এয়ারএশিয়া দুর্ঘটনায় নিহতদের লাশ উদ্ধারের কাজ চলেছে৷ একটি লাশ পাওয়া গিয়েছে লাইফ জ্যাকেট পরিহিত অবস্থায়, একজন বিমানকর্মীকে উর্দি পরা অবস্থায়৷ প্রায় বিবস্ত্র লাশের কথাও গোড়ায় শোনা গেছিল৷
বিজ্ঞাপন
অপরদিকে বোর্নিও দ্বীপের উপকূলে জাভা সাগরবক্ষে ৩০ থেকে ৫০ মিটার জলের তলায় বিমানটির ধ্বংসাবশেষের হদিশ পেয়েছেন উদ্ধারকর্মীরা ‘সোনার' প্রয়োগ করে৷ আবহাওয়া এখনও দুর্যোগপূর্ণ, দুই থেকে তিন মিটার উঁচু ঢেউয়ের ফলে ডুবুরি নামাতে অসুবিধা হচ্ছে৷ বিমানের ব্ল্যাক বক্স বা ভয়েস রেকর্ডারের খোঁজ পাওয়া এ যাবৎ সম্ভব হয়নি৷
ফ্লাইট কিউজেড৮৫০১ গত রবিবার ইন্দোনেশিয়ার সুরাবাইয়া শহর থেকে সিঙ্গাপুর অভিমুখে উড়াল শুরু করার ৪০ মিনিট পরেই সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়৷ বিমানটি তখন ৩২,০০০ ফুট উচ্চতায় ছিল৷ খারাপ আবহাওয়ার কারণে বৈমানিকরা ৩৮,০০০ ফুট উচ্চতায় ওড়ার অনুমতি চান এবং তাঁদের ৩৪,০০০ ফুট উচ্চতায় ওড়ার অনুমতি দেওয়া হয় – কিন্তু সেই কয়েক মনিটের মধ্যেই বিমানটি অন্তর্হিত হয়৷
ফিরে দেখা: ২০১৪ সালের কয়েকটি বিমান দুর্ঘটনা
রবিবার সকালে এয়ারএশিয়ার কিউজেড৮৫০১ বিমানটি সিঙ্গাপুরের পথে জাভা সাগরের উপরে রাডার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়৷ ২০১৪ সালে এ রকম আরো কয়েকটি বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে৷ সেগুলো নিয়েই এ ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Pleul
রেডিও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
এয়ারএশিয়ার এয়ারবাসটি ইন্দোনিশেয়ার সুরাবায়া থেকে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিল৷ উড্ডয়নের ৪০ মিনিট পর রবিবার ভোরে বিমানটির সঙ্গে এয়ার ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রকদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়৷ আর সেই সময়ের পর থেকে বিমানটির আর কোনো হদিশ পাওয়া যায়নি৷ উদ্ধার অভিযান চলছে৷ বিমানটিতে ১৬২ জন আরোহী রয়েছেন৷
ছবি: Reuters/E. Nuraheni
জাভা সাগরের উপর থেকে হাওয়া
বিমানটি হারিয়ে যাওয়ার আগে বৈমানিক বিরূপ আবহাওয়া এড়াতে বিমানটির গতিপথ পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন বলে শোনা যাচ্ছে৷ বিমানটির দুর্ঘটনা সবাইকে মার্চের এক স্মৃতি ফিরিয়ে দিচ্ছে৷ সেসময় মালয়েশিয়ার এয়ারলাইন্সের এমএইচ৩৭০ বিমানটি হারিয়ে যায়৷
ছবি: Aditya/AFP/Getty Images
বিপদের ওপর বিপদ
