শেয়ারিং কোম্পানী কাজ করছে, তারা আবেদনও করেছে। কিন্তু এখনও কেউ তালিকাভুক্ত হয়নি।
এই প্রতিষ্ঠান চালাতে গিয়ে কি ধরনের সংকটে পড়তে হয় আপনাদের?
আমাদের ইন্ড্রাষ্ট্রিটা তো নতুন। দুই বছরেরও কম এর বয়স। এখানে শিক্ষার কিছু ঘাটতি আছে। সেটা চালক ও যারা সেবা নিচ্ছেন তাদের সবার। আমরা আসলে কাজ করে যাচ্ছি কিভাবে আরো ভালো সেবা দেওয়া যায়।
মাঝে মধ্যেই প্রতারণার অভিযোগ শোনা যায়, প্রতিকারের পথ কি?
আমাদের নেটওয়ার্কে দুই লাখ গাড়ি, চালক ও ১০ লাখের মতো ব্যবহারকারী আছে। আসলে কেউ যদি কখনো প্রতারণার শিকার হন তাহলে সঙ্গে সঙ্গে আমাদের অবহিত করা। যাতে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি।
কোন গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়লে কি ইনস্যুরেন্স কাভারেজের আওতায় আসে?
আমরা প্রতিটি গাড়ির জন্য ফ্রি ইনস্যুরেন্স দিয়ে থাকি। এই সুবিধা চালক যেমন পান, ব্যবহারকারীও পান।
মাঝে মধ্যেই যাত্রী ও চালকদের মধ্যে বিবাদ লেগে যায়? এটা কেন হয়?
এটা আমি বলব বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আমাদের অ্যাপের মধ্যেই কিন্তু শুরুতে একটা সম্ভাব্য ফেয়ার থাকে, আর শেষে একচুয়াল ফেয়ার দেওয়া হয়। এই দু'টোর মধ্যে অনেক সময় কিছু পার্থক্য দেখা যায়। কারণ রাস্তায় যানজট বা আপনি তাকে বেশি পথ ঘুরিয়ে নিয়ে গেলেন তখন কিছু বেড়ে যায়। এটা আসলে মেজর ইস্যু না। বিচ্ছিন্ন দু'একটি ঘটনা ঘটতে পারে। লাখ লাখ রাইড ব্যবহার হচ্ছে। এর মধ্যে দু'একটা ঘটনা এমন থাকতে পারে।
উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে যদি বাংলাদেশের রাইড শেয়ারিংকে তুলনা করতে বলি, আপনি কি বলবেন?
আমি বলব, এখনো অনেক দূর যেতে হবে। উন্নত দেশে ৮/৯ বছর ধরে চলছে। বাংলাদেশে এটা নতুন। এখনো এটা টার্মওয়েলের উপর দিয়ে যাচ্ছে। এখনো রাইড শেয়ারিং রেগুলেশন ইমপ্লিমেন্ট হয়নি। এখনো আমাদের উইজার এবং ড্রাইভার সবার শিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের টেকনোলজীতে কাজ করতে হবে। আমাদের অবকাঠামো এখনো উন্নত দেশগুলোর মতো হয়নি। তবে ভালো খবর গত বছরের চেয়ে এ বছর অনেক উন্নতি হয়েছে। আগামী বছর হয়তো আরো বেশি উন্নতি আপনারা দেখবেন। এভাবে চললে আগামী ৬/৭ বছরের মধ্যে একটা ভালো অবস্থায় চলে যাবে।
রাইড শেয়ারিংকে কিভাবে সুশৃঙ্খল করা যায়, আপনার পরামর্শ কি?
আমি প্রথমেই বলব, এর জন্য রেগুলেটরের হেল্প লাগবে। একটা উদাহরণ দেই, আমরা শুরু থেকেই সব চালককে বলে আসতাম উইজারকে অবশ্যই হেলমেট দিতে হবে। আমাদের মটর ভেইকেল রেগুলেশনে লেখা আছে, চালক ও যাত্রী উভয়কেই হেলমেট পড়তে হবে। কিন্তু চালকরা দিলেও উইজারা সেটা ব্যবহার করতেন না। গত বছর সরকার যখন এটা নিয়ে কড়াকড়ি আরোপ করল, বলল- হেলমেট না থাকলে পাম্প থেকে তেল দেওয়া হবে না, তখন সবাই এটা ব্যবহার শুরু করেছে। এই কারণে বলি এখাকে রেগুলেটরের বড় ভূমিকা আছে। এই ভূমিকা অন্য শহরগুলোতেও নিতে হবে। আমরা কিছু পালিসি নিতে পারি, কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন তো করবে ট্রাফিক পুলিশ। আমি বলব, তাদের কাছে আমাদের অনেক সহযোগিতা লাগবে। আরেকটা জিনিস বলি, আমাদের উইজারদেরও হেল্প দরকার। এখন তারা যদি রাস্তার মধ্যে দাঁড়িয়ে রিক্সায় যাওয়ার মতো করে বাইকারদের ডাকেন এবং উঠেন, তাহলে আমরা তো তাদের নিরাপত্তা দিতে পারব না। ফলে অবশ্যই আপনি এই সেবা নিতে গেলে আপনাকে কোন না কোন নেটওয়ার্কে যুক্ত হতে হবে। আমরা সব সময় ভাবি শুধু চালকদের দোষ। আসলে কিন্তু তা নয়।
আপনাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, উইজারদের যে হেলমেট দিচ্ছেন তা কিন্তু মাথা সেভ করছে না?
আমরা এখন নতুন হেলমেট দিচ্ছি। এগুলো আসলে চালকদেরই দেওয়ার কথা। তারপরও ঈদের পর থেকে নতুন হেলমেট আপনারা দেখবেন।
আপনাদের এই সেবা কি শুধুমাত্র রাজধানীতেই?
ঢাকার বাইরে আমরা চট্টগ্রাম ও সিলেটে এই সেবা শুরু করেছি। আর দেশের বাইরে নেপালের রাজধানী কাঠমুন্ডুতে পাঠাও এই সেবা চালু করেছে।
আপনি কি একমত? লিখুন নীচের ঘরে৷