সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম, ঘরোয়া অনুষ্ঠান এবং প্রকাশনার মাধ্যমে ইতিমধ্যেই তাঁদের কথা বলতে শুরু করেছেন সমকামীরা, চাইছেন অধিকার৷ কিন্তু বাংলাদেশের দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধরায় সমকামিতা আজও অপরাধ৷ তাই তাঁদের আওয়াজটা প্রকাশ্যে আসছে না৷
বিজ্ঞাপন
সমকামীরা বাংলাদেশে যেন এখনও একটি ‘ইনভিজিবল মাইনরিটি'৷ সম্প্রতি ‘ধী-এর গল্প' নামে একটি কমিক স্ট্রিপ প্রদর্শনের মাধ্যমে সমকামীরা বেশ আলোচনায় আসেন৷ তবে তাঁরা এই স্ট্রিপ-টির আয়োজন করেছিলেন ঘরোয়াভাবে৷ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন সমমনা মানুষদের৷ এর খবর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশও হয়েছিল৷ অবশ্য এটাই প্রথম নয়৷ এর আগেও বাংলাদেশের সমকামীরা ‘রূপবান' নামে একটি ম্যাগাজিন প্রকাশ করেছিলেন৷ প্রকাশিত হয়েছে সমপ্রেমী কবিতার বই ‘রূপঙক্তি'-ও৷
বাংলাদেশে সমকামীদের সবচেয়ে বড় গ্রুপ ‘বয়েজ অফ বাংলাদেশ' (বিওবি বা বব)৷ এই গ্রুপই উপস্থাপন করে ‘ধী-এর গল্প'৷ তারা আসলে প্রায়ই নানা অনুষ্ঠানের আয়েজন করে, যার খবর পাওয়া যায় তাদের ফেসবুক পাতায়৷ ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে আয়োজন করে আড্ডার৷ তাদের ফেসবুক পেজ থেকে জানা যায়, আগামী ১৬ই অক্টোবর ঢাকার লালবাগ কেল্লা এলাকায় তারা একটি আড্ডার আয়োজন করে৷ এছাড়া তাদের একটি ওয়েবসাইটও আছে৷ সেখান থেকে জানা যায় যে, ২০০২ সাল থেকে ‘বয়েজ অফ বাংলাদেশ' কাজ করছে৷
বাংলাদেশে সমকামী নারীদের নিয়ে কমিক স্ট্রিপ
এক সমকামী নারীর প্রেম নিয়ে কমিক স্ট্রিপ প্রকাশ করা হয়েছে ঢাকায়৷ গত পাঁচ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ কাউন্সিলে ‘ধী-এর গল্প’ নামের কমিক স্ট্রিপের মোড়ক উন্মোচন করা হয়৷ ফেসবুক, টুইটারেও ধী-এর গল্প নিয়ে চলছে আলোচনা৷
ছবি: Instagramm/Project Dhee
ধী-এর গল্প
কার্টুন চরিত্রের নাম ধী৷ মফস্বলের এক তরুণী যে কিনা অন্য এক নারীর প্রেমে পড়েছেন, তাকে নিয়েই মূলত সাজানো হয়েছে চরিত্রটি৷ বাংলাদেশে সমকামিতা নিষিদ্ধ৷ আর এধরনের কমিকও এই প্রথম প্রকাশ করা হলো৷
ছবি: AFP/Getty Images/M. Uz Zaman
সহায়তায় ‘বয়েজ অফ বাংলাদেশ’
সমকামী পুরুষদের গ্রুপ ‘বয়েজ অফ বাংলাদেশ’ ‘ধী-এর গল্প’ নিয়ে ফেসবুকে প্রচারণা চালাচ্ছে৷ ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে আগতদের মধ্যে কমিকটির ফ্রি কপিও বিতরণ করা হয়৷
ছবি: Facebook/Project Dhee
টুইটারে প্রজেক্ট ধী
সমকামীদের অধিকারের বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরিতে ধী প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য অনলাইন উপস্থিতি রয়েছে৷ ফেসবুক, টুইটার এবং ইন্সটাগ্রামে তাদের প্রোফাইল রয়েছে৷ টুইটার অ্যাকাউন্টটি অবশ্য তেমন সক্রিয় নয়৷
ছবি: Twitter/Project Dhee
সমকামীদের যেভাবে দেখা হয়
