থাইল্যান্ডে সামরিক আইন জারির পর রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে শান্তি আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন সামরিক বাহিনীর প্রধান৷ তবে পাশাপাশি দেশটির ইউক্রেন বা মিশর হওয়ার আশঙ্কা দূর না হওয়া পর্যন্ত তিনি এক চুলও নড়বেন না৷
বিজ্ঞাপন
থাইল্যান্ডে সামরিক আইন জারির পর রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে শান্তি আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন সামরিক বাহিনীর প্রধান৷ তবে পাশাপাশি দেশটির ইউক্রেন বা মিশর হওয়ার আশঙ্কা দূর না হওয়া পর্যন্ত তিনি এক চুলও নড়বেন না৷
থাই সামরিক বাহিনীর প্রধান প্রায়ুত চান-ও-চা-এর আগামী সেপ্টেম্বর মাসেই পদত্যাগ করার কথা৷ তবে মঙ্গলবার তিনি বলেছেন, ‘‘আমি পদত্যাগ করার আগে সমস্যার দ্রুত সমাধান হতেই হবে, সমাধান না হলে আমি পদত্যাগ করবো না৷ থাইল্যান্ডকে আমি কখনো ইউক্রন বা মিশরের মতো হতে দেবো না৷ ''
সাত মাসের বেশি সময় ধরে থাইল্যান্ডে চলেছে ইংলাক সিনাওয়াত্রার সরকারবিরোধী আন্দোলন৷ এর ফলে সৃষ্টি হওয়া অচলাবস্থা কাটার আগেই সাংবিধানিক আদালত ইংলাককে ক্ষমতার অপব্যহারের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত করে৷ তারপর থেকে দীর্ঘদিন সামরিক শাসনাধীন থাকা দেশটিতে আসে নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার৷ কিন্তু ইংলাক সমর্থকরা আদালতের রায়ের প্রতিবাদে রাজপথে অবস্থান নিলে আবার সামরিক আইন জারি করা হয়৷
ব্যাংকক: দুটি প্রতিবাদ আন্দোলনের গল্প
তিন বছর আগে রাজপথের আন্দোলনে জয় ছিনিয়ে নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন ইংলাক সিনাওয়াত্রা৷ ব্যাংককের রাজপথ আবার বিক্ষোভে উত্তাল৷ এবার ইংলাকের অপসারণের দাবিতেই চলছে উত্তুঙ্গ আন্দোলন৷ ছবিঘরে থাকছে দুটি আন্দোলনের মিল-অমিল৷
ছবি: DW/C. Johnson
‘দাস সেনা’ থেকে ‘সেলফি আর্মি’
শাসকের অত্যাচার ক্রীতদাসের মতো মেনে না নিয়ে থাইল্যান্ডের মানুষ আন্দোলনে নেমেছিল ২০১০ সালে৷ প্রতিবাদের ভাষা প্রত্যন্ত গ্রামেও পৌঁছে দিতে ব্যবহার করেছিলেন মুঠোফোন৷ ২০১৪ সালে ব্যাংকক আবার উত্তাল৷ ‘টেক স্যাভি’ তরুণ সমাজ এবার সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে রাজপথ থেকে তুলে দিচ্ছে ছবি৷এখানে ব্যাংককের এমবিকে শপিং সেন্টারের সামনে থেকে ছবি তুলে ফেসবুক-টুইটারে দেয়ায় ব্যস্ত ইংলাক-বিরোধী আন্দোলনকারীরা৷
ছবি: DW/C. Johnson
বাড়ি যখন দূরে, বাড়ি যখন কাছে
২০১০ সালের আন্দোলনে দূর দূরান্তের গ্রাম থেকেও ইংলাকের ডাকে সাড়া দিয়ে হাজার হাজার মানুষ চলে এসেছিলেন ব্যাংককে৷ লাল জামা পরে গড়ে তুলেছিলেন বিশাল এক ‘লাল জামা পরিবার’৷ ফুটপাতে রাত কাটাতে হয়েছে তাঁদের ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আগুনে গরমে৷ এবার একটু ভিন্ন৷ বেশিরভাগ আন্দোলনকারীই থাকেন ব্যাংকক বা ব্যাংককের আশেপাশে৷ রাতে তাঁরা ফিরে যেতে পারেন নিজের ঘরে, ২০১০ সালের মতো এমন দৃশ্য এখন তেমন একটা দেখা যায় না৷
ছবি: DW/C. Johnson
আরেকটি অন্ধকার দিন?
বোমা বিস্ফোরণ কিংবা গুলি বর্ষণের ঘটনা সত্ত্বেও সব দলের সব নেতাই এবার সামরিক অভিযান কিংবা দোকান, বিপণিবিতান, থিয়েটার বা এটিএম বুথ পোড়ানো এবং লুটপাট রুখতে সদা তৎপর৷ ২০১০ সালের মতো এমন কিছু এখনও হয়নি৷ প্রশ্ন হলো, জনতার এমন আপাত ধৈর্যশীলতা কতদিন বজায় থাকবে?
