নব্বইয়ের দশকে সহিংসতায় জর্জরিত আসামে বিচ্ছিন্নতাবাদ আজ কেবলই অতীতের কথা মনে করায়৷ আসামের ভাঙন কি তবে শুধুই অতীত?
বিজ্ঞাপন
আমার ছোটবেলায় খবরের কাগজ মানেই বুঝতাম প্রথম পাতায় বড় শিরোনাম, ‘আলফার বোমায় মৃত ১৫' বা ‘কূটনীতিক খুন, দায়ী আলফা'৷ আলফা(উচ্চারণের ভিন্নতায় কখনও উলফা) মানে ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অফ আসাম৷ সত্তরের দশক থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সরকারের ঘুম কেড়ে নেওয়া অন্যতম সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গি সংগঠন, যাদের মূল লক্ষ্য ছিল ভারত রাষ্ট্রের বাইরে স্বাধীন আসাম প্রতিষ্ঠা৷
আমার মতোই নব্বইয়ের দশকে আসামে থাকতেন এমন মানুষদের কাছে আলফা ছিল অনেকটা পাড়ার মোড়ের চা-বিক্রেতার মতো, যাকে প্রতিদিন সকালে স্কুল যাবার রাস্তায় একবার দেখতে না পেলে মনে হতো, গোটা দিনটাই অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে৷ যে দিন শিরোনামে থাকতো না আলফা, গোটা দিনটাই মনে হতো কিছুটা অস্বাভাবিক৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও, আসামের মানুষ আজ প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে একটু একটু করে ভুলতে শিখেছে আলফার দৈনন্দিন উপস্থিতি৷ ২০১৯ সালে দাঁড়িয়ে প্রথম পাতায় সবচেয়ে বেশি জায়গাজুড়ে আলফার খবর থাকলে তা ব্যতিক্রম, স্বাভাবিক নয়৷
কিন্তু মাঝের দুই দশকে কী এমন ঘটে গেল আসাম তথা গোটা উত্তর পূর্ব ভারতে, যাতে করে আলফাসহ আরো বেশ কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর স্থান প্রথম পাতা থেকে ‘আঞ্চলিক সংবাদে' পরিণত হলো?
স্তম্ভিত করে দেয়া গুলশান হামলা
ঘটনাটি কাঁপিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের হৃদয়, আলোড়ন উঠেছিল দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে৷
ছবি: bdnews24.com
গুলশানে হামলা
বিশ্ব মানচিত্রে পরস্পরের সঙ্গে লাগোয়া মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন বাংলাদেশ অর্ধ শতাব্দী পূর্বে স্বাধীন হয়েছে ধর্ম নিরপেক্ষতার চেতনায়৷ দেড় দশক ধরে নানা জায়গায় মুসলিম জঙ্গিবাদ ছড়ালেও খানিকটা যেন নিরাপদেই ছিল দেশটি৷ রাজনৈতিক সহিংসতা ছিল৷ তার অনেকগুলোতে জঙ্গিদের ব্যবহারের কথাও তদন্তে উঠে আসে৷ তবে ঘোষণা দিয়ে বড় ধরণের হামলা আর হয়নি৷ এই ঘটনায় স্তম্ভিত হয়েছে গোটা দেশ৷
ছবি: bdnews24.com
যেভাবে শুরু
তখন ছিল রমজান৷ ঘটনার দিন ১ জুলাই রাত পৌনে ৯টার দিকে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে একদল অস্ত্রধারী গুলশানের একটি রেস্টুরেন্ট ঢুকে পড়ে৷ স্প্যানিশ ওই রেস্টুরেন্টটির নাম হোলি আর্টিজান৷ ঢোকার সময়ই তারা বোমা ফাটিয়ে আতঙ্ক তৈরি করে৷
ছবি: bdnews24.com
জিম্মি দশা
অস্ত্রধারীরা রেস্টুরেন্টে ঢোকার পর সেখানে জিম্মি সংকট শুরু হয়৷ বাইরে চলে নানা গুজব৷ হামলার পর তাৎক্ষণিকভাবে কয়েকজন রেস্টুরেন্টকর্মী বের হয়ে আসতে সক্ষম হন৷ বাংলাদেশে এর আগে ১৯৭৭ সালে ঢাকায় আরেকটি জিম্মি সংকট ব্যাপক আলোচনার বিষয় হয়েছিল৷ তখন মুম্বাই থেকে টোকিওগামী একটি জাপানি বিমানের যাত্রীদের জিম্মি করে বিমানটি ঢাকায় নামিয়েছিল দেশটির বামপন্থি বিদ্রোহী দল ‘ইউনাইটেড রেড আর্মি’৷
ছবি: picture-alliance/abaca
কোথায়
