জন কেরির আশা প্রকাশের পরপরই সিরিয়ায় শুরু হয়ে গেল বোমা হামলা৷ দামেস্ক এবং হোমস নগরীতে উপর্যুপরি বোমা হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ১৪০ জন নিহত হয়েছে৷ শিয়া অধ্যুষিত এলাকায় পরিচালিত এসব হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএস৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S.Taylor
বিজ্ঞাপন
রবিবার দামেস্কে যখন বোমা বিস্ফোরিত হয় তখন স্কুল-কলেজ থেকে শিক্ষার্থীরা সবে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে৷ সরকারি সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী তখনই শুরু হয় হামলা৷ যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, তারা অন্তত চারটি বোমা হামলা সম্পর্কে নিশ্চিত৷ চারটির একটি ছিল গাড়ি বোমা আর দু'টি আত্মঘাতী বোমা৷ চতুর্থ হামলাটির ধরণ সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো তথ্য দিতে পারেনি সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস৷
দামেস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় আক্রমনস্থলটির নাম সাঈদা জেইনাব৷ জেলা প্রশাসনের অধীনস্থ এই এলাকাটি শিয়া মুসলমানদের অন্যতম তীর্থস্থান হিসেবেও পরিচিত৷ এই এলাকার ওপর নিয়মিতই হামলা হয়৷ জানুয়ারি মাসেও তিন তিনটি হামলায় সেখানে অন্তত ৪৫ জনের প্রাণ গিয়েছে৷
সিরিয়ার হোমস নগরীও দীর্ঘদিন ধরেই আতঙ্কের জনপদ৷ রবিবার সকালে সেখানেও দু-দু'টি বোমা হামলা হয়৷ বোমা হামলার পর আকাশ কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে যায়৷ পাশের শহর জাহারা থেকেও দেখা গেছে সেই ধোঁয়া৷ হোমসের ওপরও সুন্নি মুসলমানদের তথাকথিত জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) এবং আল কায়েদার হামলা প্রায় নিয়মিত ঘটনা৷
কেরির আশাবাদ নিরাশায় ঢেকে গেল?
রবিবার সকালেই সিরিয়া সম্পর্কে বেশ আশা জাগানিয়া মন্তব্য করেছিলেন জন কেরি৷ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে আলোচনার পর জানিয়েছিলেন, সিরিয়ার গৃহযু্দ্ধে বহুল প্রতীক্ষিত বিরতি খুব তাড়াতাড়িই হয়ত সম্ভব৷ এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া এক ধরণের মতৈক্যে পৌঁছেছে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি৷ তখনও অবশ্য দামেস্ক আর হোমস প্রচণ্ড বোমা বিস্ফোরণে বারবার প্রকম্পিত হতে শুরু করেনি, শুরু হয়নি লাশের মিছিল, স্বজনের আহাজারি আর আহতদের আর্তনাদ৷
জার্মানিতে কয়েকজন শরণার্থীর জীবন
যুদ্ধবিক্ষুব্ধ কোনো দেশ থেকে কীভাবে ইউরোপে আসছে লক্ষ লক্ষ মানুষ? সবাই কি স্থায়ীভাবে ইউরোপে থাকতে চান? থাকতে হলে কী করতে হবে? কী করছেন তাঁরা? কয়েকজন শরণার্থীর জীবন দেখে একটু ধারণা নেয়া যাক৷
চিকিৎসক থেকে শরণার্থী
সিরিয়ায় রাজধানী দামেস্কে চিকিৎসক হিসেবে ভালোই ছিলেন হামবার আল-ইসা৷ কিন্তু যুদ্ধ শুরুর পর জন্মভূমির সব সুখ ছেড়ে ইউরোপের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাতে হয় তাঁকে৷
অনেক পথ পেরিয়ে...
মেসিডোনিয়ায় পৌঁছানোর পর সার্বিয়ার সীমান্ত পর্যন্ত যেতে অনেকটা পথ হাঁটতে হয়েছে হামবারকে৷ হেঁটে কোনো শহরে পৌঁছালেই শুরু হতো ইন্টারনেট ক্যাফে খুঁজে বের করার চেষ্টা৷ পেলে প্রথম কাজ কোথায় আছেন, কেমন আছেন সে সম্পর্কে পরিবারকে বিস্তারিত জানানো৷ একা এসেছেন, তাই স্বজনদের তাঁর জন্য খুব চিন্তা৷ তাঁদের চিন্তা দূর করা ও তাঁদের সম্পর্কে জেনে নিজেকে নিশ্চিন্ত রাখতেই পছন্দ করেন হামবার৷
অবশেষে জার্মানিতে...
অনেক দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে জার্মানিতে পৌঁছেছেন হামবার৷ সিরিয়াতে সার্জন হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও নতুন দেশে চাইলেই তো আর চিকিৎসক হিসেবে কাজ শুরু করা যায় না৷ জার্মান ভাষা শিখে নিজেকে তৈরি করতে হবে সবার আগে৷ সেই চেষ্টা চলছে৷ পাশাপাশি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে অনুবাদকের কাজও করছেন৷ তাঁর স্বপ্ন অবশ্য জার্মানিতে বসবাস করা নয়৷ সুসময় ফিরে এলে নিজের দেশেই ফিরতে চান হামবার৷
দেশান্তরী এক আফগান কিশোরী
তোবার বয়স এখন ১৬ বছর৷ আফগানিস্তানের হেরাত থেকে জার্মানিতে এসেছে সে৷ হেরাতে নিয়মিত স্কুলে যেত সে৷ লেখাপড়া করেই প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্নও দেখতো৷ কিন্তু তালেবান বেছে বেছে মেয়েদের স্কুলে হামলা শুরু করায় তোবার পক্ষেও আর দেশে থাকা সম্ভব হয়নি৷
সপরিবারে জার্মানিতে
আফগানিস্তান থেকে জার্মানিতে অবশ্য একা আসেনি তোবা৷ দুই বোন এবং তাঁদের স্বামীও এসেছেন সঙ্গে৷ কাছের এই মানুষগুলো সঙ্গে থাকার কারণেই ইরান, তুরস্ক, গ্রিস এবং বলকান অঞ্চল হয়ে জার্মানিতে পৌঁছাতে পেরেছে তোবা৷
দুঃস্বপ্নে পোড়া স্কুল, স্বপ্নে সুন্দর আগামী
তালেবান হামলা থেকে বাঁচতে আফগানিস্তান ছেড়ে এলেও স্বনির্ভর হওয়ার স্বপ্ন কিন্তু ছাড়েনি তোবা৷ নিজেকে নতুন করে তৈরি করছে সে৷ জার্মান ভাষা শিখছে৷ স্বাবলম্বী হতে হলে জার্মানিতে ভাষা শেখাটা তো সবার জন্যই জরুরি৷
এক সাংবাদিকের পরিবার
ওপরের ছবির তিনজন জার্মানিতে এসেছেন সিরিয়ার ইদলিব থেকে৷ আহমেদ (মাঝখানে)-এর সঙ্গে তাঁর স্ত্রী হেবা এবং বন্ধু সালেহ৷ সিরিয়ায় সাংবাদিক হিসেবে বেশ কিছুদিন কাজ করেছেন আহমেদ৷
শৈশবেই প্রবাসী
আহমেদ-হেবা দম্পতির এই মেয়েটিও এসেছে জার্মানিতে৷ মাত্র এক বছর বয়সেই শুরু হয়েছে তার প্রবাসজীবন৷ ওর বাবা অবশ্য যুদ্ধ থামলেই ফিরে যেতে চায় সিরিয়ায়৷