২০১৪ সালে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স তাদের দু’টি বোয়িং ৭৭৭ বিমান হারিয়েছে৷ এর মধ্যে একটি এখনো ‘মিসিং’৷ ৮ মার্চ কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং যাওয়ার পথে হারিয়ে যায় সেই বিমানটি৷ রুটিন মাফিক একটি রেডিও ম্যাসেজ দেয়ার পরই বিমানটি রাডার থেকে গায়েব হয়ে যায়৷ এভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের বিশ্বাস, রাডার থেকে হারিয়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর বিমানটি ভারত মহাসাগরে বিধ্বস্ত হয়৷
এমএইচ৩৭০ হারিয়ে যাওয়ার পর, স্যাটেলাইটে ওঠা বিভিন্ন বস্তুর ছবি বিশ্লেষণ করে বিমানটি খোঁজার চেষ্টা হয়েছে৷ কিন্তু জানা গেছে, ছবিগুলো আসলে সমুদ্র ভেসে থাকা আবর্জনার, বিমানের ধ্বংসাবশেষ নয়৷ জাহাজ এবং ডুবোজাহাজ ব্যবহার করে বিমানটির ফ্লাইট রেকর্ডারের সিগন্যালও খোঁজা হয়েছে৷ কিন্তু সাফল্য আসেনি৷ তাই বিমানের ২৩৯ জন আরোহীর ভাগ্যে কী ঘটেছিল তা আজও অজানা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নিরপরাধ ভুক্তভোগীরা
২০১৪ সালের ১৭ জুলাই মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের অপর একটি বিমান এমএইচ১৭ বিধ্বস্ত হয়৷ ইউক্রেনের উত্তরাংশে বিরোধপূর্ণ অঞ্চলের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় বিমানটিকে গুলি করে ভূপাতিত করা হয় বলে অভিযোগ৷ আমস্টারডাম থেকে কুয়ালালামপুর যাচ্ছিল বিমানটি৷
ছবি: Reuters
উদ্ধার তৎপরতায় বাধা
বিমানটি দুর্ঘটনার পর মরদেহ উদ্ধার এবং দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কাজ অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে৷ প্রথমদিকে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে অবস্থানরত বিদ্রোহীরা আন্তর্জাতিক উদ্ধারকারী দল এবং দুর্ঘটনা বিশেষজ্ঞদের দুর্ঘটনাস্থলে যেতে বাধা দেয়৷
ছবি: Reuters
দায়ী কে?
দুর্ঘটনার পর প্রথম পাঁচদিন বিমানটির ফ্লাইট রেকর্ডার নিজেদের কাছে রেখে দেয় বিদ্রোহীরা৷ এরপর সেটি মালয়েশিয়ার প্রতিনিধিদের কাছে হস্তান্তর করা হয়৷ প্রাথমিক ফলাফলে বিমানটি ভূমি থেকে আকাশে উৎক্ষেপণযোগ্য মিসাইলের আঘাতে ধ্বংস হয়েছে বলে অনেক ইঙ্গিত পাওয়া গেছে৷ তবে বিমানটি – বিদ্রোহী, রাশিয়া, না ইউক্রেন – কাদের সোনাদের গোলাতে ভূপাতিত হয়েছে, তা এখনো জানা যায়নি৷
ছবি: Reuters
গতিপথ বদলানোর অনুরোধ
২৪ জুলাই স্প্যানিশ কোম্পানি সুইফটএয়ারের কাছ থেকে ভাড়া নেয়া এয়ার আলজেরিয়ার একটি বিমান মালিতে ১১৬ যাত্রীসহ বিধ্বস্ত হয়৷ বিমানটি বুর্কিনা ফাসো থেকে আলজিয়ার্স যাচ্ছিল৷ এয়ারএশিয়ার মতো সেই বিমানের পাইলটও গতিপথ বদলাতে চেয়েছিলেন৷
ছবি: cc-by-sa/Dura-Ace/curimedia
ভেঙে গুড়ো গুড়ো হয়ে যায়