অবস্থানগত কারণেও এই ঘটনা আলোচনায় ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে৷ কারণ, রেস্তোরাঁটি ঢাকার গুলশান এলাকায়৷ বিভিন্ন দেশের দূতাবাস রয়েছে এই এলাকায়৷ কয়েকটি দূতাবাস তো রেস্টুরেন্টের একেবারেই কাছে৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press Agency/M. Hasan
টার্গেট বিদেশি, টার্গেট হোলি আর্টিজান
ঢাকার অভিজাত এই এলাকার রেস্টুরেন্টটিতে পোষা প্রাণী নিয়ে প্রবেশ করা যেতো৷ এর ভেতরে উন্মুক্ত লন ছিল, সেখানে বাচ্চারা খেলাধুলা করতে পারতো৷ ওই এলাকায় থাকা বিদেশিদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছিল রেস্টুরেন্টটি৷ বিদেশিদের টার্গেট করতেই এই রেস্টুরেন্টকে বেছে নেয়া হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন৷
ছবি: bdnews24.com
প্রাণহানি পুলিশেরও
জিম্মি সংকট শুরুর পর ঘটনা সামলাতে এগিয়ে যায় পুলিশ বাহিনী৷ কিন্তু প্রথম দিকেই জঙ্গিদের হামলায় বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিন ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল ইসলাম প্রাণ হারান৷ এতে আতঙ্ক আরো বাড়ে৷
ছবি: bdnews24.com
ডাক পড়ে সেনাবাহিনীর
পুলিশ হতাহত হওয়ার পর অভিযান নিয়ে নতুন করে চিন্তা শুরু হয়৷ এক পর্যায়ে জঙ্গিদের কবল থেকে ওই রেস্টুরেন্টটি মুক্ত করার অভিযান রাতে কার্যত স্থগিত হয়ে যায়৷ শেষ পর্যন্ত ডাক পড়ে সেনাবাহিনীর৷ সাঁজোয়া যান নিয়ে সেনা সদস্যরা অভিযান পরিচালনা করেন৷
ছবি: bdnews24.com
আইএস সংশ্লিষ্টতা
রাতে জিম্মি দশা চলাকালে তথাকথিত ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আইএস হামলার দায় স্বীকার করেছে বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর আসতে থাকে৷ তবে সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে তা অস্বীকার করে৷
ছবি: Reuters/A.Konstantinidis
কিভাবে ঘটনার শেষ
ঘটনার অবসান হয় প্রায় ১২ ঘণ্টা পর সেনা অভিযানে৷ অবশ্য তার আগেই জঙ্গিরা সেখানে থাকা ২০ জনকে খুন করে৷ মরদেহ উদ্ধারের মধ্য দিয়ে গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারির জিম্মি সংকটের অবসান ঘটে৷ জীবিত উদ্ধার করা হয় এক জাপানি ও দুই শ্রীলঙ্কানসহ মোট ১৩ জনকে৷
ছবি: bdnews24.com
আলোচিত সেই বাড়ি
ঘটনার পর রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যায় গুলশানের সেই বাড়ি৷ যে রেস্টুরেন্টে হামলা হয়েছিল, তার মালিক ঘটনার পর বাড়িটি ফিরিয়ে নেন৷
ছবি: bdnews24.com
নতুন ঠিকানায় হোলি আর্টিজান
গত বছরের ১ জুলাই রাতে যখন হামলা হয়, তখন হোলি আর্টিজান ছিল গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর বাড়িতে৷ দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর জানুয়ারিতে এসে গুলশান এভিনিউর র্যাংগস আর্কেডের দ্বিতীয় তলায় নতুন করে চালু হয় রেস্টুরেন্টি৷
ছবি: bdnews24.com
জঙ্গিবাদ ও বিচার
এই ঘটনার পর আইএস দায় স্বীকার করলেও বাংলাদেশ সরকার এর জন্য স্থানীয় জঙ্গি সংগঠন জেএমবির পুনর্গঠিত একটি শাখাকে দায়ী মনে করে৷ ঘুরে ফিরে এর সঙ্গে জড়িত হিসাবে একই ব্যক্তিদের নাম আসতে থাকে৷ সরকার তাদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করে৷ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর আগাম পদক্ষেপে তাদের বহু ঘাঁটি ও অবস্থানস্থল ধ্বং হয়ে গেছে৷ সরকারের তরফে বলা হচ্ছে, এই ঘটনার তদন্ত শেষ করতে ৫ ব্যক্তিকে খোঁজা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
