অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোর সংবাদের বিশ্বাসযোগ্যতা, গ্রহণযোগ্যতা কিংবা সম্পাদকীয় নীতিমালা বা পরিমিতিবোধ নিয়ে নানা কথা হচ্ছে৷ এর একটি প্রধান কারণ, প্রযুক্তির সহজলভ্যতা এবং সহজে ব্যবহারযোগ্যতায় গজিয়ে উঠছে ‘অনলাইন গণমাধ্যম'৷
বিজ্ঞাপন
লেখা যায় এবং সেটি অনলাইনে পোস্ট করা যায়, ন্যূনতম এমন একটি ডিভাইস থাকলেই এখন যে কেউ বনে যেতে পারেন অনলাইন নিউজ পোর্টালের মালিক-সম্পাদক-রিপোর্টারসহ সবকিছুই৷
প্রশ্ন হচ্ছে, এসব ভূঁইফোড় পোর্টালের গ্রহণযোগ্যতা কতোটা? এটা লাখ টাকার প্রশ্ন বটে! তার পাশাপাশি আরেকটি প্রশ্নও স্বাভাবিকভাবেই উঠে আসে, তথাকথিত ‘খ্যাতিমান' পোর্টালগুলো কি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিচ্ছে?
সম্প্রতি ফেসবুকের টাইমলাইন সয়লাব হয়ে গেল একটি নিউজে৷ প্রায় সবগুলো লিংকেরই শিরোনাম একই ধরনের, ‘আবারো ভাইরাল প্রভার ভিডিও৷' ভার্চুয়াল জগতে কমবেশি বিচরণ আছে এমন কারোই বিস্মরণ হওয়ার কথা নয়, কয়েক বছর আগে অভিনেত্রী সাদিয়া জাহান প্রভার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিলো৷ এর ফলে চূড়ান্ত হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে তাকে৷ তবে আশার কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের মতো একটি রক্ষণশীল দেশেও তিনি আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছেন৷ নতুন করে অভিনয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেছেন৷ এমন পরিস্থিতিতে যেখানে অনেকেই চাপ সইতে না পেরে হারিয়ে যান, এমনকি আত্মহননের পথও বেছে নেন, সেখানে প্রভার এই সাহসিকতাকে অবশ্যই সাধুবাদ জানাতে হয়৷
সেরা ১১ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন
পুলিৎজার পুরস্কারকে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার বলে ধারণা করা হয়৷ গত ১১ বছরে কারা পেয়েছেন এ পুরস্কার জানুন ছবিঘরে৷
ছবি: Heidi Levine
২০০৬ সাল
যুক্তরাষ্ট্রের পত্রিকা ‘ওয়াশিংটন পোস্টে’-র সাংবাদিক সুজান স্মিড, জেমস ভি গ্রিমাল্ডি এবং আর. জেফরি স্মিথ সে বছর পেয়েছিলেন এই পুরস্কার৷ সংস্কারের নামে মার্কিন কংগ্রেসে ওয়াশিংটন লবিস্ট জ্যাক আব্রামোফের দুর্নীতির বিষয়ে প্রতিবেদন করেছিলেন তারা৷
ছবি: AP
২০০৭ সাল
‘দ্য বার্মিংহ্যাম নিউজ’-এর ব্রেট ব্ল্যাকলেজ পেয়েছিলেন এই পুরস্কার৷ একটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরের দুর্নীতির তথ্য ফাঁস করে দেন তিনি৷ যার ফলে ঐ চ্যান্সেলরকে বরখাস্ত করা হয়েছিল এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল৷
ছবি: The Pulitzer Prizes Columbia University
২০০৮ সাল
এ বছর দু’টি পত্রিকা এ পুরস্কার পায়৷ ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’ পত্রিকার ওয়াল্ট বোগদানিচ এবং জেক হুকার পেয়েছিলেন এ পুরস্কার৷ চীন থেকে আমদানিকৃত ওষুধ ও নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্যে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি সংক্রান্ত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছিলেন তারা৷ এছাড়া ‘শিকাগো ট্রিবিউন’-এর এক প্রতিনিধি জিতেছিলেন এই পুরস্কার৷
ছবি: picture-alliance/dpa
২০০৯ সাল
‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এর ডেভিড বার্সতো পেয়েছিলেন এ পুরস্কার৷ কিছু অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা রেডিও ও টেলিভিশনে বিশ্লেষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে পেন্টাগনের সমর্থনে ইরাক যুদ্ধকে প্রভাবিত করছে৷ তাদের এসব বক্তব্যের কারণে কত কোম্পানি সুবিধাভোগ করছে তাও তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Emmert
২০১০ সাল
‘দ্য ফিলাডেলফিয়া ডেইলি নিউজ’-এর বারবারা ল্যাকার ও ওয়েনডি রুডারম্যান এবং ‘নিউইয়র্ক টাইম ম্যাগাজিন’-এর প্র-পাবলিকার শেরি ফিঙ্ক যৌথভাবে এ পুরস্কার জিতেছিলেন৷ একটি অসৎ পুলিশ দলের মাদক চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার ঘটনাটি উদঘাটন করেন ল্যাকার ও রুডারম্যান৷ ঘটনাটি নিয়ে ব্যাপক হৈ চৈ হয়েছিল৷ ফিঙ্ক ঘূর্ণিঝড় ক্যাটরিনা আঘাত হানার পর রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে চিকিৎসকদের মানসিক অবস্থা নিয়ে একটি প্রতিবেদন করেছিলেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Ngan
২০১১ সাল
‘সারাসোতা হেরাল্ড ট্রিবিউন’-এর পেইজি সেন্ট জন সে বছর পুলিৎজার পেয়েছিলেন৷ ফ্লোরিডার বাড়ি মালিকদের সম্পদের ইনস্যুরেন্সে দুর্বলতা সংক্রান্ত একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তাঁকে এ পুরস্কার এনে দিয়েছিল৷
ছবি: The Pulitzer Prizes Columbia University
২০১২ সাল
‘অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস’-এর ম্যাট অ্যাপুৎসো, অ্যাডাম গোল্ডম্যান, এইলিন সুলিভান এবং ক্রিস হাওলি সে বছর এই পুরস্কার জিতেছিলেন৷ নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগের ‘ক্ল্যানডেস্টাইন গুপ্তচর কর্মসূচি’র আওতায় শহরের মুসলিম সম্প্রদায়ের দৈনন্দিন জীবন যাপনের প্রতি নজর রাখা হচ্ছিল, যা প্রকাশ পায় এপি-র ঐ প্রতিবেদনে৷ প্রতিবেদন প্রকাশের পর কংগ্রেস থেকে কেন্দ্রীয় তদন্ত দাবি করা হয়৷
ছবি: The Pulitzer Prizes Columbia University
২০১৩ সাল
‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’ এর ডেভিড বার্সতো এবং আলেহান্দ্রা ইয়ানিক ফন বেরত্রাব এই বছর পুরস্কারটি পান৷ মেক্সিকোতে নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে কীভাবে ওয়াল-মার্ট ঘুষ দেয়, সেটা নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছিলেন তারা৷
ছবি: AP
২০১৪ সাল
ওয়াশিংটর ডিসির ‘দ্য সেন্টার ফর পাবলিক ইনটিগ্রিটি’-র ক্রিস হামবি জেতেন এই পুরস্কার৷ কয়লা খনির শ্রমিকদের ফুসফুসের রোগ নিয়ে কয়েকজন আইনজীবী ও চিকিৎসকের প্রতারণার চিত্র তুলে ধরেছিলেন তার প্রতিবেদনে৷ যার ফলে ঐ আইনজীবী ও চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল৷
ছবি: The Pulitzer Prizes Columbia University
২০১৫ সাল
এ বছর দুইজন জিতেছেন এই পুরস্কার৷ ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এর এরিক লিপটন কংগ্রেস নেতা ও অ্যাটর্নি জেনারেলদের লবিস্টরা তাদের কতটা প্রভাবিত করে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনের জন্য এবং ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’-এর এক প্রতিনিধির স্বাস্থ্য সেবা সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনের জন্য৷
ছবি: Imago/Rüdiger Wölk
২০১৬ সাল
চলতি বছরে ‘ট্যাম্পা বে টাইমস’-এর লিওনোরা লাপিটার ও অ্যান্থনি কর্মিয়ার এবং ‘দ্য সারাসোতা হেরাল্ড ট্রিবিউন’-এর মাইকেল ব্রাগা জিতেছেন এই পুরস্কার৷ ফ্লোরিডা মানসিক হাসপাতালের অবহেলার অমানবিক চিত্র ফুটে উঠেছিল তাদের প্রতিবেদনে৷