বাংলাদেশে সমকামীদের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে কার্টুনটিতে৷
ছবি: Twitter/Project Dhee
সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ
চলতি বছরের এপ্রিলে ধী প্রকল্পের উদ্যোগে ‘টিম বিল্ডিং’ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়৷ এই টুইটটিতে সেই কর্মসূচির কিছু ছবি দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Twitter/Project Dhee
ইন্সটাগ্রামে ধী
ধী প্রকল্পের ইন্সটাগ্রাম পাতাটির অবস্থাও টুইটারের মতো৷ এখন পর্যন্ত মাত্র পাঁচটি ছবি শেয়ার করা হয়েছে সেখানে৷
ছবি: Instagramm/Project Dhee
শাস্তিযোগ্য অপরাধ
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে সমকামিতা শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷ সমলিঙ্গের সঙ্গে যৌনকর্মে লিপ্ত হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত দেয়ার বিধান রয়েছে৷
ছবি: Instagramm/Project Dhee
7 ছবি1 | 7
‘বয়েজ অফ বাংলাদেশ'-এর সঙ্গে জড়িত কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা নাম পরিচয় প্রকাশ করে কথা বলতে রাজি হননি৷ এমনকি তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ই-মেল অ্যাকাউন্টে প্রশ্ন পাঠিয়েও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি৷ তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুকদের কয়েকজন জানান, বাংলাদেশে সমকামীরা তাঁদের এই সমকামিতায় আর রাখ-ঢাক করতে চান না৷ তাঁরা চান ভালোবাসা এবং সম্পর্কের স্বাধীনতা৷ তাঁরা মনে করেন, কার সঙ্গে একজনের ভালোবাসা হবে আর কার সঙ্গে সম্পর্ক হবে – সেটা আইনের বাধার মধ্যে থাকতে পারে না৷ তাঁরা তাঁদের অধিকার চান এবং সমকামী বিরোধী আইনের বিলোপ চান৷
বাংলাদেশে ‘গে বাংলাদেশ' নামে আরো একটি সমকামী গ্রুপ রয়েছে৷ এটা বাংলাদেশের প্রথম সমকামী অনলাইন গ্রুপ৷ ফেসবুকে এই নামে একটি ‘ক্লোজ্ড গ্রুপ' আছে৷ তবে তাদের কার্যক্রম সম্পর্কেও তেমন কিছু জানা যায়নি৷
বাংলাদেশে সমকামীদের নিয়ে গবেষণা হয়েছে৷ গবেষণার শিরোনাম ‘ইনভিজিবল মাইনরিটি'৷ এই গবেষণা করেছে নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক একটি মানবাধিকার সংগঠন ‘গ্লোবাল হিউম্যান রাইট্স ডিফেন্স' বা জিএইচআরডি৷ চলতি বছরের ১৭ই জুন প্রকাশিত এই প্রতিবেদনটি বাংলাদেশের ৫০ জন সমকামী এবং সমকামী নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে করা হয়৷ সেই প্রতিবেদনে বলা হয় যে, বাংলাদেশে সমকামীদের ব্যাপারে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি নেতিবাচক৷ আইনে সমকামিতাকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷
প্রতিবেদনে সমকামীরা তাঁদের প্রতি নির্যাতন এবং হুমকির কথাও বলেছেন৷ বলেছেন আইনি বৈষম্য এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা৷ তবে প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশে সমকামীর সংখ্যা কত, তা বলা হয়নি৷ আর এ নিয়ে কোনো জরিপের খোঁজও পাওয়া যায়নি৷ শুধু জানা গেছে, ‘বয়েজ অফ বাংলাদেশ' গ্রপের নিবন্ধিত সদস্য সংখ্যা দুই হাজারেরও বেশি৷ এছাড়া এই গ্রুপের সদস্যরা অধিকাংশই শিক্ষিত৷ তাঁদের মধ্যে পিএইজডি ডিগ্রিধারীও আছেন৷
যৌনতা: অনন্তকাল ধরে বিতর্কিত
‘সেক্স’ কথাটা উঠলেই বিতর্ক শুরু হয়ে যায়৷ সেক্স নিয়ে যেমন বহু কেলেঙ্কারি, সেভাবেই যৌনতা নারীমুক্তির প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ বন শহরের একটি প্রদর্শনীতে জার্মান সমাজে যৌনতা নিয়ে বিভিন্ন ঝড়ঝাপটার একটা খতিয়ান দেওয়া হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘নিষিদ্ধ’ বিষয়
গত শতাব্দীর ষাটের দশকে যৌনতা সংক্রান্ত মনোবৃত্তিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটে৷ জার্মানিতে ‘ব্রাভো’-র মতো টিনেজার ম্যাগাজিনগুলিতে খোলাখুলি সেক্স সংক্রান্ত নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু হয়৷ এর আগে ফিল্মেও যা ‘নিষিদ্ধ’ বিষয় ছিল, তাই নিয়েই তৈরি হয় ১৯৬৮ সালের হিট ছবি ‘সুয়র জাখে, শ্যাটসেন’ বা ‘পথে এসো, প্রেয়সী’৷ এখানে ছবির নায়ক-নায়িকা ভ্যার্নার এঙ্কে ও উশি গ্লাস; মাঝের মহিলাটি হলেন পরিচালিকা মাই স্পিল্স৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মা যা ছিলেন
পঞ্চাশের দশকেও দুনিয়াটা ‘ঠিকঠাক’ ছিল – অন্তত নবীন পশ্চিম জার্মানির নীতি-নৈতিকতা যাদের দায়িত্বে, তাদের চোখে৷ নারীর স্থান ছিল গৃহে, সংসারে, পতিব্রতা স্ত্রী, স্নেহময়ী জননী, নিপুণা গৃহকর্ত্রী হিসেবে৷ কাজে যেতেন শুধু পুরুষরা৷ জনসমক্ষে সেক্স নিয়ে কথা বলা কিংবা রাস্তায় চুমু খাওয়া চলত না৷ ব্যক্তিগত জীবন ও নৈতিকতা ছিল গির্জা বা সরকারের তাঁবে৷
ছবি: DW/H. Mund
আদম ও হবার কাহিনি
১৯৫১ সালের জার্মান ছবি ‘দি জ্যুন্ডারিন’ বা ‘পাপিনী’ জার্মান ফিল্ম জগতে কেলেংকারির অবতারণা ঘটায়৷ রক্ষণশীল চ্যান্সেলর কনরাড আডেনাউয়ার-এর আমলে এ ধরনের ‘নোংরামি’ সেন্সর করা উচিত, এই ছিল অধিকাংশ মানুষের অভিমত৷ ‘পাপিনী’ ছবির যৌনোদ্দীপনামূলক দৃশ্যগুলো ছিল অতি সংক্ষিপ্ত, তা সত্ত্বেও ছবিটিকে কেন্দ্র করে নৈতিকতা ও প্রকাশ্য যৌনতা নিয়ে বিপুল তর্ক শুরু হয়ে যায়৷
ছবি: ullstein - Thomas & Thomas
নারীমুক্তি
শেরিং কোম্পানি যখন ১৯৬১ সালে প্রথম গর্ভনিরোধক ‘পিল’ বাজারে ছাড়তে শুরু করে, তখন জার্মানির গির্জায় গির্জায় ‘যুবসমাজের নৈতিক অধোপতন’ সম্পর্কে ভাষণ শোনা গেছে৷ পিল নেওয়ার ফলে মহিলাদের যৌন আসক্তির খবর বেরোয় পত্রপত্রিকায়৷ সব সত্ত্বেও, গর্ভনিরোধের নতুন উপায়গুলি মহিলাদের স্বনির্ধারণে সাহায্য করে৷
ছবি: DW/H. Mund
ছাত্র বিপ্লব, যৌন বিপ্লব