বিমানটি দৃশ্যত প্রচণ্ড গতিতে ভুমিতে আছড়ে পড়ে৷ বুর্কিনা ফাসোর সীমান্তের কাছে সেটি ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়৷ সম্ভবত ঝড়ের কারণে সেটি বিধ্বস্ত হয়েছিল৷
ছবি: Getty Images/AFP/Sia Kambou
মারাত্মক রণকৌশল
২০১৪ সালের ২৩ জুন জার্মানির সাওয়ারল্যান্ড অঞ্চলে সামরিক বাহিনীর প্রশিক্ষণ চলাকালে একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়৷ জার্মান এয়ার ফোর্সের একটি ইউরোফাইটারের সঙ্গে লেয়ারজেটের একটি বিমানের ধাক্কা লাগে বলে জানা গেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Bernd Wüstneck
খুব কাছে
ধারণা করা হচ্ছে লেয়ারজেটটি এয়ারফোর্স প্লেনের খুব কাছ থেকে যাচ্ছিল৷ ফলে ধাক্কা লাগে৷ প্রশিক্ষণের জন্য ভাড়া নেয়া বেসামরিক বিমানটি কোলনের একটি গ্রামে ভূপাতিত হয়৷ সেটির পাইলট এবং কো-পাইলট প্রাণ হারান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/BS f. Flugunfalluntersuchung
ক্ষতি সত্ত্বে নিরাপদে অবতরণ
মধ্য আকাশে সংঘর্ষে ইউরোফাইটার মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সেটি নিরাপদে অবতরণে সক্ষম হয়৷ বিমানটি চালাচ্ছিলেন ৩৩ বছর বয়সি একজন বৈমানিক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/BS f. Flugunfalluntersuchung
13 ছবি1 | 13
একজন ফ্লাইট অ্যাটেন্ডান্টকে যে জামাকাপড় পরা অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে, তার অর্থ, বিমানটি অক্ষত অবস্থাতেই সাগরে আছড়ে পড়ে – বলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন৷ অপরদিকে লাইফ জ্যাকেট পরা লাশটির অর্থ, বিমানের আরোহীরা আসন্ন বিপদের কথা জানতেন অথবা আন্দাজ করতে পেরেছিলেন এবং লাইফ জ্যাকেট পরে নেওয়ার মতো সময় পেয়েছিলেন৷
সিএনএন প্রমুখ সংস্থা গোড়ায় অন্তত দু'টি লাশের ছবি দেখাচ্ছিল, যেগুলি প্রায় বস্ত্রহীন অবস্থায় সাগরের জলে ভাসছে৷ এই ইমেজগুলি যদি সত্যি হয় এবং তাদের সঠিক অর্থ করা হয়, তাহলে বলতে হবে, নিহতেরা বিপুল উচ্চতা থেকে মাটির দিকে – এক্ষেত্রে পানির দিকে পড়েছেন এবং বাতাস তাদের জামাকাপড় খুলে নিয়েছে৷ তাহলে কি বিমানটি আকাশেই ভেঙে দু'টুকরো হয়ে গিয়েছিল, কিংবা বিমানটির কোনো দরজা খোলা ছিল?
বিমানটির শেষ রাডার ‘ছবি' বলছে, বিমানটি নাকি ঘণ্টায় প্রায় ৬৫৪ কিলোমিটার গতিতে ওপরে উঠছিল, যা এ ধরনের একটি ‘ম্যানোভার'-এর জন্য প্রায় ১৮৫ কিলোমিটার কম – বলছেন পাইলটরা এবং বিশেষজ্ঞরা৷ কাজেই বিমানটি ‘স্টল' থাকতে পারে, অর্থাৎ বাতাস ছাড়া ঘুড়ির মতো গতি হারিয়ে হঠাৎ নীচে নেমে গিয়ে থাকতে পারে – যার ফলে দুর্ঘটনা ঘটে৷
এ সব কিছুই জানা যাবে আগামীতে, তদন্ত ও অনুসন্ধানে৷
বিমান দুর্ঘটনা, না হত্যাকাণ্ড!