ছবি: DW/C. Johnson
দৃশ্যমান পরিবর্তন
২০১০ সালের আন্দোলনে ব্যাংককের রাজপথ যেন হয়ে উঠেছিল পল্লীমেলার উৎসব৷ এবার দেখা যাচ্ছে আধুনিক শহুরে জীবনের সংস্কৃতি, প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার৷ ঝলমলে আলোকসজ্জা, রক সংগীতে থাইল্যান্ডের কিংবদন্তি ব়্যাং রকেস্ট্রা, কিংবা জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘ফ্লাই’-এর নেড়ে-মাথা ভোকালের গান – কী নেই সেখানে! রাজপথের আন্দোলন, আন্দোলনকে ঘিরে জমে ওঠা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান – সবই সরাসরি দেখানো হচ্ছে টেলিভিশনে৷
ছবি: DW/C. Johnson
ধ্বংসের চিত্র
২০১০ সালের ছবি৷ তখন সামরিক অভিযান চলছে৷ অভিযানে প্রাণ হারিয়েছেন অনেক আন্দোলনকারী৷ এদিক-ওদিক থেকে আসছে স্নাইপারের গুলি, জেন শপিং সেন্টার পুড়ছে, ধোঁয়ায় ঢাকা চারপাশ – ভয়াবহ এই পরিস্থিতিতেও অকুতোভয় এক আন্দোলনকারী হেঁটে চলেছেন৷ চার বছর পর তাঁর প্রতিপক্ষরাই নিয়েছেন রাজপথের দখল৷ লাল জামা সরকারের পতন চান তাঁরা৷
ছবি: DW/C. Johnson
কৃষক বনাম সেলিব্রিটি
২০১০ সালের আন্দোলনে ব্যাংককের রাজপথ ছিল মূলত গ্রামাঞ্চল থেকে আসা কৃষকদের দখলে৷ ইংলাকবিরোধী আন্দোলনে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন জনপ্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রী, ডিজে-রা৷ দেশ বরেণ্য অনেক সেলিব্রিটিই রাজপথে সময় কাটাচ্ছেন জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে, কিংবা নানাভাবে রাজা ভূমিপলের প্রতি অনুরাগ প্রকাশ এবং ইংলাক সরকারের বিদায় কামনা করে৷
ছবি: DW/C. Johnson
সরকার থেকে বিরোধী
ইংলাক সরকারবিরোধী আন্দোলনের প্রধান নেতা সুথেপ থাউংসুবান৷ চার বছর আগে তিনি ছিলেন ইংলাকের পাশে৷ ইংলাক সরকারের উপ-প্রধানমন্ত্রীও ছিলেন তিনি৷
ছবি: DW/C. Johnson
যানচলাচল বন্ধ
একটি বিষয়ে দুটি আন্দোলনেই খুব মিল৷ ২০১০ সালের মতো এবারের আন্দোলনকারীরাও বিক্ষোভ জানাতে নেমে এসেছেন রাজপথে৷ ফলে ব্যাংককের বড় একটা অংশে যানচলাচল প্রায় বন্ধ৷ তবে এরই মাঝে ফুটপাতে দেখা যাচ্ছে জীবনের নানা রং৷ আন্দোলনকারীদের জন্য টি-শার্ট, টুপি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস-পত্রের পশরা নিয়ে বসেছেন খুদে ব্যবসায়ীরা৷ আশোপাশের দোকানপাটও খোলা৷
ছবি: DW/C. Johnson
8 ছবি1 | 8
মঙ্গলবারই রাজধানী ব্যাংককসহ দেশের বড় শহরগুলোর রাস্তায় রাস্তায় শুরু হয় সেনা সদস্যদের টহল৷ বেশ কিছু বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করা হয়৷ এ পর্যন্ত ১৪টি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করা হয়েছে৷ সম্প্রচার বা প্রকাশনা বন্ধ হয়নি এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপরও নেমে এসেছে কড়া বিধিনিষেধ৷ গণমাধ্যমকে সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশের আগ পর্যন্ত বর্তমান সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ছাড়া আর কারো সাক্ষাৎকার নেয়া যাবে না৷ সোশ্যাল মিডিয়া এবং অন্যান্য ওয়েবসাইটকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে সহায়ক হতে পারে এমন যে কোনো ধরণের বক্তব্য প্রচারে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷
তবে সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, সব পদক্ষেপই সাময়িক৷ মঙ্গলবার ইংলাক সিনাওয়াত্রার পিউ থাই পার্টি ও তার বিরোধীদের শান্তি আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন জেনারেল প্রায়ুত চান-ও-চা৷ বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী, নির্বাচন কমিশন, সেনেট এবং সেনা প্রতিনিধিদেরও এ আলোচনায় অংশ নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি৷
এদিকে সামরিক আইন জারি হওয়ার পরই থাইল্যান্ডে গণতন্ত্র সুসংহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাতি সংঘ৷ এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুনও সেনাপ্রধান প্রায়ুত চান-ও-চা-র প্রতি গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার আহ্বান জানান৷