ছবি: The Pulitzer Prizes Columbia University
11 ছবি1 | 11
এখন ফিরে আসা যাক তাকে নিয়ে সাম্প্রতিক সংবাদ শিরোনামটির প্রসঙ্গে৷ যে ভিডিওটি কেন্দ্র করে দেশের কয়েকশত নিউজ পোর্টাল ‘নিউজ' করে বসলো, তার ভেতর সারবস্তু কতোটা? হ্যা, সংবাদটি অবশ্যই মিথ্যা, ভুয়া বা ফেইক নয়৷ প্রভা ইন্সটাগ্রামে একটি কয়েক সেকেন্ডের ভিডিও প্রকাশ করেছেন৷ সেখানে তিনি কাউকে উদ্দেশ করে লাভ সাইন দেখিয়েছেন৷ এবং হয়তো সেই ভিডিওটি তার লাখো ভক্ত বা ফলোয়ার দেখেছেনও৷ কিন্তু যেভাবে ইঙ্গিতপূর্ণ শিরোনামে সংবাদটি পরিবেশন করা হলো, তাতে এসব সংবাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক৷
এ ধরনের সংবাদ যখন অখ্যাত বা এমন খবর প্রকাশের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত অনলাইনগুলোতে প্রকাশিত হয়, তখন এ নিয়ে বিশেষ আলোচনার অবকাশ থাকে না৷ কারণ গণমাধ্যমের পাঠক বা দর্শক নিজেরাই নির্ধারণ করে নেন, কোথায় কী কন্টেন্ট পাওয়া যাবে, কোনটা বিশ্বাসযোগ্য কোনটি নয়৷ ফেসবুকের নিউজফিডে উল্লেখিত শিরোনামগুলো দেখে একাডেমিক ইন্টারেস্টে একটু সার্চ করে দেখলাম, কারা এই নিউজটি কাছাকাছি শিরোনামে করেছে! আর সেই অনুসন্ধানের ফলেই আবারো আমাদের অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলো নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন জাগলো৷
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাংবাদিকদের ভূমিকা
আগামী ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন৷ দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশে নির্বাচন কাভার করে আসছেন এ রকম কয়েকজন সাংবাদিকের মুখেই শুনুন নির্বাচনের সময় সাংবাদিকদের ভূমিকা কেমন হয় আর কেমন হওয়া উচিত৷
ছবি: Reuters
হারুন আল রশীদ, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, দৈনিক প্রথম আলো
সব মানুষেরই দল ও মত আছে, একজন সাংবাদিকেরও থাকবে৷ কারণ, রাজনৈতিক মত ও দর্শন থাকাটা দোষের নয়৷ তবে সাংবাদিক যখন তাঁর প্রতিবেদন তৈরি করবে, সেই প্রতিবেদন যেন তাঁর দলীয় মত ও দর্শন দ্বারা প্রভাবিত না হয়, বিশেষ করে নির্বাচনে৷ কারণ, এই বিশেষ গুণটিই একজন সাংবাদিককে সাধারণ মানুষ থেকে আলাদা হতে সাহায্য করে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
সোমা ইসলাম, বিশেষ প্রতিনিধি, চ্যানেল আই
নির্বাচনের পরিস্থিতি যেমনই থাকুক না কেন তার সাথে খাপ খাইয়ে মূল খবরটা জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়াটাই সাংবাদিকদের মূল কাজ৷ সামান্য ভুল কিংবা কোনো পক্ষকে কোনো সুবিধা দিতে গিয়ে রাষ্ট্র কিংবা জনগণ যেন ক্ষতির শিকার না হয়, সেটিই মুখ্য বিষয়৷ এছাড়া বাংলাদেশে নির্বাচনে কালো টাকার যে ছড়াছড়ি থাকে, তার হাতছানি পাশ কাটিয়ে সাংবাদিকদের নিরপেক্ষ থাকতে হয়৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
মইনুল হক চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
নির্বাচনের মাঠে সব দল ও প্রার্থী সমান সুযোগ পাচ্ছে কিনা তা গণমাধ্যমকর্মীরাই প্রতিবেদনে তুলে ধরেন৷ রাজধানীকেন্ত্রিক সাংবাদিক ও প্রান্তিক অঞ্চলের সাংবাদিকদের ভোটের দিন সঠিক ও তাৎক্ষণিক সংবাদ পরিবেশনে অসম প্রতিযোগিতা দেখা যায়৷ সে ক্ষেত্রে তথ্য যাচাই এবং মাঠের পরিস্থিতির সঠিক চিত্র তুলে ধরতে বেশ বেগ পেতে হয়৷ ফলাফল প্রচারের ক্ষেত্রে কেন্দ্রভিত্তিক আনুষ্ঠানিক ফলাফল ছাড়া তথ্য প্রচার করা উচিত নয়৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
