লিবিয়ায় কয়েকহাজার মানুষ নিহত। জলবাযু পরিবর্তনের সঙ্গে গৃহয়ুদ্ধও এর অন্য়তম কারণ।
বিজ্ঞাপন
কত মানুষের মৃত্য়ু হয়েছে এখনো কেউ জানেন না। তবে সরকারিভাবে বলা হচ্ছে অন্তত পাঁচ হাজার ২০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আসল সংখ্যা যার থেকে অনেক অনেক বেশি।লিবিয়ায় বন্যা এবং এর তার ফলে ভয়াবহতা অবশ্যই ঘটেছে। কিন্তু সেই বন্যার ভয়াবহতা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা গৃহযুদ্ধ। গদ্দাফি মারা যাওয়ার পর থেকে লিবিয়ায় যা শুরু হয়েছে।
লিবিয়ার উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে মূলত বন্যার প্রভাব সবচেয়ে বেশি। স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, সরকারি হিসেব অনুযায়ী এখনো পর্যন্ত পাঁচ হাজার ২০০ মানুষের মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আসল সংখ্যা এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। শুধুমাত্র উপকূলবর্তী শহর ডেরনাতেই ৯০ থেকে এক লাখ মানুষ বসবাস করেন। সেখানে বহু মানুষ নিখোঁজ। মৃতের সংখ্য়া পাঁচ হাজার থেকে বহুগুণ বেশি। লিবিয়ায় রেডক্রসের প্রধান জানিয়েছেন, ''এখনো পর্যন্ত প্রত্য়ন্ত অঞ্চলে পৌঁছানোই সম্ভব হয়নি।'' তাদের বক্তব্য, কেবল ডেরনাতেই অন্তত ৩০ হাজার মানুষ নিখোঁজ। ডেরনা লিবিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর বেনঘাজি থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরে।
লিবিয়ায় আবার বিভাজন বাড়ছে
বহুদিন বিভাজিত থাকার পর লিবিয়ায় কিছুটা ঐক্য ফিরতে যাচ্ছে বলে গত এক বছর ধরে মনে করা হচ্ছিল৷ কিন্তু এখন আবার আগের জায়গায় ফিরে গেছে দেশটি৷
ছবি: Buntenkov Aleksey/Zoonar/picture alliance
আশাভঙ্গ
২০১১ সালে গাদ্দাফির পতনের পর লিবিয়ায় একের পর এক সংঘাত হয়েছে৷ মিলিশিয়া ও বিদেশি সরকারগুলোর সহায়তা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রশাসন দেশের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চল শাসন করেছে৷ গত ২৪ ডিসেম্বর দেশটিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল৷ কিন্তু সেটা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়ে যায়৷
ছবি: Buntenkov Aleksey/Zoonar/picture alliance
স্থগিত হওয়ার কারণ
নির্বাচনে কারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে এবং নির্বাচনের নিয়ম কী হবে তা নিয়ে একমত হতে না পারায় নির্বাচন স্থগিত করা হয়৷
ছবি: Suhaib Salem/REUTERS
দুই প্রধানমন্ত্রী
গত ১০ ফেব্রুয়ারি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফাটি বাশাগাকে একটি নতুন সরকার গঠনের অনুমোদন দেয়৷ এরপর নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ১৪ মাস সময় বেঁধে দেয়৷ কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আব্দুল হামিদ বেইবা পদত্যাগ করতে অস্বীকার করেছেন৷ বছরখানেক আগে তার নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়েছিল৷ নির্বাচন পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার অঙ্গীকার করেছেন তিনি৷
ছবি: Esam Omran Al-Fetori/REUTERS
বাশাগার পরিচয়
৫৯ বছর বয়সি বাশাগা বিমানবাহিনীর সাবেক পাইলট ও একজন ব্যবসায়ী৷ ত্রিপোলিতে জাতিসংঘের সমর্থনে গঠিত একটি প্রশাসনে ২০১৮ সাল থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন তিনি৷ তুরস্ক, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র এমনকি মিশর ও রাশিয়ার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক আছে তার৷ স্থগিত হওয়া প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়তে চেয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: Hazem Turkia/AA/picture alliance
বেইবার পরিচয়
ক্যানাডায় প্রকৌশল নিয়ে পড়েছেন বেইবা৷ রাজনীতিতে তিনি নতুন৷ লিবিয়ার অন্যতম ধনী ব্যক্তি আলী বেইবার আত্মীয় তিনি৷ আলী বেইবা গাদ্দাফি আমলে রাজনীতি করতেন৷ তার সম্পদের উপর বেইবা অনেকখানি নির্ভরশীল বলে ধারনা করা হয়৷ প্রথমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে না চাইলেও পরে তিনি প্রার্থিতা ঘোষণা করেছিলেন৷
ছবি: Mohammed El Shaikhy/AFP/Getty Images
হাফতারের প্রভাব
সাবেক ঊর্ধ্বতন এই সামরিক কর্মকর্তা বিশ বছরের বেশি সময় ওয়াশিংটনে ছিলেন৷ সেই সময় তিনি সিআইএর সঙ্গে কাজ করতেন বলে মনে করা হয়৷ ২০১১ সালে লিবিয়ায় ফিরে তিনি গাদ্দাফিবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেন৷ ২০১৪ সালে লিবিয়ান আরব আর্মড ফোর্সেস গঠন করে পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণের একটা বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ নেন৷ অবশ্য ত্রিপোলি দখলের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছিলেন৷ হাফতারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন৷
ছবি: LIBYA ALHADATH TV/AFP/Getty Images
সাইফ আল গাদ্দাফি
প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেয়ার পর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চেয়েছিলেন গাদ্দাফির ছেলে সাইফ৷ যদিও নির্বাচন কমিশন তার প্রার্থিতা বাতিল করে দিয়েছিল৷ ২০১১ সালের বিক্ষোভের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত তাকে খুঁজছে৷
ছবি: Ben Curtis/AP Photo/picture alliance
7 ছবি1 | 7
এত ভয়াবহ বৃষ্টিপাত গত ৪০ বছরের মধ্যে দেখেনি লিবিয়া। ডেরনাতে একটি নদী আছে। গরমকালে তা মূলত শুকনোই থাকে। এবছর ওই নদীতে এত বেশি জল যে তার ফলে অন্তত দুইটি সেতু ধ্বংস হয়েছে। কয়েকটি বহুতল বাড়িও ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তন অবশ্যই এই ঘটনার অন্যতম কারণ। কিন্তু লিবিয়ায় তার প্রভাবে ঘটে যাওয়া বন্যা মোকাবিলা করার মতো কোনো প্রশাসন নেই। দুর্যোগ মোকাবিলা দলের মতো কোনো বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দল সেখানে নেই। এর মূল কারণ গৃহযুদ্ধ। আরব বসন্তের পর লিবিয়ায় যা শুরু হয়েছে। বস্তুত, লিবিয়ায় গদ্দাফির শাসন চলতো। সেই শাসন ফেলে গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠার প্রয়াস হয়েছিল লিবিয়ায়। কিন্তু ২০১১ থেকে তা এখনো পর্যন্ত সম্ভব হয়ে ওঠেনি।