1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

একজন তরুণকেও এখন জাতীয় দলে চাই না

১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০

১৯ বছরের তরুণ দল বিশ্বজয় করেছে৷ এটা নতুন খবর নয়৷ নতুন খবর হলো, সবাই হিসেব করছে এদের কে কখন জাতীয় দলে জায়গা করে নেবেন৷ কিন্তু আমি বলছি, এদের একজনকেও মূল দলে চাই না৷ মানে এখনি চাই না৷

Südafrika Potchefstroom  Cricket-Endspiel U19-Weltmeisterschaft Bangladesch vs Indien
ছবি: AFP/M. Spatari

এই বেলায় প্রয়াত ফাহিম মুনয়েম-এর কথা মনে পড়ছে৷ তিনি মাছরাঙা টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী ছিলেন৷ একসময় ছিলেন দি ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক৷ তাঁর অফিসে একটা ছোট্ট ‘ডেস্কপিস' ছিল৷ সেখানে লেখা ছিল, ‘অ্যাটিটিউড ইজ এভরিথিং৷’ যখনই ওনার সঙ্গে কথা বলতে যেতাম, ওটা আমার চোখে পড়ত৷ তিনি মজার মানুষ ছিলেন৷ প্রায়ই ইংরেজিতে নানান ‘ইডিয়ম' ব্যবহার করতেন, যেগুলো নিয়ে আমরাও অনেক মজা করতাম৷ যেমন, বলতেন ‘ডোন্ট পুট অ্যাস বিটউইন ইউ অ্যান্ড মি’, ‘অ্যাজ্যুম’ (Assume) কোরো না৷’’ সে যাই হোক, তিনি এই ‘অ্যাটিটিউড' ব্যাপারটিকে অনেক গুরুত্ব দিতেন এবং আমাকে একবার বলেছিলেন, ‘‘এটা সবসময় ধরে রাখবে৷’’

অনূর্ধ্ব ১৯ দলটিকে অনেকের মতোই আমার ভালো লেগেছে৷ তাদের দক্ষতা যেমন আছে, আছে বিশ্বসেরা হবার শরীরী ভাষা৷ এটা একটা বড় উন্নতি৷ একটা সময় বড় বড় ক্রিকেটাররা পিঠ চাপড়ে দিলেই খুশি থাকতাম আমরা৷ হয়তো সুনীল গাভাস্কার বলছেন, আজ একটি চমৎকার ‘কাভার ড্রাইভ’ করেছ৷ সেটাই হয়ে উঠত বড় পাওনা৷ এরপর এল ‘সম্মানজনক পরাজয়'-এর যুগ৷ বাংলাদেশ অধিকাংশ ম্যাচ হারছে৷ কিন্তু আমরা খুশি হচ্ছি, বড় ব্যবধানে পরাজিত হইনি৷ হুটহাট এক আধটি জয়েই রং খেলা আর মিছিলের বন্যায় ভাসত রাজপথ৷ এরপর শুরু হলো নিয়মিত ব্যবধানে কিংবা ধারাবাহিক জয়ের পালা৷ বিশ্বকাপ না হোক, এশিয়া কাপ জিততে জিততেও হাতছাড়া হলো৷ বাংলাদেশ একটি শক্তিশালী দল হিসেবে মোটামুটি প্রতিষ্ঠা পেল৷ সবশেষ অনূর্ধ্ব ১৯ দল বিশ্বসেরা হয়ে একটা নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে বলে মনে করি আমি৷ কেন নতুন দিগন্ত বলছি সেটা পরিষ্কার করা প্রয়োজন৷ 

