1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

একজন শ্যামল কান্তি এবং রাষ্ট্রের চেহারা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৫ মে ২০১৭

নারায়ণগঞ্জের শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে এক বছর আগে প্রকাশ্যে কান ধরে উঠ-বস করিয়েও ক্ষান্ত হয়নি প্রভাবশালীরা৷ এক বছর পর তাঁকে জেলে পাঠিয়েছে৷ এক শিক্ষকের এই অপমান ও হয়রানিকে অনেকে দেখছেন ‘রাষ্ট্রের দেউলিয়াত্ব’ হিসেবে৷

আদালত প্রাঙ্গনে শ্যামল কান্তি বিশ্বাস
আদালত প্রাঙ্গনে শ্যামল কান্তি বিশ্বাস (বুধবারের ছবি)ছবি: bdnews24.com

ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে গত বছরের ১৩ মে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে লাঞ্ছিত করা হয়৷ তাঁকে প্রকাশ্যে কান ধরে উঠবস করানো হয় স্থানীয় এমপি সেলিম ওসমানের উপস্থিতিতে৷ তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে তখন মামলারও ‘অপচেষ্টা’ করা হয়৷ তবে সারাদেশে মানুষের ক্ষুব্ধ প্রতিবাদের মুখে প্রভাবশালীরা সে যাত্রা ব্যর্থ হয়৷

শ্যামল কান্তিকে অপমান ও লাঞ্ছিত করার ঘটনার তদন্ত হয়৷ এই ঘটনায় হাইকোর্টের নির্দেশে গড়া বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি এমপি সেলিম ওসমানসহ দু'জনকে দায়ী করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে৷ গত মঙ্গলবার (২৩ মে) ঢাকার সিএমএম আদালতে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগও গঠন করা হয়৷ আর ওই দিনই আদালত সেলিম ওসমানের জামিন মঞ্জুর করেন৷

আর এর  একদিন পরই (বুধবার) শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কারাগারে পাঠানো হলো একটি ঘুষের মামলায়

গত মে মাসে শ্যামল কান্তিকে অপমান ও লাঞ্ছিত করার পর  ২৭ জুলাই একই স্কুলের ইংরেজির শিক্ষিকা মোর্শেদা বেগম চাকরি এমপিওভুক্ত করে দেওয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে মোট ১ লাখ ৩৫ হাজার ঠাকা ঘুস নেয়ার অভিযোগে শ্যামল কান্তির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন৷ সেই মামলায় নারায়ণগঞ্জ আদালত বুধবার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে৷ সেদিনই তিনি আদালতে হাজির হয়ে জামিন চান৷ জামিন না দিয়ে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়৷

পুলিশ প্রহরায় কারাগারে যাওয়ার সময় শ্যামলকান্তি উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘একটি প্রভাবশালী চক্রের দ্বারা আমি লাঞ্ছিত হওয়ার পর ওই মহলই আমাকে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করতে এই শিক্ষিকাকে দিয়ে মামলা করিয়েছে৷ যে সময় ঘুষ নেওয়ার কথা মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সে সময় স্কুলের শীতকালীন ছুটি ছিল৷ ছুটির দিনে আমি কেন স্কুলে যাব এবং তিনি কিভাবে স্কুলে এসে আমাকে ঘুষ দিলেন৷’’

গত বছর শ্যামল কান্তিকে অপমান ও লাঞ্ছিত করার জবাবে দেশের অনেক মানুষই কান ধরে প্রতিবাদ জানিয়েছিল৷ তাঁকে কারাগারে নেয়ার পরও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সর্বস্তরের মানুষই এর প্রতিবাদ জানাচ্ছেন৷

যেভাবে কারাগারে পাঠানো হয়েছে তাতে স্পষ্ট, পেছনে প্রভাবশালীদের হাত আছে: সুলতানা কামাল

This browser does not support the audio element.