আরাফাত সিদ্দিক, জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি, এনটিভি
বাংলাদেশে নির্বাচনের সময় সাংবাদিকদের ভূমিকা থাকে তাঁর প্রতিষ্ঠানের দিক নির্দেশনা অনুযায়ী৷ এক্ষেত্রে বেশিরভাগ সংবাদ প্রতিষ্ঠান ক্ষমতাসীন দল ও তাদের প্রার্থীদের আচরণবিধি লংঘনের বিষয়টি সরাসরি সম্প্রচার বা প্রকাশ করছে না৷ যতটুকু প্রকাশ পায়, তা অন্যের অভিযোগ হিসেবে জানানো হয়৷ কোনো অনিয়ম দেখা গেলে তা যথাযথ তথ্য প্রমাণসহ তুলে ধরতে হবে৷ সেখানে সব পক্ষের বক্তব্য থাকা উচিত৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
শারমিন ইব্রাহীম, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, বাংলা ভিশন
নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার মাধ্যমে প্রার্থী আর ভোটারের এই উৎসবের সাথে সম্পৃক্ততাই তুলে ধরতে চান সাংবাদিক৷ সংবাদ উপস্থাপনের মূল শর্ত ক্রসচেক বা তথ্য যাচাই-বাছাই করে নেয়া৷ কোনো প্রার্থীর প্রতি পক্ষপাতিত্ব সংবাদের বিশ্বাসযোগ্যতাকে যেভাবে প্রভাবিত করে, তেমনি সাংবাদিকের পেশাদারিত্বকেও প্রশ্নের সম্মুখীন করে৷ ব্যক্তিগত পছন্দ, মতাদর্শের উর্ধ্বে থেকেই সংবাদ পরিবেশন করবেন– এটাই কাম্য৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
নিয়াজ মোর্শেদ, মাছরাঙ্গা টেলিভিশন
যাঁরা নীতিনির্ধারণীর ভূমিকায় থাকেন, তাঁদের নির্দেশে এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের রাজনৈতিক অবস্থান বিবেচনা করে মাঠের সাংবাদিকরা কাজ করেন৷ এ কারণে সংবাদ প্রকাশে মাঠের সাংবাদিকের ভূমিকা হয় পক্ষপাতমূলক৷ তবে বেশির ভাগ সাংবাদিক মাঠে কাজ করার সময়, সব ধরনের সংবাদই সংগ্রহ করেন৷ দুনিয়ার কোনো সংবাদমাধ্যমই ভোটের সময় নিরপেক্ষ না৷ তাঁরা বিভক্ত হয়ে পড়েন৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
আসমা মিতা, সিনিয়র ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট, ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশন
ভোটের সময় সাংবাদিকদের প্রধান চ্যালেঞ্জ নির্ভুল তথ্য জানানো৷ কারণ, তখন রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের প্রয়োজনে চারপাশে অনেক গুজব ছড়ায়৷ সাম্প্রতিক সময়গুলোতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় এ প্রবণতা আরো বেড়েছে৷ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ বিষয়টি বড় মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে৷ কাজেই নির্ভুল তথ্য দেয়াই সাংবাদিকদের মূল কাজ হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
ইমরান হোসেন, বাংলা ট্রিবিউন
ভোটের সময় গণমাধ্যমের ভূমিকা কেমন হয়– এ প্রশ্নের জবাব আপেক্ষিক৷ অনেকে গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে প্রকৃত দায়িত্বটা পালন করতে চান না, আবার আমাদের কেউ কেউ এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে বেশি দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করি৷ আমি মনে করি, কমিশনের নিজের স্বার্থেই গণমাধ্যমকে অবাধ প্রবেশের সুযোগ দেয়া উচিত৷ আর গণমাধ্যমের অবাধ প্রবেশের সুযোগ নিয়ে এমন আচরণ করা উচিত নয়, যাতে ভোট বিঘ্নিত হয়৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
