সিরিয়ার আলেপ্পো শহরে মানবিক বিপর্যয়ের অবসানের কোনো সম্ভাবনা না উঠে এলেও কিছুটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে৷ রাশিয়া জানিয়েছে, সে দেশ আগামী সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টার অস্ত্রবিরতি কার্যকর করতে প্রস্তুত৷
বিজ্ঞাপন
আলেপ্পো শহরের ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি গোটা বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছে একটি অসহায় শিশুর ছবি৷ তাতে দেখা যাচ্ছে, এক ধ্বংসস্তুপ থেকে তাকে উদ্ধার করার পর বিহ্বল অবস্থায় শিশুটি বসে আছে৷ এই শক্তিশালী প্রতীকী ছবিটি গোটা বিশ্বে যে আবেগ সৃষ্টি করেছে, সম্ভবত তার জের ধরেই বিবাদমান দুই পক্ষ তাদের সুর কিছুটা নরম করছে৷
@dwnews - Picture of bloodstained Aleppo boy moves social media
02:37
একদিকে রাশিয়া সমর্থিত প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বাহিনী৷ অন্যদিকে বিদ্রোহীদের জোট৷ আলেপ্পো শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে চলছে জোরালো সংঘর্ষ৷ যেসব মানুষ এখনো শহর ছেড়ে চলে যেতে পারেনি, তাদের জন্য এই পরিস্থিতি এক মানবিক বিপর্যয় ডেকে এনেছে৷ খাদ্য, পানীয়, রসদের অভাবে জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে৷ এই অবস্থায় অস্ত্রবিরতি ছাড়া জরুরি ত্রাণ সরবরাহ সম্ভব নয়৷ আগামী সপ্তাহে ‘পরীক্ষামূলকভাবে' ৪৮ ঘণ্টার অস্ত্রবিরতি মেনে নিতে রাজি হয়েছে রাশিয়া৷ জাতিসংঘের ত্রাণসাহায্য যাতে নির্বিঘ্নে শহরে প্রবেশ করতে পারে, তার জন্য সুরক্ষাও নিশ্চিত করতে চায় সে দেশ৷
সিরিয়ায় জাতিসংঘের বিশেষ দূত স্টাফান দে মিস্তুরা রাশিয়ার এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন৷ জাতিসংঘ এ ক্ষেত্রে রাশিয়ার কথার উপর নির্ভর করবে বলে তিনি জানিয়েছেন৷ বিশেষ করে আসাদ বাহিনীর রাশ টেনে ধরতে মস্কোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে৷ উল্লেখ্য, সিরিয়ায় মানবিক সাহায্য বিতরণ করতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে এক বিশেষ টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে৷ কিন্তু লাগাতার সংঘর্ষের ফলে গত এক মাসে একবারও ত্রাণ বিতরণ করা সম্ভব হয়নি৷
মানবিক বিপর্যয়ের সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে মার্কিন প্রশাসন সাময়িক যুদ্ধবিরতির বদলে এক স্থায়ী বন্দোবস্তের ডাক দিয়েছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন আলেপ্পো শহরে অবিলম্বে সংঘর্ষ বন্ধ করে ত্রাণ ও ওষুধপত্র বিতরণ এবং জরুরি অবকাঠামোর মেরামতি সম্ভব করার আহ্বান জানিয়েছে৷
মেয়ের ক্যানভাসে যুদ্ধের বিভীষিকা