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কাবেরী গায়েন এ বিষয়ে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘আমি তো বলি, খুব ঠিক আছে৷ এমনই হবার ছিল৷ সালতানাতে থাকবে ওসমান পরিবার অথচ রফিউর রাব্বি আর শ্যামল কান্তি সেখানে স্বাভাবিক ঘোরাফেরা করবেন, এ আবার হয় না কি! স্যার, ধর্ম অবমাননা আর ‘আর্থিক অনিয়ম’ ছাড়াও আপনি আর কী কী দুর্নীতি করেছেন একসাথে বলে আজীবন জেলে ঢুকে যান৷ আপনাকে ১৮ বার ফাঁসি আর ২৬৩ বছর জেল দেয়া হোক৷’’

সাংবাদিক সানাউল্লাহ লাবলু লিখেছেন, ‘‘শ্যামল কান্তি কান ধরবে, পা ধরবে আবার জেলেও যাবে৷ বাহ্ কী তামাশা!’’

সাংবাদিক প্রভাষ আমিন তার ফেসবুক পোষ্টে বলেছেন, ‘‘শিক্ষক লাঞ্ছনার মামলায় ২৩ মে জামিন পেয়েছেন সাংসদ সেলিম ওসমান৷ পরের দিন সকালেই লাঞ্ছিত শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে ঘুষের মামলায় ওয়ারেন্ট ইস্যু হলো৷ বিকালেই আত্মসমর্পণ করলে জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়৷

আমি দাবি করব তিনি যেন ন্যায়বিচার পান: রাশেদা কে চৌধুরী

This browser does not support the audio element.

কী চমৎকার দেখা গেল৷ আইন চলছে নিজস্ব গতিতে৷ ইহাকেই বলে আইনের শাসন- লাঞ্ছিত থাকে কারাগারে, লাঞ্ছনাকারী জামিন নিয়ে ঘুরে বেড়ায়৷’’

শ্যামল কান্তির ঘুসের মামলায় কারাবরণ প্রসঙ্গে মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যেভাবে শ্যামল কান্তিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে তাতে এটা স্পষ্ট যে, এর পিছনে প্রভাবশালীদের হাত আছে৷ আর তাঁকে যে প্রভাশালী ব্যাক্তি অপমান ও লাঞ্ছিত করেছিলেন, তিনি জামিন পেয়েছেন৷ তাঁকে কারাগারে যেতে হয়নি৷ প্রভাবশালীরা এর আগে তার বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে কারাগারে পাঠাতে চেয়েছিল, কিন্তু পারেনি৷ কিন্তু এবার তারা সফল হয়েছে৷’’

শিক্ষাবিদ এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে. চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শুরু থেকেই আমরা দেখেছি একটি প্রভাবশালী এবং প্রতিক্রিয়াশীল চক্র তাঁকে ফাঁসাতে চেষ্টা করেছে৷ এখন তারা আইনের সহায়তায় তাঁকে জেলে পাঠাতে পেরেছে৷ আমি দাবি করব, তিনি যেন ন্যায় বিচার পান৷ শ্যামল কান্তি যেন সুবিচার পান৷ আইনের ফাঁক দিয়ে বড় বড় রাঘব বোয়ালরা বেরিয়ে যায় সেখানে শিক্ষক শ্যামল কান্তির কী অপরাধ আমি ঠিক বুঝতে পারছি না৷’’

এখানে রাষ্ট্রের নির্লজ্জ চেহারা বের হয়ে পড়েছে: গোলাম মোর্তজা

This browser does not support the audio element.

আর সাংবাদিক এবং ‘সাপ্তাহিক’-এর সম্পাদক গোলাম মোর্তোজা শ্যামল কান্তির এই কারাগারে যাওয়াকে দেখছেন ‘‘রাষ্ট্রের দেউলিয়াত্ব’ হিসেবে৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রে আইন এবং প্রশাসন সাধারণ মানুষের পক্ষে কাজ করে না৷ অপরাধীদের প্রটেকশন দেয়৷ শ্যামল কান্তির বেলায়ও তাই ঘটেছে৷ তারা যাকে অপমান-অপদস্থ করেছে, আইন ও প্রশাসন সেই প্রভাবশালী অপরাধীদের পক্ষেই কাজ করেছে৷ এখানে রাষ্ট্রের নির্লজ্জ চেহারা বের হয়ে  পড়েছে৷’’

প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