রাসেল আহমেদ, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, যমুনা টেলিভিশন
কোনো দলের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি না দিয়ে মানুষের মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত৷ সেজন্য সাংবাদিকদের চোখ-কান খোলা থাকা দরকার৷ জানা উচিত, কোনটা নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন, কোনটা আরপিও তে নিষেধ, তার সবটাই৷ তবে বাস্তবতা হলো, সব সময় সাংবাদিক তার চোখ খোলা রাখতে পারেন না৷ নির্বাচন কাভার করতে গিয়ে এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে অনেকবার৷ সবচেয়ে বড় কথা, নিজের দায়িত্বের প্রতি সজাগ থাকা৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
তানিয়া রহমান, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, ৭১ টেলিভিশন
আমি মনে করি, সাংবাদিকরা জনগণের মুখপাত্র৷ তাই জনগণের কথাই সাংবাদিকরা আগেও বলেছেন, আসছে নির্বাচনেও বলবেন৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
10 ছবি1 | 10
আগ্রহী পাঠকেরা নিজ উদ্যোগে এই কাজটি আবার করে দেখতে পারেন৷ বিভিন্ন দৈনিকের অনলাইন পেইজ, টেলিভিশনের অনলাইন পোর্টাল কিংবা স্বনামধন্য অনলাইন গণমাধ্যম- কেউই পিছিয়ে নেই৷ অর্থাৎ যে শব্দগুলো পাঠককে সুড়সুড়ি দেবে, যেটি দেখলে মানুষ তাদের লিংকে ক্লিক করার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়বে, সেটিই যেন একটি খবরের সংবাদমূল্য নির্ধারণের একমাত্র মাপকাঠি৷ তাহলে ভালো-মন্দ, গ্রহণযোগ্য-অগ্রহণযোগ্য বা রুচিশীল-কুরুচীপূর্ণের মধ্যে তফাৎ কী থকাল?
এখন আসা যাক এই সংবাদটির ফলোআপ প্রসঙ্গে৷ নিঃসন্দেহে এধরনের সংবাদ প্রকাশের পর অভিনেত্রী সাদিয়া জাহান প্রভা নতুন করে হেনস্তার শিকার হয়েছেন৷ আর সে কারণেই তিনি রোববার দুপুরে নিজের ফেসবুক পেইজে একটি স্টেটাস দিয়েছেন৷
এতে তিনি বলেছেন, ‘আপনাদের সঙ্গে গত প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে একসঙ্গে কাজ করছি৷ আমার জীবনের নানান চড়াই উৎরাইয়ের ঘটনায় আপনারা পাশে ছিলেন৷ অন্য সবার মতো আপনারাও আমার কাজে সহযোগিতা করছেন৷কিন্তু ইদানিং খেয়াল করছি আমার অজান্তে আমাকে ঘিরে কিছু অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকা অপ্রয়োজনীয় ও অনাকাঙ্ক্ষিত নানা ধরনের সংবাদ প্রকাশ করছে৷ আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করছি, সে সব সংবাদের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে আমার অভিনীত নাটকের বিভিন্ন দৃশ্য৷ এসব সংবাদের শিরোনাম ও ভাষা খুবই আপত্তিকর!এটা কি সাংবাদিকতার কোনো নীতিমালায় আছে যে, যাকে নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করছেন তার সঙ্গে যোগাযোগ না করে সংবাদ প্রকাশ করা যায়? প্রভা মানেই কি আপনাদের নিউজের কাটতি, ভিউ আর রিডার? একজন শিল্পীর প্রতি, শিল্পের প্রতি কিংবা দেশের প্রতি কি দায়বদ্ধতা নেই?'
আমাদের অনলাইন বোকামি
বর্তমান যুগে কোটি কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে প্রতিনিয়ত৷ ইন্টারনেট আসক্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে৷ সঙ্গে বাড়ছে বোকামিগুলো৷ অনলাইনে আমাদের একটু বিচক্ষণ হতে হবে বিষয়গুলোর প্রতি নজর দিতে৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: picture-alliance/dpa
ফোনে লক নেই?