প্রতিদিন সিরিয়া ছাড়ছে অসখ্য মানুষ৷ আশ্রয় খোঁজা মানুষদের মধ্যে আছে শিশুরা, যারা যুদ্ধের বিভীষিকা নিজের চোখে দেখেছে৷ অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে যাত্রা করা তেমনই এক মেয়ে ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলেছে যুদ্ধের ভয়াবহতা৷
ছবি: DW/M.Karakoulaki
বাড়িটা যেমন ছিল
সিরিয়ার এক শরণার্থী মেয়ে কলম আর কাগজ বেছে নিয়েছে তার জীবনের গল্প বলতে৷ এই ছবির ক্যাপশনে সে লিখেছে, ‘‘এটা সিরিয়া, মৃত্যু দূত৷ সিরিয়ার রক্ত ঝড়ছে৷’’ মেয়েটির আঁকা ছবিতে দেখা যাচ্ছে ট্যাঙ্ক থেকে একটি শহরের দিকে গোলা ছোড়া হচ্ছে৷ একইসঙ্গে আকাশ পথে চলছে হামলা৷ ফলে বাড়িগুলো আগুনে পুড়ে যাচ্ছে আর একটি কবরের পাশে দাঁড়িয়ে একজন তা দেখছে৷
ছবি: DW/M.Karakoulaki
মৃত্যু এবং হতাশা
‘‘এটা আমার বাবা, মা এবং পরিবারের - এবং সিরিয়ার সকল পরিবারের কবর,’’ মেয়েটা লিখেছে৷ তার কথায়, ‘‘সিরিয়ার শিশুদের অবস্থা এমন৷’’ তার হাতে থাকা ছবিটিতে তিনটি কবর এবং শুয়ে থাকা কয়েকজনকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: DW/M.Karakoulaki
শিশুরা মারা যাচ্ছে
এখানে এজিয়ান সাগরে ডুবে প্রাণ হারানো আয়লান কুর্দির মরদেহ আঁকার চেষ্টা করেছে মেয়েটি৷ তার মৃত্যু গোটা ইউরোপকে নাড়িয়ে দিয়েছিল৷ সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের কারণে শিশুদের চরম দুর্দশা ফুটে উঠেছিল কুর্দির মৃত্যুর মধ্য দিয়ে৷
ছবি: DW/M.Karakoulaki
‘এটা সিরিয়ার মানুষের আসল ট্রাজেডি’
যুদ্ধ থেকে বাঁচতে গিয়ে হাজার হাজার মানুষ সমুদ্রে ডুবে মারা গেছে৷ অনেক শিশু হারিয়েছে তাদের অভিভাবক৷ অবৈধ পথে সিরিয়া থেকে ইউরোপের উদ্দেশ্যে যাত্রা খুবই বিপজ্জনক৷
ছবি: DW/M.Karakoulaki
থমকে যাওয়া জীবন
গ্রিসের ইডোমেনি শরণার্থী শিবিরে কিছু শিশু ছিল যারা তাদের অভিভাবকের সঙ্গে পুনরায় মিলিত হওয়ার আশায় ছিল৷ তাদের বাবা-মা সীমান্ত বন্ধ হওয়ার আগেই ইউরোপে প্রবেশে সক্ষম হয়েছিল৷ কিন্তু বাকিদের আশা ধীরে ধীরে ক্ষীন থেকে ক্ষীনতর হচ্ছে৷ ছবির ক্যাপশন, ‘‘শিশুদের সব আশা, স্বপ্ন এখন ময়লার বাক্সের মধ্যে আছে৷’’
ছবি: DW/M.Karakoulaki
হারানো স্বপ্ন
‘‘শিশুদের ইউরোপে যাওয়ার স্বপ্ন হারিয়ে গেছে-’’ লিখেছে মেয়েটি৷ তার কথায়, শরণার্থী শিবিরে থাকা অনেক শিশু ইউরোপে শান্তিতে থাকার স্বপ্ন দেখেছিল৷ কিন্তু তারা বুঝতে পেরেছে, সেই স্বপ্ন শীঘ্রই বাস্তব হওয়ার আশা নেই৷
ছবি: DW/M.Karakoulaki
‘তাদের বুঝতে হবে যে তারা শিশু’
দশ বছর বয়সি এই শিশুটির মতো আরো অনেক শিশু ইডোমেনি ক্যাম্পে রয়েছে৷ মানবাধিকার সংগঠনগুলো মনে করে, শরণার্থী শিবিরে শিশুদের দিকে আলাদাভাবে খেয়াল রাখা হচ্ছে না৷