খুব বিখ্যাত একটা চীনা উক্তি আছে- ‘‘খুব জোরে বাতাস আসলে বেশিরভাগ মানুষ দেয়াল তৈরি করেন৷ কিন্তু কিছু মানুষ তৈরি করেন বাতাসের কল বা ‘উইন্ডমিল'৷'' অর্থাৎ কোনো একটা ঘটনা, নতুন বা পুরোনো, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ‘অ্যাপ্রোচ'- মানে কেমন করে তাকে দেখা হচ্ছে৷ সেই দৃষ্টিভঙ্গি সময়ের সঙ্গে সঙ্গেও বদলায়, কারণ সময় মানুষকে আরো অভিজ্ঞ করে তোলে৷ শুধু পিঠ চাপড়ে দিয়েই যেই বাংলাদেশিদের আগে প্রবোধ দেয়া হতো, আজ তারা বিশ্বসেরা হয়ে উঠতে পারছে৷ এর কারণ, তাদের কঠোর পরিশ্রম, তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷ কিন্তু তারচেয়েও বড় তাদের ‘অ্যাপ্রোচ'৷ যেই ‘অ্যাটিটউড' নিয়ে এত কথা, তা না থাকলে এরা বিশ্বজয় করতে পারতেন বলে আমি মনে করি না৷ তবে তা খেলার ভেতরেই সীমাবদ্ধ রাখলেই ভালো৷

তবে এও ঠিক যে, শুধু ভাবভঙ্গি দেখালে হবে না, পরিশ্রম ও নিষ্ঠা চাই৷ কিন্তু আমি বলছি মাঠের ভেতরে আগ্রাসী না হলে যুদ্ধ জয় করা যায় না৷ প্রতিপক্ষের মনোবল ভেঙ্গে দেয়াও যুদ্ধকৌশলের অংশ৷ শরীফুল-রাকিবুলদের মধ্যে সেই শরীরী ভাষা ছিল এবং তা তারা কাজেও লাগাতে পেরেছেন৷ তাই এই যে ‘ভাষাশিক্ষা', এই যে ‘অ্যাটিটিউড', এটা নিজেদের সেরা ভাবতে শেখার অংশ৷ একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, বিশ্বসেরার লড়াইয়ের ময়দান পর্যন্ত যারা পৌঁছান তাদের সবারই সেরা হবার যোগ্যতা আছে৷ সেই যোগ্যতার ওপর আস্থা কে কতটা রাখতে পারছে এবং খেলার মাঠে প্রতিপক্ষকে দেখে ভড়কে যাচ্ছে না, সেটা নিশ্চিত করতে পারলেই জয় আসে৷ আগের দিনে বড় বড় অস্ত্র নিয়ে যখন যুদ্ধের ময়দানে যেত, তখন প্রতিপক্ষের সৈন্য সামন্তরা সেই অস্ত্রের বিশালত্ব দেখে ভয় পেত৷ ক্রিকেটে সেই বড় অস্ত্রগুলোর নাম শচীন, লারা, গেইল, ডি ভিলিয়ার্স, কোহলি, স্মিথ, উইলিয়ামসন -এরা৷ কিন্তু ২২ গজের উইকেটে এদের নিয়মিত চোখ রাঙিয়ে দিতে পারাটা অভ্যাসে পরিণত করা গেলে জয়টাও অভ্যাসে পরিণত হতে পারে৷

এখন আসি, যাদের নিয়ে এত প্রশংসা, কেন আমি এই তরুণদের মূল দলে নেবার বিপক্ষে৷ আসলে বিপক্ষে নই, বরং তাদের জন্য দলে ঢোকাটা যেন সহজ না হয়, সেজন্যই এত কথা৷ কারণ, প্রায়ই একটা বিষয় নিয়ে আমরা আলাপ করি যে, আমাদের ক্রিকেটারদের ক্যারিয়ার কেন তাদের প্রতিভার মতো লম্বা হয় না৷ তার অনেক কারণ আছে৷ এর মধ্যে একটা হয়তো ‘ভিশন'৷

জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে কোনোমতে জায়গা পাকাপোক্ত করে রাখাটাই যদি ভিশন হয়, তাহলে আমরা সুফল পাবো না৷ কিন্তু এই ১৯ বছর বয়সীদের ভেতর ভিন্ন কিছু দেখতে পেয়েছি বলেই এত কথা৷ তারা কঠোর পরিশ্রম করেছে শিরোপার জন্য৷ তারা কঠোর পরিশ্রম করছে, বড় কিছু করার জন্য৷ বড় কিছু করেছেও৷ আমাদের সেরা তারকা সাকিব আল হাসানকেই ধরুন৷ বিশ্বকাপের আগে কী কঠোর পরিশ্রমটাই না তিনি করেছেন৷ তার ফলও পেয়েছেন৷ সাকিব এত কঠোর পরিশ্রম না করলেও, তিনি অন্য খেলোয়াড়দের চেয়ে ভালোই করতেন বলে আমি মনে করি৷ কিন্তু তিনি নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে চেয়েছেন৷ চেয়েছেন অন্য দলগুলোর সেরা খেলোয়াড়দের ছাড়িয়ে যেতে৷ এমন বড় কিছু করার তাগিদ সবার থাকবে, এমনটি ভাবার কারণ নেই৷ সাকিবের মতো ভাবেন আর কেউ আছেন এখন বাংলাদেশ দলে? আমি আশা করব, আছেন৷ 

যুবায়ের আহমেদ, ডয়চে ভেলে

ভয় হলো, ঊনিশ দলের খেলোয়াড়রা  যদি সহজে মূল দলে জায়গা পেয়ে যান, তাহলে তাদের পরিণতি হতে পারে সৌম্য-ইমরুল-সাব্বিরদের মতো৷ নির্বাচকের দৃষ্টি দিয়ে দেখলে শরীফুল, রাকিবুল, হৃদয়, তানজিদ ও শাহাদাতের ভবিষ্যত আমি এখনই দেখতে পাচ্ছি৷ তাদের কারো কারো স্থানীয় লিগ ও অনুর্ধ ১৯ বিশ্বকাপ- দুই জায়গাতেই পারফরম্যান্স ভালো৷

তবে তাদের জন্য দলে ঢোকা আরো কঠিন করতে হবে৷ তাদের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নিয়মিত পারফর্ম করতে হবে৷ একজন ‘ম্যাচ্যুরড' ক্রিকেটার হিসেবে দলে ঢুকতে হবে৷ মিরাজ-সাইফুলদের কথাই ধরুন৷ তারা জাতীয় দলে আছেন৷ মোটামুটি পারফর্ম করে যাচ্ছেন৷ দু'জনই অনুর্ধ ১৯ দল থেকে আসা৷ প্রতিভাবান বলেই খুব বেশি কষ্ট করতে হয়নি৷ কিন্তু আমি মনে করি, তাদের কাছ থেকে সেরাটা পাচ্ছি না আমরা৷

অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট দলে এখনো ৩১ বছর বয়সে অভিষেক হয়৷ আমাদের জাতীয় দলের পুল এত বড় হয়ে গেছে যে নির্বাচকদের দল বাছাই করতে রীতিমত হিমসিম খেতে হয়৷ আজকের ক্রিকেটে লম্বা সময় ধরে একজন পারফর্ম করেই যাবেন, সেটা ভাবার কারণ নেই৷ সামনে ক্রিকেটারদের জাতীয় দলে খেলার বয়স সবমিলিয়ে ১০ থেকে ১৫ বছরের বেশি হবে না৷ এর মধ্যে ৫ বছর হয়তো তিনি ফর্মের তুঙ্গে থাকবেন৷ তাই সেই সেরা ফর্মটুকু যেন জাতীয় দল ব্যবহার করতে পারে, সেভাবে দল গোছাতে হবে৷ কিছু প্রেসক্রিপশন এরই মধ্যে খেলোয়াড়রা দিয়েছেন সাকিবের নেতৃত্বে৷ সেগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলাপ হয়েছে আগে৷ তাই এখানে তার ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই৷ স্থানীয় ক্রিকেটকে বিশ্বসেরা মানের নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে৷ আর এভাবেই চ্যাম্পিয়নসুলভ শরীরী ভাষার যে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে, তার সঠিক ব্যবহার করা যাবে৷

প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