12 ছবি1 | 12
আলফা ও সহিংস নস্টালজিয়া
১৯৭৯ সালে আসামের রাজনীতিতে ইস্যু হয়- ‘বিদেশি'৷ মুক্তিযুদ্ধের পর ভারতে শরণার্থীদের ভিড়৷ জরুরি অবস্থার পর সারা দেশ ভারতীয়ত্বের সন্ধান করছে৷ সেই সময়, আসামের উঠতি অসমীয়া জাতীয়তাবাদ মাটি খুঁজে পায় খিলঞ্জিয়া (আসামের আদি নিবাসী) = ভারতীয়, এই সমীকরণে৷ আসামে আশ্রয় নেয়া বাংলাদেশি শরণার্থীরা নাড়িয়ে দিয়েছিল আসামে অসমীয়া-বাঙালির ঐতিহাসিক হিসেব৷ ভোটার তালিকায় সেই অমিল থেকে খিলঞ্জিয়া ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে শুরু হয় ‘বঙাল খেদা' আন্দোলন৷ একই বছর, ১৯৭৯ সালেই জন্ম আলফার৷ আন্দোলনশেষে, ১৯৮৫ সালে ‘বঙাল খেদা'র তৎকালীন নেতৃত্বের এক দল আসামে সরকার গঠন করে৷ এরপরের কয়েক বছর ধরে, গণমাধ্যমে আলফার উপস্থাপনের স্বাভাবিকীকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়৷ আসামসহ উত্তর পূর্বের অন্যান্য রাজ্যে বাড়তে থাকে আলফার জনপ্রিয়তা৷
কিন্তু হিসেবে গোলমাল লেগে যায় যখন ১৯৯০ সালে আলফাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দেয় ভারত সরকার৷ ‘অপারেশন বজরং', ‘অপারেশন রাইনো' রাগিয়ে দেয় আলফা নেতৃত্বকে৷ একের পর এক হাইপ্রোফাইল কূটনীতিক, রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, প্রকৌশলীদের অপহরণ, খুনের সাথে জড়াতে থাকে তাদের নাম৷ একটা পর্যায়ে আসামে বহিরাগত ব্যবসায়ীদের সংখ্যা এসে তলানিতে ঠেকে৷ শুধু তাই নয়, একাধিক বোমা হামলায় সাধারণ জনজীবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ এনডিএফবি (ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট অফ বোড়োল্যান্ড) ও আলফার মতো একাধিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের বাড়বাড়ন্ত এই অঞ্চলে ইন্ধন জোগায় রাষ্ট্রবিরোধী চেতনাকে৷ বিদেশি শক্তিদের কল্যাণে এই গোষ্ঠীর হাতে মজুত হয়েছে অত্যাধুনিক অস্ত্র, বোমা৷ অন্যদিকে, ১৯৯২ পরবর্তী সময়ে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর থেকে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছিল হিন্দি-হিন্দু-ভারতীয় সমীকরণ৷ সেই সময় যে ধরণের ‘ভারতীয়ত্বে' জোর দেওয়া হচ্ছিল জাতীয় পর্যায়ে, সেই ভারতীয় চেতনায় স্থান ছিল না আঞ্চলিক বৈচিত্র্যের৷ স্বাভাবিকভাবেই, কিছু গোষ্ঠীর মধ্যে জমতে থাকে ক্ষোভ৷ কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে একটা পর্যায়ে এসে কমে যেতে থাকে আলফার গ্রহণযোগ্যতা৷
একদিকে ব্যাপক সহিংসতার কারণে সন্ত্রাসের পরিবেশ, অন্যদিকে সেনাবাহিনীর চাপ, সব মিলিয়ে নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয় আলফার গণহারে আত্মসমর্পণ৷ আলফা ভেঙে জন্মায় আরেক দল ‘সালফা' (সরকারের সাথে সংলাপে আগ্রহী সাবেক আলফা সদস্য)৷ আলফার ভেতরের ভাঙাগড়ার মাঝেই ১৯৯১-১৯৯৮ সময়ে আত্মসমর্পণ করেন ৪ হাজার ৯৯৩ জন৷ ২০১৯ সালের হিসেব, মোট ৮ হাজার ৭১৮ আলফা সদস্য আত্মসমর্পণ করেছে৷ এছাড়া, অজ্ঞাতনামা বন্দুকধারীদের গুলিতে মারা গেছেন বহু আলফা সদস্যেরা৷
বাংলাদেশে লুকিয়ে থাকা আলফা নেতৃত্বের অনেককেই ভারত সরকারের হাতে তুলে দিয়েছে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ৷ ফলে সেখানেও একটি নিরাপদ স্থান হারিয়েছে তারা৷ আজকের আসামে আলফা সাধারণ নাগরিকের কাছে শুধুই সহিংস নস্টালজিয়া৷ যা ছিল, এখন নেই৷
ভাঙতে ভাঙতে যেখানে শেষ..