ষাটের দশকের শেষে জার্মানিতে যে ছাত্র বিপ্লব দেখা দেয়, তার সঙ্গে তথাকথিত ‘কাউন্টার কালচার’ বা বিকল্প সংস্কৃতিরও যোগ ছিল৷ সেই বিকল্প সংস্কৃতি – হিপি আমলের রূপরেখা অনুযায়ী – খোলা এবং স্বাধীন যৌনতায় বিশ্বাস করত, যার একটা প্রমাণ পাওয়া যায় ‘কমিউন ওয়ান’-এর মতো কুখ্যাত কলোনিতে স্ত্রী-পুরুষের একসঙ্গে বাস ও সহবাসে৷ যে কারণে রাইন্যার লাংহান্স এবং উশি ওবারমায়ার-এর মতো চরিত্র আজও অবিস্মৃত৷
ছবি: picture-alliance/KPA TG
যৌনশিক্ষা
৬৮-র ছাত্র বিপ্লব পশ্চিমে পরিবারজীবনের সংজ্ঞাই বদলে দেয়৷ তরুণ বাবা-মায়েরা নিজেদের ‘বাবা’ কি ‘মা’ বলে অভিহিত না করে, নাম ধরেই ডাকতে শুরু করেন৷ ১৯৬৯ সালে স্কুলের জীববিজ্ঞান ক্লাশে একটি যৌনশিক্ষার ‘মানচিত্র’ চালু করা হয়৷ স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অর্থানুকুল্যে সৃষ্ট ‘হেলগা’ নামধারী একটি যৌনশিক্ষার ফিল্ম দেখতে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের বাসে করে নিয়ে যাওয়া হতো৷
ছবি: DW/H. Mund
মেইল-অর্ডার যৌনতা
‘বেয়াটে উজে’ বললেই জার্মানির শতকরা ৯৮ ভাগ মানুষ আজও বোঝেন: মেইল-অর্ডার সেক্স-শপ৷ যদিও সে-ধরনের দোকানে বাস্তবিক ঢোকার মতো সাহস আজও সকলের নেই – লোকলজ্জা বলে একটা কথা আছে তো৷ বেয়াটে উজে-র বাণিজ্যিক সাফল্যের সূচনা ১৯৪৮ সালে, যখন তিনি মহিলাদের গর্ভনিরোধের পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতন করার জন্য একটি ক্যালেন্ডার প্রকাশ করেন৷ তার পরে আসে তাঁর মেইল-অর্ডার সেক্স-শপ৷
ছবি: imago
পশ্চিমের আগে পুব
সাবেক পূর্ব জার্মানির মানুষরা তাদের পশ্চিমের সতীর্থদের চেয়ে অনেক বেশি যৌন স্বাধীনতা ভোগ করেছেন৷ গোটা পূর্ব জার্মানি জুড়ে ছিল নিউডিস্ট ক্লাব৷ যৌনতার বিচারে পুবের মেয়েরা পশ্চিমের মেয়েদের চেয়ে বেশি ‘স্বাধীন’ ছিলেন, বাচ্চাদের সরকারি ডে-কেয়ারে জমা করে প্যান্ট-শার্ট পরে কাজে যেতেন৷ স্বাধীনতার অপরপীঠে ছিল রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট বাধ্যবাধকতা৷ যেমন এই সাইনটিতে পূর্ব জার্মানির মায়েদের ‘ধন্যবাদ’ জানানো হচ্ছে৷
ছবি: DW/H. Mund
‘বিকারগ্রস্ত সমাজ’
যে সব চিত্রপরিচালক সর্বপ্রথম সমকামিতা নিয়ে ছবি তৈরি করেন, রোজা ফন প্রাউনহাইম ছিলেন তাঁদের অন্যতম৷ ১৯৭১ সালে তিনি একটি তথ্যচিত্র তৈরি করেন, যার বক্তব্য ছিল: সমকামী নিজে বিকারগ্রস্ত নয়, বিকারগ্রস্ত হল তার সমাজ৷ এভাবেই তিনি জার্মানির ‘গে’ এবং ‘লেসবিয়ান’ সম্প্রদায়ের জন্য সম্মান ও সমানাধিকার আন্দোলনের পথ প্রশস্ত করে দেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যুগ-যুগান্তের সংস্কার
জার্মানিতে সমকামিতা ছিল একটি বিতর্কিত বিষয়, রাজনীতিকরাও যা নিয়ে কথা বলতে ভয় পেতেন৷ আইনের যে সূত্র – ১৭৫ নং অনুচ্ছেদ – দু’টি পুরুষের মধ্যে যৌন সম্পর্ককে দণ্ডনীয় অপরাধ বলে ঘোষণা করেছিল, সেই অনুচ্ছেদটি ১৯৬৯ সালে কিছুটা নরম করার পর, ১৯৯৪ সালে পুরোপুরি বাদ দেওয়া হয়৷ কিন্তু – বিশেষ করে খেলাধুলার জগতে – সমকামীদের প্রতি বৈষম্যমূলক মনোভাব আজও পুরোপুরি উধাও হয়নি৷
ছবি: DW/H. Mund
নারী না পুরুষ?