ধরুন ফোনে লক দিতে ভুলে গেছেন, বা নিজেই পছন্দ করেন না লক সিস্টেম৷ তাই যেখানে সেখানে ফোন ফেলে আসাটা আপনার জন্য মারাত্মক বিপদ ডেকে আনবে৷ কারণ যেহেতু স্মার্ট ফোনে আপনার ফেসবুক, জিমেইল, কোথাও কোথাও ব্যাংক ডিটেইলও সেভ করা থাকে সেখানে আরেকজনের পক্ষে কপি করা বিষয়ই নয়৷ নিজের ব্যক্তিগত ছবিগুলোর নিরাপত্তা স্বার্থে হলেও ফোন লক করুন৷
ছবি: Reuters/T. Siu
ফ্রি ওয়াফাইয়ে বিপদ!
ফ্রি ওয়াইফাই দেখে ঝাঁপিয়ে পড়লেই বিপদ৷ যদিও ফ্রি ওয়াইফাইয়ের প্রলোভন উপেক্ষা করা কঠিন, তবু বিপদ বুঝে ব্যবহার করতে হবে৷ যেহেতু আপনার মোবাইলের ডাটা অ্যাকসেস পাবে ওয়াফাই সংযোগটি সেহেতু সাবধান৷ এক্ষেত্রে ভিপিএন ব্যবহার করে ওয়াই ফাই সংযোগ গ্রহণ করা উচিত৷ ভিপিএন অর্থ ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটোয়ার্ক৷ এটি একটি টানেল তৈরি করে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখবে ফ্রি ওয়াফাইয়ে ওঁৎ পেতে থাকা চোরদের থেকে৷
ছবি: picture alliance / dpa
চ্যাটরুমে ভরসা নেই
চ্যাটরুম সময় কাটানোর জন্য খুব ভালো মাধ্যম হলেও বিশ্বাস করা যাবে না এখানকার মানুষদের৷ কারণ চ্যাটরুমের পরিচয় থেকে আবেগী হয়ে ভিডিওচ্যাট করে ভীষণ বিপদে পড়েছেন অনেকে৷ বিশেষ করে মেয়েদের হয়রানি করার ঘটনাগুলোর সূত্রপাত চ্যাটরুম থেকে৷ এখানেই ছড়ায় ব্যক্তিগত ছবি, ভিডিওসহ নিজস্ব অনেক তথ্য৷ সুতরাং চ্যাট করতে পারেন কিন্তু তথ্য শেয়ার নয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
কঠিন পাসওয়ার্ড
মনে থাকবে না এই অজুহাতে পাসওয়ার্ডটাকে একেবারে সহজ কিছু বা ধারণা করা যায় এমন করবেন না৷ ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস, মেইল অ্যাকাউন্ট, ফেসবুক অ্যাকাউন্টসহ প্রতিটা বস্তুর জন্য আলাদা আলাদা ভিন্ন ভিন্ন পাসওয়ার্ড রাখুন৷ আর মনে রাখার সুবিধায় পাসওয়ার্ড কোনো ইনবক্সে সেভ করবেন না, কিংবা পাসওয়ার্ড লেখা খাতাটা যেখানে সেখানে ফেলে আসবেন না৷
ছবি: picture alliance/dpa/M. Skolimowska
ক্রেডিট কার্ডের সেলফি?