স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতের আর কোন রাজ্য এতবার নিজেকে ভাঙেনি, যত বার ভেঙেছে আসাম৷ ১৯৪৭ সালের আসাম প্রথমবার ভাঙে ১৯৬৩ সালে৷ নাগা গোষ্ঠীর স্বাধিকারকে মর্যাদা দিয়ে জন্ম হয় নাগা রাজ্যের৷ বর্তমান নাগাল্যান্ডেরও রয়েছে আংশিক স্বায়ত্তশাসনের অধিকার, যার কারণে নাগাদের রীতি অনুযায়ী পালন করা হয় প্রশাসনিক কাজকর্ম৷ ভাষাগত ভিন্নতা ও স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে একে একে জন্মায় মেঘালয় (১৯৭২), মিজোরাম ও অরুণাচল প্রদেশ (১৯৮৬)৷ মণিপুর ও ত্রিপুরা কখনোই আসামের এই মানচিত্রের অংশ ছিল না৷ তারা ভারতে যোগদান করে ‘প্রিন্সলি স্টেট' বা রাজত্ব হিসাবে৷ কিন্তু আসাম ভাঙার যে প্রক্রিয়া ১৯৮৬ সালে থেমে গিয়েছিল বলে মনে করেন অনেকে, তা এখন আবার প্রশ্নের মুখে৷
আলফার স্বাধীন আসামের স্বপ্ন আপাতভাবে স্থগিত, কিন্তু নতুন অনেক এমন গোষ্ঠী বর্তমানে আসামে কাজ করছে, যাদের মূল উদ্দেশ্য ভাঙন বা বিচারান্তরে, স্বাধীনতা৷ বোড়োল্যান্ড তো রয়েছেই, অন্যদিকে রয়েছে বাংলাভাষী বরাক উপত্যকার নিজেকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসাবে গড়ে তোলার জোরালো দাবি৷ ওপর থেকে দেখলে, শান্তি ও গণতন্ত্রের জয় হয়েছে আলফার এই প্রাসঙ্গিকতা হারানোর মধ্যে৷ কিন্তু মাঠপর্যায়ে গেলে বোঝা যাবে, ভাঙনের অনেক পথ খোলা৷ হ্যাঁ, সহিংসতার পরিমাণ হয়তো সেই তুলনায় কম, কিন্তু ২০১২ সালের ভয়াবহতা মনে করিয়ে দিচ্ছে যে এটাই শেষ নয়৷
আগামী ৩০ আগস্ট প্রকাশ পাবে আসামের নাগরিকপঞ্জীর চূড়ান্ত তালিকা৷ আশঙ্কা করছেন অনেকে, বাদ পড়বেন কম করে কয়েক লক্ষ মানুষ৷ এই মানুষদের ঠাঁই দেবে না কোনো মাটি৷ ৩১ আগস্ট থেকে যদি এই মানুষরা প্রশ্ন করেন, তাদের জন্য কোন রাজ্য বরাদ্দ, উত্তর দিতে পারবে না গণতন্ত্র৷ হাওয়ায় ভাসছে বরাক উপত্যকার পৃথকীকরণের দাবি৷
ছোটবেলার মতো আমি আজও প্রতিদিন সকালে সেই পুরোনো চা-বিক্রেতার খোঁজে আসামের খবরের কাগজ পড়ি৷ কিন্তু চায়ের দোকানের বদলে ওখানে নাগরিকপঞ্জীর ভূত দেখতে পাই৷
জঙ্গি থাবা বাংলাদেশে
নানা মত, নানা পথকে পাথেয় করে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন নামে গড়ে উঠেছে জঙ্গি সংগঠনগুলো৷ বাংলাদেশে মসজিদ থেকে আদালত, মেলা থেকে সিনেমা হল- কিছুই বাদ যায়নি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর থাবা থেকে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Nath
উদীচীতে শুরু
১৯৯৯ সালের ৭ মার্চ যশোরে উদীচী শিল্প গোষ্ঠীর উপর জঙ্গিদের বোমা হামলায় ১০ জন নিহত এবং ১০৬ জন আহত হয়৷ এর পর থেকে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে জঙ্গিরা৷ ২০০৬ সালের ৮ ডিসেম্বর নেত্রকোণায় উদীচী কার্যালয়ের সামনে বোমা হামলায় নিহত হয় আট জন৷
ছবি: bdnews24.com
উৎসবে হামলা
২০০১ সালের ১৪ এপ্রিলে রমনা বটমূলে বাংলা নববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় ১০ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়৷ ২০০৩ সালে নারায়ণগঞ্জ শহরের দনিয়ার এক মেলায় বোমা হামলা চালিয়ে হত্যা করা হয় ৮ জনকে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Nath
মসজিদে হামলা
১৯৯৯ সালের ৮ অক্টোবর খুলনায় আহমদিয়াদের মসজিদে জঙ্গিদের বোমা হামলায় আট জন নিহত এবং ৪০ জন আহত হয়৷ ২০১৫ সালের ২৪ অক্টোবর পুরান ঢাকায় হোসাইনি দালান ইমামবাড়ায় শিয়াদের সমাবেশে বোমা হামলায় একজন নিহত এবং অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়৷ ১৯৯৯ সালের ৮ অক্টোবর খুলনায় আহমদিয়াদের মসজিদে বোমা হামলায় মারা যায় আট জন, আহত হয় ৪০ জন।