১৭ জুলাই ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রুশ সীমান্তের কাছে বিধ্বস্ত হয় মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৭৭-এর এমএইচ১৭ বিমানটি৷ এতে ২৯৮ আরোহীর সবাই নিহত হন৷ ধারণা করা হচ্ছে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বিমানটিকে ভূপাতিত করা হয়েছে৷
ছবি: Reuters
নিহত সব আরোহী
১৭ জুলাই রুশ সীমান্তের কাছে একটি গ্রামে বিধ্বস্ত হয় মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৭৭-এর এমএইচ১৭ বিমান৷ এতে ২৯৮ আরোহীর সবাই নিহত হন৷
ছবি: imago/Xinhua
চলছে উদ্ধার কাজ
রুশপন্থিরা রবিবার থেকে মৃতদেহগুলো উদ্ধার করে এক জায়গায় নিয়ে রাখা শুরু করে৷ ইউক্রেনের জরুরি বিভাগের কর্মীরা জানিয়েছেন, সোমবার ভোরে আরো ২১ আরোহীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়৷ ফলে উদ্ধার হওয়া মৃতদেহের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৫১’তে৷
ছবি: Reuters
তদন্তকারীদের প্রবেশ নিষেধ
আন্তর্জাতিক তদন্ত সংস্থার কর্মীদের দুর্ঘটনাস্থলের শুধুমাত্র নির্দিষ্ট এলাকা পর্যন্ত যেতে দেয়া হচ্ছে৷ সব স্থানে প্রবেশের অনুমতি তাঁরা পাচ্ছেন না৷
ছবি: imago/Itar-Tass
লাশবাহী ট্রেন
রুশপন্থিরা মৃতদেহগুলোকে আপাতত একটি ট্রেনে রেখেছে৷ ঐ ট্রেনের চারটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বগিতে আছে লাশগুলো৷
ছবি: Reuters
দেহাবশেষ
এখনো মৃতদেহ উদ্ধার চলছে৷ কিছু কিছু মৃতদেহ চেনার উপায় নেই৷ আছে কেবল দেহাবশেষ৷
ছবি: Reuters
দুপক্ষের অভিযোগ
ইউক্রেনের দাবি, তাদের দেশে থাকা রুশপন্থিরাই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে বিমানটি বিধ্বস্ত করেছে৷ তবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, রাশিয়া এর সাথে জড়িত নয়৷
ছবি: imago/Itar-Tass
অভিযোগ ‘বুক’ এর দিকে
বিশেষজ্ঞদের দাবি, ‘বুক’ নামে পরিচিত ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতের প্রতিক্রিয়া এতই ভয়াবহ ছিল যে, যাত্রীরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিমানটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়৷ ক্ষেপণাস্ত্রটি ভূমি থেকে ৭২ হাজার ফুট উচ্চতার লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম৷ আর মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমানটি উড়ছিল ৩৩ হাজার ফুট উচ্চতায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বেঁচে গেল এয়ার ইন্ডিয়া
মাত্র ৯০ সেকেন্ড৷ এই সময়টাই বাঁচিয়ে দিল এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানকে৷ পূর্ব ইউক্রেনে মিসাইল হামলায় বিধ্বস্ত মালয়েশিয়ার বিমানটির মতোই পরিণতি হতে পারতো দিল্লি থেকে বার্মিংহামগামী বিমানটির৷ মালয়েশিয়ার বিমানটি যখন বিধ্বস্ত হয় তখন এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটি ছিল মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে৷
ছবি: picture alliance/dpa
শোকে স্তব্ধ নেদারল্যান্ডস
বিমানটিতে ১৫৭ জন যাত্রী ছিল নেদারল্যান্ডসের৷ তাই শোকে স্তব্ধ দেশটি৷
ছবি: Reuters
দেশে দেশে শোক
এছাড়া মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে চলছে শোক৷