নতুন ক্রেডিটকার্ড পেয়ে খুশিতে সেলফি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে ফেলবেন না৷ প্রয়োজনে ক্রেডিট কার্ডের ছবি তুলে রাখতে পারেন৷ তবে সেটি একেবারেই গোপন স্থানে রাখবেন৷ ইদানিং ইন্টারনেটে এ ধরনের বোকামি বেশ চোখে পড়ছে৷ আইটি বিশেষজ্ঞরা এই ধরনের ঘটনাকে মানবজাতির বুদ্ধিমত্তার প্রতি হুমকিস্বরূপ বলেই মনে করছেন৷
ছবি: picture-alliance/empics/M. Keene
5 ছবি1 | 5
প্রভার এই ফেসবুক স্টেটাসটি নিয়েও সংবাদ হয়েছে৷ সেটি হতেই পারে, একজন সেলিব্রিটির ফেসবুক স্টেটাস, ইন্সটাগ্রামে গোস্ট করা ছবি বা টুইট নিয়ে সংবাদ হওয়া দোষের কিছু নয়৷ কিন্তু একটু ভাবুন তো এই স্টেটাস নিয়ে পরিবেশিত সংবাদের শিরোনাম কী হতে পারে? যে ধরনের শিরোনামে এই স্টেটাসটির সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে, তার কয়েকটি উল্লেখ করছি, ‘অবশেষে সেই ভিডিও নিয়ে মুখ খুললেন প্রভা', ‘ভিডিও নিয়ে যা বললেন প্রভা', ‘সেই গোপন ভিডিও নিয়ে মুখ খুললেন প্রভা' ইত্যাদি৷
এ প্রসঙ্গে বহুবার শোন নাসিরুদ্দিন হোজ্জার সেই পুরোন গল্পটি আবার মনে পড়ে গেল:
হোজ্জার বাড়িতে এক বন্ধু এসেছেন বেড়াতে৷ সন্ধ্যায় প্রতিবেশীদের সঙ্গে পরিচয় করাতে নিয়ে যাওয়ার সময় হোজ্জা নিজের একটি ভাল পোশাক ধার দিলেন৷ প্রথম বাড়িতে হোজ্জাকে বন্ধুকে পরিচয় করিয়ে দেবার সময় এও জানালেন-এঁর গায়ে যে পোশাকটি দেখছেন, তা আসলে আমার৷
সেখান থেকে বেরিয়ে বন্ধু মহা ক্ষ্যাপা৷ কী দরকার ছিল ওটা বলে আমাকে অপমান করার? হোজ্জা ক্ষমা চাইলেন৷
দ্বিতীয় বাড়িতে গিয়ে বললেন, এঁর গায়ে যে পোশাকটি দেখছেন, তা আসলে এঁরই৷ এবার তো বন্ধু আরো ক্ষ্যাপলেন৷ পোশাকটি নিয়ে তুমি কিছু না বলাই ভালো৷
তৃতীয় বাড়িতে গিয়ে তাই হোজ্জা বললেন, ইনি আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু আর এঁর গায়ে যে পোশাকটি দেখছেন, সে সম্পর্কে কিছু না বলাই ভালো!
এ ক্ষেত্রেও ফলোআপ রিপোর্টের নামে প্রভার ফেসবুক স্টেটাসটি যে ধরনের শিরোনামে পরিবেশিত হলো, তাতে আবারো পাঠককে সুড়সুড়ি দেয়ার সব আয়োজনই করা হয়েছে৷
আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন৷ ফেসবুকে যেসব আইডি থেকে এই নিউজগুলো শেয়ার করা হয়েছে, তার নিচে কমেন্টগুলো দেখেও আমাদের পাঠক, দর্শক, সমাজের স্বরূপ কিছুটা বোঝা যায়৷ এই মন্তব্যগুলোর এক একটা এতই অশ্লীল যে সেগুলো এখানে উল্লেখ করার উপায় নেই৷ একজন নারীকে কতোভাবে হেনস্তা করা যায় তার উদাহরণ মেলে এসব মন্তব্যের প্রতিটি অক্ষরে৷
একটি ভয়ানক ঘটনার মুখোমুখি হয়ে, সেই ট্রমা কাটিয়ে একজন নারী যখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে, তখন আমরা সবাই মিলে বার বার ঝাঁপিয়ে পড়ছি তাকে আবারো ভার্চুয়ালি হেনস্তা করতে৷ যে কোনো উসিলায় তার সেই খারাপ সময়টিকে আবারো সামনে নিয়ে আসার, দুঃস্বপ্নের মতো সেই দুঃসময়টি যেন সে ভুলে না যান, দগদগে ঘায়ের মতো সেটি যেন সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হয়, তার সব আয়োজন সাজিয়ে বসেছি আমরা৷
প্রভার এই ঘটনাটি উল্লেখ করা হলো শুধু উদাহরণ হিসেবেই৷ আমাদের বেশিরভাগ অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলো লাইক/হিটের মোহ থেকে বের হতে পারছে না৷ যে কোনো মূল্যেই বেশি পাঠক, বেশি শেয়ার তাদের কাম্য৷ এই যদি হয় অনলাইন গণমাধ্যমের সাংবাদিকতার নীতিমালার মূলমন্ত্র, তাহলে সেগুলো সত্যিকারের সংবাদমাধ্যম কবে হয়ে উঠবে সেটি কোটি টাকার প্রশ্ন৷