ছবি: Picture-Alliance/AP Photo
সিনেমা হলে হামলা
২০০২ সালের ৭ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের অলকা, ছায়াবাণী, পূরবী ও অজন্তা সিনেমা হলে একযোগে বোমা হামলা হয়৷ তাতে মারা যায় ১৮ জন, আহত হয়েছিলেন ৩০০ মানুষ৷
ছবি: DW/ISPR
রেস্তোরাঁয় হামলা
২০১৬ সালে ঢাকার গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলায় বিদেশি নাগরিক ও দুই পুলিশ সদস্যসহ ২৩ জন নিহত হন৷ ওই হামলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে আত্মপ্রকাশ ঘটে নব্য জেএমবির৷
ছবি: bdnews24.com
বিদেশিদের উপর হামলা
২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটে তখনকার ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীকে লক্ষ্য করে বোমা হামলা করা হয়৷ ওই হামলায় হাইকমিশনার বেঁচে গেলেও মারা যান দুইজন৷ ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার গুলশানে খুন হন ইতালীয় নাগরিক তাভেল্লা সিজার। ২০১৫ সালের ৮ অক্টোবর জাপানি নাগরিক হোশি কোনিওকে রংপুরে গুলি করে হত্যা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/ A.M. Ahad)
আদালতে হামলা
২০০৫ সালের ১৪ নভেম্বর ঝালকাঠিতে সহকারী জেলা জজ সোহেল আহম্মেদ এবং জগন্নাথ পাঁড়েকে বোমা মেরে হত্যা করা হয়৷
ছবি: AP
মুক্তমনাদের উপর হামলা
বিভিন্ন সময় সশস্ত্র হামলায় বেশ কয়েকজন ব্লগার ও মুক্তমনা নিহত হয়েছেন৷ ২০১৫ সালের ঢাকায় গলা কেটে হত্যা করা জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনকে৷ ২০১৬ সালেন ২৫ এপ্রিল কলাবাগানে বাসায় ঢুকে জুলহাজ মান্নান ও মাহবুব তনয়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়৷ সমকামীদের অধিকার-বিষয়ক সাময়িকী ‘রূপবান’ সম্পাদনা ও প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন জুলহাজ আর মাহবুব ছিলেন নাট্যকর্মী৷
ছবি: Robert Richter
ঈদগায় হামলা
২০১৬ সালের ৭ জুলাই ঈদের সকালে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামাতের মাঠের কাছে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের ওপর বোমা হামলা এবং গোলাগুলিতে দুই কনস্টেবলসহ চারজন নিহত হয়৷
ছবি: bdnews24.com
হামলা সারা দেশে
২০০০ সালে দিনাজপুরের ফুলবাড়িতে বোমা হামলার মধ্য দিয়ে কার্যক্রম শুরু করে জামাআতুল মুজাহেদিন বাংলাদেশ বা জেএমবি৷ ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট ৬৩ জেলার ৫০০ স্থানে বোমা ফাটিয়ে আলোচনায় এসেছিল এই জঙ্গি গোষ্ঠী৷ ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত এবং কয়েকশ আহত হন।
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Munir
নিষিদ্ধ সাত সংগঠন
কিছু সংগঠনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নজরে আসার পর সেগুলোকে থামাতে সময়ে সময়ে পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার৷ ‘আনসার আল ইসলাম’, জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি), জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি), হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি), শাহাদাৎ-ই আল-হিকমা, হিযবুত তাহরীর এবং আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সব ধরনের কর্মকাণ্ড বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