ট্র্যান্সভেস্টাইট আর্টিস্ট, ২০১৪ সালের ইউরোভিশন সং কনটেস্ট বিজয়ী কনচিটা ভুয়র্স্ট ওরফে টম নয়ভির্থ আজ একজন সেলিব্রিটি৷ দাড়ি-সম্বলিত, ইভনিং গাউন পরিহিতা কনচিটা ২০১৫ সালের ইউরোভিশন গানের প্রতিযোগিতায় উপস্থাপিকা ছিলেন৷ তা-তে কারো কোনো আপত্তি দেখা যায়নি – আপাতদৃষ্টিতে৷...
ছবি: DW/H. Mund
ইতিহাস
জার্মানির ‘ড্র্যাগ কুইন’ তথা টিভি হোস্ট লিলো ভান্ডার্স এই প্রদর্শনীটির উদ্বোধন করেন৷ ‘নির্লজ্জ? পরিবর্তনের মুখে যৌন নৈতিকতা’ প্রদর্শনীটি চলবে ২০১৬ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি অবধি, বন শহরের ‘হাউড ডেয়ার গেশিস্টে’ বা ইতিহাস ভবনে৷
ছবি: DW/H. Mund
12 ছবি1 | 12
বাংলাদেশের দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা অনুযায়ী, ‘‘যে ব্যক্তি স্বেচ্ছাকৃতভাবে কোনো পুরুষ, নারী বা জন্তুর সহিত প্রাকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধে যৌন সহবাস করে, সেই ব্যক্তি সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে বা সর্বনিম্ন দশ বছর পর্যন্ত দণ্ডিত হবে৷''
বলা বাহুল্য, এই আইনটি সমকামী-বিরুদ্ধ৷ অর্থাৎ এই আইন অনুযায়ী বাংলাদেশে সমকামিতা বেআইনি৷ তবে বাংলাদেশে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে হিজড়াদের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে৷
২০০৯ সালে ভারতের আদালত সমকামিতাকে বৈধতা দিলেও ২০১৩ সালে তা আর টেকেনি৷ ২০০৯ সালের ২রা জুলাই দিল্লি হাইকোর্টের এক রায়ে বলা হয়, ‘‘প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে সম্মতিক্রমে সমকামিতার আচরণ অপরাধের আওতায় পড়ে না৷ এই রায়ে আরো বলা হয়েছে যে, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা ভারতীয় সংবিধানের মৌলিক অধিকার রক্ষা নীতির পরিপন্থি৷'' কিন্তু ২০১৩ সালের ১১ই ডিসেম্বর সমকামিতাকে অবৈধ ঘোষণা করে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট৷
বাংলাদেশে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং বার কাউন্সিলের সদস্য স. ম. রেজাউল করিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী সমকামিতা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷ তাছাড়া ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিও সমকামিতার বিরুদ্ধে৷ অবশ্য যাঁরা ধর্মে বিশ্বাসী নন, তাঁদের একটি অংশ সমকামিতার পক্ষে৷''
তিনি বলেন, ‘‘সমকামীরা নিজেদের ‘মাইনরিটি সেক্স' দাবি করে তাঁদের মানবাধিকার ও অধিকারের দাবি জানালেও বাংলাদেশের আইন, ধর্মীয় বিশ্বাস, সামাজিক মূল্যবোধ এবং বাস্তবতায় এটা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না৷''
বাংলাদেশে সমকামিতা কি বৈধ করা উচিত? আপনার মতামত জানান নীচের মন্তব্যের ঘরে৷